সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে করলা

করলা একপ্রকার ফলজাতীয় সবজি। এটি Cucurbitaceae পরিবারভুক্ত ও উদ্ভিদ লতা জাতীয়। ইংরেজিতে একে Balsam pear, alligator pear, bitter gourd, bitter melon, bitter cucumber প্রভৃতি নামে ডাকা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Momordica charantia। একবর্ষজীবী এর একই গাছে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল হয়।

করলা তেতো স্বাদযুক্ত ও এর শরীর কাঁটার মত ওয়ার্টে ভরা। পরিণত ফল লম্বাটে, রং কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকলে কমলা বা লাল, দৈর্ঘ্য ১২-২৫ সেন্টিমিটার ও প্রস্থ ৫-৭ সেমি হয়ে থাকে। দক্ষিণ এশীয় এই সবজি এখন সারা পৃথিবীতে বিশেষ করে ক্রান্তীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।

স্বাদে তিক্ত হলেও অনেকের কাছে এটি প্রিয় সবজি হিসেবে পরিচিত। প্রায় সব রকমের মাটিতে ও জল জমে না এমন জায়গায় করলার চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থসমৃদ্ধ দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়। করলার জমিতে পর্যাপ্ত রোদের প্রয়োজন হয়। করলা পরপরাগায়িত সবজি হওয়ায় এর জাত বৈচিত্র্যের শেষ নেই।

এক জাত লাগালেও পরের বছর সে জাত থেকে রাখা বীজ লাগিয়ে হুবহু একই বৈশিষ্ট্যের ফল পাওয়া যায় না। বছরের যেকোনো সময় করলা লাগানো যায়। তবে খরিপ অর্থাৎ গ্রীষ্ম-বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে ভালো হয়। এ মৌসুমে চাষ করতে হলে ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে বীজ বুনতে হবে। খোসা শক্ত বলে বীজ বোনার আগের দিন রাতে জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়। সাধারণত ১০০ গ্রাম বীজে ৬০০ থেকে ৭০০টি চারা হয়। প্রতি শতকে ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম করলার বীজের প্রয়োজন হয়।

চারা গজানোর ৬০ দিন পর থেকেই ফল আহরণ করা যায়।

নিয়মিত করলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উত্তম। অ্যালার্জি প্রতিরোধে করলার রস বিশেষভাবে উপকারী। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যও এটি ভালো। প্রতিদিন নিয়মিত করলার রস খেলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বাতের ব্যথায় নিয়মিত করলার রস খেলে ব্যথা আরোগ্য হয়। আর্য়ুুবেদের মতে, করলা কৃমিনাশক, কফনাশক ও পিত্তনাশক। করলার জীবাণুনাশক ক্ষমতাও রয়েছে। দেহের ক্ষতস্থানের ওপর করলা পাতার রসের প্রলেপ দিলে বা গাছ সিদ্ধ করে সে জল দিয়ে ক্ষতস্থান ধুলে কয়েক দিনের মধ্যেই ক্ষত শুকিয়ে যায়। চর্মরোগেও করলা বেশ উপকারী। এ ছাড়া জন্ডিস ও লিভারের অসুখে খাবারে অরুচি দেখা দিলে করলা খেলে রুচি আসে।

J.S.C

Leave a Comment