Google Adsense Ads
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পরবর্তীতে পাকিস্তানে কী ধরনের প্রশাসনিক সমস্যা বা জটিলতা দেখা দেয় আলোচনা কর
ভূমিকা : ১৯৪৭ সালে ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। জন্মলগ্ন থেকেই এ নতুন রাষ্ট্র বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। এর কারণ হলো ভারত উত্তরাধিকারসূত্রে যেসব সুযোগ সুবিধা পায়, পাকিস্তান তা পায়নি।
এছাড়া পাকিস্তানের দুই অংশের দূরত্ব, রিফিউজিদের আগমন ইত্যাদি কারণে পাকিস্তানে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল প্রশাসনিক কাঠামো৷ তৈরিতে অনেক বিলম্ব হয়।
প্রশাসনিক সমস্যা বা জটিলতা : পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে নতুন সীমানা, অস্তিত্ব নিয়ে জন্ম হয় এর আগে পাকিস্তান রাষ্ট্রের কোনো অস্তিত্ব ছিল না ভারতের মতো।
এ রাষ্ট্র পূর্বে ভারতের মধ্যে ছিল এবং ভারত থেকে বিভক্ত হয়ে এর জন্ম হয়। ফলে সম্পূর্ণ নতুন এ রাষ্ট্রে প্রশাসনিক কাঠামো, নীতি, ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নতুনভাবে গড়তে হয়। এ কারণে পাকিস্তানের শুরু থেকে দীর্ঘদিন প্রশাসনিক জটিলতা বা সমস্যা দেখা যায়।
১. রাজধানী বিষয়ক সমস্যা : ভারত উত্তরাধিকারসূত্রে কেন্দ্রীয় রাজধানীর সকল সুযোগ সুবিধা লাভ করে কিন্তু পাকিস্তানকে নতুন করে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করতে হয়। এছাড়া কেন্দ্রীয় সচিবালয় স্থাপন এবং নতুন করে প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করতে হয়।
২. দক্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তাজনিত সমস্যা : ব্রিটিশ আমল থেকে ভারতের মুসলমানরা শিক্ষাদীক্ষা, প্রশাসনিক দক্ষতা, ব্যবসায় বাণিজ্যে হিন্দুদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল। যারা বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ ছিলেন তারাও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলেন। ফলে এসব দক্ষ কর্মকর্তার একত্রীতকরণ এবং নতুন দক্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগজনিত সমস্যা দেখা দেয়।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পরবর্তীতে পাকিস্তান কী রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়? আলোচনা কর।
৩. প্রশাসনিক অনেক মূল্যবান ফাইলপত্রের অপ্রাপ্তি : দেশভাগের ফলে ভারত থেকে অনেক মূল্যবান ফাইলপত্র না পাওয়ায় এবং অনেক জরুরি ও মূল্যবান ফাইলপত্র পাকিস্তানে আনয়নকালে দাঙ্গাকারীদের হাতে বা বিভিন্নভাবে বিনষ্ট হওয়ায় প্রশাসনিক জটিলতা আরো বৃদ্ধি পায়।
৪. বিপুলসংখ্যক বাস্তুহারাদের আগমন : ভারত বিভক্তের অব্যবহিত পূর্বে উপমহাদেশে বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ দাঙ্গা হয় তার ফলে ভারত বিভক্তির সাথে সাথে অসংখ্য মুসলমান তাদের পৈতৃক ভিটামাটি, সম্পত্তি, ঘরবাড়ি সবকিছু ত্যাগ করে পাকিস্তানে চলে আসে। এসব অসংখ্য রিফিউজিদের আগমনের ফলে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের কাজে অনেক বিঘ্নের সৃষ্টি হয় । উপরন্তু এসব রিফিউজির মধ্যে সংগঠিত বিভিন্ন দাঙ্গা সামাল দিতে প্রশাসনকে অনেক বেগ পেতে হয়।
৫. রিফিউজিদের পুনর্বাসনজনিত সমস্যা : রিফিউজিদের আগমনের চাপ পশ্চিম পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি ছিল। ১৯৬১ সালের সেনসাস রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় ৭২ লক্ষ রিফিউজি ১৯৪৭ সালে ভারত ত্যাগ করে পাকিস্তানে আসে তার মধ্যে প্রায় ৬৫ লক্ষ আসে পশ্চিম পাকিস্তানে। তখন পশ্চিম পাকিস্তানে প্রতি ৫ জন লোকের মধ্যে ১ জন ছিল রিফিউজি । পাকিস্তানে আগত এ লক্ষ লক্ষ রিফিউজির বাসস্থান ও খাদ্যের ব্যবস্থা করা নতুন রাষ্ট্রের জন্য কঠিন পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। উপরন্তু যে প্রায় ৩৫ লক্ষ হিন্দু ও শিখ পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে গিয়েছিল তাদের জীবন ও সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানের।
৬. কৃষিনির্ভর অর্থনীতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের অপর্যাপ্ততা : পাকিস্তানের অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থাও তেমন ভালো ছিল না। পাকিস্তানে উল্লেখযোগ্য তেমন প্রাকৃতিক সম্পদও ছিল না। ভারতের উন্নত কলকাতা কিংবা দিল্লির মতো কোনো ব্যবসায় কেন্দ্র, শিল্প কলকারখানাও পাকিস্তান উত্তরাধিকারসূত্রে পায়নি।
Google Adsense Ads
৭. সম্পদ ভাগবণ্টনের অসামঞ্জস্যতা : স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দেশত্যাগ এমন ত্বরিত ঘটে যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পদ বণ্টনের মতো অনেক বড় বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। উপরন্ত ১৯৪৭ সালে অক্টোবরে কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সংঘর্ষ হয়। এর সূত্র ধরে ভারত তার পূর্বপ্রতিশ্রুত এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ পাকিস্তানকে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এছাড়া পাকিস্তানের প্রাপ্য সামরিক ও বেসামরিক সরঞ্জামাদির অংশ দিতেও ভারত
অস্বীকৃতি জানায় ।
৮. প্রশাসনিক সমস্যা: সমাধানে পাকিস্তানের দুই অংশের সমান অংশগ্রহণ না থাকা : পাকিস্তানের প্রশাসনিক সমস্যা সমাধানের জন্য দুই অংশের সাহায্য, সংহতি, ভ্রাতৃত্ববোধের প্রয়োজন ছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা হয়নি। উভয় অংশের সমস্যা সমাধান একই সাথে ও সমান দৃষ্টিতে করা উভয় অঞ্চলের প্রশাসনিক উন্নয়নে সমান প্রচেষ্টা। শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসায় প্রভৃতিতে দুই অংশের সমান অংশগ্রহণ, প্রশাসনিক সমস্যা সমাধানের জন্য জরুরি ছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বিশাল ভারতবর্ষের পূর্ব ও পশ্চিম দুই প্রান্ত নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র তৈরি হয়। তৈরির সাথে সাথে এ নতুন রাষ্ট্র স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। কিন্তু তা আরো বৃদ্ধি পায় পাকিস্তানের দুই অংশের দুর্বল যোগাযোগ, অসামঞ্জস্য অংশগ্রহণ। ফলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য একটি সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল প্রশাসনিক কাঠামো প্রণয়নে দীর্ঘদিন সময় লাগে। এ দীর্ঘদিন পাকিস্তানের জনগণের সময় লাগে। এ দীর্ঘদিন পাকিস্তানের জনগণের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছায় এবং পরবর্তীতে প্রশাসনিক কাঠামোতে আরো জটিলতা ও বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়।
আর্টিকেলের শেষ কথাঃ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পরবর্তীতে পাকিস্তানে কী ধরনের প্রশাসনিক সমস্যা বা জটিলতা দেখা দেয় আলোচনা কর।, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পরবর্তীতে পাকিস্তান কী রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়? আলোচনা কর।
Google Adsense Ads