সৃষ্টির সেবায় : স্রষ্টার সন্তুষ্টি

সৃষ্টির সেবায় : স্রষ্টার সন্তুষ্টি

বৈশ্বিক মহামারি করােনা ভাইরাস। প্রতিদিন পৃথিবীর দিকে দিকে এই মহামারির কারণে মৃত্যুবরণ করছে অসংখ্য মানুষ। ধনী গরিব কেউ রেহাই পাচ্ছে না। যার হাত থেকে। এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে, লকডাউন ও কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা চালু রয়েছে এখনও। ফলে অনেক কর্মক্ষেত্র ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ সব । ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলাে বন্ধ রাখা হয়েছে। 

এ সকল অঙ্গনে কর্মরতদের অর্থনৈতিক অবস্থাও বেশ শােচনীয় হয়ে গেছে। অভাবের তাড়নায় লােকলজ্জার ভয়ে । কারও কাছে সাহায্যের হাত বাড়াতেও কুণ্ঠাবােধ করছেন অনেকেই। এমনকি দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে নেমে এসেছে বৈরী প্রভাব। কোথাও না। কোথাও খাদ্যের অভাবে চলছে তাদের মানবেতর জীবনযাপন। যেন দেখার তাদের কেউ নেই! না খেয়ে অনাহারে অকাতরে ঝরে পড়ছে বহু মানুষের প্রাণ। এই দুর্যোগ দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানাে। 

সৃষ্টির সেবায় এগিয়ে আসা। দুর্দিনে একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। দু মুঠো অন্নের ব্যবস্থা করা কি আমাদের কর্তব্য নয়। হতে পারে এই একটু সাহায্যের হাত বাড়ানােই হবে আমাদের পরকালে নাজাতের উসিলা। আল্লাহ তায়ালা বলেন- তােমরা কল্যাণকর কাজ ও তাকওয়ার ব্যাপারে একে অপরকে সহযােগিতা করে। সুরা মায়িদা-২ আরও বর্ণিত হয়েছে, কোনাে ব্যক্তি অণু পরিমাণ কল্যাণজনক কোনাে কাজ করলেও তা সে দেখতে পাবে। 

সুরা যিলযাল-৭ অর্থাৎ সামান্য পরিমাণ সৎ কাজের বিনিময় দেওয়া হবে। আরও খুশির সংবাদ হলাে যে, তিরমিজির বর্ণনায় এসেছে নবী মুহাম্মদ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন- নিশ্চয়ই দান সাদকা আল্লাহর ক্রোধ-গােস্বাকে প্রশমিত করে। তাই আমাদের জন্য করণীয় হলাে, এই দুঃসময়ে অসহায় মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। যাতে করে মহান আল্লাহ তায়ালার রাগ গােস্বা কমে যায়। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেন- বালা মুসিবত মহামারি প্রতিরােধে দান সাদকার অনেক প্রভাবশক্তি রয়েছে। তাই আমাদের জন্য কর্তর হলাে, দান সাদকার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার ক্রোধ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবাে। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যথাসাধ্য তাদের কষ্ট-দুঃখ লাঘবের চেষ্টা করবাে।

মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে! হাদিসে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেছেন- অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা হাশরের মাঠে বলবেন, আমি অসুস্থ ছিলাম ; তুমি আমার সেবা করােনি। সেদিন বান্দা বলবে, কিভাবে তােমার সেবা করবাে? তুমি তাে বিশ্বজগতের প্রতিপালক। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, তুমি কি জানতে না! আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল, তুমি তার সেবা করােনি। এমনিভাবে হে আদম সন্তান! আমি তােমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খাবার দাওনি।

 তখন সে বলবে, হে প্রভু, কিভাবে তােমাকে আহার করাবাে? তুমি তাে বিশ্বজগতের প্রতিপালক। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, যদি তাকে আহার করাতে তার মাঝে আমাকে পেতে। এই হাদিসের আলােকে আমরা জানতে পারলাম যে, মানুষের সেবা শুশ্রুষা ও অনাহারের মুখে আহার তুলে দেওয়া অনেক বড়াে পুণ্যের কাজ।

 যার মাধ্যমে আলাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আর এই পার্থিব জগতেও যাবতীয় বালা মুসিবত, রােগ, মহামারি, বিপদ ও পেরেশানি থেকে মুক্তির অন্যতম একটি পদ্ধতি হলাে, বেশি বেশি দান সাদকা করা। অসহায় অনাথ দরিদ্র ও আর্তপীড়িত মানুষের সাহায্য সহযােগিতা করা।

 আসুন আমরা দান সাদকার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের চেষ্টা করি। মরণব্যাধি ঘাতক করােনা ভাইরাসের ভয়াবহ পরিণতি থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়ােজনীয় স্বাস্থ্যবিধিগুলাে মেনে চলি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে এসকল বিষয়ের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক/ মীযান মুহাম্মদ হাসান

Leave a Comment