LC প্রত্যয়পত্র খোলার জন্য কি কি ডকুমেন্ট প্রয়ােজন, প্রত্যয়পত্র খােলর ধাপ সমূহ আলােচনা কর, প্রত্যয়নপত্র (LC) খোলার পদ্ধতি লিখুন,এলসি (LC) খুলার নিয়ম কানুন,জেনে নিন ‘লেটার অব ক্রেডিট’ বা ‘এলসি’ এর আদ্যোপান্ত

প্রশ্ন সমাধান: LC প্রত্যয়পত্র খোলার জন্য কি কি ডকুমেন্ট প্রয়ােজন, প্রত্যয়পত্র খােলর ধাপ সমূহ আলােচনা কর, প্রত্যয়নপত্র (LC) খোলার পদ্ধতি লিখুন,এলসি (LC) খুলার নিয়ম কানুন,জেনে নিন ‘লেটার অব ক্রেডিট’ বা ‘এলসি’ এর আদ্যোপান্ত

প্রত্য়য়পত্র খোলার জন্য কি কি ডকুমেন্ট প্রয়ােজন

আমরা জানি, প্রত্যয়পত্র হলাে ব্যাংক কর্তক এমন এক ধরনের নিশ্চয়তাপত্র যার মাজ আমদানিকারক বা ক্রেতার পক্ষে রপ্তানিকারক বা দল অনুকলে আমদানি করা পণ্যের মূল্য পরিশােধ . করে।

অন্ত র্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ডকুমেন্টারি ঋণপত্র এবং দীর্ঘমেয় ঋণপত্র যেমন- ১ বছর বা তার বেশি সময়ের আমদানি রপ্তানি চুক্তির জন্য স্ট্যান্ডবাই ঋণপত্র ব্যবহার করা হয় । রপ্তানিকারকের কাছ থেকে পণ্য বিক্রয়ের লিখিত প্রতিশ্রুতি পাবার পর আমদানিকারক তার বিশ্বস্ত ব্যাংককে রপ্তানিকারকের বরাবর পণ্য মূল্য পরিশােধের জন্য একটি প্রতিজ্ঞাপত্র তৈরি করার জন্য অনুরােধ করে। এক্ষেত্রে আমদানি করা মূল্য পরিশােধে জন্য অবশ্যই ব্যাংক শুধুমাত্র দলিলটি সংরক্ষণ এবং আদান-প্রদান করে কিন্তু পণ্য নিয়ে নয়। ঋণপত্র খােলার জন্য আমদানিকারনে তার ব্যাংকে নিম্নোক্ত দলিলটি উপস্থাপন করতে হয় |

১. কর পরিচিতিকরণ নম্বর বা TIN নম্বর;

২. কার্যকরী টেড লাইসেন্স;

৩. আমদানি নিবন্ধন সনদ (IRC)।

ঋণপত্র খােলার আগে ব্যাংক নিম্নোক্ত কাগজপত্র সরবরাহ করে থাকে।

১. ঋণপত্র প্রশাসনের সম্মতিপত্র;

২. আবেদন ও সম্মতিপত্র;

৩. আইএমপিফরম; এই ফরমের মাধ্যমে বাংলাদেশে আমদানিকৃত সকল পণ্যের মূল্য পরিশােধ তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানাতে হবে;

৪. বিভিন্ন দলিলাদি প্রস্তুতের জন্য নির্ধারিত ফি

উপরিউক্ত তথ্য এবং ফরমগুলাে যথাযথভাবে পূরণ সাপেক্ষে আমদানি করা পণ্যের মূল্য পরিশােধের জন্য ঋণপত্র (LC) খােলা যায়।

আমদানিকারীর কাছ থেকে পণ্যের অর্ডার পাবার পর রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রাপ্ত সম্পর্কে নিশ্চয়তা চাইলে ব্যাংক যে ঋণপত্রের মাধ্যমে আমদানিকারীর পক্ষে এবং রপ্তানিকারীর অনুকূলে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য পরিশােধের নিশ্চয়তা প্রদান করে তাকেই প্রত্যয়নপত্র বা Letter of credit বলে।

বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যবহৃত দলিলগুলাে মধ্যে একটি একটি অন্যতম প্রধান দলিল এবং আমদানিকারীর ব্যাংক কর্তৃক প্রচারিত একটি ঋণের দলিল যার মাধ্যমে ব্যাংক আমদানিকারীর আমদানিকৃত পণ্যের দেনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। প্রকৃতপক্ষে, এটি আমদানিকারীর আর্থিক সচ্ছলতা সম্পর্কে ব্যাংকের একটি ঘােষণাপত্র।

অর্থাৎ প্রত্যয়নপত্র এক ধরনের ব্যবস্থাপনা যেখানে ব্যাংক আমদানিকারকের পক্ষে রপ্তানিকারককে টাকা প্রদানের নিশ্চয়তা। প্রদান করে। নিচে প্রত্যয়পত্র খােলার ধাপসমূহ/পদক্ষেপসমূহ আলােচনা করা হলাে। মনে রাখার বিষয় যে, প্রত্যয়পত্রের এ ধাপসমূহ আমদানি নীতি (২০০৩-২০০৬) অনুযায়ী বর্ণিত হয়েছে।


আরো ও সাজেশন:-

প্রত্যয়পত্র খােলর ধাপ সমূহ আলােচনা কর

১. মনােনীত ব্যাংকক খােলার পূর্বে মনােনী মনােনীত ব্যাংক কর্তৃক এল, সি, এ ফরম গ্রহণ ; এল, সি পর্বে মনােনীত ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ নিরূপ : (ক) বেসরকারি খাতে ঋকৃত শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং নিবন্ধিত উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক আমদানিকারকগণ কর্তৃক মালামাল পত্র খােলার জন্য এল.সি.এ ফরম ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্রাদি কাদের নিজ নিজ মনােনীত ব্যাংকে দাখিল করতে হবে ।

(খ) বেসরকারি সকল আমদানিকারকের নিকট হতে = সি এ ফরম গ্রহণ করার সময় মনােনীত ব্যাংক এ মর্মে। C%ত হবে যে, সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন ইউনিটের নিকট পাঁচ কপি। এন সি,এ ফরম নিবন্ধনের জন্য প্রেরণ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেজিস্ট্রেশন ইউনিট নিবন্ধনের পর এল.সি.এ ফরমের ও দ্বিতীয় কপি সংশ্লিষ্ট মনােনীত ব্যাংকের নিকট এবং ৯ ও চতুর্থ কপি সংশ্লিষ্ট আমদানি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিকট। পরীক্ষা ও রেকর্ডের জন্য পনের দিনের মধ্যে প্রেরণ করবে। |

২, সরকারি বরাদ্দের বিপরীতে যে সকল এল.সি.এ ফরম নিবন্ধনের আবশ্যকতা নেই সে সকল ক্ষেত্রের বিধান : ঋণ অনদান, বিনিময় অথবা বিশেষ বাণিজ্য চুক্তির অধীন আমদানির যে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবন্ধনের প্রয়ােজন নেই সেক্ষেত্রে মনােনীত ব্যাংক, আমদানিকারকের এস.সি.এ ফরমে উল্লিখিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করে এল.সি.এ ফরম/এল.সি দরখাস্ত ফরম এবং অন্যান্য আবশ্যকীয় দলিলপত্র নির্ধারিত ব্যাংকের নিকট এল.সি. খােলবার অনুরােধ জানিয়ে প্রেরণ করবে এবং নির্ধারিত। ব্যাংক তখন এল.সি. খুলে সংশ্লিষ্ট এল.সি. ফরমের তৃতীয় ও চতুর্থ কপি আমদানি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিকট পনের দিনের মধ্যে আবশ্যই প্রেরণ করতে হবে।

৩. নগদ বৈদেশিক মুদ্রায় এল.সি.এ ফরম : নগদ বৈদেশিক রে আমদানির জন্য যে সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ব নক্রমে বৈদেশিক মুদ্রায় ক্রয় করা হবে শুধু সে সকল র নগদ বৈদেশিক মুদ্রায় জারিকৃত এল.সি,এ ফরম | দেশ ব্যাংকের রেজিস্ট্রেশন ইউনিটে নিবন্ধন করতে হবে। সকত সকল এল.সি.এ ফরমের উপরের দিকে ডান কোণে। নগদ বৈদেশিক মুদ্রায় ইস্যুকৃত মর্মে সুস্পষ্ট রাবার স্ট্যাম্পের চাপ দিতে হবে। যে ব্যাংক নগদ বৈদেশিক মুদ্রায় ইস্যুকৃত এল সি.এ ফরমের বিপরীতে ঋণপত্র খুলবে সে ব্যাংকে ঋণপত্র | খােলার পর সংশ্লিষ্ট এল.সি.এ ফরমের ৩য় ও ৪র্থ কপি সংশ্লিষ্ট এলাকায় আমদানি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিকট পনের দিনের মধ্যে অবশ্যই প্রেরণ করতে হবে।

৪. আমদানি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের রেকর্ডভুক্তির জন্য ঋণপত্রের কপি প্রেরণ : ঋণপত্র খােলার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ঋণপত্রের একটি পাঠযােগ্য কপি এবং সংশােধনী হয়ে থাকলে উহার একটি কপি সংশ্লিষ্ট আমদানি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিকট তাদের রেকর্ডভুক্তির পনের দিনের মধ্যে প্রেরণ করবে।

৫. বেসরকারি আমদানিকারক কর্তৃক দাখিলকৃত আয়কর | ঘােষণাপত্র প্রেরণ : বেসরকারি আমদানিকারকের মনােনীত ব্যাংক আমদানিকারক কর্তৃক দাখিলকৃত আয়কর ঘােষণাপত্রের একটি কপি নিজের কাছে রাখবে এবং অপর একটি কপি পরিচালক (গবেষণা এবং পরিসংখ্যান) জাতীয় রাজস্ব বাের্ড, সেগুন বাগিচা, ঢাকার নিকট প্রেরণ করবে।

৬. মনােনীত ব্যাংক পরিবর্তন : একই দপ্তরাধীন এলাকার মধ্যে ৬৩য় ব্যাংকের অনাপত্তি ও সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক আমদানি ও রপ্তানি | নিয়ন্ত্রণ দপ্তরকে অবহিত করে মনােনীত ব্যাংক পরিবর্তন করা যাবে ।

সাধারণভাবে উপরে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যয়পত্র খােলা যেতে পারে। যেকোনাে ব্যবসায়ী উপরিউক্ত ধাপসমূহ অতিক্রমের মাধ্যমে এল.সি অথবা প্রত্যয়পত্র খুলতে পারে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

লেটার অব ক্রেডিট (এলসি)

প্রত্যয়পত্র/লেটার অব ক্রেডিট বা ঋণপত্র হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে প্রত্যয়পত্র ইস্যুকারি ব্যাংক রপ্তানিকারকের প্রতি এই মর্মে অপ্রত্যাহারযোগ্য নিশ্চয়তা প্রদান করে যে, যদি রপ্তানিকারক বা ঋণপত্রের বেনিফিশিয়ারি ঋণপত্রে বর্ণিত শর্তপূরণ সাপেক্ষে ঋণপত্রে নির্দিষ্ট মূল্যের ভিত্তিতে ঋণপত্রে উল্লেখিত পরিমাণ পণ্য বা সেবা রপ্তানি করে ঋণপত্রে বর্ণিত শর্ত পূরণ এর পক্ষে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট (যেমন: ইনভয়েস, প্যাকিংলিষ্ট, পরিবহন দলিল, বিল অব এক্সচেঞ্জ, কান্ট্রি অব অরিজিন ইত্যাদি) ঋণপত্র ইস্যুকারি ব্যাংক বা তার মনোনীত কোন ব্যাংকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করে তাহলে প্রত্যয়পত্র ইস্যুকারি ব্যাংক প্রত্যয়পত্রে বেনিফিশিয়ারকে মূল্য পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে।

LC হচ্ছে আন্তর্জাতীক বানিজ্যে প্রচলিত অনেকগুলো অর্থ পরিশোধ পদ্ধতির মধ্যে একটি। এ্টি পৃথিবী ব্যাপি সবচেয়ে জনপ্রিয়, নিরাপদ ও সর্বজন গ্রাহ্য অর্থপরিশোধ মাধ্যম। আন্তর্জাতিক লেনদেন পরিশোধের সর্বজন স্বীকৃত ও বহুল প্রচলিত মাধ্যম হিসাবে লেটার অব ক্রেডিট ব্যবহৃত হয়। এটি ক্রেতার পক্ষ্যে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ঋণের দলিল,যা দ্বারা বিক্রেতার বিলের মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়।

International Chamber of Commerce (ICC) কর্তৃক প্রনীত Uniform Customs and Practice for Documentary Credits (UCPDC) এর সদস্য দেশ সমূহ LC ইস্যু করে থাকে। UCPDC-তে LC ‘র সাথে জড়ীত সকল পক্ষের অধিকার, দায়-দায়ীত্ব, করনীয়, বর্জনীয় ইত্যাদি উল্লেখ থাকে বিধায় আন্তর্জাতীক বানিজ্যে বহুলাংশে নিষ্কন্টকভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। -UCPDC, Publication 600, Article-2 এ লেটার অব ক্রেডিটের সজ্ঞায় বলা হয়েছে “Credit means any arrangement, however named or described, that is irrevocable and thereby constitutes a definite undertaking of the issuing bank to honour a complying presentation”.

অর্থাৎ ঋণপত্র এমন একটি ব্যবস্থা এটাকে যে নামেই ডাকা হোক বা যেভাবেই ব্যাখা করা হোকনা কেন যেখানে ইস্যুকারী ব্যাংক এই মর্মে অঙ্গিকার করে যে,এলসির শর্তাবলী যথাযথভাবে পরিপালনপূর্বক রপ্তানি দলিলাদি তার নিকট উপস্থাপন করা হলে এর মূল্য পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে।

ঋণপত্র বিভিন্ন নামে পরিচিত,যেমনঃ

     ক)বণিজ্যিক ঋণপত্র (Commercial Credit)

     খ)ডকুমেন্টারী ক্রেডিট (Documentary Credit)

     গ)স্ট্যান্ডবাই লেটার অব ক্রেডিট (Standby Letter of Credit)

লেটার অব ক্রেডিট বা ঋণপত্রের বিভিন্ন পক্ষ

১) আবেদনকারী (Applicant): যিনি বা যার অনুরোধে ব্যাংক প্রত্যয়পত্র খোলেন অর্থাৎ যে পক্ষ নিজ দেশের ব্যাংকের কাছে লেটার অব ক্রেডিট খোলার আবেদন জমা দেন, তাকের আবেদনকারী বলা হয়। সাধারণত, পণ্যের বায়ার/ক্রেতা এলসি অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবেদন করেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ীই লেটার অব ক্রেডিট খোলা হয় এবং এলসির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ তার অ্যাকাউন্টে রাখা হয়। ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যবর্তী পারচেজ অর্ডার এবং ব্যবসায়িক চুক্তির শর্তয়ানুসারে আবেদনকারী বায়ার নিজ ব্যাংকের সাথে লেটার অব ক্রেডিট খুলে থাকেন।

২) বেনিফিশিয়ারি (Beneficiary): বেনিফিসিয়ারী বলতে সেই পক্ষকে বুঝাবে যার পক্ষে ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়।যে পক্ষের অনুকূলে এল সি খোলা হয়ে থাকে রপ্তানিকারক/ বিক্রেতা/ বেনিফিশিয়ারি বলে। বেনিফিশিয়ারি হলেন রপ্তানিকারক বা বিক্রেতা যার অনুকূলে ব্যাংক L/C খুলে থাকে।

৩) ইস্যুয়িং ব্যাংক (Issuing Bank): ইস্যুইং ব্যাংক বলতে সেই ব্যাংককে বুঝায় যে আবেদনকারীর অনুরোধে কিংবা তার পক্ষে এলসি ইস্যু করে। এই ব্যাংক আবেদনকারী বা আমদানি কারকের পক্ষে LC ইস্যু করে। এ ব্যাংকে আবার ওপেনিং ব্যাংক ও বলা হয়।

৪) এডভাইজিং ব্যাংক (Advising Bank): এ্যাডাভাইজিং ব্যাংক বলতে সেই ব্যাংককে বোঝাবে যে ইস্যুইং ব্যাংক এর অনুরোধে ঋণপত্র সুবিধা প্রদান করে। এডভাইজিং ব্যাংক হল ওপেনিং ব্যাংকের প্রতিনিধি।অন্যভাবে বলতে, রপ্তানিকারকের দেশে অবস্থিত যে ব্যাংকের মাধ্যমে এল সি পাঠানো হয় তাকে এডভাইজিং ব্যাংক বলে। ইস্যুইং ব্যাংকের অনুরোধে এই ব্যাংক ঋণপত্র সুবিধা প্রদান করে।  

৫) নমিনেটেড ব্যাংক (Nominating Bank): এটা এমন এক ব্যাংক (ঋণপত্রে উল্লেখিত ব্যাংক বা ঋণপত্রে উল্লেখ না থাকলেও যেকোন ব্যাংক) যেখানে ঋণপত্রের বেনিফিশিয়ারি উক্ত ঋণপত্রে নিদিষ্ট মূল্যের ভিত্তিতে ঋণপত্রে উল্লেখিত পরিমাণ পণ্য বা সেবা রপ্তানির স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস উপস্থাপন করে এবং ব্যাংক উক্ত ডকুমেন্টস ইস্যুইং ব্যাংক/কনফার্মিং ব্যাংকে উপস্থাপন করে পণ্য মূল্য সংগ্রহ করে।

৮) নেগোশিয়েটিং ব্যাংক (Negotiating Bank):এটা এমন এক ব্যাংক (ঋণপত্রে উল্লেখিত ব্যাংক বা ঋণপত্রে উল্লেখ না থাকলেও যেকোন ব্যাংক) যেখানে ঋণপত্রের বেনিফিশিয়ারি উক্ত ঋণপত্রে নিদিষ্ট মূল্যের ভিত্তিতে ঋণপত্রে উল্লেখিত পরিমাণ পণ্য বা সেবা রপ্তানির স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস উপস্থাপন করে এবং ডকুমেন্টসের বিপরীতে ঋণ নিতে সক্ষম হয়।এই ব্যাংক সর্বদা ঋণপত্রের মূল্য পরিশোধ করতে প্রস্তুত থাকে। নমিনেটেড ব্যাংক উক্ত ডকুমেন্টস ইস্যুইং ব্যাংক/কনফার্মিং ব্যাংকে উপস্থাপন করে পণ্য মূল্য সংগ্রহ করে।

৬) কনফার্মিং ব্যাংক (Add Confirming Bank): যে ব্যাংক ইস্যুয়িং ব্যাংকের অনুরোধে এল সি-তে তার নিশ্চয়তা (কনফার্মেশন) প্রদান করে তাকে কনফার্মিং ব্যাংক বলে। এটা এডভাইজিং ব্যাংকও হতে পারে। ইস্যুয়িং ব্যাংক পণ্যমূল্য পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে কনফার্মিং ব্যাংক ইস্যুয়িং ব্যাংকের পক্ষে মূল্য পরিশোধ করার অঙ্গিকার করে।  

কনফার্মড এলসি হচ্ছে ইস্যুকারী ব্যাংক কর্তৃক অর্থ পরিশোধের সুস্পষ্ট অংগীকার বা নিশ্চয়তাপত্র। অনেক সময় দরীদ্র দেশ, যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশ বা রাজনৈতিকভাবে ভংগুর দেশের ব্যাংক অথবা এলসি ইস্যুকারী ব্যাংকের আন্তর্জাতিক সুখ্যাতি না থাকলে বা ইস্যুকারী দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দুর্বল হলে রপ্তানীকৃত পণ্যে মূল্য পাওয়া নিয়ে অনেক ব্যাংক আস্থা রাখতে পারেনা।সেক্ষেত্রে তারা ঋণপত্রে বিপরীতে তৃতীয় কোন প্রথম শ্রেণীর বা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যাংকের নিকট থেকে অর্থ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত নিশ্চয়তা পেতে চায়। এ অতিরিক্ত নিশ্চয়তাকে ইংরেজীতে Additional Confirmaiton বা Add Confirmation বলা হয়।

৭) রিইমবার্সিং ব্যাংক (Reimbursing Bank): যে ব্যাংকের উপর বিল এর মূল্য দেওয়া হয় এবং বিল পরিশোধের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে রিইমবার্সিং ব্যাংক বলে। এই ব্যাংক ইস্যুয়িং ও নমিনেটেড ব্যাংক বা কনফার্মিং ব্যাংকের মধ্যে মধ্যস্তকারী ব্যাংক হিসেবে কাজ করে।ইস্যুইং ব্যাংক রিইমবার্সিং ব্যাংকে এই মর্মে অনুমোদন দেয় যে, রিইমবার্সিং ব্যাংক মূল্য পরিশোধ বা বিলের অনুমোদন দিতে পারবে।

লেটার অব ক্রেডিট বা ঋণপত্রের প্রকারভেদ 

ব্যবহার অনুযায়ী লেটার অব ক্রেডিট বা ঋণপত্রকে বিভিন্ন প্রকারে ভাগ করা যায়। যথাঃ

১।   Irrevocable L/C: ইস্যুইং ব্যাংক-বেনিফিসিয়ারি ব্যাংক উভয়পক্ষ একমত না হলে ইস্যুয়িং ব্যাংক লেটার অব ক্রেডিটের কোন পরিবর্তন করতে পারবে না।

২।   Revocable L/C: ক্রেতার অনুরোধে বা ইস্যুয়িং ব্যাংক নিজেই যেকোন সময় এলসির শর্তাবলী পরিবর্তন করতে পারে। এক্ষেত্রে বেনিফিশিয়ারিকে নোটিশ দেয়ার দরকার নেই।

৩।   Back to Back L/C: রপ্তানিকারকের অনুকূলে এক্সপোর্ট এলসি ইস্যুর পর যখন রপ্তানি পণ্য তৈরির জন্য প্রয়োজনী কাঁচামাল ক্রয় করার মতো প্রয়োজনীয় মূলধন রপ্তানিকারকের থাকে না তখনই মাস্টার এক্সপোর্ট এলসি লিয়েন রেখে কাঁচামাল ক্রয়/আমদানির জন্য ব্যাক টু ব্যাক এলসি ইস্যু করা হয়। অর্থাৎ ব্যাক টু ব্যাক এল সি’র মাধ্যমে রপ্তানিকারক রপ্তানির উদ্দেশ্যে পণ্য ক্রয়, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্রস্তুতকরণ এবং প্যাকেজিং এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের বন্দোবস্ত করে।

৪।   Ad-Confirmed L/C: তৃতীয় কোন ব্যাংক ইস্যুইং ব্যাংকের পক্ষে বিক্রেতাকে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা দেয়।অর্থাৎ ইস্যুইং ব্যাংক পণ্যের মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হলে তৃতীয় কোন ব্যাংক তা পরিশোধ করবে মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করে।

৫। Transferrable L/C: এলসির মূল্য ও পণ্য ১ম বেনিফিসিয়ারির মাধ্যমে ২য় বিভিন্ন বেনিফিসিয়ারি/রপ্তানিকারকের কাছ থেকে সরবরাহের জন্য এলসি ভাগ/Transfer করে দেয়া হয়।ইস্যুইং ব্যাংক কোন Intermediary Trader/Broker/বাইং এজেন্টের নিকট থেকে মালামাল ক্রয়ের জন্য তার অনুকূলে এলসি ইস্যু করে।এজেন্ট এলসির মূল্য ও মালের পরিমান বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন বিক্রেতা/উৎপাদনকারীদের মধ্যে ট্রান্সফার করে দেয় এবং তাদের নিকট থেকে মাল সরবরাহ করে ক্রেতার নিকট পৌঁছে দেয়।এক্ষেত্রে এজেন্ট কম মূল্যে বিক্রেতা/উৎপাদনকারীদের নিকট থেকে মাল ক্রয় করে বেশি দামে বিদেশী ক্রেতার নিকট বিক্রয় করে মুনাফা অর্জন করে। এধরনের এলসিতে Transferrable কথাটি উল্লেখ থাকে। ২য় বেনিফিসিয়ারি অন্য কাউকে Transfer দিতে পারেনা।

৬।   Revolving L/C: ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দীর্ঘ দিনের সুসম্পর্ক ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দীর্ঘ মেয়াদে রিভোলভিং এলসি স্থাপন করা হয়।এ ধরনের এলসি নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে সাধারণত কোন সংশোধন (amendment) ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পূর্ণ এলসি পুনঃস্থাপনের অনুমতি দেয়। একবার এলসি খোলা হলে তা বারবার খোলার প্রয়োজন নেইে এমনকি মেয়াদোত্তীর্ণের পূর্বে বিলের সম্পূর্ণ বা আংশিক অর্থ পরিশোধ করা হলেও এলসি বাতিল হয়না।

৭।   Red Clause L/C: বিক্রেতার অনুরোধে এলসির শর্তানুযায়ী ক্রেতা এলসিতে উল্লেখিত মালের মূল্যের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অগ্রীম (Pre-shipment Advance)পরিশোধ করে।বি্ক্রেতা কর্তৃক ডকুমেন্ট উপস্থাপনের পর অগ্রীম প্রদানকৃত অর্থ বাদ দিয়ে বাকী অর্থ ক্রেতাকে পরিশোধ করা হয়।

অন্যান্য এলসি:

Cash L/C: যখন কোন এলসির বিপরীতে আমদানীকৃত পণ্যের মূল্য নিম্ন বর্ণিত উৎস থেকে পরিশোধ করা হয় তাকে ক্যাশ এলসি বলা হয়ঃ

(ক)  বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ

(খ)  এডি শাখার বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব।

Clean Letter of Credit: ইস্যুইং ব্যাংক এই মর্মে অঙ্গিকার করে যে,এলসির শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে বেনিফিশিয়ারি কর্তৃক কোন ডকুমেন্ট ছাড়াই বিল অব এক্সেচেঞ্জ উপস্থাপন করা হলে তা গ্রহন করা হবে এবং মূল্য পরিশোধ করা হবে।

Standby Credit: এটি ব্যাংক গ্যারান্টির পরিপূরক। ইস্যুইং ব্যাংক বেনিফিশিয়ারিকে এই মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করে যে,ক্রেডিটে উল্লেখিত কোন নির্দিষ্ট বিষয়/ঘটনার (event)আলোকে আবেদনকারী (Applicant) ক্রেডিটের শর্তানুযায়ী কার্য সম্পাদন বা মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হলে,ইস্যুইং ব্যাংক ক্রেডিটে উল্লেখিত অর্থ বেনিফিশিয়ারিকে পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে।

লেটার অব ক্রেডিট সম্পাদনের জন্য যেসব কাগজপত্র/দলিদালি ব্যাংকে উপস্থান করতে হয়ঃ

L/C খুলতে সবার প্রথমে একটা ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে। এরপর ব্যাংক সাধারণত যে ডকুমেন্টস গুলো চায় তা হলোঃ

১)   সেই ব্যাংক এ কোম্পানীর নামে একটা একাউন্ট অথবা ব্যাংকের  নিকট অতি পরিচিত।

২)   কোম্পানির বৈধ/হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স/ মেমোরান্ডাম অব আর্টিক্যালস অব এসোসিয়েশন

৩)   কোম্পানির বৈধ/হালনাগাদ IRC (Import Registration Certificate)

৪)   বৈধ/হালনাগাদ টিন (Tax Identification Number) এবং ভ্যাট (Valued Added Tax) সার্টিফিকেট

৫)   চেম্বার অব কমার্স/ সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনের মেম্বারসিপ সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

৬)   বন্ডেড ওয়্যার হাউস লাইসেন্স (ব্যাক টু ব্যাক এলসির ক্ষেত্রে)

৮)   মেম্বারসীপ সনদ

৯)   ইনডেন্ট/প্রফরমা ইনভয়েস

১০)  ইন্স্যুরেন্স কভার নোট (মানি রিসিট সহ)

১১)  কোলেটরেল সিকিউরিটির ক্ষেতে জমিজমা/বাড়ি ঘরের এর দলিলাদী/কাগজপত্র।

এছাড়া ব্যাংক কর্তৃক সরবরাহকৃত নিম্নোক্ত কাগজ পত্রাদি পূরণ ও স্বাক্ষর করে জমা দিতে হয়।

১)   এলসিএএফ (পূরন এবং স্বাক্ষরিত)

২)   আইএমপি ফরম (পূরন এবং স্বাক্ষরিত)

৩)   এক্সপোর্ট এলসি (ব্যাক টু ব্যাক এলসির ক্ষেত্রে)

৪)   চার্জ ডকুমেন্টস

৫)   রপ্তানিকারকের ক্রেডিট রিপোর্ট


Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Storiesউত্তর লিংক
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেলউত্তর লিংক

অন্যান্য কার্যক্রমঃ

            ১।   এলসি মার্জিন এবং ব্যাংকের বিভিন্ন খরচ বাবদ ব্যাংক হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা জমা রাখা। 

২।   যদি এল সি খোলার সময় সহায়ক জামানত বা সিকিউরিটি প্রদান করতে হয় তাহ’লে উক্ত জামানত বা সিকিউরিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দিতে হবে।

লেটার অব ক্রেডিট প্রকৃয়াকরণ পদ্ধতি

১)   ইস্যুয়িং ব্যাংক লেটার অব ক্রেডিট ইস্যু করে এবং আমদানিকারকের নির্দেশে এডভাইজিং বাংকে পাঠায়।

২)   এডভাইজিং ব্যাংক লেটার অব ক্রেডিটের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করবে তারপর রপ্তানিকারকের কাছে একটা কপি প্রেরণ করে।

৩)   রপ্তানিকারক লেটার অব ক্রেডিট পাওয়ার পর L/C’র শর্তাবলী তার নিকট সন্তুষজনক মনে হলে আমদানিকারকের সাথে বাণিজ্য করার একটা সিদ্ধান্তে গ্রহণ করে।

৪)   যদি রপ্তানিকারক দেখে যে L/C তে উল্লেখিত শর্তাবলীর সাথে বাণিজ্য চুক্তির কোন গড়মিল দেখা যায় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে আমদানিকারককে জানাবে এবং সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী সংশোধনের জন্য অনুরোধ জানাবে।

           ৫)   রপ্তানিকারক যখন সংশোধিত L/C বা নথি পায় তখন পণ্য রপ্তানীর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

৬) রপ্তানীকারক এলসির মেয়াদের মধ্যে মালামাল প্রস্তুত ও রপ্তানি/জাহাজীকরণ করে রপ্তানি সংক্রান্ত দলিলাদী নমিনেটেড/নেগোশিয়েটেড ব্যাংকে উপস্থাপন করে। এলসির শর্ত অনুযায়ী নমিনেটেড/নেগোশিয়েটেড ব্যাংক নথিগুলি পরীক্ষা করে ইস্যুইং ব্যাংকের নিকট প্রেরণ করে।

৭)   ইস্যুইং ব্যাংক নমিনেটেড/নেগোশিয়েটেড ব্যাংক কর্তৃক প্রেরণকৃত সমুদয় রপ্তানি দলিলাদী গ্রহণের ৫(পাঁচ) ব্যাংকিং দিবসের মধ্যে পরীক্ষা করে কোন ভুল ত্রুটি (Discrepancy) পাওয়া গেলে তা প্রেরক ব্যাংকে জানাতে হবে এবং আমদানিকরককেও অবহিত করবে।আর এলসির শর্তাবলীর সাথে রপ্তানি দলিলাদী পরিপালন (Complying) পাওয়া গেলে উল্লেখিত দিনের মধ্যে মূল্য পরিশোধ করবে এবং মালামাল ছাড়করণের জন্য দলিলাদী আমদানিকারকের নিকট হস্তান্তর করবে।

৮)  ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানিকারক মালের মূল্য প্রাপ্তি এবং আমদানিকারক কর্তৃক মালামাল বুঝে পাওয়ারা মাধ্যমে এলসি প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment