৮ম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য কণিকা বইয়ের ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে দইয়ের ভাঁড়ের উল্লেখ আছে

Google Adsense Ads

যে মাটির পাত্রে দই পাতা ও সংগ্রহ করা হয় তাকে দইয়ের ভাঁড় বলে। এখানে ভাঁড় বলতে মাটি দ্বারা নির্মিত প্রশস্ত গলাবিশিষ্ট এক ধরনের পাত্রকে বোঝায়। দই ছোট-বড় সবারই পছন্দ।

দুগ্ধজাত এই খাবার দুধের ব্যাকটেরিয়া গাঁজন থেকে তৈরি করা হয়। গরুর দুধে এক ধরনের ল্যাকটোজ নামের শর্করা থাকে। এই শর্করা ব্যাকটেরিয়া দুধকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং দইয়ে রূপান্তরিত করে।

এককালে দই পাতার একমাত্র অবলম্বন ছিল এই মাটির ভাঁড়। দই তৈরিতে এই মাটির ভাঁড়ে গরুর দুধ, চিনি, সামান্য পরিমাণ পুরনো দই মিশিয়ে কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দেওয়া হয়।

১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর দেখা যায় ভাঁড়ে দুধ জমে দই হয়ে গেছে। মাটির ভাঁড়ে দই রাখা হয়, তার কারণ হলো এই ভাঁড়ের বহুরন্ধ্র ভেদ করে জলীয় বাষ্প যে শুধু ওই দইকে ঘন রাখতে সাহায্য করে তা নয়, পাশাপাশি দই তৈরি করার জন্য সঠিক তাপমাত্রাও প্রদান করে। তবে বর্তমানে মিষ্টির দোকানগুলোতে মাটির ভাঁড়ের পাশাপাশি প্লাস্টিকের পাত্রেও দই রাখতে দেখা যায়।

বাংলাদেশে প্রায় সব জায়গায় দইয়ের পাশাপাশি এর ভাঁড়ও পাওয়া যায়। উত্তরাঞ্চলের বিখ্যাত বগুড়া জেলার দইও ভাঁড়ে করে বিক্রি করা হয়। ভাঁড়ে পাতা দইয়ের খ্যাতি মূলত ব্রিটিশ আমল থেকেই। ষাটের দশকের প্রথম ভাগে ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথও এর স্বাদ নিয়েছেন।

জানা যায়, বগুড়ার শেরপুরে প্রথম মাটির ভাঁড়ে দই তৈরি হয় প্রায় আড়াই শ বছর আগে। তৎকালীন বগুড়ার শেরপুরের ঘোষ পরিবারের ঘেটু ঘোষ প্রথম দই তৈরি শুরু করেন। ঘোষেরা যখন দই তৈরি করতেন, তখন এর গোপনীয়তা বজায় রাখতেন। ফলে বাইরের কেউ দই তৈরি করতে পারত না।

বর্তমানে মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র যেমন—থালা, বাসন, বাটি, গ্লাস প্রভৃতির চাহিদা কমে গেলেও দইয়ের ভাঁড়ের চাহিদা এখনো আছে। কুমাররা চাকার সাহায্যে দইয়ের ভাঁড় নির্মাণ করে রোদে শুকান। ভাঁড়গুলো কিছুটা শক্ত হয়ে এলে আগুনে পোড়ানো হয়।

এতে দইয়ের ভাঁড়ের রং কিছুটা লালচে হয়। দইয়ের ভাঁড়ে কোনো কৃত্রিম রং দেওয়া হয় না। দই রাখার প্রয়োজন অনুযায়ী এই ভাঁড় বিভিন্ন সাইজের যেমন—এক, দেড় ও দুই কেজি ওজনের হয়ে থাকে। দই ব্যবসায়ীরা কুমারদের কাছ থেকে পাইকারি দরে এই ভাঁড় সংগ্রহ করেন।

J.S.C

Google Adsense Ads

Google Adsense Ads

Leave a Comment