সাহিত্যপাঠ বইয়ের ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ প্রবন্ধে গোয়ালন্দ ঘাটের উল্লেখ আছে

গোয়ালন্দ ঘাট হচ্ছে বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার অন্তর্গত একটি নৌবন্দর। এই ঘাট পদ্মা নদীর পারে। ভাঙাগড়া দিয়ে শুরু আজকের এই গোয়ালন্দ। ভারতের গঙ্গা নদীর বাংলাদেশে এসে পদ্মা নদীতে মিশে।

এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। এ নদী গোয়ালন্দে এসে যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে ফরিদপুর-হাজীগঞ্জ হয়ে চাঁদপুর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে

। সর্বগ্রাসী পদ্মার ছোবলে গোয়ালন্দ ঘাটকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রথম দিকে যখন গোয়ালন্দ ঘাট নাম দেওয়া হয়, তখন এই ঘাট ছিল পোড়াবাজার এলাকায়, এরপর কুশাহাটা, জামালপুর, চরজংশন ও উরাকান্দায়। সবশেষে রেলস্টেশন ঘেঁষে গড়ে ওঠে গোয়ালন্দ নৌবন্দর। মানুষের পদচারণে মুখরিত থাকত এই নৌবন্দর। সব সময় দুই-তিন হাজার মানুষ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত থাকত।

১৮৭১ সালে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে পদ্মার দক্ষিণ তীরে, কলকাতা থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত রেললাইন চালু করে। গোয়ালন্দ বহু বছর ধরে পূর্ববঙ্গ ও আসাম অংশে যাতায়াতের জন্য পরিবহনের একটি প্রধান কেন্দ্রবিন্দু ছিল। তৎকালীন জনপ্রিয় দুটি যোগাযোগের মাধ্যম গোয়ালন্দে হওয়ায় উপমহাদেশে এই রেলস্টেশন ও নৌবন্দর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পূর্ব ভারত থেকে বাংলাদেশে গোয়ালন্দ হয়ে আসতে হতো;

এমনকি পাঞ্জাব বা দিল্লি থেকে ট্রেন হাওড়া-কলকাতা হয়ে চুয়াডাঙ্গা-পোড়াদহ অতিক্রম করে কুষ্টিয়া হয়ে গোয়ালন্দ ঘাটে আসত। আবার গোয়ালন্দ ঘাট থেকে স্টিমারে চাঁদপুর হয়ে নারায়ণগঞ্জসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া যেত। হকার, কুলি, রেল শ্রমিক, ছোট-মাঝারি দোকানি ও লাখো মানুষের পদচারণে গোয়ালন্দ ঘাট সারাক্ষণ মুখরিত থাকত।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর অবস্থা বদলে যায়। ইস্ট বেঙ্গল এক্সপ্রেস রেল ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত এখানে চলাচল করেছে। এরপর গোয়ালন্দ ঘাটের রেল সংযোগ শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

উপমহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ঘাটটি আজ আপন ঐতিহ্যের সবটুকু হারিয়ে ফেলেছে। ১৯৮০ সালে মহকুমাগুলোকে জেলায় পরিণত করার সময় নদীভাঙনের দোহাই দিয়ে তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমাকে বাদ দিয়ে রাজবাড়ীকে জেলায় পরিণত করা হয়। পদ্মার ভাঙনের ফলে গোয়ালন্দ ঘাট এখন দৌলতদিয়ায়।

Leave a Comment