মামলুক ৯ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে ‘মামলুক

মামলুক শব্দের অর্থ ক্রীতদাস। মিসরে যুদ্ধবন্দিদের বাজারে দাস হিসেবে বিক্রি করা হতো। ক্রয় করার পর মামলুকদের অবস্থান অন্যান্য দাসের চেয়ে ওপরে থাকত। অন্যান্য দাসদের অস্ত্র বহন ও নির্দিষ্ট কিছু কাজ করার অনুমতি ছিল না। আইয়ুবীয় রাজবংশের সময় থেকে মুহাম্মদ আলি পাশার সময় পর্যন্ত মিসরে মামলুকরা ‘প্রকৃত শাসক’ হিসেবে বিবেচিত হতো। স্বাধীন মুসলিমদের চেয়ে তাদের সামাজিক মর্যাদা ওপরে ছিল।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মামলুকরা বিভিন্ন মুসলিম সমাজে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মিসর ছাড়াও মেসোপটেমিয়া ও ভারতে মামলুকরা রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি অর্জন করেছিল। কিছু ক্ষেত্রে সুলতানের পদ লাভ করে।

অন্যান্য ক্ষেত্রে স্থানীয় আমির হিসেবে তারা দায়িত্ব পায়। আইয়ুবী সুলতান মালিক আল সালিহর সময়ে এ সমস্ত ক্রীতদাসকে দেহরক্ষী বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিভিন্ন দেশ ও জাতির এ ক্রীতদাসরা মুসলিম খলিফা ও সুলতানদের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

ফলে এরা আইয়ুবী বংশের দুর্বলতার সুযোগে একটি স্বাধীন সালতানাতের সূচনা করে। মিসর ও সিরিয়ায় মামলুকরা সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা মামলুক সালতানাত (১২৫০-১৫১৭) বলে পরিচিত। মিসরের মামলুকরা সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মামলুক শাসন কায়েম করে। মামলুক বংশের শাসকরা বেশির ভাগই ছিলেন তুর্কি ক্রীতদাস।

মিসরের ক্রীতদাস অথবা মামলুক বংশ দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। যথা—বাহরি ও বুরজি। যেসব ক্রীতদাস আইয়ুবী সুলতান আস-সারিহ ক্রয় করেন, তাদের বাহরি মামলুক বলে। এই বাহরি বংশের মামলুকরা মিসরে একটি সার্বভৌম রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে। তারা ১২৫০ থেকে ১৩৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসনকার্য পরিচালনা করে। এ বংশের ২৪ জন সুলতান রাজত্ব করেন। প্রথম সুলতান ছিলেন আইবেক।

বাহরি মামলুকের পর বুরজি মামলুকদের আবির্ভাব ঘটে পরবর্তী পর্যায়ে। বাহরি মামলুক সুলতান কালাউনের রাজত্বকালে একশ্রেণির ক্রীতদাস দেহরক্ষী হিসেবে নিযুক্ত হয়। তারা ছিল কারকেসিয়ান বংশোদ্ভূত। এসব ক্রীতদাসের বেশির ভাগ নগর-দুর্গে অথবা ‘বুরজে’ বসবাস করত; এ কারণে তাদের বুরজি মামলুক বলা হতো। এ বংশের ২৩ জন সুলতান ১৩৮২ থেকে ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মিসরে রাজত্ব করেন। বুরজিদের মধ্যে বংশাণুক্রমিক উত্তরাধিকার ও স্বজনপ্রীতির প্রচলন ছিল না। তারা স্বীয় কর্মদক্ষতা ও বিচক্ষণতার ফলে ক্ষমতা লাভ করে।

শিক্ষা

Leave a Comment