৬ষ্ঠ রোজার ফজিলত,মাহে রমজান ৬ষ্ঠ রোজার ফজিলত

৬ষ্ঠ রোজার ফজিলত,মাহে রমজান ৬ষ্ঠ রোজার ফজিলত

আপনার জন্য: আল কোরআনের অনুবাদ ও প্রতিটি সূরার ফজিলত ও তরজমা

রোজা মুসলমাদের ধর্মীর ৫টি স্তম্বের একটি। ফারসি শব্দ রোজার আরবি অর্থ হচ্ছে সওম, বহুবচনে সিয়াম। সওম বা সিয়ামের বাংলা অর্থ বিরত থাকা। ইসলামী শরীয়তে সওম হল আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশে নিয়তসহ সুবহে সাদিকের শুরু থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নামই সওম বা রোজা।

৬ষ্ঠ রমজানে আমল,৬ষ্ঠ রমজানে ফজিলত ও গুরুত্ব

রমজান মাসের ৩০ দিনের রোজার ৩০টি ফজিলত রয়েছে। সেখানে প্রথম রমজানের ফজিলত সর্ম্পকে বলা হয়, ‘রোজাদারকে নবজাতকের মত নিষ্পাপ করে দেওয়া হয়।’

এছাড়া, রোজা ও রমজান মাস নিয়ে আল কোরআনে বিভিন্ন সময় ‘সওম’ এর প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আয়াত নাজিল হয়েছে।

রমজানের প্রথম ১০ টি রোজার দিন রহমতের। পরের ১০ টি রোজার দিন মাগফেরাতের। এবং সবশেষ ১০ টি রোজার দিন নাজাতের। আজকে আমরা, রহমতের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ম রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করবো।

১ম রোজার ফজিলত

রমজানের প্রথম রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – ”রোজাদারকে নবজাতকের মত নিষ্পাপ করে দেওয়া হয়।”

[১] সিয়াম পালন করা:  ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি রুকন হল সিয়াম। আর রমাদান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। সেজন্য রমাদান মাসের প্রধান আমল হলো সুন্নাহ মোতাবেক সিয়াম পালন করা। মহান আল্লাহ বলেন: “সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে, মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে” [সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৫]

সিয়াম পালনের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ইখলাস নিয়ে অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য রমাদানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ [সহীহ বুখারী : ২০১৪]

২য় রোজার ফজিলত

‘‘যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, তাদ্বারা আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন’’। [সহীহ মুসলিম : ২৭৬৭]

[২] সময় মত সালাত আদায় করা: সিয়াম পালনের সাথে সাথে সময় মত নামায আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে: ‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।’ [সূরা নিসা : ১০৩]

এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে:আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, সময় মত নামায আদায় করা। [সহীহ মুসলিম : ২৬৩]

রমজানের দ্বিতীয় রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – ”রোজাদারের মা -বাবাকে মাফ করে দেওয়া হয়।”

৩য় রোজার ফজিলত

রমজানের তৃতীয় রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “একজন ফেরেশতা আবারও রোজাদারের ক্ষমার ঘোষনা দেয়।”

[৩] সহীহভাবে কুরআন শেখা: রমাদান মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এ মাসের অন্যতম আমল হলো সহীহভাবে কুরআন শেখা। আর কুরআন শিক্ষা করা ফরয করা হয়েছে। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে:‘‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’’ [সূরা আলাক : ১]

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন শেখার নির্দেশ দিয়ে বলেন:‘‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর’’ [মুসনাদ আলজামি : ৯৮৯০]

৪র্থ রোজার ফজিলত

রমজানের চতুর্থ রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “রোজাদারকে আসমানী বড় বড় চার কিতাবের বর্ণ সমান সাওয়াব প্রদান করা হয়।”

 [৪] অপরকে কুরআন পড়া শেখানো: রমাদান মাস অপরকে কুরআন শেখানোর উত্তম সময়। এ মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাহাবীদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৫০২৭]

‘যে আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত শিক্ষা দিবে, যত তিলাওয়াত হবে তার সাওয়াব সে পাবে’ [সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবুবিয়্যাহ : ০৭]

৫ম রোজার ফজিলত

রমজানের পঞ্চম রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “মক্কা নগরীর মসজিদে হারামে নামাজ আদায়ের সাওয়াব দেওয়া হয়।”

[৫] সাহরী খাওয়া: সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং সিয়াম পালনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদীসে এসেছে: ‘‘সাহরী হল বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরী খাওয়া বাদ দিয়ো না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী খেয়ে নাও। কেননা সাহরীর খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন’’ [মুসনাদ আহমাদ : ১১১০১, সহীহ]

৬ষ্ঠ রোজার ফজিলত

রমজানের ষষ্ঠ রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “ফেরেশতাদের সাথে ৭ম. আকাশে অবস্থিত বাইতুল মামূর তাওয়াফের সাওয়াব প্রদান করা হয়।”

[৬] সালাতুত তারাবীহ পড়া: সালাতুত তারাবীহ পড়া এ মাসের অন্যতম আমল। তারাবীহ পড়ার সময় তার হক আদায় করতে হবে। হাদীসে এসেছে: ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমাদানে কিয়ামু রমাদান (সালাতুত তারাবীহ) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’ [সহীহ আল-বুখারী : ২০০৯]

তারাবীহ এর সালাত তার হক আদায় করে অর্থাৎ ধীরস্থীরভাবে আদায় করতে হবে। তারাবীহ জামায়াতের সাথে আদায় করা সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে আছে: ‘‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে প্রস্থান করা অবধি সালাত আদায় করবে (সালাতুত তারাবীহ) তাকে পুরো রাত কিয়ামুল লাইলের সাওয়াব দান করা হবে’’ [সুনান আবূ দাউদ : ১৩৭৭, সহীহ]

৭ম রোজার ফজিলত

রমজানের সপ্তম রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “ফিরাউনের বিরুদ্ধে মুসা আঃ এর পক্ষে সহযোগিতা করার সমান সাওয়াব প্রদান করা হয়।”

[৭] বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা: এটি কুরআনের মাস। তাই এ মাসে অন্যতম কাজ হলো বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ’’ [সুনান আত-তিরমিযী: ২৯১০, সহীহ]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদান ব্যতীত কোন মাসে এত বেশি তিলাওয়াত করতেন না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘‘রমাদান ব্যতীত অন্য কোনো রাত্রিতে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করতে, কিংবা ভোর অবধি সালাতে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোযা পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখি নি’’ [সহীহ মুসলিম : ১৭৭৩]

৮ম রোজার ফজিলত

রমজান মাসের অষ্টম রোজার ফজিলত সম্পর্কে এভাবে বলা হয় যে, – “রোজাদারের উপর হযরত ইবরাহীম আঃ এর মতো রহমত- বর্ষিত হয়।”

[৮] শুকরিয়া আদায় করা: রমাদান মাস পাওয়া এক বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। সেজন্য আল্লাহ তা‘আলার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা এবং আগামী রমাদান পাওয়ার জন্য তাওফীক কামনা করা। রমাদান সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে: ‘‘আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’’ [সূরা আলবাকারাহ : ১৮৫]

‘‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন’।’’ [সূরা ইবরাহীম : ৭]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করে বলতেন অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য [সুনান আত-তিরমিযী : ২৭৩৮]

৯ম রোজার ফজিলত

রমজান মাসের নবম রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “নবী-রাসূলদের সাথে দাড়িয়ে ইবাদতের সমান সওয়াব দেওয়া হয়।”

[৯] কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা: এ মাসটিতে একটি ভাল কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। সেজন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি ভাল কাজ করতে হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহবান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি আরো অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জান?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তায়ালা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন’’ [সুনান আত-তিরমিযী : ৬৮৪]

১০ম রোজার ফজিলত

রমজানের দশম রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “রোজাদারকে উভয় জাহানের কল্যাণ দান করা হয়।”

[১০] সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়া: রমাদান মাস ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে বিরাট সাওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। রমাদানের কারণে আরো বেশি ফজিলত রয়েছে। যেহেতু সাহরী খাওয়ার জন্য উঠতে হয় সেজন্য রমাদান মাসে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করার বিশেষ সুযোগও রয়েছে। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত’’ [সহীহ মুসলিম : ২৮১২]

১১ তম রোজার ফজিলত

রমজান মাসের ১১ নম্বর রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “রোজাদারের মৃত্যু নবজাতকের ন্যায় নিষ্পাপ নিশ্চিত হয়।”

[১১] বেশি বেশি দান-সদাকাহ করা: এ মাসে বেশি বেশি দান-সাদাকাহ করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান খয়রাত করা। হিসাব করে এ মাসে যাকাত দেয়া উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি দান খয়রাত করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমাদানে তাঁর এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেত’’ [সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২]

১২ তম রোজার ফজিলত

রমজানের ১২ তারিখের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “হাশরের ময়দানে রোজাদারের চেহারা পূর্ণিমা চাদের মতো উজ্জল করা হবে।”

[১২] উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা: রমাদান মাস নিজকে গঠনের মাস। এ মাসে এমন প্রশিক্ষণ নিতে হবে যার মাধ্যমে বাকি মাসগুলো এভাবেই পরিচালিত হয়। কাজেই এ সময় আমাদেরকে সুন্দর চরিত্র গঠনের অনুশীলন করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশস্নীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোযা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে সে যেন বলে, আমি রোযাদার’’ [সহীহ মুসলিম : ১১৫১]

১৩ তম রোজার ফজিলত

রমজানের ১৩ নম্বর রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “হাশরের ময়দানের সকল বিপদ থেকে নিরাপদ করা হবে।”

[১৩] ই‘তিকাফ করা: ই‘তিকাফ অর্থ অবস্থান করা। অর্থাৎ মানুষদের থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইসতিগফার ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্যে একাকী কিছু সময় যাপন করা। এ ইবাদাতের এত মর্যাদা যে, প্রত্যেক রমাদানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদানের শেষ দশ দিন নিজে এবং তাঁর সাহাবীগণ ই‘তিকাফ করতেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: ‘‘প্রত্যেক রমাযানেই তিনি শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমযানে তিনি ইতিকাফ করেছিলেন বিশ দিন’’ । দশ দিন ই‘তেকাফ করা সুন্নাত। [সহীহ আলবুখারী : ২০৪৪]

১৪ তম রোজার ফজিলত

রমজানের ১৪ তারিখের রোজার ফজিলত সম্পর্কে এভাবে বলা হয় – “হাশরের ময়দানে হিসাব- নিকাশ সহজ করা হবে।”

[১৪] দাওয়াতে দ্বীনের কাজ করা: রমাদান মাস হচ্ছে দ্বীনের দাওয়াতের সর্বোত্তম মাস। আর মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকাও উত্তম কাজ। এজন্য এ মাসে মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার জন্য আলোচনা করা, কুরআন ও হাদীসের দারস প্রদান, বই বিতরণ, কুরআন বিতরণ ইত্যাদি কাজ বেশি বেশি করা। আলকুরআনের ঘোষণা : ‘‘ঐ ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং ঘোষণা করলো, আমি একজন মুসলিম’’ [সূরা হা-মীম সাজদাহ : ৩৩]

হাদীসে এসেছে:‘‘ভাল কাজের পথ প্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারী অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’ [সুনান আত-তিরমীযি : ২৬৭০]

১৫ তম রোজার ফজিলত

রমজানের ১৫ নম্বর রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “সমস্ত ফিরিস্তারা রোজাদারের জন্য দোয়া করে।”

 [১৫] সামর্থ্য থাকলে উমরা পালন করা: এ মাসে একটি উমরা করলে একটি হাজ্জ আদায়ের সমান সাওয়াব হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘রমাদান মাসে উমরা করা আমার সাথে হাজ্জ আদায় করার সমতুল্য’’ [সহীহ আলবুখারী : ১৮৬৩]

১৬ তম রোজার ফজিলত

রমজান মাসের ১৬ তারিখের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “আল্লাহপাক রোজাদারকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করেন।”

[১৬] লাইলাতুল কদর তালাশ করা: রমাদান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল-কুরআনের ঘোষণা: ‘‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’’ [সূরা কদর : ৪]

হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদাত করবে তাকে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৩৫]

এ রাত পাওয়াটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। এক হাদীসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সময়ের তুলনায় রমদানের শেষ দশ দিনে অধিক হারে পরিশ্রম করতেন’’ [সহীহ মুসলিম : ১১৭৫]

 লাইলাতুল কদরের দো‘আ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর নবী ! যদি আমি লাইলাতুল কদর পেয়ে যাই তবে কি বলব ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বলবেঃ ‘‘হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’’ [সুনান আত-তিরমিযী : ৩৫১৩]

১৭ তম রোজার ফজিলত

রমজানের ১৭ তারিখের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “একদিনের জন্য নবীগনের সমান সাওয়াব দেওয়া হবে।”

[১৭] বেশি বেশি দো‘আ ও কান্নাকাটি করা: দো‘আ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এজন্য এ মাসে বেশি বেশি দো‘আ করা ও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি কান্নাকাটি করা। হাদীসে এসেছে: ‘‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাববুল আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমাদানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে’’ [আল জামিউস সাগীর : ৩৯৩৩]

অন্য হাদীসে এসেছে: ‘‘রমযানের প্রতি দিবসে ও রাতে আল্লাহ তা‘আলা অনেককে মুক্ত করে দেন। প্রতি রাতে ও দিবসে প্রতি মুসলিমের দো‘আ কবূল করা হয়’’ [সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ১০০২]

১৮ তম রোজার ফজিলত

রমজানের ১৮ নম্বর রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “রোজাদার এবং তার মা-বাবার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টির সংবাদ দেওয়া হয়।”

[১৮] ইফতার করা: সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা বিরাট ফজিলাতপূর্ণ আমল। কোন বিলম্ব না করা । কেননা হাদীসে এসেছে: ‘‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র ’’ [সুনান আবু দাউদ : ২৩৫৭, সহীহ]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন : “পিপাসা নিবারিত হল, শিরা উপশিরা সিক্ত হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হল।” [সুনান আবূ-দাউদ: ২৩৫৯, সহীহ]

অপর বর্ণনায় যে এসেছে- “হে আল্লাহ! তোমার জন্য রোযা রেখেছি, আর তোমারই রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।” এর সনদ দুর্বল। আমাদের উচিত সহীহ হাদীসের উপর আমল করা। [সুনান আবু দাউদ :২৩৫৮] 

১৯ তম রোজার ফজিলত

রমজানের ১৯ নম্বর রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “পৃথিবীর সকল পাথর-কংকর টিলা- টংকর রোজাদারের জন্য দোয়া করতে থাকে।”

[১৯] ইফতার করানো: অপরকে ইফতার করানো একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে একজনকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা দরকার। কেননা হাদীসে এসেছে: ‘‘যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের সাওয়াব হতে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না’’ [সুনান ইবন মাজাহ : ১৭৪৬, সহীহ]

২০ তম রোজার ফজিলত

রমজানের ২০ রোজার ফজিলত সম্পর্কে এভাবে বলা হয় – “আল্লাহরপথে জীবন দানকারী শহীদের সমান সাওয়াব প্রদান করা হয়।”

 [২০] তাওবাহ ও ইস্তেগফার করা: তাওবাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ ফিরে আসা, গুনাহের কাজ আর না করার সিদ্ধান্ত নেয়া। এ মাস তাওবাহ করার উত্তম সময়। আর তাওবাহ করলে আল্লাহ খুশী হন। আল-কুরআনে এসেছে: ‘‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাটি তাওবা; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত’’ [সূরা আত-তাহরীম : ৮]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর আমি দিনে তাঁর নিকট একশত বারের বেশি তাওবাহ করে থাকি’’ [সহীহ মুসলিম : ৭০৩৪]

 তবে তাওবাহ ও ইস্তেগফারের জন্য উত্তম হচ্ছে, মন থেকে সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পড়া, আর তা হচ্ছে ‘‘হে আল্লাহ, তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া প্রকৃত এবাদতের যোগ্য কেউ নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আর আমি তোমার গোলাম আর আমি সাধ্যমত তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকারের উপর অবিচল রয়েছি। আমার কৃত-কর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমাকে যত নেয়ামত দিয়েছে সেগুলোর স্বীকৃতি প্রদান করছি। যত অপরাধ করেছি সেগুলোও স্বীকার করছি। অত:এব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ, তুমি ছাড়া ক্ষমা করার কেউ নেই।’’

ফযিলাত: ‘‘যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের বেলা এই দু‘আটি (সাইয়েদুল ইসতিগফার) পাঠ করবে ঐ দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে মৃত্যু বরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে এবং যে কেউ ইয়াকিনের সাথে রাত্রিতে পাঠ করবে ঐ রাত্রিতে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে।’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৬৩০৬]

২১ তম রোজার ফজিলত

২১ শে রমজানের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “রোজাদারের জন্য জান্নাতে একটি উজ্জল প্রাসাদ নির্মান করা হয়।”

 [২১] তাকওয়া অর্জন করা: তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাহকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমাদান মাস তাকওয়া নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ মৌসুম। কুরআনে এসেছে: ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো’’ [সূরা আলবাকারাহ : ১৮৩]

যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। [সূরা তালাক : ০২]

২২ তম রোজার ফজিলত

২২ শে রমজানের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “হাশরের ময়দানের সকল চিন্তা থেকে মুক্ত করা হয়।”

[২২] ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা:ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা। এটি একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি ফজর জামাআত আদায় করার পর সূর্য উদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করবে, অতঃপর দুই রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ হাজ্জ ও উমারাহ করার প্রতিদান পাবে। [সুনান আত-তিরমিযী : ৫৮৬]

২৩ তম রোজার ফজিলত

রমজানের ২৩ তারিখের রোজার ফজিলতের বর্ণনা এভাবে বলা হয় – “জান্নাতে রোজাদারের জন্য একটি শহর নির্মান করা হয়।”

 [২৩] ফিতরাহ দেয়া: এ মাসে সিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণার্থে ফিতরাহ দেয়া আবশ্যক। ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাত আদায়ের পুর্বে ফিতরাহ আদায় করার আদেশ দিলেন। [সহীহ আল-বুখারী :১৫০৩]

২৪ তম রোজার ফজিলত

রমজানের ২৪ তারিখের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “রোজাদারের যে কোন 24টি দোয়া কবুল করা হয়।”

 [২৪] অপরকে খাদ্য খাওয়ানো: রমাদান মাসে লোকদের খাওয়ানো, বিশেষ করে সিয়াম পালনকারী গরীব, অসহায়কে খাদ্য খাওয়ানো বিরাট সাওয়াবের কাজ । কুরআনে এসেছে: তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে। [সূরা আদ-দাহর: ৮]

এ বিষয়ে হাদীসে বলা হয়েছে: ‘‘আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, একজন লোক এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামে উত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, অন্যদেরকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া’’ [সহীহ আল-বুখারী : ১২]

অপর বর্ণনায় বর্ণিত আছে যে :‘‘যে কোনো মুমিন কোনো ক্ষুধার্ত মুমিনকে খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। [বাইহাকী, শু‘আবুল ইমান : ৩০৯৮, হাসান]

২৫ তম রোজার ফজিলত

২৫ রমজানের রোজার ফজিলত সম্পর্কে স্বতন্ত্রভাবে বলা হয় – “কবরের শাস্তি চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়।”

[২৫] আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নীত করা: আত্মীয়তার সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর তা রক্ষা করাও একটি ইবাদাত। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আরও তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক। [সূরা আন-নিসা: ১]

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:“সালাম বিমিয়ের মাধ্যমে হলেও আত্নীয়তার সম্পর্ক তরতাজা রাখ।” [সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবওয়িয়্যাহ : ১৩]

২৬ তম রোজার ফজিলত

রমজানের ২৬ তারিখের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় যে, – ”৪০ বছর ইবাদতের সমান সওয়াব প্রদান করা হয়।”

[২৬] কুরআন মুখস্থ বা হিফয করা: কুরআন হিফয করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নিজেই কুরআন হিফযের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এ দায়িত্ব মূলত বান্দাদেরকে কুরআন হিফয করানোর মাধ্যমেই সম্পাদন করেন। কুরআনে এসেছে: ‘‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হিফাযতকারী’’ [সূরা আল-হিজর: ৯]

যে যত বেশি অংশ হিফয করতে পারবে তা তার জন্য ততই উত্তম।আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘কুরআনের ধারক-বাহককে বলা হবে কুরআন পড়ে যাও, আর উপরে উঠতে থাক, ধীর-স্থিরভাবে তারতীলের সাথে পাঠ কর, যেমন দুনিয়াতে তারতীলের সাথে পাঠ করতে। কেননা জান্নাতে তোমার অবস্থান সেখানেই হবে, যেখানে তোমার আয়াত পড়া শেষ হবে” [সুনান আত-তিরমিযী : ২৯১৪]

২৭ তম রোজার ফজিলত

২৭ শে রমজানের রোজার ফজিলতের বর্ণনা এভাবে করা হয় – “চোখের পলকে পুলসিরাত পার করে দেওয়া হয়।”

[২৭] আল্লাহর যিকর করা: এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘আল্লাহ তা’আলা চারটি বাক্যকে বিশেষভাবে নির্বাচিত করেছেন, তাহলো যে ব্যক্তি পড়বে, তার জন্য দশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি  পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি  পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে পড়বে, তার জন্য ত্রিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর ত্রিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়’’। [মুসনাদ আহমাদ : ১১৩৪৫]

২৮ তম রোজার ফজিলত

রমজানের ২৮ তারিখের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “জান্নাতের নেয়ামত দ্বিগুন করা হয়।”

[২৮] মিসওয়াক করা: মেসওয়াকের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদীসে এসেছে: অর্থাৎ মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী, এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা রেখেও মেসওয়াক করতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়। [সহীহ ইবন খুযাইমাহ : ১৩৫]

২৯ তম রোজার ফজিলত

২৯ শে রমজানের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – “এক হাজার কবুল হজ্জের সাওয়াব প্রদান করা হয়।”

 [২৯] একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো: রমাদান মাসে একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো একটি উত্তম আমল। এটিকে দাওর বলা হয়। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে: জিবরাইল আলাইহিস সালাম রমাদানের প্রতি রাতে রমাদানের শেষ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসূল তাকে কুরআন শোনাতেন। [সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২]

ইবনে হাজার রাহেমাহুল্লাহ্ বলেন : জিবরাইল প্রতি বছর রাসূলের সাথে সাক্ষাৎ করে এক রমযান হতে অন্য রমযান অবধি যা নাযিল হয়েছে, তা শোনাতেন এবং শুনতেন। যে বছর রাসূলের অন্তর্ধান হয়, সে বছর তিনি দু বার শোনান ও শোনেন ।

৩০ তম রোজার ফজিলত

আর রমজানের ৩০ তারিখ অর্থাৎ শেষ রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয় – ”পুরো রমজানের ফজিলত দ্বিগুণ করা হয়।”

[৩০] কুরআন বুঝা ও আমল করা: কুরআনের এ মাসে কুরআন বুঝা ও আমল করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। কুরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা। এ বিষয়ে কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে: ‘তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর’। [সূরা আল-আ‘রাফ : ৩]

কুরআনের জ্ঞানে পারদর্শী আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: ‘আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কুরআনের দশটি আয়াত শিক্ষা গ্রহণ করতাম, এরপর ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা পরবর্তী দশটি আয়াত শিক্ষা করতাম না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা এই দশ আয়াতের ইলম ও আমল শিখতাম’ [শরহে মুশকিলুল আছার : ১৪৫০]

যা করণীয় নয়:

রমাদান মাসের ফজিলত হাসিল করার জন্য এমন কিছু কাজ রয়েছে যা থেকে বিরত থাকা দরকার, সেগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :

1. বিলম্বে ইফতার করা
2. সাহরী না খাওয়া
3. শেষের দশ দিন কেনা কাটায় ব্যস্ত থাকা
4. মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা
5. অপচয় ও অপব্যয় করা
6. তিলাওয়াতের হক আদায় না করে কুরআন খতম করা
7. জামা‘আতের সাথে ফরয সালাত আদায়ে অলসতা করা
8. বেশি বেশি খাওয়া
9. রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদাত করা
10. বেশি বেশি ঘুমানো
11. সংকট তৈরি করা জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য
12. অশ্লীল ছবি, নাটক দেখা
13. বেহুদা কাজে রাত জাগরণ করা
14. বিদ‘আত করা
15. দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা

রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব,রোজার ফজিলত

বিস্তারিত

রমজানের ৩০ রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়, তবে স্বতন্ত্রভাবে রমজানের ৩০ দিনের ৩০টি ফজিলত সম্পর্কে কোনো বর্ণনা নেই। যদিও আমাদের সমাজে বিভিন্ন ভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটে স্বতন্ত্রভাবে বলা হয় যে, প্রতিটি রোজার জন্য আলাদা আলাদা ফজিলত রয়েছে। যা সম্পূর্ণরূপে বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন বর্ণনা।

এই ব্লগটি থেকে আমরা সঠিক বিষয় গুলো জানবো এবং সেইসাথে প্রচলিত যেই বানোয়াট কথাগুলো অনলাইন মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তার একটি নমুনাও দেখবো। এরই মাধ্যমে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

রমজানের ৩০ রোজার ফজিলত | (রমজানের ৩০ দিনের ৩০টি ফজিলত)

সোশ্যাল প্লাটফর্ম গুলোকে ৩০ রোজার যে ৩০টি স্বতন্ত্র ফজিলতের কথা বলা হয়, তার একটি লিস্ট হুবহু দেওয়া হলো। এই লিস্টটি দেওয়ার মানে হলো, আপনারা যখন ৩০ রোজার ৩০টি স্বতন্ত্র ফজিলতের কথা শুনবেন তখন নিশ্চই সত্যতা যাচাই করতে পারবেন।

সাহ্‌রি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৪ সাল পেতে ক্লিক করুন

হয়রত মুহাম্মদ (স.) এর মক্কা থেকে মদিনা হিজরতের ২য় হিজরীর শাবান মাস থেকে রোজা শুরু হয়। সে সময় রোজা ফরজ সংক্রান্ত আয়াত নাজিল হয়। সেখানে বলা হয় “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো যেভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা সংযমী হও”। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)।

সূরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সেই মাসকে পায় সে যেন রোজা রাখে”।

ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেমরা কোরআনের আলোকে রোজার তাৎপর্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, এটা ধৈর্য্যের মাস। আর ধৈর্য্যের সওয়াব হলো বেহেশত। এটা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। এটা সেই মাস যে মাসে মুমিন বান্দার রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

রমজানের শেষ দশকের ফজিলত ও তাৎপর্য

বিস্তারিত

আপনার জন্য: আল কোরআনের অনুবাদ ও প্রতিটি সূরার ফজিলত ও তরজমা

রমজান মাসে ৩০ দিনের যে ৩০ টি ফজিলত 

১ম রোজ৭ম রোজ১৩তম রোজ১৯তম রোজ২৫তম রোজ
২য় রোজ৮ম রোজ১৪তম রোজ২০তম রোজ২৬তম রোজ
৩য় রোজ৯ম রোজ১৫তম রোজ২১তম রোজ২৭তম রোজ
৪র্থ রোজ১০ম রোজ১৬তম রোজ২২তম রোজ২৮তম রোজ
৫ম রোজ১১তম রোজ১৭তম রোজ২৩তম রোজ২৯তম রোজ
৬ষ্ঠ রোজ১২তম রোজ১৮তম রোজ২৪তম রোজ৩০তম রোজ

সহবাস কি?,রমজানের রোজার সময় কখন সহবাস করা যাবে জেনে নিন,

বিস্তারিত

শবে কদর নামাজের নিয়ম, শবে কদরের জিকির ও দোয়া

বিস্তারিত

রমজান মাসের ৯টি ফজিলত

বিস্তারিত

তারাবির নামাজের নিয়ত,তারাবির নামাজের দোয়া

বিস্তারিত

রোজা রাখার শারীরিক উপকারিতা,স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে রোজার তাৎপর্য ও উপকারিতা

বিস্তারিত

রোজা রাখার অবাক করা মেডিকেল উপকারিতা

বিস্তারিত

লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো

বিস্তারিত

রমজান মাসে ৩০ দিনের যে ৩০ টি ফজিলত এর কথা বলা হয় তা কী

বিস্তারিত

ইতিকাফের ফজিলত ও জরুরি বিধি-বিধান

বিস্তারিত

রমজান মাসে ৩০ দিনের যে ৩০ টি ফজিলত 

১ম রোজ৭ম রোজ১৩তম রোজ১৯তম রোজ২৫তম রোজ
২য় রোজ৮ম রোজ১৪তম রোজ২০তম রোজ২৬তম রোজ
৩য় রোজ৯ম রোজ১৫তম রোজ২১তম রোজ২৭তম রোজ
৪র্থ রোজ১০ম রোজ১৬তম রোজ২২তম রোজ২৮তম রোজ
৫ম রোজ১১তম রোজ১৭তম রোজ২৩তম রোজ২৯তম রোজ
৬ষ্ঠ রোজ১২তম রোজ১৮তম রোজ২৪তম রোজ৩০তম রোজ

Leave a Comment