সৌহার্দ্যপূর্ণ নমনীয় আচরণ গঠন সম্পর্কে পাঠ্যপুস্তকে তোমার ধারণা বর্ণনা করো


সৌহার্দ্যপূর্ণ নমনীয় আচরণ গঠন সম্পর্কে পাঠ্যপুস্তকে তোমার ধারণা বর্ণনা করো।


সৌহার্দ্যপূর্ণ ও নমনীয় আচরণ কি লিখবে

উত্তর :

পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব ও কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত আমাদের অন্য মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে চলতে হয়।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি সবার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ আমরা করি, তাহলে আমাদের জীবন সুন্দর হয়ে ওঠে। কিন্তু সমস্যা তখনই ঘটে থাকে, যখন আমরা আমাদের স্বাভাবিক আচরণের ব্যত্যয় ঘটিয়ে হঠাৎ রেগে যাই।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

কারো কথা বা কাজ আপনার কাছে ভালো না লাগতেই পারে, তবে তার জন্য অসংযত আচরণ কিংবা অযাচিত কথা বলা বা রেগে গিয়ে হাতের কাছে যা পাচ্ছেন তাই ছুড়ে বা ভেঙে ফেলা—এসব কিছুই পরিহার করতে হবে।

ব্যক্তির যে স্বাভাবিক আচরণ তার পরিবর্তন করে রাগের মাধ্যমে চিত্কার-চেঁচামেচি কিংবা প্রত্যাশিত যে আচরণ তা না করে ব্যক্তিকে অপমান বা ছোট করে কথা বললে আচরণে ঔদ্ধত্য প্রকাশ পায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে  রাগ প্রকাশ না করেও পরোক্ষভাবে ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলাও উদ্ধত আচরণ। এর কারণ অন্যের কোনো আচরণ ঠিকমতো গ্রহণ না করতে পারা।

এই সমস্যা একটা সম্পর্কের ক্ষেত্রেও হতে পারে। কোনো একজন নির্দিষ্ট মানুষের কাছ থেকে যে রকম ব্যবহার পাওয়ার কথা সেটা যদি না পাওয়া যায় তাহলে অনেক সময় আচরণে ঔদ্ধত্য প্রকাশ পেতে পারে। 

মানুষের ঔদ্ধত্য প্রকাশ মূলত রাগেরই বহিঃপ্রকাশ। নির্দিষ্ট কারণে কোনো ব্যক্তির যদি আরেকজনের ওপর রাগ থাকে তাহলে সে এই রকম আচরণ করে থাকতে পারে।

আচরণে এই দুষ্টতার কারণে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও থাকতে পারে। আমাদের একটি আচরণ একেকজন একেকভাবে নিয়ে থাকে এবং পরে এর প্রভাব খারাপভাবেও পড়তে পারে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

সামাজিক যোগাযোগ বা সম্পর্কে অদক্ষতার কারণেও মানুষের আচরণে ঔদ্ধত্য প্রকাশ পেয়ে থাকে। মানুষ অনেক সময় কোনো কিছু পাওয়ার জন্যও উদ্ধত হতে পারে। কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদে ভালো কোনো ফল দেয় না।

‘আমিই ঠিক’ এই মনোভাবও আচরণে উদ্ধত করে তোলে ব্যক্তিকে।

♦ কোনো কথা বলার আগে চিন্তা করে নিতে হবে যে আমি কী বলছি। হঠাৎ রাগের মাধ্যমে আমাদের মনে যা আসে তা না বলে আমরা একটু চিন্তা করে সে কথাটা বলতে পারি। দরকার হলে অপর ব্যক্তির কাছ থেকে সময় চেয়ে নেওয়া ভালো।

♦ রাগ হবেই, কিভাবে এর বহিঃপ্রকাশ করা যায়, তা সম্পর্কে জানতে হবে। ইউটিউবে বিভিন্ন  মোটিভেশনাল স্পিচ শুনে নিজের আচরণকে আরো বেশি উন্নত করা যায়।

♦ অনেকেই সামাজিক যোগাযোগে অদক্ষতার কারণে কিভাবে অন্যের সঙ্গে আচরণ করতে হয়, তা বুঝতে পারেন না। সামাজিক দক্ষতা কিভাবে বাড়ানো যায় তা জানার চেষ্টা করতে হবে। দরকার হলে এ বিষয়ে চর্চা করতে হবে।

♦ কোনো জায়গায় আচরণে সমস্যা থাকলে সেটা নিয়ে কাজ করা। দরকার হলে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন কিংবা পরিবারের সঙ্গে কথা বলা।

♦ প্রতিনিয়ত আমরা অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলে থাকি আমাদের কাজের খাতিরে কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে। এমন সময় কারো আচরণে ক্ষুব্ধ কিংবা কষ্ট পেলে মনের ভেতর রাগ পুষে রাখবেন না। অবশ্যই অপর ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে তাঁকে জানানো যে এই ব্যাপারটায় আপনার সমস্যা হচ্ছে। তাহলে পরবর্তী সময়ে সমস্যা অনেকাংশেই কমে আসবে। 

♦ অনেকেই নিজের পরিবারের বাইরে কারো সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা পেয়ে থাকেন। এটি পরিহার করে সামাজিক মেলামেশা বাড়াতে হবে। এতে আরেকজন মানুষ এবং তাদের আচরণ সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে।

♦ শোনা সব কথাই কানে নেওয়াটা ঠিক নয়। কিছু কথা ছেড়ে দেওয়াই ভালো। এতে নিজের মানসিক উন্নতি বিকাশের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পায়।

♦ কেউ যদি পারস্পরিক সম্পর্কে কোনো সমস্যায় পড়েন, তবে ঠাণ্ডা মাথায়, পরিস্থিতি বুঝে সেটা মোকাবেলা করতে হবে। অন্যের খারাপ আচরণের সম্মুখীন হলেও নিজে ভালোভাবে কথা বলতে হবে।

♦ রাগ হলে বা হতাশা এলে এর কারণ খুঁজতে হবে। কারণ গভীর হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

মানুষ তার উত্তম ব্যবহার ও চরিত্র দ্বারা পরিবারসহ সমাজকে অলোকিত করে থাকে। যে সুন্দর চরিত্রের প্রতিচ্ছবি দেখা যায় নবী জীবনে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

নবী জীবন কেমন ছিল- তার পরিচয় পাওয়া যায় এই হাদিসে—

হজরত আতা ইবনে ইয়াসার (রা.) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর বিন আস (রা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম, তাওরাতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষণসমূহ সম্পর্কে আমাকে অবগত করুন। তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ, (তাই হবে) নিঃসন্দেহে তাওরাতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে এমন কতিপয় বিশেষণে বিশেষিত করা হয়েছে- যা দ্বারা কোরআন শরীফে তিনি বিশেষিত হয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে পাঠিয়েছি’’ (সূরা আল আহজাব : ৪৫) এবং নিরক্ষরদের স্মরণ স্থল, আপনি আমার বান্দা ও আমার পয়গামবাহী রাসূল, আমি আপনার নামকরণ করেছি মুতাওয়াক্কিল (আল্লাহতে নির্ভরশীল)। আপনি রুক্ষ্ম মেজাজ ও হাটবাজারে শোরগোলকারী নন, দুর্ব্যবহারের দ্বারা দুর্ব্যবহারের জবাব দেন না, বরং মার্জনা ও ক্ষমা করে দেন। ’ –আল আদাবুল মুফরাদ

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন জ্যোতিষ্মান প্রদীপ বিশেষ। তাঁর প্রশংসা করতে গিয়ে জনৈক আরব কবি বলেন, ‘হে জ্যোতির্ময়! হে মানব শ্রেষ্ঠ! তোমার পূত চেহারার দীপ্তি থেকেই চাঁদ আলোক প্রাপ্ত হয়েছে। ’

যার হৃদয় যত পবিত্র ও কলুষমুক্ত- তিনি তত কোমল ব্যবহারের অধিকারী হন, তিনি হন সদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারা অধিকারী। পৃথিবীতে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চেয়ে পবিত্র মন, আকর্ষণীয় আচরণের অধিকারী আর কোনো ব্যক্তির আগমন ঘটেনি এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে না।

নবী করীম (সা.) সব সময় হাসিমুখে থাকতেন। সঙ্গী-সাথীদের সাথে সাক্ষাৎ হওয়ামাত্র হাসিমুখে অভ্যর্থনা করতেন, কিন্তু জীবনে কেউ কোনোদিন তাঁকে অট্টহাসি হাসতে দেখেনি। প্রবল হাসির উদ্রেক হলে কখনও কখনও বিদ্যুৎ চমকের মতো একফালি দাঁতের ঔজ্জ্বল্য ফুটে বের হত।

সাহাবি হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, জীবনে যতবার আমি রাসূলে কারিম (সা.)-এর সাথে সাক্ষাত করেছি, প্রত্যেকবারই তিনি আমাকে হাসিমুখে সম্ভাষণ করেছেন। অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আমার কথা শুনেছেন।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রা.) বলেন, নবী (সা.) মৃদুহাসি ব্যতিত কখনও উচ্চহাস্য করতেন না।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

চারিত্রিক সৌন্দর্য দ্বারা মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান হাসিল করা যায়। গোমরামুখী হওয়া কোনো তাকওয়ার পরিচয় বহন করে না। ব্যক্তিগত জীবনে দেখা যায় অনেক সৎ চরিত্রের অধিকারীদের চরিত্রে কোমলতা কম থাকে, মেজাজ থাকে কিছুটা কর্কশ। মুমিনের এমন চরিত্র হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কিয়ামতের দিন এমন লোককেও আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে- যার আমলনামার মধ্যে নামাজ, রোজা, জাকাত প্রভৃতি নেক আমল থাকবে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তি তার মন্দ আচরণের জন্য আল্লাহর কাছে নালিশ করবে। তাই মিষ্টি হাসি, মধুর আচরণ ও কোমল চিত্তের অধিকারী হওয়া পরিবার প্রধান ও সমাজ সংস্কারকদের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন এমন সব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।

মধুর চরিত্রের অধিকারী ও মিষ্টভাষীদের জন্য জান্নাতের সুখবর রয়েছে পবিত্র হাদিসে। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে কথাটি প্রকৃতই মিথ্যা এবং অসঙ্গত, যে ব্যক্তি তা বলা এবং আলোচনা করা পরিত্যাগ করে- তার জন্য জান্নাতের কিনারায় স্থাপনা নির্মিত হয়। যে ব্যক্তি সঙ্গত কারণ থাকা সত্ত্বেও ঝগড়া-বিবাদ পরিত্যাগ করে, তার জন্য জান্নাতের মধ্যে বাসস্থান নির্মিত হয়। যে ব্যক্তি বাক সংযম, মিষ্টভাষণ এবং সত্য কথা প্রভৃতি গুণ দ্বারা নিজের চরিত্র সৌন্দর্যমন্ডিত করে, তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে বাসস্থান নির্মিত হয়। ’ –মিশকাত

যে জীবনে আনন্দ রস একবারেই নেই, সাধারণ মানুষ তেমন জীবনকে আদর্শরূপে গ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু হাসি-তামাশা যেন ভব্যতার সীমা ছাড়িয়ে না যায় সে জন্য সূক্ষ্ম রসবোধ ও আত্ম সংযম থাকা দরকার।

নীরবতা, নির্জনতা, স্থির ও সমাজবিচ্ছিন্ন একক জীবন ইসলাম নয়। দয়া, নম্রতা, নরম মেজাজ ও ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবার, প্রতিবেশী ও সমাজের মানুষের সাথে হাসি মুখে, হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে মিশতে হবে। তাদের সঙ্গে কোমল আচরণ করতে হবে। আর এসব যেন লোক দেখানোর না হয়- সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রতিবেশীর সাথে সুন্দর আচরণ করা ঈমানের অন্যতম শিক্ষা। তাই সর্বাবস্থায় সর্ব স্তরের মানুষের সাথে ভদ্র আচরণ করা ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য। সেই মানুষটি যে পর্যায়েরই হোক না কেন।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

H.S.C