সূরা হাশ্‌র সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল হাশ্‌র আলমল ও ফজিলত, সূরা হাশ্‌র কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত, সূরা হাশ্‌র নাযিলের কারন গুলো কি কি ,কুরআন ৫৯ সূরা আল – হাশ্‌র

আজকের বিষয়: সূরা হাশ্‌র সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল হাশ্‌র আলমল ও ফজিলত, সূরা হাশ্‌র কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত, সূরা হাশ্‌র নাযিলের কারন গুলো কি কি ,কুরআন ৫৯ সূরা আল – হাশ্‌র

নামকরণ

সূরাটির দ্বিতীয় আয়াতের (. . . ) অংশ থেকে এর নাম গৃহীত হয়েছে । অর্থাৎ এটি সেই সূরা যার মধ্যে ‘আল হাশর’শব্দের উল্লেখ আছে ।

নাযিল হওয়ার সময়-কাল 

বুখারী ও মুসলিম হাদীস গ্রন্থদ্বয়ে সা’ঈদ ইবনে জুবাইর থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে সূরা হাশর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ সূরা আনফাল যেমন বদর যুদ্ধ সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল তেমনি সূরা হাশর বনী নযীর যুদ্ধ সম্পর্কে নাযিল হয়েছে । হযরত সা’ঈদ ইবনে যুবাইরের দ্বিতীয় বর্ণনায় ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বক্তব্য এরূপ(. . . ) অর্থাৎএরূপ বলো যে, এটা সূরা নাযীর । মুজাহিদ, কাতাদা, যুহরী, ইবনে যায়েদ , ইয়াযীদ ইবনে রূমান, মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক এবং অন্যদের থেকেও একথাটিও বর্ণিত হয়েছে । তাদের সবার ঐকমত্যভিত্তিক বর্ণনা হলো, এ সূরাতে যেসব আহলে কিতাবের বহিষ্কারের উল্লেখ আছে তারা বনী নযীর গোত্রেরই লোক । ইয়াযীদ ইবনে রূমান, মুজাহিদ এবং মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাকের বক্তব্য হলো, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গোটা সূরাটিই বনী নাযীর যুদ্ধ সম্পর্কে নাযিল হয়েছে ।

এখন প্রশ্ন হলো, এ যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়েছিল? এ সম্পর্কে ইমাম যুহরী উরওয়া ইবনে যুবায়েরের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্না করেছেন যে, এ যুদ্ধ বদর যুদ্ধের ছয় মাস পরে সংঘটিত হয়েছিল । কিন্তু ইবনে সা’দ, ইবনে হিশাম এবং বালাযুরী একে হিজরী চতুর্থ সনের রবিউল আউয়াল মাসের ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন । আর এটিই সঠিক মত । কারণ সমস্ত বর্ণনা এ বিষয়ে একমত যে, এ যুদ্ধ ‘বি’রে মা’উনা’র দুঃখজনক ঘটনার পরে সংঘঠিত হয়েছিল । এ বিষয়টিও ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, ‘বি’রে মা’উনা’র মর্মান্তিক ঘটনা ওহুদ যুদ্ধের পরে ঘটেছিল- আগে নয় ।

ঐতিহাসিক পটভূমি 

এ সূরার বিষয়বস্তু ভালভাবে বুঝতে হলে মদীনা ও হিজাযের ইহুদীদের ইতিহাসের প্রতি একবার দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন । তা নাহলে নবী (সা) তাদের বিভিন্ন গোত্রের সাথে যে আচরণ করেছিলেন তার প্রকৃত কারণসমূহ কি ছিল কেউ তা সঠিকভাবে জানতে পারবে না ।

আরবের ইহুদীদের নির্ভরযোগ্য কোন ইতিহাস দুনিয়ায় নেই । তারা নিজেরাও পুস্তক বা শিলালিপি, আকারে এমন কোন লিখিত বিষয় রেখে যায়নি যা তাদের অতীত ইতিহাসের ওপর আলোকপাত করতে পারে । তাছাড়া আরবের বাইরের ইহুদী ঐতিহাসিক কিংবা লেখকগণও তাদের কোন উল্লেখ করেননি । এর কারণ হিসেবে বলা হয়, আরব উপদ্বীপে এসে তারা তাদের স্বজাতির অন্য সব জাতি -গোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল । তাই দুনিয়ার ইহুদীরা তাদেরকে স্বজাতীয় লোক বলে মনেই করতো না । কারণ তারা ইহুদী সভ্যতা-সংস্কৃতি , ভাষা এমনকি নাম পর্যন্ত পরিত্যাগ করে আরবী ভাবধারা গ্রহণ করেছিল । হিজাযের প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনাদির মধ্যে যেসব শিলালিপি পাওয়া গিয়েছে তাতে খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীর পূর্বে ইহুদীদের কোন নাম নিশানা বা উল্লেখ পাওয়া যায় না । এতে শুধুমাত্র কয়েকজন ইহুদীর নাম পাওয়া যায় । এ কারণে আরব ইহুদীদের ইতিহাসের বেশীর ভাগ আরবদের মধ্যে প্রচলিত মৌখিক বর্ণনার ওপরে নির্ভরশীল । এরও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইহুদীদের নিজেদেরই প্রচারিত ।

হিজাযের ইহুদীরা দাবী করতো যে, তারা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের জীবনকালের শেষদিকে সর্বপ্রথম এখানে এসে বসতি স্থাপন করে । এই কাহিনী বর্ণনা করে তারা বলতো , হযরত মূসা (আ) আমালেকাদের বহিস্কারের উদ্দেশ্যে তাঁর একটি সেনাদলকে ইয়াসরিব অঞ্চল দিয়ে পাঠিয়েছিলেন । তিনি তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, ঐ জাতির কোন ব্যক্তিকেই যেন জীবিত রাখা না হয় । বনী ইসরাঈলদের এই সেনাদল নবীর নির্দেশ মোতাবেক কাজ করল । তবে, আমালেকাদের বাদশার একটি সুদর্শন যুবক ছেলে ছিল । তারা তাকে হত্যা করল না । বরং সাথে নিয়ে ফিলিস্তিনে ফিরে গেল । এর পূর্বেই হযরত মূসা (আ) ইনতিকাল করেছিলেন । তাঁর স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তিবর্গ এতে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করলেন । তারা বললেনঃ একজন আমালেকীকেও জীবিত রাখা নবীর নির্দেশ এবং মূসার শরীয়াতের বিধি-বিধানের স্পষ্ট লংঘন । তাই তারা উক্ত সেনাদলকে তাদের জামায়াত থেকে বহিষ্কার করে । বাধ্য হয়ে দলটিকে ইয়াসরিবে ফিরে এসে এখানেই বসবাস করতে হয় । (কিতাবুল আগানী, ১৯তম খণ্ড , পৃষ্ঠা-৯৪ ) এভাবে ইহুদীরা যেন দাবী করছিল যে, খৃষ্টাপূর্ব ১২শ’বছর পূর্বে থেকেই তারা এখানে বসবাস করে আসছে । কিন্তু বাস্তবে এর পেছনে কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই । সম্ভবত এ কাহীনি তারা এ জন্য গড়ে নিয়েছিল যাতে আরবের অধিবাসীদের কাছে তারা নিজেদের সুপ্রাচীন ও অভিজাত হওয়া প্রমাণ করতে পারে ।


আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ  


ইহুদীদের নিজেদের বর্ণনা অনুসারে খৃস্টপূর্ব ৫৮৭ সনে বাস্তুভিটা ত্যাগ করে আরেকবার এদেশে তাদের আগমন ঘটেছিল । এই সময় বাবেলের বাদশাহ ‘বখতে নাসসার’ বায়তুল মাকদাস ধ্বংস করে ইহুদীদেরকে সারা পৃথিবীতে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল । আরবের ইহুদীরা বলতো, সেই সময় আমাদের কিছু সংখ্যক গোত্র এসে ওয়াদিউল কুরা, তায়মা, এবং ইয়াসরিবে বসতি স্থাপন করেছিল । (ফুতূহুল বুলদান, আল বালাযুরী) কিন্তু এর পেছনেও কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই । অসম্ভব নয় যে, এর মাধ্যমেও তারা তাদের প্রাচীনত্ব প্রমাণ করতে চায় ।

প্রকৃতপক্ষে এ ক্ষেত্রে যে বিষয়টি প্রমাণিত তা হলো, ৭০ খৃস্টাব্দে রোমানরা যখন ফিলিস্তিনে ইহুদীদের ওপর গণহত্যা চালায় এবং ১৩২ খৃস্টাব্দে এই ভূখণ্ড থেকে তাদের সম্পূর্ণরূপে বহিস্কার করে সেই সময় বহু সংখ্যক ইহুদী গোত্র পালিয়ে হিজাযে এসে আশ্রয় নিয়েছিলো । কেননা, এই এলাকা ছিল ফিলিস্তিনের দক্ষিণাঞ্চল সংলগ্ন । এখানে এসে তারা যেখানেই ঝর্ণা ও শ্যামল উর্বর স্থান পেয়েছে সেখানেই বসতি গড়ে তুলেছে এবং পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে ষড়যন্ত্র ও সুদী কারবারের মাধ্যমে সেসব এলাকা কুক্ষিগত করে ফেলেছে । আয়লা, সাকনা, তাবুক, তায়মা, ওয়াদিউল কুরা, ফাদাক, এবং খায়বরের ওপরে এই সময়েই তাদের আধিপত্য কায়েম হয়েছিলো । বনী কুরাইযা , বনী নাযির, বনী বাহদাল এবং বনী কায়নুকাও এ সময়ই আসে এবং ইয়াসরিবের ওপর আধিপত্য কায়েম করে ।

ইয়াসরিবে বসতি স্থাপনকারী ইহুদী গোত্রসমূহের মধ্যে বনী নাযির ও বনী কুরায়যা ছিল বিশেষভাবে উল্লখযোগ্য । কারণ তারা ইহুদী পুরোহিত (Cohens বা Priests) শ্রেণীর অন্তরভুক্ত ছিল । ইহুদীদের মধ্যে তাদের অভিজাত বলে মান্য করা হতো এবং স্বজাতির মধ্যে তারা ধর্মীয় নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকারী ছিল । এরা যে সময় মদীনায় এসে বসতি স্থাপন করে তখন কিছু সংখ্যক আরব গোত্রও এখানে বসবাস করতো । ইহুদীরা তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এবং কার্যত শস্য-শ্যামল উর্বর এই বুখণ্ডের মালিক মোখতার হয়ে বসে । এর প্রায় তিন শ’বছর পরে ৪৫০অথবা ৪৫১ খৃস্টাব্দে ইয়ামানে সেই মহাপ্লাবন আসে সূরা সাবার দ্বিতীয় রুকূ’তে যার আলোচনা করা হয়েছে । এই প্লাবনের কারণে সাবা কওমের বিভিন্ন গোত্র ইয়ামান ছেড়ে আরবের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয় । এদের মধ্য থেকে গাসসানীরা সিরিয়ার, লাখমীরা হীরায় (ইরাক) , বনী খুযা’আ জিদ্দা ও মক্কার মধ্যবর্তী এলাকায় এবং আওস ও খাযরাজ ইয়াসরিবে গিয়ে বসতি স্থাপন করে । ইহুদীরা যেহেতু আগে থেকেই ইয়াসরিবের ওপর কর্তৃত্ব ও আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল । তাই প্রথম প্রথম তারা আওস ও খাযরাজ গোত্রকে কর্তৃত্ব চালানোর কোন সুযোগ দেয়নি । তাই দুটিগোত্র অনুর্বর এলাকায় বসতি স্থাপন করতে বাধ্য হয় যেখানে জীবন ধারণের ন্যূনতম উপকরণেও তারা খুব কষ্টে সংগ্রহ করতে পারতো । অবশেষে তাদের একজন নেতা তাদের স্বগোত্রীয় গাসসানী ভাইদের সাহায্য প্রার্থনা করতে সিরিয়া গমন করে এবং সেখান থেকে একটি সেনাদল এনে ইহুদীদের শক্তি চূর্ণ করে দেয় । এভাবে আওস ও খাযরাজ ইয়াসরিবের ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব ও আধিপত্য লাভ করে এবং ইহুদীদের দু’টি বড় গোত্র বনী নযীর ও বনী কুরায়যা শহরের বাইরে গিয়ে বসতি স্হাপন করতে বাধ্য হয় । তৃতিয় আরেকটি ইহুদী গোত্র বনী কায়নুকার যেহেতু বনু কুরাইযা ও বনু নাজীর গোত্রের সাথে তিক্ত সম্পর্ক ছিল তাই তারা শহরের ভেতরেই থেকে যায় । তবে এখানে থাকার জন্য তাদেরকে খাযরাজ গোত্রের নিরাপত্তামূলক ছত্রছায়া গ্রহণ করতে হয় । এর বিরুদ্ধে বনী নাযীর ও বনী কুরায়যা গ্রোত্রকে আওস গোত্রের নিরাপত্তামূলক আশ্রয় নিতে হয় যাতে তারা নিরাপদে ইয়াসরিবের আশেপাশে বসবাস করতে পারে । নীচের মানচিত্র দেখলে স্পষ্ট বুঝা যাবে, এই নতুন ব্যবস্থা অনুসারে ইয়াসরিবে এবং তার আশোপাশে কোথায় কোথায় ইহুদী বসতি ছিল ।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদীনায় আগমনের পূর্বে হিজরাতের সূচনাকাল পর্যন্ত সাধারণভাবে গোটা হিজাযের এবং বিশেষভাবে ইয়াসরিবে ইহুদীদের অবস্থা ও পরিচয় মোটামুটি এরূপ ছিলঃ

ভাষা, পোশাক-পরিচ্ছদ, তাহযীব, তামাদ্দুন সবদিক দিয়ে তারা আরবী ভাবধারা গ্রহণ করে নিয়েছিল । এমনকি তাদের অধিকাংশের নামও হয়ে গিয়েছিল আরবী । হিজাযে বসতি স্থাপনকারী ইহুদী গোত্র ছিল বারটি । তাদের মধ্যে একমাত্র বনী যা’য়ুরা ছাড়া আর কোন গোত্রেরই হিব্রু নাম ছিল না । হাতেগোণা কয়েকজন ধর্মীয় পণ্ডিত ছাড়া তাদের কেউ-ই হিব্রু ভাষা জানতো না । জাহেলী যুগের ইহুদী কবিদের যে কাব্যগাঁথা আমরা দেখতে পাই তার ভাষা, ধ্যান-ধারণা ও বিষয়বস্তুতে আরব কবিদের থেকে স্বতন্ত্র এমন কিছুই পাওয়া যায় না যা তাদেরকে আলাদাভাবে বৈশিষ্টমণ্ডিত করে । তাদের ও আরবদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক পর্যন্ত স্থাপিত হয়েছিল । মোটকথা, তাদের ও সাধারণ আরবদের মধ্যে ধর্ম ছাড়া আর কোন পার্থক্যই অবশিষ্ট ছিল না । কিন্তু এসব সত্তেও তারা আরবদের মধ্যে একেবারেই বিলীনও হয়ে যায়নি । তারা অত্যন্ত কঠোরভাবে নিজেদের ইহুদী জাত্যভিমান ও পরিচয় টীকিয়ে রেখেছিল । তারা বাহ্যত আরবী ভাবধারা গ্রহণ করেছিল । শুধু এ জন্য যে, তাছাড়া তাদের পক্ষে আরবে টীকে থাকা অসম্ভব ছিল । আরবী ভাবধারা গ্রহণ করার কারণে, পাশ্চাত্যের প্রাচ্যবিদরা তাদের ব্যাপারে বিভ্রান্ত হয়ে মনে করে নিয়েছে যে, তারা মূলত বনী ইসরাঈল নয়, বরং ইহুদী ধর্ম গ্রহনকারী আরব কিংবা তাদের অধিকাংশ অন্তত আরব ইহুদী । ইহুদীরা হিজাযে কখনো ধর্ম প্রচারের কাজ করেছিল অথবা তাদের ধর্মীয় পণ্ডিতগণ খৃস্টান পাদ্রী এবং মিশনারীদের মত আরববাসীদের ইহুদী ধর্মের প্রতি আহবান জানাতো এবং কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না । পক্ষান্তরে আমরা দেখতে পাই যে, তাদের মধ্যে ইসরাঈলিয়াত বা ইহুদীবাদের চরম গোঁড়ামি এবং বংশীয় আভিজাত্যের গর্ব ও অহংকার ছিল । আরবের অধিবাসীদের তারা ‘উম্মী’ (Gentiles) বলে আখ্যায়িত করত যার অর্থ শুধু নিরক্ষরই নয়, বরং অসভ্য এবং মূর্খও । তারা বিশ্বাস করত, ইসরাঈলীরা যে মানবাধিকার ভোগ করে এরা সে অধিকার লাভেরও উপযুক্ত নয় । বৈধ ও অবৈধ সব রকম পন্থায় তাদের অর্থ -সম্পদ মেরে খাওয়া ইসরাঈলীদের জন্য হালাল ও পবিত্র । নেতৃ পর্যায়ের লোক ছাড়া সাধারণ আরবদের তারা ইহুদী ধর্মে দীক্ষিত করে সমান মর্যাদা দেয়ার উপযুক্তই মনে করত না । কোন আরব গোত্র বা বড় কোন আরব পরিবার ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করেছিল এমন কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না । আরব লোকগাথায় তার কোন হদিসও মেলে না । এমনিতেও ইহুদীদের ধর্মপ্রচারের চেয়ে নিজেদের আর্থিক কায়-কারবারের প্রতি আগ্রহ ও মনোযোগ ছিল অধিক । তাই একটি ধর্ম হিসেবে হিজাযে ইহুদীদের বিস্তার ঘটেনি । বরং তা হয়েছিল কয়েকটি ইহুদী গোত্রের গর্ব ও অহংকারের পুজি । তবে ইহুদী ধর্মীয় পণ্ডিতরা তাবীজ-কবচ, ভাল -মন্দ লক্ষণ নির্ণয় এবং যাদুবিদ্যার রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল । আর এ কারণে আরব সমাজে তাদের ‘ইলম’ ও ‘আমলে’র খ্যাতি ও প্রতাপ বিদ্যামান ছিল ।

আরব গোত্রসমূহের তুলনায় তাদের আর্ধিক অবস্থা ও অবস্থান ছিল অধিক মজবুত । তারা যেহেতু ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার অধিক সুসভ্য অঞ্চল থেকে এসেছিল তাই এমন অনেক শিল্প ও কারিগরী তারা জানতো যা আরবের অধিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত ছিল না । তাছাড়া বাইরের জগতের সাথে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কও ছিল । এসব কারণে ইয়াসরিব এবং হিজাযের উত্তরাঞ্চলে খাদ্যশস্যের আমদানী আর এখান থেকে খেজুর রপ্তানীর কারবার তাদের হাতে চলে এসেছিল । হাঁস-মুরগী পালন ও মৎস পালন ও মৎস শিকারেরও বেশীর ভাগ তাদেরই করায়ত্ত ছিল । বস্ত্র উৎপাদনের কাজও তারাই করত । তারাই আবার জায়গায় জায়গায় পানশালা নির্মাণ করে রেখেছিল । এসব জায়গা থেকে মদ এনে বিক্রি করা হতো । বনু কায়নুকা গোত্রের অধিকাংশ লোক স্বর্ণকার, কর্মকার ও তৈজসপত্র নির্মাণ পেশায় নিয়োজিত ছিল । এসব কায়কারবারে ইহুদীরা অস্বাভাবিক মুনাফা লুটতো । কিন্তু তাদের সবচেয়ে বড় কারবার ছিল সুদী কারবার । আশেপাশের সমস্ত আরবদের তারা এই সুদী কারবারের ফাঁদে আটকে ফেলেছিল । বিশেষ করে আরব গোত্রসমূহের নেতা ও সরদাররা বেশী করে এই জালে জড়িয়ে পড়েছিল । কারণ ঋণগ্রহণ করে জাঁকজমকে চলা এবং গর্বিত ভঙ্গিতে জীবনযাপন করার রোগ সবসময়ই তাদের ছিল । এরা অত্যন্ত চড়া হারের সুদের ভিত্তিতে ঋণ দিতো এবং তা চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়াতে থাকত । কেউ একবার এই জালে জড়িয়ে পড়লে তা থেকে মুক্তি পাওয়া তার জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়তো । এভাবে তারা আর্থিক দিক দিয়ে আরবদেরকে অন্তসারশূন্য করে ফেলেছিল । তবে তার স্বাভাবিক ফলাফলও দাঁড়িয়েছিল এই যে, তাদের বিরুদ্ধে আরবদের মধ্যে ব্যাপক ঘৃণা ও বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়েছিল ।

-আবরদের মধ্যে কারো বন্ধু হয়ে অন্য কারো সাথে শত্রুতা সৃষ্টি না করা এবং পারস্পরিক যুদ্ধ -বিগ্রহে অংশগ্রহণ না করাই ছিল তাদের ব্যবসায়িক ও আর্থিক স্বার্থের অনুকূলে । কিন্তু অন্যদিকে আবার আরবদেরকে পরস্পর ঐক্যবদ্ধ হতে না দেয়া এবং তাদেরকে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ -বিগ্রহে লিপ্ত রাখাই ছিল তাদের স্বার্থের অনুকূলে । কারণ , তারা জানতো, আরব গোত্রসমূহ যখনই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবে তখন আর তারা সেই সব সহায়-সম্পত্তি , বাগান এবং শস্য-শ্যামল ফসলের মাঠ তাদের অধিকারে থাকতে দেবে না, যা তারা সুদী কারবার ও মুনাফাখোরীর মাধ্যমে লাভ করেছে । তাছাড়া নিজেদের নিরাপত্তার জন্য তাদের প্রতিটি গোত্রকে কোন না কোন শক্তিশালী আরব গোত্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হতো যাতে অন্য কোন শক্তিশালী গোত্র তাদের গায়ে হাত তুলতে না পারে । এ কারণে আরব গোত্রসমূহের পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদে তাদেরকে বারবার শুধু জড়িয়ে পড়তেই হতো না, বরং অনেক সময় একটি ইহুদী গোত্রকে তার মিত্র আরব গোত্রের সাথে মিলে অপর কোন ইহুদী গোত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে হতো, বিরোধী আরব গোত্রের সাথে যাদের থাকতো মিত্রতার সম্পর্ক । ইয়াসরিবের বনী কুরায়যা ও বনী নাযীর ছিল আওস গোত্রের এবং বনী কায়নুকা ছিল খাযরাজ গোত্রের মিত্র । হিজরাতের কিছুকাল পূর্বে ‘বু’আস’নামক স্থানে আওস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছিল তাতে এই ইহুদী গোত্রগুলোও নিজ নিজ বন্ধু গোত্রের পক্ষ নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল ।

এই পরিস্থিতিতে মদীনায় ইসলাম পৌঁছে এবং শেষ পর্যন্ত রসূলুল্লাহর(সা) আগমনের পর সেখানে একটি ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয় । ইসলামী রাস্ট্র কায়েম করার সাথে সাথে তিনি প্রথম যে কাজগুলো করলেন তার মধ্যে একটি হলো, আওস, খাযরাজ এবং মুহাজিরদের মধ্যে একটি ভ্রাতৃবন্ধন সৃষ্টি করা । দ্বিতীয় কাজটি হলো, এই মুসলিম সমাজে এবং ইহুদীদের মধ্যে স্পষ্ট শর্তাবলীর ভিত্তিতে এটি চুক্তি সম্পাদন করা । এ চুক্তিতে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল যে, একে অপরের অধিকারসমূহে হস্তক্ষেপ করবে না এবং বাইরের শত্রুর মোকাবিলায় সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে পতিরক্ষার ব্যবস্থা করবে ।


আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ  


৫৯ . আল হাশ্‌র – ( الـحـشـر ) | সমাবেশ
মাদানী, মোট আয়াতঃ ২৪

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ

سَبَّحَ لِلّٰہِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَمَا فِی الۡاَرۡضِ ۚ وَہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ

ছাব্বাহা লিল্লা-হি মা-ফিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়ামা-ফিল আরদি ওয়া হুয়াওয়াল ‘আঝীঝুল হাকীম।

মুফতী তাকী উসমানী
যা কিছু আকাশমণ্ডলী ও যা-কিছু পৃথিবীতে আছে, সবই তার তাসবীহ পাঠ করে। তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করে। তিনি পরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে ; তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

ہُوَ الَّذِیۡۤ اَخۡرَجَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡ اَہۡلِ الۡکِتٰبِ مِنۡ دِیَارِہِمۡ لِاَوَّلِ الۡحَشۡرِ ؕؔ مَا ظَنَنۡتُمۡ اَنۡ یَّخۡرُجُوۡا وَظَنُّوۡۤا اَنَّہُمۡ مَّانِعَتُہُمۡ حُصُوۡنُہُمۡ مِّنَ اللّٰہِ فَاَتٰىہُمُ اللّٰہُ مِنۡ حَیۡثُ لَمۡ یَحۡتَسِبُوۡا ٭ وَقَذَفَ فِیۡ قُلُوۡبِہِمُ الرُّعۡبَ یُخۡرِبُوۡنَ بُیُوۡتَہُمۡ بِاَیۡدِیۡہِمۡ وَاَیۡدِی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ٭ فَاعۡتَبِرُوۡا یٰۤاُولِی الۡاَبۡصَارِ

হুয়াল্লাযীআখরাজাল্লাযীনা কাফারূ মিন আহলিল কিতা-বি মিন দিয়া-রিহিম লিআওওয়ালিল হাশরি মা-জানানতম আইঁ ইয়াখরুজুওয়া জান্নুআন্নাহুম মানি‘আতুহুম হুসূনুহুম মিনাল্লা-হি ফাআতা-হুমুল্লা-হু মিন হাইছুলাম ইয়াহতাছিবূ ওয়া কাযাফা ফী কুলূবিহিমুররু‘বা ইউখরিবূনা বুয়ূতাহুম বিআইদীহিম ওয়া আইদিল মু’মিনীনা ফা‘তাবিরূ ইয়াউলিল আবসা-র।

মুফতী তাকী উসমানী
তিনিই কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফের তাদেরকে প্রথম সমাবেশেই তাদের ঘর-বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছেন। ১ (হে মুসলিমগণ!) তোমরা কল্পনাও করনি তারা বের হয়ে যাবে। তারাও মনে করেছিল তাদের দুর্গগুলি তাদেরকে আল্লাহ হতে রক্ষা করবে। অতঃপর আল্লাহ তাদের কাছে এমন দিক থেকে আসলেন যা তারা ধারণাও করতে পারেনি। ২ আল্লাহ তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন। ফলে তারা নিজেদের হাতে নিজেদের ঘর-বাড়ি ধ্বংস করে ফেলছিল এবং মুসলিমদের হাতেও। ৩ সুতরাং হে চক্ষুষ্মানেরা! তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনিই কিতাবধারীদের মধ্যে যারা কাফের, তাদেরকে প্রথমবার একত্রিত করে তাদের বাড়ী-ঘর থেকে বহিস্কার করেছেন। তোমরা ধারণাও করতে পারনি যে, তারা বের হবে এবং তারা মনে করেছিল যে, তাদের দূর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহর কবল থেকে রক্ষা করবে। অতঃপর আল্লাহর শাস্তি তাদের উপর এমনদিক থেকে আসল, যার কল্পনাও তারা করেনি। আল্লাহ তাদের অন্তরে ত্রাস সঞ্চার করে দিলেন। তারা তাদের বাড়ী-ঘর নিজেদের হাতে এবং মুসলমানদের হাতে ধ্বংস করছিল। অতএব, হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণ, তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনিই কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফির তাদেরকে প্রথমবার সমবেতভাবে তাদের আবাসভূমি হতে বিতাড়িত করেছিলেন। তোমরা কল্পনাও কর নাই যে, এরা নির্বাসিত হবে এবং এরা মনে করেছিল এদের দুর্গগুলি এদেরকে রক্ষা করবে আল্লাহ্ হতে ; কিন্তু আল্লাহ্ র শাস্তি এমন এক দিক হতে এলো যা ছিল এদের ধারণাতীত এবং এদের অন্তরে তা ত্রাসের সঞ্চার করল। এরা ধ্বংস করে ফেলল নিজেদের বাড়িঘর নিজেদের হাতে এবং মু’মিনদের হাতেও; অতএব হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণ! তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।

তাফসীরঃ
১. ‘প্রথম সমাবেশ’-এর দু’রকম ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এর দ্বারা মুসলিম বাহিনীর সমাবেশ বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ ইয়াহুদীদের সাথে তাদের যুদ্ধের দরকার হয়নি; বরং প্রথমে যখন তারা তাদেরকে উৎখাতের জন্য সমবেত হয়, তখনই তারা পরাজয় মেনে নেয়। কিন্তু অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে এর দ্বারা নির্বাসিত হওয়ার জন্য বনূ নাজীরের ইয়াহুদীদের নিজেদের সমাবেশকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ নির্বাসিত হওয়ার জন্য এটাই ছিল ইয়াহুদীদের প্রথম সমাবেশ। এর আগে তাদের কখনও এরূপ সমাবেশের দরকার পড়েনি। এর ভেতর সূক্ষ্ম ইঙ্গিত রয়েছে যে, এটা ছিল তাদের প্রথম নির্বাসন। এরপর তাদেরকে আরও এক নির্বাসনের সম্মুখীন হতে হবে। সুতরাং হযরত উমর (রাযি.)-এর আমলে তাদেরকে পুনরায় খায়বার থেকে নির্বাসিত করা হয়।

২. অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার মার ও শাস্তি তাদের উপর এমনভাবে আসল, যা তারা কল্পনাও করতে পারেনি। এক শাস্তি তো তাদের মনের ভেতর দিয়েই আসল। আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরে এমনই ভীতি সঞ্চার করে দিলেন যে, নির্দেশ মাত্র তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেল। অন্য শাস্তি আসল তারা যাদেরকে হিসেবেই আনত না, সেই বাহ্যিক সহায়-সম্বলহীন মুসলিমদের পক্ষ থেকে। তাদের আকস্মিক আক্রমণকে প্রতিহত করার হিম্মতই তাদের হল না। -অনুবাদক

৩. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহুদীদেরকে তাদের পক্ষে যে মালামাল সঙ্গে নিয়ে যাওয়া সম্ভব তা নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। তাই তারা এমনকি ঘরের দরজা পর্যন্ত খুলে নিয়েছিল।

وَلَوۡلَاۤ اَنۡ کَتَبَ اللّٰہُ عَلَیۡہِمُ الۡجَلَآءَ لَعَذَّبَہُمۡ فِی الدُّنۡیَا ؕ وَلَہُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ عَذَابُ النَّارِ

ওয়া লাওলাআন কাতাবাল্লা-হু ‘আলাইহিমুল জালাআলাআযযাবাহুম ফিদ্দুনইয়া- ওয়া লাহুম আ-খিরাতি আযা-বুন্না-র।

মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ যদি তাদের ভাগ্যে নির্বাসন না লিখতেন, তবে দুনিয়াতেই তাদেরকে শাস্তি দিতেন। ৪ অবশ্য পরকালে তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ যদি তাদের জন্যে নির্বাসন অবধারিত না করতেন, তবে তাদেরকে দুনিয়াতে শাস্তি দিতেন। আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আযাব।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্ এদের নির্বাসনের সিদ্ধান্ত না করলে এদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাস্তি দিতেন; পরকালে এদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি।

তাফসীরঃ
৪. অর্থাৎ মুসলিমদের হাতে তাদেরকে নিপাত করাতেন।

ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ شَآقُّوا اللّٰہَ وَرَسُوۡلَہٗ ۚ وَمَنۡ یُّشَآقِّ اللّٰہَ فَاِنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ

যা-লিকা বিআন্নাহুম শাক্কুল্লা-হা ওয়া রাছূলাহু ওয়ামাই ইউশাক্কিল্লা-হা ফাইন্নাল্লাহা শাদীনুল ‘ইকা-ব।

মুফতী তাকী উসমানী
তা এই জন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে শত্রুতা করেছে। কেউ আল্লাহর সাথে শত্রুতা করলে আল্লাহ তো কঠোর শাস্তিদাতা।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এটা এ কারণে যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। যে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করে, তার জানা উচিত যে, আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এটা এইজন্যে যে, এরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল, এবং কেউ আল্লাহ্ র বিরুদ্ধাচরণ করলে আল্লাহ্ তো শাস্তিদানে কঠোর।

مَا قَطَعۡتُمۡ مِّنۡ لِّیۡنَۃٍ اَوۡ تَرَکۡتُمُوۡہَا قَآئِمَۃً عَلٰۤی اُصُوۡلِہَا فَبِاِذۡنِ اللّٰہِ وَلِیُخۡزِیَ الۡفٰسِقِیۡنَ

মা-কাতা‘তুম মিল লিনাতিন আও তারাকতুমূহা- কাইমাতান ‘আলা উসূলিহাফাবিইযনিল্লা-হি ওয়া লিইউখঝিয়াল ফা-ছিকীন।

মুফতী তাকী উসমানী
তোমরা যে খেজুর গাছ কেটেছ কিংবা যেগুলি মূলের উপর খাড়া রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই হুকুমে ছিল ৫ এবং তা এজন্য যে, আল্লাহ অবাধ্যদেরকে লাঞ্ছিত করতে চেয়েছিলেন।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা যে কিছু কিছু খর্জুর বৃক্ষ কেটে দিয়েছ এবং কতক না কেটে ছেড়ে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই আদেশ এবং যাতে তিনি অবাধ্যদেরকে লাঞ্ছিত করেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমরা যে খর্জুর বৃক্ষগুলি কর্তন করেছ এবং যেগুলি কাণ্ডের ওপর স্থির রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহ্ র ই অনুমতিক্রমে; এবং এইজন্যে যে, আল্লাহ্ পাপাচারীদেরকে লাঞ্ছিত করবেন।

তাফসীরঃ
৫. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বনূ নাজীরের দুর্গ অবরোধ করেন, তখন আশপাশের কিছু খেজুর গাছ কাটতে হয়েছিল। এতে কিছু লোক এই বলে আপত্তি জানায় যে, ফলের গাছ কাটা সমীচীন হয়নি। তারই জবাবে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। এতে বলা হচ্ছে, যেসব গাছ কাটা হয়েছে, তা আল্লাহ তাআলার হুকুমেই কাটা হয়েছে। কোন ন্যায়সঙ্গত জিহাদে যুদ্ধ কৌশল হিসেবে যদি এরূপ করতে হয়, তবে তা দোষের নয়।

وَمَاۤ اَفَآءَ اللّٰہُ عَلٰی رَسُوۡلِہٖ مِنۡہُمۡ فَمَاۤ اَوۡجَفۡتُمۡ عَلَیۡہِ مِنۡ خَیۡلٍ وَّلَا رِکَابٍ وَّلٰکِنَّ اللّٰہَ یُسَلِّطُ رُسُلَہٗ عَلٰی مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَاللّٰہُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ

ওয়ামাআআল্লা-হু ‘আলা-রাছূলিহী মিনহুম ফামাআওজাফ তুম আলাইহি মিন খাইলিওঁ ওয়ালা-রিকা-বিওঁ ওয়ালা-কিন্নাল্লা-হা ইউছালিলতুরুছুলাহু আলা-মাইঁ ইয়াশাউ ওয়াল্লাহু ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন কাদীর।

মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ তাঁর রাসূলকে তাদের যে সম্পদ ‘ফায়’ হিসেবে দিয়েছেন, তার জন্য তোমরা না ঘোড়া হাঁকিয়েছ, না উট, কিন্তু আল্লাহ নিজ রাসূলগণকে যার উপর ইচ্ছা আধিপত্য দান করেন। ৬ আল্লাহ সর্ববিষয়ে পরিপূর্ণ ক্ষমতাবান।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ বনু-বনুযায়রের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যে ধন-সম্পদ দিয়েছেন, তজ্জন্যে তোমরা ঘোড়ায় কিংবা উটে চড়ে যুদ্ধ করনি, কিন্তু আল্লাহ যার উপর ইচ্ছা, তাঁর রসূলগণকে প্রাধান্য দান করেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্ ইয়াহূদীদের নিকট হতে তাঁর রাসূলকে যে ফায় দিয়েছেন, তার জন্যে তোমরা অশ্বে কিংবা উষ্ট্রে আরোহণ করে যুদ্ধ কর নাই ; আল্লাহ্ তো যার ওপর ইচ্ছা তাঁর রাসূলদেরকে কর্তৃত্ব দান করেন ; আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।

তাফসীরঃ
৬. বিনা যুদ্ধে শত্রুপক্ষ যে মালামাল ছেড়ে যায় তাকে ‘ফায়’ বলে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ নাজীরের ইয়াহুদীদেরকে তাদের মালামাল সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। কাজেই তাদের পক্ষে যা-কিছু নেওয়া সম্ভব ছিল তা নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জমি-জমা তো নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কাজেই তা ছেড়ে গেল। এ জমি-জমাই ‘ফায়’ রূপে মুসলিমদের হস্তগত হয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিমদেরকে তাঁর এই অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, তিনি মুসলিমদেরকে এ সম্পদ সম্পূর্ণ বিনা মেহনতে দান করেছেন। এটা অর্জন করার জন্য তাদের কোনরূপ যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে হয়নি। আয়াতে যে ঘোড়া ও উট হাঁকানোর কথা বলা হয়েছে, তা দ্বারা যুদ্ধ-কার্যক্রম বোঝানো উদ্দেশ্য। অতঃপর ‘ফায়’-এর মালামাল কাদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে, পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার তালিকা প্রদান করেছেন।

مَاۤ اَفَآءَ اللّٰہُ عَلٰی رَسُوۡلِہٖ مِنۡ اَہۡلِ الۡقُرٰی فَلِلّٰہِ وَلِلرَّسُوۡلِ وَلِذِی الۡقُرۡبٰی وَالۡیَتٰمٰی وَالۡمَسٰکِیۡنِ وَابۡنِ السَّبِیۡلِ ۙ  کَیۡ لَا یَکُوۡنَ دُوۡلَۃًۢ بَیۡنَ الۡاَغۡنِیَآءِ مِنۡکُمۡ ؕ  وَمَاۤ اٰتٰىکُمُ الرَّسُوۡلُ فَخُذُوۡہُ ٭  وَمَا نَہٰىکُمۡ عَنۡہُ فَانۡتَہُوۡا ۚ  وَاتَّقُوا اللّٰہَ ؕ  اِنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ ۘ

মাআফাআল্লা-হু ‘আলা-রাছূলিহী মিন আহলিল কুরা-ফালিল্লা-হি ওয়া লিররাছূলি ওয়া লিযিল কুরবা-ওয়াল ইয়াতা-মা-ওয়াল মাছা-কীনি ওয়াবনিছছাবীলি কাইলা -ইয়াকূনা দূ লাতাম বাইনাল আগনিইয়াই মিনকুম ওয়ামাআ-তা-কুমুররাছূলুফাখুযূহু ওয়ামা-নাহা-কুম ‘আনহু ফানতাহূ ওয়াত্তাকুল্লা-হা শাদীদুল ‘ইকা-ব।

মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ তাঁর রাসূলকে জনপদবাসীদের থেকে ‘ফায়’ হিসেবে যে সম্পদ দিয়েছেন, তা আল্লাহর, তাঁর রাসূলের, (রাসূলের) আত্মীয়বর্গের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্তদের ও মুসাফিরদের প্রাপ্য, যাতে সে সম্পদ তোমাদের মধ্যকার কেবল বিত্তবানদের মধ্যেই আবর্তন না করে। রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা গ্রহণ কর আর তোমাদেরকে যা থেকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় করে চল। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যা দিয়েছেন, তা আল্লাহর, রসূলের, তাঁর আত্নীয়-স্বজনের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্তদের এবং মুসাফিরদের জন্যে, যাতে ধনৈশ্বর্য্য কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না হয়। রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্ জনপদবাসীদের নিকট হতে তাঁর রাসূলকে যে ফায় দিয়েছেন তা আল্লাহ্ র , তাঁর রাসূলের, রাসূলের স্বজনগণের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্ত ও পথচারীদের, যাতে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান কেবল তাদের মধ্যেই ঐশ্বর্য আবর্তন না করে। রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক এবং তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর ; আল্লাহ্ তো শাস্তিদানে কঠোর।

لِلۡفُقَرَآءِ الۡمُہٰجِرِیۡنَ الَّذِیۡنَ اُخۡرِجُوۡا مِنۡ دِیَارِہِمۡ وَاَمۡوَالِہِمۡ یَبۡتَغُوۡنَ فَضۡلًا مِّنَ اللّٰہِ وَرِضۡوَانًا وَّیَنۡصُرُوۡنَ اللّٰہَ وَرَسُوۡلَہٗ ؕ  اُولٰٓئِکَ ہُمُ الصّٰدِقُوۡنَ ۚ

লিল ফুকারাইল মুহা-জিরীনাল্লাযীনা উখরিজূমিন দিয়া-রিহিম ওয়া আমওয়া-লিহিম ইয়াবতাগূনা ফাদলাম মিনাল্লা-হি ওয়া রিদওয়া-নাওঁ ওয়া ইয়ানসুরূনাল্লা-হা ওয়া রাছূলাহূ উলাইকা হুমুসসা-দিকূন।

মুফতী তাকী উসমানী
(তাছাড়া ‘ফায়’-এর সম্পদ) সেই গরীব মুহাজিরদের প্রাপ্য, যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ি ও অর্থ-সম্পদ থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ৭ তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর সন্তুষ্টি সন্ধান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাহায্য করে। তারাই সত্যাশ্রয়ী।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এই ধন-সম্পদ দেশত্যাগী নিঃস্বদের জন্যে, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টিলাভের অন্বেষণে এবং আল্লাহ তাঁর রসূলের সাহায্যার্থে নিজেদের বাস্তুভিটা ও ধন-সম্পদ থেকে বহিস্কৃত হয়েছে। তারাই সত্যবাদী।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এই সম্পদ অভাবগ্রস্ত মুহাজিরগণের জন্যে যারা নিজেদের ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি হতে উৎখাত হয়েছে। তারা আল্লাহ্ র অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সাহায্য করে। এরাই তো সত্যাশ্রয়ী।

তাফসীরঃ
৭. অর্থাৎ সেই সাহাবীগণ, যাদেরকে কাফেরগণ মক্কা মুকাররমা ছেড়ে আসতে বাধ্য করেছে, ফলে তাঁরা তাদের ঘর-বাড়ি ও জমি থেকে বঞ্চিত হয়ে গেছেন।

وَالَّذِیۡنَ تَبَوَّؤُ الدَّارَ وَالۡاِیۡمَانَ مِنۡ قَبۡلِہِمۡ یُحِبُّوۡنَ مَنۡ ہَاجَرَ اِلَیۡہِمۡ وَلَا یَجِدُوۡنَ فِیۡ صُدُوۡرِہِمۡ حَاجَۃً مِّمَّاۤ اُوۡتُوۡا وَیُؤۡثِرُوۡنَ عَلٰۤی اَنۡفُسِہِمۡ وَلَوۡ کَانَ بِہِمۡ خَصَاصَۃٌ ؕ۟  وَمَنۡ یُّوۡقَ شُحَّ نَفۡسِہٖ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ۚ

ওয়াল্লাযীনা তাবাওওয়াউদ্দা-রা ওয়াল ঈমা-না মিন কাবলিহিম ইউহিববূনা মান হা-জারা ইলাইহিম ওয়ালা-ইয়াজিদূ না ফী সুদূ রিহিম হা-জাতাম মিম্মাউতূওয়া ইউ’ছিরূনা ‘আলা আনফুছিহিম ওয়ালাও কা-না বিহিম খাসা-সাতুও ওয়া মাইঁ ইঊকা শুহহা নাফছিহী ফাউলাইকা হুমুল মুফলিহূন।

মুফতী তাকী উসমানী
(এবং ‘ফায়’-এর সম্পদ) তাদেরও প্রাপ্য, যারা পূর্ব থেকেই এ নগরে (অর্থাৎ মদীনায়) ঈমানের সাথে অবস্থানরত আছে। ৮ যে-কেউ হিজরত করে তাদের কাছে আসে, তাদেরকে তারা ভালোবাসে এবং যা-কিছু তাদেরকে (অর্থাৎ মুহাজিরদেরকে) দেওয়া হয়, তার জন্য নিজেদের অন্তরে কোন চাহিদা বোধ করে না এবং তাদেরকে তারা নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়, যদিও তাদের অভাব-অনটন থাকে। ৯ যারা স্বভাবগত কার্পণ্য হতে মুক্তি লাভ করে, তারাই তো সফলকাম।



মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদীনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ষাপোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর তাদের জন্যেও, মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা এই নগরীতে বসবাস করেছে ও ঈমান এনেছে, তারা মুহাজিরদেরকে ভালবাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেওয়া হয়েছে তার জন্যে তারা অন্তরে আকাক্সক্ষা পোষণ করে না, আর তারা তাদেরকে নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য হতে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম।

তাফসীরঃ
৮. এর দ্বারা আনসার সাহাবীগণকে বোঝানো হয়েছে, যারা মদীনা মুনাওয়ারার মূল বাসিন্দা ছিলেন এবং আগত মুহাজিরদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন।

৯. বস্তুত সমস্ত আনসারই ঈছার (পরার্থপরায়ণতা)-গুণের অধিকারী ছিলেন, সর্বদা নিজের উপর অন্যের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতেন। হাদীসগ্রন্থসমূহে বিশেষভাবে এক সাহাবীর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে যে, তাঁর ঘরে সামান্য কিছু খাবার ছিল, তা সত্ত্বেও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে নিজ-নিজ বাড়িতে মেহমান নিয়ে যেতে ও তাদেরকে আপ্যায়ন করতে উৎসাহ দিলে, তিনিও কয়েকজন মেহমান বাড়িতে নিয়ে আসলেন। তারপর নিজেরা অভুক্ত থেকে মেহমানদের খাওয়ালেন আর তাদের অভুক্ত থাকার বিষয়টা যাতে মেহমানগণ টের না পান সেই লক্ষে খাওয়ার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে বাতি নিভিয়ে রাখলেন। এ আয়াতে তাদের সেই ঈছারেরই প্রশংসা করা হয়েছে।

১০

وَالَّذِیۡنَ جَآءُوۡ مِنۡۢ بَعۡدِہِمۡ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَا اغۡفِرۡ لَنَا وَلِاِخۡوَانِنَا الَّذِیۡنَ سَبَقُوۡنَا بِالۡاِیۡمَانِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِیۡ قُلُوۡبِنَا غِلًّا لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا رَبَّنَاۤ اِنَّکَ رَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ ٪

ওয়াল্লাযীনা জাঊ মিম বা‘দিহিম ইয়াকূ লূনা রাব্বানাগফিরলানা-ওয়া লিইখওয়া-নিনাল্লাযীনা ছাবকূনা-বিল ঈমা-নি ওয়ালা-তাজ‘আল ফী কুলূবিনা-গিল্লাল লিল্লাযীনা আ-মানূ রাব্বানাইন্নাকা রাঊফুর রাহ ীম।

মুফতী তাকী উসমানী
এবং (ফায়-এর সম্পদ) তাদেরও প্রাপ্য, যারা তাদের (অর্থাৎ মুহাজির ও আনসারদের) পরে এসেছে। ১০ তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! ক্ষমা কর আমাদেরকে এবং আমাদের সেই ভাইদেরকেও, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে এবং আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের প্রতি কোন হিংসা-বিদ্বেষ রেখ না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি অতি মমতাবান, পরম দয়ালু।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আর এই সম্পদ তাদের জন্যে, যারা তাদের পরে আগমন করেছে। তারা বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে আগ্রহী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা এদের পরে এসেছে, তারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভাইগণকে ক্ষমা কর এবং মু’মিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে বিদ্বেষ রেখ না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।’

তাফসীরঃ
১০. এর দ্বারা এক তো যারা সাহাবায়ে কেরামের পরে জন্মগ্রহণ করেছেন বা তাদের পরে ইসলাম গ্রহণ করেছেন তাদেরকে বোঝানো হয়েছে। তাদেরকেও ‘ফায়’ থেকে অংশ দেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত এর অর্থ এটাও যে, ‘ফায়’-এর যে পরিমাণ বায়তুল মালে সংরক্ষিত থাকবে, তা পরবর্তী কালের মুসলিমদের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হবে। হযরত উমর ফারূক (রাযি.) এ আয়াতের ভিত্তিতেই ইরাকের জমি-জিরাত মুজাহিদদের মধ্যে বণ্টন না করে তার উপর খারাজ (কর) ধার্য করেছিলেন, যাতে তা বায়তুল মালে জমা হয়ে সমস্ত মুসলিমের কাজে আসে। এ মাসআলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য ‘মাআরিফুল কুরআন’ এবং বান্দার রচিত ‘মিলকিয়াতে যমীন কী শরয়ী হায়ছিয়াত’ পুস্তিকাখানি পড়া যেতে পারে।

১১

اَلَمۡ تَرَ اِلَی الَّذِیۡنَ نَافَقُوۡا یَقُوۡلُوۡنَ لِاِخۡوَانِہِمُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡ اَہۡلِ الۡکِتٰبِ لَئِنۡ اُخۡرِجۡتُمۡ لَنَخۡرُجَنَّ مَعَکُمۡ وَلَا نُطِیۡعُ فِیۡکُمۡ اَحَدًا اَبَدًا ۙ وَّاِنۡ قُوۡتِلۡتُمۡ لَنَنۡصُرَنَّکُمۡ ؕ وَاللّٰہُ یَشۡہَدُ اِنَّہُمۡ لَکٰذِبُوۡنَ

আলাম তারা ইলাল্লাযীনা না-ফাকূইয়াকূলূনা লিইখওয়া-নিহিমুল্লাযীনা কাফারূ মিন আহলিল কিতা-বি লাইন উখরিজতুম লানাখরুজান্না মা‘আকুম ওয়ালা-নুতী‘উ ফীকুম আহাদান আবাদওঁ ওয়া ইন কুতিলতুম লানানসুরান্নাকুম ওয়াল্লা-হু ইয়াশহাদুইন্নাহুম লাকা-যিবুন।

মুফতী তাকী উসমানী
তুমি কি দেখনি মুনাফেকদেরকে যারা কিতাবীদের মধ্যকার তাদের কাফের ভাইদেরকে বলে, তোমাদেরকে যদি বহিষ্কার করা হয়, তবে আমরাও তোমাদের সাথে বের হয়ে যাব এবং তোমাদের সম্পর্কে কখনও অন্য কারও কথা মানব না আর তোমাদের সাথে যদি যুদ্ধ করা হয়, তবে আমরা তোমাদের সাহায্য করব। আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তারা বিলকুল মিথ্যুক।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আপনি কি মুনাফিকদেরকে দেখেন নি? তারা তাদের কিতাবধারী কাফের ভাইদেরকে বলেঃ তোমরা যদি বহিস্কৃত হও, তবে আমরা অবশ্যই তোমাদের সাথে দেশ থেকে বের হয়ে যাব এবং তোমাদের ব্যাপারে আমরা কখনও কারও কথা মানব না। আর যদি তোমরা আক্রান্ত হও, তবে আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে সাহায্য করব। আল্লাহ তা’আলা সাক্ষ্য দেন যে, ওরা নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তুমি কি মুনাফিকদেরকে দেখ নাই ? এরা কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে এদের সেই সব সঙ্গীকে বলে, ‘তোমরা যদি বহিষ্কৃত হও, আমরা অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে দেশত্যাগী হব এবং আমরা তোমাদের ব্যাপারে কখনও কারও কথা মানব না এবং যদি তোমরা আক্রান্ত হও আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে সাহায্য করব।’ কিন্তু আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, এরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।

১২

لَئِنۡ اُخۡرِجُوۡا لَا یَخۡرُجُوۡنَ مَعَہُمۡ ۚ وَلَئِنۡ قُوۡتِلُوۡا لَا یَنۡصُرُوۡنَہُمۡ ۚ وَلَئِنۡ نَّصَرُوۡہُمۡ لَیُوَلُّنَّ الۡاَدۡبَارَ ۟ ثُمَّ لَا یُنۡصَرُوۡنَ

লাইন উখরিজূলা ইয়াখরুজূনা মা‘আহুম ওয়া লাইন কূতিলূলা-ইয়ানসুরূনাহুম ওয়ালাইন নাসারূহুম লাইঊওয়াল্লুন্নাল আদবা-রা ছু ম্মা লা-ইউনসারূন।

মুফতী তাকী উসমানী
বস্তুত তাদেরকে (অর্থাৎ কিতাবীদেরকে) বহিষ্কার করা হলে তারা (অর্থাৎ মুনাফেকগণ) তাদের সাথে বের হবে না ১১ এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করা হলে তারা তাদেরকে সাহায্যও করবে না আর যদি সাহায্য করতে আসেও, তবে অবশ্যই পিছন ফিরে পালাবে। অতঃপর তারা কোন সাহায্য পাবে না।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যদি তারা বহিস্কৃত হয়, তবে মুনাফিকরা তাদের সাথে দেশত্যাগ করবে না আর যদি তারা আক্রান্ত হয়, তবে তারা তাদেরকে সাহায্য করবে না। যদি তাদেরকে সাহায্য করে, তবে অবশ্যই পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পলায়ন করবে। এরপর কাফেররা কোন সাহায্য পাবে না।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বস্তুত এরা বহিষ্কৃত হলে মুনাফিকগণ তাদের সঙ্গে দেশত্যাগ করবে না এবং এরা আক্রান্ত হলে এরা এদেরকে সাহায্য করবে না এবং এরা সাহায্য করতে আসলেও অবশ্যই পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে; এরপর তারা কোন সাহায্যই পাবে না।

তাফসীরঃ
১১. অর্থাৎ মুনাফেকরা ইয়াহুদীদেরকে যখন সাহায্য করার নিশ্চয়তা দিচ্ছিল তখনও সাহায্য করার কোন ইচ্ছা তাদের মনে ছিল না এবং ভবিষ্যতেও এরূপ কোন পরিস্থিতি দেখা দিলে তখন তারা কারও সাহায্য করবে না। আসলে কারও সাহায্য করার হিম্মতই তারা রাখে না।

১৩

لَاَنۡتُمۡ اَشَدُّ رَہۡبَۃً فِیۡ صُدُوۡرِہِمۡ مِّنَ اللّٰہِ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ قَوۡمٌ لَّا یَفۡقَہُوۡنَ

লাআনতুম আশাদ্দুরাহবাতান ফী সুদূ রিহিম মিনাল্লা-হি যা-লিকা বিআন্নাহুম কাওমুল লাইয়াফকাহুন।

মুফতী তাকী উসমানী
(হে মুসলিমগণ!) প্রকৃতপক্ষে তাদের অন্তরে আল্লাহর চেয়ে তোমাদের ভয়ই বেশি। তা এজন্য যে, তারা এমনই এক সম্প্রদায়, যাদের বুঝ-সমঝ নেই। ১২

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
নিশ্চয় তোমরা তাদের অন্তরে আল্লাহ তা’আলা অপেক্ষা অধিকতর ভয়াবহ। এটা এ কারণে যে, তারা এক নির্বোধ সম্প্রদায়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
প্রকৃতপক্ষে এদের অন্তরে আল্লাহ্ অপেক্ষা তোমাদের ভয়ই অধিকতর। এটা এইজন্যে যে, এরা এক অবুঝ সম্প্রদায়।

তাফসীরঃ
১২. অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার গৌরব-গরিমা সম্পর্কে তাদের কোনো বুঝ নেই। তাঁর শক্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কেও কোনো জ্ঞান নেই, যে কারণে আল্লাহ তা‘আলার চেয়ে তোমাদেরকে বেশি ভয় করে। সেই বুঝ থাকলে তারা তাঁকেই বেশি ভয় করত এবং মুনাফিকী ছেড়ে খাঁটি মনে ঈমান আনত। -অনুবাদক

১৪

لَا یُقَاتِلُوۡنَکُمۡ جَمِیۡعًا اِلَّا فِیۡ قُرًی مُّحَصَّنَۃٍ اَوۡ مِنۡ وَّرَآءِ جُدُرٍ ؕ  بَاۡسُہُمۡ بَیۡنَہُمۡ شَدِیۡدٌ ؕ  تَحۡسَبُہُمۡ جَمِیۡعًا وَّقُلُوۡبُہُمۡ شَتّٰی ؕ  ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ قَوۡمٌ لَّا یَعۡقِلُوۡنَ ۚ

লা-ইউকা-তিলূনাকুম জামী‘আন ইল্লা ফী কুরামমুহাসসনাতিন আও মিওঁ ওয়ারাই জুদুরিন বা’ছুহুম বাইনাহুম শাদীদুন তাহছাবুহুম জামি‘আওঁ ওয়া কুলূবুহুম শাত্তা- যালিকা বিআন্নাহুম কাওমুল লা-ইয়া‘কিলূন।

মুফতী তাকী উসমানী
তারা সকলে একাট্টা হয়েও তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে না, তবে এমন জনপদে (করবে), যা প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত অথবা (করবে) দেওয়ালের আড়ালে লুকিয়ে। তাদের আপসের মধ্যে বিরোধ প্রচণ্ড। তুমি তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ মনে কর, অথচ তাদের অন্তর বহুধা বিভক্ত। ১৩ তা এজন্য যে, তারা এমনই এক সম্প্রদায় যাদের আকল-বুদ্ধি নেই।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা সংঘবদ্ধভাবেও তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবে না। তারা যুদ্ধ করবে কেবল সুরক্ষিত জনপদে অথবা দুর্গ প্রাচীরের আড়াল থেকে। তাদের পারস্পরিক যুদ্ধই প্রচন্ড হয়ে থাকে। আপনি তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ মনে করবেন; কিন্তু তাদের অন্তর শতধাবিচ্ছিন্ন। এটা এ কারণে যে, তারা এক কান্ডজ্ঞানহীণ সম্প্রদায়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা সকলে সংঘবদ্ধভাবেও তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সমর্থ হবে না, কিন্তু কেবল সুরক্ষিত জনপদের অভ্যন্তরে বা দুর্গ-প্রাচীরের অন্তরালে থেকে; পরস্পরের মধ্যে এদের যুদ্ধ প্রচণ্ড। তুমি মনে কর এরা ঐক্যবদ্ধ, কিন্তু এদের মনের মিল নেই; এটা এইজন্যে যে, এরা এক নির্বোধ সম্প্রদায়।

তাফসীরঃ
১৩. কাতাদা (রহ.) বলেন, “বাতিলপন্থীগণ পরস্পরে ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা-চেতনা পোষণ করে। তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যও ভিন্ন-ভিন্ন এবং তাদের ‘আকীদা-বিশ্বাসেও দুস্তর ব্যবধান। তা সত্ত্বেও মুসলিমদের সাথে শত্রুতায় তারা সব একাট্টা।” এই অন্তঃসারশূন্য গাঁটছড়ার বিপরীতে ওহে হকপন্থীগণ! এক ‘আকীদা, এক চেতনা ও এক উদ্দেশ্যের হয়েও তোমরা কেন একতাবদ্ধ হতে পারবে না? -অনুবাদক

১৫

کَمَثَلِ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِہِمۡ قَرِیۡبًا ذَاقُوۡا وَبَالَ اَمۡرِہِمۡ ۚ  وَلَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ۚ

কামাছালিল্লাযীনা মিন কাবলিহিম কারীবান যা-কূওয়া বা-লা আমরিহিম ওয়া লাহুম ‘আযা-বুন আলীম।

মুফতী তাকী উসমানী
তাদের অবস্থা তাদের সামান্য পূর্বে যারা নিজেদের কৃতকর্মের পরিণাম ভোগ করেছে, তাদেরই মত। ১৪ আর তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাময় শাস্তি।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা সেই লোকদের মত, যারা তাদের নিকট অতীতে নিজেদের কর্মের শাস্তিভোগ করেছে। তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা সেই লোকদের মত, যারা এদের অব্যবহিত পূর্বে নিজেদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করেছে, এদের জন্যে রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।

তাফসীরঃ
১৪. ইশারা বনূ কায়নুকা নামক আরেকটি ইয়াহুদী গোত্রের প্রতি। তারাও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতামূলক চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল। কিন্তু তারা সে চুক্তি ভঙ্গ করে নিজেরাই মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল এবং তাতে পরাস্তও হয়েছিল। তাদেরকেও মদীনা মুনাওয়ারা হতে উচ্ছেদ করা হয়েছিল।

১৬

کَمَثَلِ الشَّیۡطٰنِ اِذۡ قَالَ لِلۡاِنۡسَانِ اکۡفُرۡ ۚ فَلَمَّا کَفَرَ قَالَ اِنِّیۡ بَرِیۡٓءٌ مِّنۡکَ اِنِّیۡۤ اَخَافُ اللّٰہَ رَبَّ الۡعٰلَمِیۡنَ

কামাছালিশশাইতা-নি ইযকা-লা লিল ইনছা-নিকফুর ফালাম্মা-কাফারা কালা ইন্নী বারীউম মিনকা ইন্নীআখা-ফুল্লা-হা রাব্বাল ‘আ-লামীন।

মুফতী তাকী উসমানী
তাদের তুলনা হল শয়তান। সে মানুষকে বলে, কাফের হয়ে যা। তারপর যখন সে কাফের হয়ে যায়, তখন বলে, তোর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি আল্লাহকে ভয় করি, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। ১৫

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা শয়তানের মত, যে মানুষকে কাফের হতে বলে। অতঃপর যখন সে কাফের হয়, তখন শয়তান বলেঃ তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্বপালনকর্তা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করি।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা শয়তানের মত, সে মানুষকে বলে, ‘কুফরী কর’; এরপর যখন সে কুফরী করে তখন সে বলে, ‘তোমার সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই, আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্কে ভয় করি।’

তাফসীরঃ
১৫. শয়তানের খাসলত হল প্রথমে মানুষকে কুফর ও গোনাহে লিপ্ত হতে প্ররোচনা দেওয়া। তার দ্বারা প্ররোচিত হয়ে কেউ যখন কোন গোনাহ করে ফেলে এবং সে কারণে তাকে কোন দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হয়, তখন আর শয়তান তার সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না। এরূপ এক ঘটনা সূরা আনফালে (৮ : ৪৮) বদরের যুদ্ধ প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে। আখেরাতে তো সে কাফেরদের দায়-দায়িত্ব নিতে সরাসরিই অস্বীকার করবে, যেমন সূরা ইবরাহীমে (১৪ : ২২) গত হয়েছে। মুনাফেকদের চরিত্রও ঠিক সে রকমই। শুরুতে তারা ইয়াহুদীদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে উস্কানি দিতে থাকে। কিন্তু ইয়াহুদীদের যখন সাহায্যের প্রয়োজন হল, তখন এমনই ডিগবাজি খেল, যেন তাদেরকে চেনেই না।

১৭

فَکَانَ عَاقِبَتَہُمَاۤ اَنَّہُمَا فِی النَّارِ خَالِدَیۡنِ فِیۡہَا ؕ  وَذٰلِکَ جَزٰٓؤُا الظّٰلِمِیۡنَ ٪

ফাকা-না ‘আ-কিবাতাহুমাআন্নাহুমা-ফিন্না-রি খা-লিদাইনি ফীহা- ওয়া যা-লিকা জাঝাউজ্জা-লিমীন।

মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং তাদের উভয়ের পরিণাম এই যে, তারা জাহান্নামবাসী হবে, যাতে তারা স্থায়ী হয়ে থাকবে। এটাই জালেমদের শাস্তি।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর উভয়ের পরিণতি হবে এই যে, তারা জাহান্নামে যাবে এবং চিরকাল তথায় বসবাস করবে। এটাই জালেমদের শাস্তি।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ফলে উভয়ের পরিণাম হবে জাহান্নাম। সেখানে এরা স্থায়ী হবে এবং এটাই জালিমদের কর্মফল।

১৮

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَلۡتَنۡظُرۡ نَفۡسٌ مَّا قَدَّمَتۡ لِغَدٍ ۚ وَاتَّقُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ

ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানুত্তাকুল্লা-হা ওয়ালতানজুর নাফছুম মা-কাদ্দামাত লিগাদিও ওয়াত্তাকুল্লা-হা ইন্নাল্লা-হা খাবীরুম বিমা-তা‘মালূন।

মুফতী তাকী উসমানী
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক আগামী কালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই তোমরা যা-কিছু কর সে সম্পর্কে আল্লাহ পুরোপুরি অবগত।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামী কালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা’আলা সে সম্পর্কে খবর রাখেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর; প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্যে সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে। আর তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর; তোমরা যা কর আল্লাহ্ সে সম্পর্কে অবহিত।

১৯

وَلَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ نَسُوا اللّٰہَ فَاَنۡسٰہُمۡ اَنۡفُسَہُمۡ ؕ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ

ওয়ালা-তাকূনূকাল্লাযীনা নাছুল্লা-হা ফাআনছা-হুম আনফুছাহুম উলাইকা হুমুল ফাছিকূন।

মুফতী তাকী উসমানী
তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল, ফলে আল্লাহ তাকে আত্মভোলা করে দেন। ১৬ বস্তুত তারাই অবাধ্য।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহ তা’আলাকে ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে আত্ন বিস্মৃত করে দিয়েছেন। তারাই অবাধ্য।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা আল্লাহ্কে ভুলে গেছে; ফলে আল্লাহ্ এদেরকে আত্মবিস্মৃত করেছেন। এরাই তো পাপাচারী।

তাফসীরঃ
১৬. অর্থাৎ তাদের নিজেদের জন্য কোনটা উপকারী ও কোনটা ক্ষতিকর সে ব্যাপারে গাফেল ও উদাসীন হয়ে যায় আর সেই উদাসীনতার ভেতর এমন সব কাজ করতে থাকে, যা তাদের জন্য ধ্বংসকর।

২০

لَا یَسۡتَوِیۡۤ اَصۡحٰبُ النَّارِ وَاَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ ؕ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ ہُمُ الۡفَآئِزُوۡنَ

লা-ইয়াছতাবীআসহা-বুন্না-রি ওয়া আসহা-বুল জান্নাতি আসহা-বুল জান্নাতি হুমুল ফাইঝুন।

মুফতী তাকী উসমানী
জাহান্নামবাসী ও জান্নাতবাসীগণ সমান হতে পারে না। জান্নাতবাসীগণই কৃতকার্য।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতের অধিবাসী সমান হতে পারে না। যারা জান্নাতের অধিবাসী, তারাই সফলকাম।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতের অধিবাসী সমান নয়। জান্নাতবাসীরাই সফলকাম।

২১

لَوۡ اَنۡزَلۡنَا ہٰذَا الۡقُرۡاٰنَ عَلٰی جَبَلٍ لَّرَاَیۡتَہٗ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنۡ خَشۡیَۃِ اللّٰہِ ؕ وَتِلۡکَ الۡاَمۡثَالُ نَضۡرِبُہَا لِلنَّاسِ لَعَلَّہُمۡ یَتَفَکَّرُوۡنَ

লাও আনঝালনা-হা-যাল কুরআ-না ‘আলা-জাবালিল লারাআইতাহু খা-শি‘আম মুতাসাদ্দি‘ আম মিন খাশয়াতিল্লা-হি ওয়া তিলকাল আমছা-লুনাদরিবুহা-লিন্নাছি লা‘আল্লাহম ইয়াতাফাক্কারূন।

মুফতী তাকী উসমানী
আমি যদি এ কুরআনকে অবতীর্ণ করতাম কোন পাহাড়ের উপর, তবে তুমি দেখতে তা আল্লাহর ভয়ে অবনত ও বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য এ কারণে বর্ণনা করি যে, তারা যেন চিন্তা-ভাবনা করে। ১৭

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যদি আমি এই কোরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহ তা’আলার ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্যে বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যদি আমি এই কুরআন পর্বতের ওপর অবতীর্ণ করতাম তবে তুমি একে আল্লাহ্ র ভয়ে বিনীত এবং বিদীর্ণ দেখতে। আমি এই সমস্ত দৃষ্টান্ত বর্ণনা করি মানুষের জন্যে, যাতে তারা চিন্তা করে।

তাফসীরঃ
১৭. এ আয়াত দ্বারা কুরআনের মাহাত্ম্য বর্ণনার সাথে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, হে মানুষ! কুরআনের ওজন ও মহামর্যাদায় যেখানে পাহাড়ের মত বিশাল ও সুকঠিন, অথচ এক জড় সৃষ্টির যখন অবনত ও বিদীর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে এক ক্ষুদ্র ও কোমল, অথচ জ্ঞানবান সৃষ্টি হিসেবে এর দ্বারা তোমার তো অনেক বেশি প্রভাবিত হওয়ার কথা। কিন্তু তুমি ঠিক কতটুকু তা উপলব্ধি করছ? -অনুবাদক

২২

ہُوَ اللّٰہُ الَّذِیۡ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ۚ عٰلِمُ الۡغَیۡبِ وَالشَّہَادَۃِ ۚ ہُوَ الرَّحۡمٰنُ الرَّحِیۡمُ

হুওয়াল্লা-হুল্লাযী লাইলা-হা ইল্লা-হুওয়া ‘আ-লিমুল গাইবি ওয়াশশাহা-দাতি হুওয়াররাহমা-নুর রাহীম।

মুফতী তাকী উসমানী
তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি গুপ্ত ও প্রকাশ্য সব কিছুর জ্ঞাতা। তিনি সকলের প্রতি দয়াবান, পরম দয়ালু।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনিই আল্লাহ তা’আলা, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনিই আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা; তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু।

২৩

ہُوَ اللّٰہُ الَّذِیۡ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ۚ اَلۡمَلِکُ الۡقُدُّوۡسُ السَّلٰمُ الۡمُؤۡمِنُ الۡمُہَیۡمِنُ الۡعَزِیۡزُ الۡجَبَّارُ الۡمُتَکَبِّرُ ؕ سُبۡحٰنَ اللّٰہِ عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ

হুওয়াল্লা-হুল্লাযী লাইলা-হা ইল্লা-হুওয়া আলমালিকুল কুদ্দূছুছ ছালা-মুল ম’মিনুল মুহাইমিনুল ‘আঝীঝুল জাব্বা-রুল মুতাকাব্বিরু ছুবহা-নাল্লা-হি ‘আম্মা-ইউশরিকূন।

মুফতী তাকী উসমানী
তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি বাদশাহ, পবিত্রতার অধিকারী, শান্তিদাতা, নিরাপত্তাদাতা, সকলের রক্ষক, মহা ক্ষমতাবান, সকল দোষ-ত্রুটির সংশোধনকারী, গৌরবান্বিত, তারা যে শিরক করে তা থেকে আল্লাহ পবিত্র।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্বশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনিই আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই নিরাপত্তা বিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতীব মহিমান্বিত। এরা যাকে শরীক স্থির করে আল্লাহ্ তা হতে পবিত্র, মহান।

২৪

ہُوَ اللّٰہُ الۡخَالِقُ الۡبَارِئُ الۡمُصَوِّرُ لَہُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی ؕ  یُسَبِّحُ لَہٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ ۚ  وَہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ٪

হুওয়াল্লা-হুল খা-লিকুল বা-রিউল মুছাওবিরু লাহুল আছমাউল হুছনা-; ইউছাব্বিহুলাহূ মা-ফিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ওয়াহুওয়াল ‘ আঝীঝুল হাকীম।

মুফতী তাকী উসমানী
তিনিই আল্লাহ, যিনি সৃষ্টিকর্তা, অস্তিত্বদাতা, রূপদাতা, ১৮ সর্বাপেক্ষা সুন্দর নামসমূহ তাঁরই, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে তা তাঁর তাসবীহ পাঠ করে এবং তিনিই ক্ষমতাময়, হেকমতের মালিক।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনিই আল্লাহ তা’আলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নাম সমূহ তাঁরই। নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনিই আল্লাহ্, সৃজনকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, রূপদাতা, তাঁরই সকল উত্তম নাম। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সমস্তই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

তাফসীরঃ
১৮. এখানে আল্লাহ তাআলার ‘আল-আসমাউল হুসনা’ (সুন্দরতম নামসমূহ)-এর মধ্য হতে কয়েকটি উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা তার তরজমা লিখেছি, কিন্তু তরজমা নাম নয়। মূল নাম তাই, যা আয়াতে প্রদত্ত হয়েছে, অর্থাৎ আর রহমান, আর রাহীম, আল-মালিক, আল-কুদ্দুস, আস-সালাম, আল-মুমিন, আল-মুহায়মিন, আল-আযীয, আল-জাব্বার, আল-মুতাকাব্বির, আল-খালিক, আল-বারি, আল-মুসাউবির। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি নাম বর্ণনা করেছেন। সেগুলোকে ‘আল-আসমাউল হুসনা’ বলা হয়।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও

আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ  

আমাদের নতুন ইসলামিক নিউজ ও জিজ্ঞাসা ভিত্তিক সাইড

Islamic Info Hub ( www.islamicinfohub.com ) আজই ভিজিড করুন !! 

Leave a Comment