৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ৯ম অধ্যায়ে ‘টিকা’র কথা উল্লেখ আছে

টিকা, প্রতিষেধক বা ভ্যাক্সিন হচ্ছে যেসব জৈব রাসায়নিক যৌগ, যা দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াকে উত্তেজিত করে এবং কোনো একটি রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাতে সাহায্য করে।

কোনো রোগের টিকা হলো শুধু সেই নির্দিষ্ট রোগটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা বর্ধনকারী ক্রিয়াসম্পন্ন জৈব যৌগ, যা ত্বকে সুচ ফুটিয়ে বা খাবার ড্রপ হিসেবে দেওয়া হয়। এতে সাধারণত মৃতপ্রায় বা মৃত জীবাণু থেকে তৈরি হওয়া রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুসদৃশ উপাদান থাকে।

যেকোনো জীবাণুর দুটি বৈশিষ্ট্য আছে—একটি রোগ সৃষ্টি করা, অন্যটি দেহের অভ্যন্তরে ওই একই রোগের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য কিছু পদার্থ তৈরি করা। টিকা তৈরির সময় রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়া হয়। কিন্তু অন্য বৈশিষ্ট্যটি ঠিক রাখা হয়। ফলে এই জীবাণু দেহে রোগের কারণ হয় না, উল্টো রোগটি যেন না হয় তার জন্য বিশেষ পদার্থ তৈরি করতে থাকে। আরেকটি সুবিধা হলো এই জীবাণুগুলো মেমরি সেল গঠন করে।

ফলে পরবর্তী সময়ে একই জীবাণু আবার প্রবেশ করলে সহজে শনাক্ত করতে পারে। এভাবে টিকা শরীরের ইমিউনিটিকে বাড়িয়ে দেয়। টিকা দেওয়ার সময়ের ওপর ভিত্তি করে এটি দুই ভাগে ভাগ করা যায়—রোগ হওয়ার আগে টিকা দেওয়া এবং রোগ হওয়ার পরে টিকা দেওয়া।

টিকার ধারণা প্রথম তৈরি হয় চীনে। দশম শতাব্দীতে ‘ভ্যারিওলেশন’ নামের এক চীনা চিকিৎসাপদ্ধতি ছিল—যেখানে অসুস্থ রোগীর দেহ থেকে টিস্যু নিয়ে সেটা সুস্থ মানুষের দেহে বসিয়ে দেওয়া হতো। পরবর্তী সময়ে ১৭৯৬ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক ডা. এডওয়ার্ড জেনার আধুনিক ভ্যাক্সিনেশন আবিষ্কার করেন। এ জন্য তাঁকে ‘ফাদার অব ইমিউনিলোজি’ বলা হয়।

শিক্ষানবিশকালে জেনার লক্ষ করেন যে গ্রাম্য এলাকায় গোয়ালাদের গুটিবসন্ত হয় না; কারণ এরই মধ্যে তারা গরুর বসন্তে আক্রান্ত হয়ে আছে। সে বছরই তিনি এক গোয়ালিনীর হাত থেকে পুঁজ নিয়ে আট বছর বয়সী এক ছেলের বাহুতে আঁচড়ে দেন এবং ছয় সপ্তাহ পর তার শরীরে গুটিবসন্তের জীবাণু প্রবেশ করান। দেখা যায় বাচ্চাটির গুটিবসন্ত হয়নি।

এর দুই বছর পর তিনি ঘোষণা করেন যে গুটিবসন্তের টিকা বাচ্চা-ছেলে-বুড়ো সবার জন্য নিরাপদ। পরে ১৮৮০ সালে লুই পাস্তুর জলাতঙ্কের টিকা আবিষ্কার করেন এবং টিকাজগতে আমূল পরিবর্তন আনেন।

বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে গুটিবসন্ত ও রাইন্ডারপেস্ট রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে পোলিও, হামসহ ২৫টি রোগ আছে যেগুলোকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।

সব খবর এক সাথে বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস

Leave a Comment