৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের অষ্টম অধ্যায়ে সার্কিট হাউসের উল্লেখ আছে

অতিথিশালা এক ধরনের হোটেল-সদৃশ অস্থায়ী আবাসভবন। এটিতে সাধারণত একটি ব্যক্তিগত বাসভবনকে রূপান্তরিত করে কেবল অতিথিদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। অতিথিশালার মালিক একই এলাকাতেই আরেকটি বাসভবনে থাকেন ও সেটির দেখাশোনা করেন। অতিথিশালার সুবিধাগুলি হল ব্যক্তিগত সেবার উচ্চমান, খাবারের ভাল মান, কোলাহলমুক্ত পরিবেশ, সস্তা দাম, ইত্যাদি।

সার্কিট হাউস হচ্ছে রাষ্ট্রীয় অতিথি, ভিভিআইপি, ভিআইপি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের অবস্থানের জন্য অস্থায়ী বাসস্থান। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় সরকারি অতিথিদের জন্য একটি করে সার্কিট হাউস আছে। এটি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সফরকালীন আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

অবিভক্ত ভারতবর্ষে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের শাসনামলে বিভাগীয় কমিশনার সার্কিট কোর্ট করার জন্য জেলার যে ভবনে অবস্থান করতেন, সেটিই সার্কিট হাউস নামে পরিচিত।

উল্লেখ্য, বিভাগীয় কমিশনার বিভিন্ন জেলার মামলার শুনানি শোনার জন্য উক্ত জেলার আইনজীবীদের নিয়ে যে কোর্ট বসান, তাকে সার্কেট কোর্ট বলে। বর্তমানে সার্কিট হাউস ব্যবস্থাপনার সার্বিক দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের ওপর ন্যস্ত। জেলা প্রশাসকের পক্ষে ‘নেজারত ডেপুটি কালেক্টর’ এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ কর্তৃক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে ইংরেজ সরকার রাজস্ব আদায়বিষয়ক চিন্তা-ভাবনা থেকে মোটামুটি মুক্ত হয়ে রাজ্যসীমা বিস্তার ও অন্যান্য প্রশাসনিক কাজে মনোযোগী হওয়ার সুযোগ পান।

তখন থেকে ১৮২৮ সাল পর্যন্ত রাজস্ব বোর্ডের একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা জেলা কালেক্টরের নিযুক্তি, বদলি ও সার্বিক কার্যক্রম তদারক করতেন। কিন্তু লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের প্রশাসন লক্ষ করে যে রাজস্ব বোর্ড বিচার বিভাগীয় ও প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় জেলার কাজের সমন্বয় সাধন ও তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে ব্যাপক অভাব পরিলক্ষিত হয়।

ফলে ১৮২৯ সালে পাস হয় ‘বেঙ্গল রেভিনিউ কমিশনারস রেগুলেশন’। সৃষ্টি হয় ‘রেভিনিউ কমিশনার’-এর পদ। কালক্রমে যাঁর এখনকার পদবি ‘বিভাগীয় কমিশনার’।

আইনে বিভাগীয় কমিশনারকে জেলা কালেক্টরেটের আদেশের বিরুদ্ধে রাজস্ব ও ফৌজদারিবিষয়ক আপিল শুনানির ক্ষমতা প্রদান করা হয়। তাঁর জন্য প্রতিটি জেলায় তৈরি করা হয় একটি করে ‘সার্কিট কোর্ট’, যা বর্তমানে ‘সার্কিট হাউস’ নামে বহুল পরিচিত।

জেলা পরিদর্শনকালে বিভাগীয় কমিশনার কয়েক দিন সার্কিট হাউসে অবস্থান করে রাজস্ব ও ফৌজদারি আপিল শ্রবণ ও রাজস্ব আদায়সংক্রান্ত বিষয় দেখভাল করতেন।

সেই সময় থেকে সার্কিট হাউসকে বিভাগীয় কমিশনারের ‘Extended Home’ বা বর্ধিত বাসভবন বলা হয়ে থাকে। এ কারণে একমাত্র বিভাগীয় কমিশনারকে সার্কিট হাউসে অবস্থানের জন্য অর্থ পরিশোধ করতে হয় না।

Leave a Comment