পণ্যের জীবন চক্রের বিভিন্ন স্তরে বাজারজাতকরণ প্রয়োগ পূর্বক মতামত দাও

পণ্যের জীবন চক্রের বিভিন্ন স্তরে বাজারজাতকরণ প্রয়োগ পূর্বক মতামত দাও

পণ্যের জীবনচক্র :

মানুষের যেমন জীবনচক্র আছে তেমনি পরান্ত জীবন চক্র আছে। নতুন পণ্য বাজারে চালু করে, ব্যবস্থাপনা পণ্যের দীর্ঘ এবং সুখী জীবন কামনা করে। যদিও সারাজীবন ধরে পণ্যটি বিক্রয় হবে এমন কেউ আলাদা করে না, তবু ব্যবস্থাপনা তার সমস্ত সামর্থ ব্যয় এবং ঝুঁকি গ্রহণের বদলে পণ্যটি থেকে একটা ভাল মুনাফা পেতে চায়। ব্যবস্থাপনা এ ব্যাপারে অবগত যে, প্রত্যেক পণ্যের একটি জীবনচক্র আছে। তবে ঐ জীবন চক্রের বাস্তব আকৃতি এবং দৈর্ঘ্য পূর্ব থেকে জানা থাকে না। নিম্নে চিত্রের সাহায্যে একটি সচারচর দৃষ্ট পণ্যের জীবনচক্র
সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো

১. সূচনা ঃ যখন একটি পণ্য বাণিজ্যিক ভাবে বাজারে ছেড়ে দেয়া হয় তখন ঐ পণ্যের
জীবনচক্র শুরু হয় এবং তার প্রথম স্তরকে বলে সূচনা বা ওহঃৎড়ফঁপঃরড়হ স্তর। এ স্তরে পণ্য বাজারে কেবলমাত্র ছাড়া হয় বলে বিক্রয়ের পরিমাণ তত বেশী হয় না। বাজারে নতুন পণ্য ছাড়ার ব্যয় অনেক বলে এ স্তরে মুনাফার তেমন কোন অস্তিত্ব থাকে না।

[বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

২. প্রবৃদ্ধি ঃ পণ্যের মাল চক্রের এটি হলো দ্বিতীয় পর্যায়। এই পর্যায়ে পণ্যটির বিক্রি আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। এই স্তরে ব্যাপক প্রসার কার্যক্রমের ফলে ক্রেতারা পণ্যটি সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে যায়। ফলে বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে মুনাফার পরিমাণও বৃদ্ধি পেতেথাকে। যেহেতু এই স্তরে মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ফলে প্রতিযোগিরাও সমজাতীয় বা বিকল্প পণ্য নিয়ে বাজারে উপস্থিত
হয়।

111


চিত্র ঃ পণ্যের জীবন চক্র

৩. পূর্ণতা প্রাপ্তি ঃ এই স্তরটি সব পণ্যের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা এখানে বিক্রি এবং মুনাফার পরিমাণ সর্বাধিক হয়। তবে বিক্রয় বৃদ্ধির হার এখানে প্রবৃদ্ধি (এৎড়ঃিয) পর্যায় থেকে কিছুটা হারে কম হয়। কারণ প্রবৃদ্ধি পর্যায়ে যে সকল প্রতিযোগী প্রতিযোগিতায় নামে তা এ পর্যায়ে খুবই সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে প্রতিযোগিতা তিব্র থেকে তিব্রতর হতে থাকে এবং একটা পর্যায়ে বিক্রির পরিমাণ বেড়ে তা আবার নিম্নমুখী হতে থাকে।

৪. অধোগতি ঃ এটি পণ্যের জীবন চক্রের সর্বশেষ স্তর। অর্ধোগতি বলতে বিক্রি ও মুনাফার পরিমাণ নিম্ন মুখি হওয়াকে বোঝায়। তৃতীয় স্তরের শেষ দিকে আমরা দেখেছি, যে বিক্রয় ধিরে ধিরে কমে যায়। এখানে তা আরও স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়। ফলে এই স্তরের শেষে বিক্রয় ও মুনাফা নেমে এমন পর্যায়ে চলে আসে যখন তার মুনাফা করার মতো অবস্থা থাকে না।

পণ্যের জীবন-চক্র কৌশল

জীবন চক্র একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হওয়াই হচ্ছে জীবনের নিয়ম। এই নিয়মকে কোন ভাবেই অস্বীকার করা যায় না। আমরা পূর্বের আলোচনায় দেখেছি যে স্বাভাবিক ভাবে প্রত্যেকটি পণ্যকেই ৪টি স্তর অতিক্রম করতে হয় কিন্তু বাজারজাতকারী যদি সার্বিক ভাবে বাজারে পণ্য উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে ঐ পণ্যটি তার স্বাভাবিক জীবনচক্র থেকে ছিটকে পড়তে পারে। তাই একটি পণ্য যেন তার জীবনচক্র সফলতার সাথে শেষ করতে পারে সেই লক্ষ্যে বাজারজাতকারীকে জীবনচক্রের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে হয়। জীবন চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সকল কৌশল গ্রহণ করা যেতে পারে এখন আমরা সেগুলোর উপর আলোকপাত করবো।

ক. সূচনা বা প্রবর্তন পর্যায় ও বাজারজাতকরণ কৌশল ঃ প্রথমবারের মত একটি পণ্য বাজারে ছাড়লে প্রবর্তন পর্যায়ের সূচনা হয়। এখানে বাজারজাতকরণ মিশ্রণের উপাদানসমূহকে বিবেচনায় রেখে একটি প্রতিষ্ঠান সুবিধামত কৌশল নিয়ে অগ্রসর হয়।
এই পর্যায়ে একটি প্রতিষ্ঠান চার ধরনের কৌশলে যে কোন একটিকে গ্রহণ করতে পারে। এই কৌশলগুলো
হচ্ছে-
১. দ্রুত ছেকেনেয়ার কৌশল
২. ধীরে ছেকে নেয়ার কৌশল
৩. দ্রুত প্রবেশ কৌশল
৪. ধীরে প্রবেশ কৌশল

[বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

১. দ্রুত ছেকে নেয়া ঃ

এই কৌশলে অধিক মূল্যে পণ্য বাজারে ছাড়া হবে। এখানে পণ্যকে পরিচিত করানো
এবং সুনাম বৃদ্ধির জন্য সর্বাধিক প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। প্রচারের জন্য প্রচুর টাকা পয়সা ব্যয় হয়। তিনটি অনুমানের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠানগুলো এই কৌশলের জন্য অগ্রসর হয়।

  • বাজারের অনেক ক্রেতা পণ্যটি সম্পর্কে জানে না।
  • যারা পণ্যে সম্পর্কে জানতে পারবে তারাই পণ্যটি কিনবে- দাম যা-ই হোক না কেন।
  • প্রতিযোগীদের পণ্য বাজারে আসার আগে প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের তার নিজের পণ্যের প্রতি অভ্যস্ত করে নিতে পারলে পরবর্তীতেও গ্রাহক এই পণ্য কিনবে

২.ধীরে ছেকে নেয়া ঃ

এই কৌশলেও পণ্যের মূল্য বেশি ধরে পণ্যকে বাজারে ছাড়া হয়। তবে এখানে প্রচারের
কাজ ধীরে ধীরে করা হয়। প্রচারের জন্য বেশি খরচ না করে পণ্য বিক্রি থেকে মুনাফার পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা চলে। ধীরে ছেকে নেয়ার কৌশল তখনই ফলপ্রসূ হবে যখন-

  • বাজার সীমিত আয়তনের হয়
  • বাজারের বিরাট অংশ পণ্য সম্পর্কে জানে
  • যারা কিনবে তারা উচ্চ দামেই কিনবে
  • পণ্যটি খুব একটা প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয় না।

৩. দ্রুত প্রবেশ কৌশলঃ

এখানে পণ্যের দাম ধরা হয় কম কিন্তু প্রচার চালানো হয় বেশি। উদ্দেশ্য হচ্ছে কম
সময়ে সর্বাধিক পরিমাণে বিক্রি করা। বিক্রির পরিমাণ বেশি হলে, প্রতি এককে মুনাফা কম হলেও সেই মুনাফার পরিমাণ বেড়ে যায়।

এই কৌশল অবলম্বনে সময় মনে করা হয় যে-

  • বাজারটি আয়তনে বেশ বড়
  • ক্রেতারা পণ্যটি সম্পর্কে কম জানে
  • ক্রেতারা দামের ব্যাপারে সংবেদনশীল
  • প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
  • উৎপাদন বাড়লে একক প্রতি উৎপাদন খরচ কমবে।

৪. ধীরে প্রবেশ কৌশল ঃ

এখানে দাম যেমন কম রাখা হয় তেমনি প্রচারের জন্যেও খরচ করা হয় কম। দাম
কম রেখে গ্রাহকদের প্রভাবিত করে বেশি পরিমাণে বিক্রি করাই হচ্ছে এর উদ্দেশ্য। প্রচারের জন্য খরচ কম করার প্রেক্ষিতে মনে করা হয় যে, দ্রব্যটি থেকে বেশ মুনাফা আসবে। এই কৌশল তখনই ফলদায়ক হয় যখন-

  • বাজারটি আয়তনে বেশ বড় হয়
  • পণ্য সম্পর্কে ক্রেতারা জানে
  • দামের ব্যাপারে ক্রেতারা সংবেদনশীল
  • কিছু পরিমাণ প্রতিযোগিতার আশংকা থাকে

খ. প্রবৃদ্ধি পর্যায়


এই পর্যায়ে পণ্যের বিক্রি বাড়তে থাকে। ফলে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য নিয়ে বাজারে উপস্থিত হয়। বিক্রি বাড়ার কারণে উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে, প্রতি এককে খরচ কমে আসে এবং মুনাফা বৃদ্ধি পায়। প্রবৃদ্ধিকে ধরে রাখার জন্য এ পর্যায়ে কিছু পদক্ষেপ নেয়া লাগে। এগুলো হচ্ছে-


১.পণ্যের মান বাড়ানো এবং বৈচিত্র আনয়ন
২. নতুন নতুন এলাকায় বাজার সম্প্রসারণ
৩. নতুন বিভক্ত বাজারের অংশে প্রবেশ
৪. বন্টন প্রণালীতে পরিবর্তন আনয়ন
৪.বিজ্ঞাপনের মাধ্যম ও প্রকৃতি পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন আনা
৫.অবস্থা বুঝে পণ্যের মূল্য কিছুটা কমিয়ে দেয়া ইত্যাদি।

[বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

গ. পুর্ণতা প্রাপ্তির পর্যায়
এই পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানসমূহ সাধারণত পূর্ণতা প্রাপ্ত পণ্যটি ছেড়ে নতুন পণ্যের দিকে মনোনিবেশ করে। কেউ কেউ পূর্ণতা প্রাপ্ত পণ্যটি নিয়েও ভাবতে পারে। তখন তারা নিম্নে বর্ণিত কৌশল অবলম্বন করতে পারে-

১.বাজার পরিমার্জন প্রচার ও প্ররোচণার মাধ্যমে নতুন ব্যবহারকারী সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাতে পারে। নতুন কোন বাজারের অংশে প্রবেশ করার চেষ্টা করতে পারে।

২.পণ্য পরিমার্জন পূর্ণতার পর্যায়ে কেউ কেউ পণ্যকে এমনভাবে আকর্ষণীয় করে তোলে যাতে নতুন ক্রেতা এর প্রতি আকৃষ্ট হয়। বর্তমানে ক্রেতারাও নতুন করে উৎসাহ পায়। পণ্যের গুণাগুণ, মান, বৈশিষ্ট্য ও স্টাইলে পরিবর্তন এনে এটা করা সম্ভব।

৩. বাজারজাতকরণ মিশ্রণ পরিমার্জন পণ্য মিশ্রণের উপাদানগুলোর প্রতি নজর দিয়েও কেউ কেউ চেষ্টা করেন যাতে বিক্রয় বৃদ্ধির ব্যাপারটি বজায় থাকে।

H.S.C

Leave a Comment