সাবুদানার উপকারিতা,সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা

সাবুদানার উপকারিতা,সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা

সাবুদানা সাধারণত সরল শর্করা জাতীয় খাদ্য। এতে প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইড্রেট থাকে, এছাড়াও প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ লবণও সামান্য পরিমানে থাকে। এটি সরল শর্করা জাতীয় খাদ্য হওয়ার জন্যে, এটি খাওয়ার পরে শরীরে তৎক্ষণাৎ শক্তি পাওয়া যায়। এই কারণে অনেকে ব্যায়াম করার আগে বা পরে সাবুদানা খেতে পছন্দ করেন।

ছোট বাচ্চা বা রোগীদেরও পুষ্টিকর খাদ্য হিসাবে সাবুদানা খাওয়ানো হয়, যাতে শরীরে খুব তাড়াতাড়ি শক্তি পাওয়া যায়। অনেকে তো আবার শরীরের ওজন কমানোর জন্যেও সাবুদানা খেয়ে থাকেন কিন্তু সাবুদানা যেহেতু একটি সরল শর্করা জাতীয় খাদ্য তাই ওজন কমানোর জন্যে এটি না খাওয়াই ভালো। বরং ওজন বাড়ানোর জন্যে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। একে সুপারফুডও বলা হয়। এই খাবারটি স্বাস্থ্য ও সুস্বাদুতার সংমিশ্রণ। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এক কাপ সাবুদানায় রয়েছে ৫৪৪ ক্যালোরি, ১৩৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১.৩৭ গ্রাম ফাইবার, ০.২৯ গ্রাম প্রোটিন, ০.০৩ গ্রাম ফ্যাট, ৩০.৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং অল্প পরিমাণে আয়রন, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। 

বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, সাবু শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটের দারুণ একটি উৎস। কিন্তু তা ছাড়াও সাবুদানার রয়েছে হরেক গুণ, যা নারীর স্বাস্থ্যরক্ষায় বেশ কার্যকর।

সাগুর উপকারিতা,সাগুদানার উপকারিতা ও ক্ষতি

সাবু খাওয়ার উপকারিতা:

১.  সাবু খেলে হার্ট ভালো থাকে। সাবুতে উচ্চ পরিমাণের এমিলস (amylose) রয়েছে যা এক ধরণের শর্করা। এমিলস লিনিয়ার চেইনযুক্ত এক প্রকার গ্লুকোজ যা হজম হতে বেশি সময় নেয়। চেইনগুলি ধীরে ধীরে ভেঙে যাওয়ার সাথে সাথে তারা নিয়ন্ত্রিত হারে চিনি ছেড়ে দেয়, যা আপনার কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা ঠিক রাখতে পারে। এতে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়।

২. সাবুদানা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে সহায়তা করে । সাবুতে থাকা বিশেষ প্রোটিন অকালে চুল ঝরে পড়া রোধ করে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, খুশকির হাত থেকে রক্ষা করে, এমনকি চুলের বৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রণ করে ।

৩. সাবু খেলে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে সাবু শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ৮ জন সাইক্লিস্টদের (যারা সাইকেল চালায়) একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ব্যায়াম করার সময় সাবু দানা গ্রহণ করায় ব্যায়াম করার শক্তি ৩৭% বৃদ্ধি পেয়েছিল। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ব্যায়াম করার পরে সাবু দানা গ্রহণ দেহের শক্তি পুনরুদ্ধারের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

৪. সাবুদানাতে প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইড্রেট থাকে, আর এতে ক্যালোরিও খুব বেশি পরিমানে থাকে ।  তাই ওজন বাড়ানোর জন্যে এটি একটি উত্তম খাবার হিসাবে বিবেচিত হতে পারে । অতএব আপনি ওজন বাড়াতে ইচ্ছুক হলে নিয়মিত সাবুদানা খেতে পারেন ।

সাবুদানা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা কী?

৫. সাবু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সাবুতে আছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা আমাদের শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি র‌্যাডিকাল এর বিরুদ্ধে লড়াই করে। ফ্রি র‌্যাডিকাল আমাদের দেহে বৃদ্ধি পাওয়া মানে, সেলুলার ক্ষতি যা ক্যান্সার এবং হার্টের রোগের জন্য দায়ী। টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ট্যানিন এবং ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো পলিফেনল সাবুতে পরিমাণে বেশি থাকে। যা আমাদের দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে।

৬. সাবু ঋতুস্রাব চলাকালে নারীদের জন্য বেশ উপকারী হতে পারে। সাবুতে উপস্থিত ফোলেট লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে।

৭. সাবু দানাতে প্রায় ৭.৫% রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ (প্রতিরোধী শর্করা) রয়েছে। রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ (প্রতিরোধী শর্করা) যা হজম প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায়, কিন্তু হজম হয় না। প্রতিরোধী স্টার্চ কোলনে পৌঁছায় এবং অন্ত্রে ব্যাকটিরিয়ার খাবার হিসাবে কাজ করে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলি প্রতিরোধী স্টার্চ ভেঙে দেয় এবং সংক্ষিপ্ত-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড (SCFA) এর মতো যৌগ তৈরি করে। অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিরোধী স্টার্চ এবং SCFA রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে আনে, ক্ষুধা হ্রাস এবং হজমের জন্য ভালো।

সাবুদানার স্বাস্থ্য উপকারীতা,সাবুদানা খাওয়ার স্বাস্থ্য অপকারিতা

৮.অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা তাঁদের রোজকার ডায়েটে সাবুদানা রাখতে পারেন। এতে থাকা ভিটামিন বি৬ এবং ফোলেট গর্ভজাত সন্তানের স্বাস্থ্যের উপকারে লাগে। 

৯. এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। যা হাড়কে শক্তিশালী করে ও হাড়ের ঘনত্ব উন্নত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত সাবুদানা খেলে অস্টিওপোরোসিস ও আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি কমে যায়।

১০.সাবুদানার খিচুড়ি ফ্লু ও জ্বর দ্রুত সারায়। ক্ষুধা কমাতেও সাহায্য করে। ওষুধের কোর্স শেষ হয়ে গেলে এক বাটি সাবু খাওয়া যেতে পারে।

সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কী

সাবুদানার স্বাস্থ্য অপকারিতা

বেশি পরিমাণে সাবুদানা কিন্তু একেবারেই খাওয়া যাবে না যদি আপনি ওজন কমাতে চান কিংবা ডায়াবেটিসের রোগী হন। সাবুদানা স্টার্চযুক্ত ও এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি রয়েছে। যা ওজন বাড়াতে পারে।

পরিশেষে : সাবুদানা খাওয়ার নিয়ম,বাচ্চাদের জন্য সাবুদানার রেসিপি,সাবুদানা খেলে কি হয়

আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট

স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ

Leave a Comment