কা’বার দিকে থুথু ফেলা নিষেধ, যে দিকে থুতু ফেলতে নবীজি নিষেধ করেছেন,কেবলার দিকে থুতু ফেলা কি হারাম?,কিবলার দিকে মুখ করে পেশাব পায়খানা করা নিষেধ জানি কিন্তু কেনো

আজকের বিষয়: কা’বার দিকে থুথু ফেলা নিষেধ, যে দিকে থুতু ফেলতে নবীজি নিষেধ করেছেন,কেবলার দিকে থুতু ফেলা কি হারাম?

আমরা জানি পশ্চিম দিকে থুতু ফেলতে হাদিসে নিষেধ রয়েছে। কারও কারও বাসার বেসিন পশ্চিম দিকে করা। তখন পশ্চিম দিকে মুখ করে নিচের দিকে কুলির পানি বা থুথু ফেলা যাবে কি?

এই প্রশ্নের উত্তর হলো- আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী কারিম (সা.)  কিবলার দিকে (দেয়ালে) ‘কফ’ দেখলেন। এটা তার কাছে কষ্টদায়ক মনে হল। এমনকি তার চেহারায় তা ফুটে উঠল। তিনি উঠে দিয়ে তা হাত দিয়ে পরিষ্কার করলেন। তারপর তিনি বললেন—

তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন সে তার রবের সাথে একান্তে কথা বলে। অথবা বলেছেন, তার ও কিবলার মাঝখানে তার রব আছেন। কাজেই, তোমাদের কেউ যখন কিবলার দিকে থুথু না ফেলে। বরং সে যেন তার বাম দিকে বা পায়ের নীচে তা ফেলে। তারপর চাদরের আঁচল দিয়ে— তিনি তাতে থুথু ফেললেন এবং তার এক অংশকে অন্য অংশের উপর ভাঁজ করলেন এবং বললেন, অথবা সে এরূপ করবে।

(বুখারি, হাদিস : ৪০৫; মুসলিম, হাদিস : ৪৯৩; নাসায়ি, হাদিস : ৩০৮; আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০; ইবন মাজাহ, হাদিস : ৭৬২; আহমদ, হাদিস : ১১৬৫১; দারেমি, হাদিস : ৪১৩৯৬; সহিহ আল-জামি, হাদিস : ১৫৩৭, ইবনে হিব্বান, হাদিস : ২২৬৭)

আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কিবলার দিকে থুথু ফেলল, সে কিয়ামাতের দিন তার দুই চোখের মাঝে ওই থুথু নিয়ে উপস্থিত হবে। (সাহিহুল জামি, হাদিস : ৬১৬০)

এখন কথা হলো- পশ্চিম দিকে থুথু ফেলা যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়— তাহলে তা জায়েজ। ইচ্ছাকৃত তবে অসম্মান প্রদর্শনের নিয়তে নয়, এমন হলে মাকরুহ। সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থায় কোনো সমস্যা হবে না।

এছাড়াও বাসার বেসিন যেহেতু পশ্চিম দিকে করা, পশ্চিম দিকে মুখ করে নিচের দিকে কুলির পানি বা থুথু ফেললেও অনেকটা পশ্চিম দিক হয়েই এগুলো করতে হয়, তাই অসম্মানের উদ্দেশ্য না নিলেও তা মাকরুহ হবে। তাই এক্ষেত্রে বেসিনের অন্য সাইট থেকে কুলি করা যেতে পারে অথবা মুখ নিচের দিকে করে থুতু ফেলা যেতে পারে।

আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ

কিবলার দিকে মুখ করে পেশাব পায়খানা করা নিষেধ জানি, কিন্তু সে দিকে থুথু ফেলাও কি নিষেধ? কিবলার দিকে থুথু ফেলা নিষেধ হওয়ার ব্যাপারটা কি নামাযের মধ্যে সীমিত নয়?

আনাস (রঃ) বলেন, নবী (সঃ) কিবলার (দিকের দেওয়ালে) থুথু দেখতে পেলেন। এটা তাঁর প্রতি খুব ভারী মনে হল; এমনকি তাঁর চেহারার সে চিহ্ন দেখা গেল। ফলে দাঁড়ালেন এবং তিনি তা নিজ হাত দ্বারা ঘসে তুলে ফেললেন। তারপর বললেন, “তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায়, তখন সে তাঁর প্রতিপালক এর সাথে (কানেকানে ফিসফিস করে) কথা বলে। আর তাঁর প্রতিপালক তাঁর ও তাঁর কিবলার মধ্যস্থলে থাকেন। সুতরাং তোমাদের কেউ যেন কিবলার দিকে থুথু না ফেলে; বরং তাঁর বামে ও পদতলে ফেলে। অতঃপর তিনি তাঁর চাদরের এক প্রান্ত ধরে তাতে থুথু নিক্ষেপ করলেন। তারপর তিনি তাঁর এক অংশকে আর এক অংশের সাথে রগড়ে দিয়ে বললেন, কিংবা এইরূপ কর।” (বুখারি-মুসলিম)

এ নিষেধ হল নামাযের ব্যাপারে। কিন্তু আমভাবেও কিবলার দিকে থুথু ছুড়ে ফেলতে নিষেধ এসেছে। কিবলার প্রতি আদব প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহর রাসুল (সঃ) বলেছেন, “কিবলার দিকে যে কফ ফেলে, তাঁর চেহারায় ঐ কফ থাকা অবস্থায় সে ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত করা হবে।” (বাযযার, ইবনে খুযাইমাহ, ইবনে হিব্বান, সহিহ তারগিব ২৮১ নং)

আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ

কা’বার দিকে থুথু ফেলা নিষেধ।

পবিত্র কা’বা সম্মানিত ঘর। কা’বার সম্মান রক্ষা করা সকল মুসলিমদের কর্তব্য। যার কারণে কা’বার দিকে ফিরে থুথু ফেলা নিষেধ। কারণ হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنّ رَسولَ اللَّهِ ﷺ رَأى في جِدارِ القِبْلَةِ مُخاطًا أوْ بُصاقًا أوْ نُخامَةً، فَحَكَّهُ

অর্থঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার কিবলার দিকে দেওয়ালে থুথু অথবা কাশ বা নাকের পানি দেখিতে পাইলেন, তিনি উহা ঘষিয়া পরিষ্কার করিয়াছিলেন।
সূত্রঃ সহিহ বুখারী হাদিস:৪০৭ মুসলিম: ৫৪৯

عَنْ حُذَيْفَةَ، أَظُنُّهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلّى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ تَفَلَ تُجَاهَ الْقِبْلَةِ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تَفْلُهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ

অর্থঃ হযরত হুযাইফাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি কিবলাহর দিকে থুথু ফেলে কিয়ামাতের দিন সে ঐ থুথু নিজের দু’ চোখের মধ্যখানে পতিত অবস্থায় উপস্থিত হবে।
সূত্রঃ সুনানে আবু দাউদ হাদিস: ৩৮২৪ সহিহ ইবনে হিব্বান: ১৬৩৯ আত তারগীব খ:১ পৃ: ১৬১ (হাদিস সহিহ)

কেবলার দিকে পা প্রসারিত করা, থুতু ফেলা, পিঠ দেওয়া কি গুনাহর কাজ?

উত্তর : কেবলার দিকে পা প্রসারিত করা বা পা লম্বা করা বা পা দেওয়া কোনোটিই গুনাহর কাজ নয়। কিন্তু কেউ যদি উপেক্ষা করে কেবলাকে অবমাননা করার জন্য করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই গুনাহ হবে। কারণ, কেবলাকে অবমাননা করার জন্য যদি এ কাজ করে থাকেন এবং স্বাভাবিক অবমাননার বিষয় হয়, তাহলে কিন্তু এটি গুনাহর কাজ হবে। 

কিন্তু কেবলার দিকে থুতু দেওয়া হারাম, এটি ভিন্ন মাসয়ালা। খুব কঠিন একটি মাসয়ালা নিয়ে এসেছেন এর সঙ্গে। কেবলার দিকে যদি কেউ থুতু দিয়ে থাকেন, তিনি কিন্তু হারাম কাজ করেছেন। কেয়ামতের দিন সেই থুতু মুখে নিয়ে উঠতে হবে তাকে। এটি অত্যন্ত কঠিন বিষয়। আল্লাহর নবী (সা.) কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন। 

আর কেবলার দিকে পিঠ দেওয়াও হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ নয়। তবে কেবলাকে পশ্চাদ দেওয়ার অর্থ যদি এটা বোঝায় যে, আমি কেবলাকে পিছে ফেলে দিলাম বা কেবলাকে অবমাননা করলাম, তাহলে কিন্তু এ কাজটি হারাম হবে। এর জন্য গুনাহগার হবেন। কিন্তু কোনো কারণে যদি কেবলার দিকে পিঠ দেন, এতে কোনো অসুবিধা নেই, আপনি গুনাহগার হবেন না।

একইভাবে কেউ যদি কেবলার দিকে পা দিয়ে শুয়ে থাকেন, কিন্তু কেবলাকে অবমাননার জন্য নয়, এমনিই শুয়েছেন, তাহলে তাঁর এটা গুনাহ হবে না। কিন্তু যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কেবলাকে অবমাননা করার জন্য হয়, তাহলে গুনাহ হবে। যেমন : কেউ কেবলার দিকে পা দিয়ে শুয়ে আছে। একজন এসে বলল, ভাই, আপনি কেবলার দিকে পা দিয়ে আছেন। এখন তিনি  উপেক্ষা করে যদি বলেন, কেবলা আবার কী! আমি যেদিকে খুশি পা দিয়ে শুতে পারি। অবজ্ঞার কোনো সুর যদি সেখানে পাওয়া যায়, তাহলে তার এ কাজ হারাম হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের যে কেবলা আল্লাহ মুসলমানদের জন্য নির্ধারণ করেছেন, সে কেবলাকে অবমাননা করেছেন। তিনি গুনাহগার হবেন। কিন্তু যদি এমন হয় যে, কেবলাকে অবমাননার জন্য নয়, এমনিতেই শুয়ে আছেন, তাহলে তিনি এতে গুনাহগার হবেন না। 

যদি হাঁটতে হাঁটতে না জেনে কেবলার দিকে থুতু ফেলেন, তাহলে সেটি হারাম হবে না। কিন্তু যদি জেনেশুনে করেন, তাহলে হারাম হবে। পশ্চিম দিকে হাঁটতে থাকলেও তিনি ডানে-বাঁয়ে বা পেছনে থুতু ফেলবেন, কিন্তু কেবলার দিকে থুতু ফেলতে পারবেন না। জেনে-বুঝে করলে সেখানে যদি অবমাননা না-ও থাকে, তবুও সে এই কাজটি করতে পারবেন না। রাসূল (সা.) এটাকে হাদিসে সরাসরি কঠিনভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন।

আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ

    প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

    আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও

    Leave a Comment