যৌথ মূলধনী কোম্পানি কিও বৈশিষ্ট এবং হােল্ডিং কোম্পানির প্রসার না ঘটার কারণ

১। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যৌথ মূলধনী কোম্পানি এবং হােল্ডিং কোম্পানি সম্পর্কে তােমার নিজের ভাষায় বিস্তারিত বর্ণনা কর।

নির্দেশনাঃ-

১. যৌথ মূলধনী কোম্পানি কি সংক্ষেপে লিখবে।

উত্তর:

সাধারণ অর্থে, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে বহু সংখ্যক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় মিলিত হয়ে এবং যৌথভাবে মূলধন বিনিয়ােগ করে যে । আইনসম্মত কারবার গঠন করে তাকে যৌথ মূলধনী কোম্পানি। বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায় যে, কতিপয় ব্যক্তি স্বেচ্ছায় মিলিত হয়ে মুনাফা অর্জনের নিমিত্তে যৌথভাবে মূলধন সরবরাহ করে। দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে চিরন্তন অস্তিত্ব সম্পন্ন যে কারবার প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলে তাকে যৌথ মূলধনী কোম্পানি বলা হয়।

১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ২৫১) (ঘে) ধারা অনুযায়ী, “কোম্পানি বলতে এ আইনের অধীনে গঠিত ও নিবন্ধিত অথবা কোন বিদ্যমান কোম্পানিকে বুঝায়।”
অধ্যাপক ওয়াই, কে, বুশান এর মতে, “কোম্পানি বলতে আইন স্বীকৃত এমন একটি কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তাকে বুঝায় যার একটা নাম, সাধারণ সীল ও যৌথ মূলধন থাকে এবং যা সীমিত দায় বিশিষ্ট ও হস্তান্তরযােগ্য নির্দিষ্ট মূল্যের শেয়ারে বিভক্ত।

বি:দ্র: উত্তর দাতা রাকিব হোসেন সজল 

২. যৌথ মূলধনী ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট লিখবে।

উত্তর:

যৌথ মূলধনের বৈশিষ্ট্য (Features of Joint Stock Company)

বর্তমানের বৃহদায়তন ব্যবসায় জগতে এ জাতীয় ব্যবসায়ের গুরুত্ব অধিক। এ জাতীয় ব্যবসায়ের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেটি তাকে অন্যা্ন্য ব্যবসায় সংগঠন থেকে আলাদা মর্যাদা আছে। নিচে কোম্পানী সংগঠনের বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষণ করা হলো –

১. যৌথ মূলধনী কোম্পানী একটি আইনসৃষ্ট ব্যবসায় সংগঠন। দেশের প্রচলিত কোম্পানি আইনের আওতায় এব্যবসায় গঠিত হয়। আইনি প্রক্রিয়ার অধীনে হয় বলে এর গঠন বেশ জটিল ও আনুষ্ঠানিকতাপূর্ণ্। আইন আনুযায়ী এর সদস্য সংখ্যা নির্ধারিত হয়। প্রাইভেট লিমিটেড ক্ম্পোনির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২জন এবং সর্বোচ্চ ৫০জন এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সদস্য ৭জন এবং সর্বোচ্চ সংখ্যা শেয়ার সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ।

২. কোম্পানি ব্যবসায় একটি স্বেচ্ছামূলক প্রতিষ্ঠান। কোম্পানি ব্যবসায় করতে আগ্রহী কিছু সংখ্যক ব্যক্তি স্চ্ছোয় সংঘবদ্ধ হয়ে কোম্পানী গঠন করে। তবে সদস্যদের কেউ ইচ্ছাকরলে শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে সহজেই ব্যবসায় থেকে বিদায় নিতে পারে। আবার কেউ ইচ্ছা করলে শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে এর সদস্য পদও লাভ করতে পারে।

৩. আইনের দ্বারা সৃষ্ট বলে এ ব্যবসায়টি কৃত্রিম সত্তার অধিকারী। কৃত্রিম ব্যক্তি সত্তা বলতে বোঝায়। ব্যক্তি না হয়েও ব্যক্তির ন্যায় আইনগত মর্যাদা ও অধিকার অর্জন করা। কোম্পানী যে কোনো স্বাধীন ব্যক্তির মতো নিজ নামে অন্যের সাথে চুক্তি ও লেনদেন করতে পারে এবং প্রয়োজনে মামলা করতে পারে। আবার অন্য কোন পক্ষও কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে।

৪. কোম্পানি ব্যবসায় যেহেতু আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট তাই এর বিলুপ্তি ঘটাতে চাইলে তা করতে হবে আইনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায়। এভাবে সে চিরন্তন অস্তিত্বের মর্যাদা লাভ করে। কোনো শেয়ার হোল্ডারের মৃত্যু, দেউলিয়াত্ব বা শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে কোম্পানির বিলোপ সাধন হয় না।

৫. কৃত্রিম ব্যক্তি হওয়ার কারণে কোম্পানিকে একটি সিল ব্যবহার করতে হয়। কোম্পানির সকল কাজে ও কাগজপত্রে এ সিলের ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

৬. আইনগতভাবেই কোম্পানির মূলধনকে কতকগুলো সমান অঙ্কের ক্ষুদ্র এককে ভাগ করা হয়। এরুপ প্রত্যেকটি একককে একটি করে শেয়ার বলে। শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে কোম্পানি মূলধন সংগ্রহ করে। এজন্য এগুলোকে শেয়ার মূলধন বলে। ১৮ বছরের উর্ধ্বে যে কোনো ব্যক্তি এবং যে কোনো প্রতিষ্ঠান শেয়ার কিনে এর সদস্যপদ লাভ করতে পারে। সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এবং শেয়ার বিক্রি করে মূলধন সংগ্রহ করার সুযোগ থাকার কারণে কোম্পানি ব্যবসায়ে অধিক মূলদনের সমাবেশ ঘটে।

৭. কোম্পানি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে কোম্পানির মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ আলাদা। একমালিকানা বা অংশীদারি ব্যবসায়ের মতো মালিকেরা সরাসরি ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ করে না। ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকে বেতনভুক্ত অন্য একটি পক্ষের উপর। পরিচালক বা মালিকগণ নীতি নির্ধারণ কাজে অংশগ্রহণ করে থাকেন।

৮. কোম্পানি ব্যবসায়ের সদস্যগণের দায় সীমিত। একমালিকানা বা অংশীদারি ব্যবসায়ের মতো অসীম নয়। সদস্যগণের দায় সাধারনত শেয়ার মূ্ল্য ও প্রতিশ্রুতি দ্বারা সীমাবদ্ধ। শেয়ার মূল্য দ্বারা সীমাবদ্ধ বলতে বোঝায় একজন শেয়ার মালিক যে মূল্যমানের শেয়ার কেনে তিনি শুধু সে পরিমাণ অর্থের জন্য দায়ী। অর্থাৎ যদি কোনো শেয়ার মালিক কোনো কোম্পানির ১০০টাকা মূল্যের ১০০টি শেয়ার ক্রয় করেন তাহলে তার দায় শুধু ১০,০০০টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্যদিকে প্রতিশ্রুতি দ্বারা সীমাবদ্ধ কোম্পানিতে একজন শেয়ারমালিক যে পরিমাণ শেয়ার ক্রয়ের জন্য প্রতিশ্রুতি দেন সে পরিমাণ অর্থের জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন।

৯. কোম্পানি ব্যবসায়ের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি ও মূল্যবোধ অনুসরণ করা হয়। শেয়ারমালিকগণ প্রত্যক্ষভাবে ভোট দিয়ে পরিচালনা পরিষদ নিয়োগ করেন এবং পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবসায় পরিচালিত হয়।

বি:দ্র: উত্তর দাতা রাকিব হোসেন সজল 

H.S.C

1 thought on “যৌথ মূলধনী কোম্পানি কিও বৈশিষ্ট এবং হােল্ডিং কোম্পানির প্রসার না ঘটার কারণ”

Leave a Comment