সাংবাদিক বনাম সংবাদ

আমরা সর্বপ্রথমে এটা জানবো যে,সাংবাদিক কী?সাংবাদিক তাকেই বলে যিনি চারিদিকের বস্তুনিষ্ট ও নিরপেক্ষ সংবাদ সহজ ভাবে নির্ভয়ে ও নির্ভুল ভাবে জনসাধারণের সম্মুখে প্রকাশ করেন তা ই হলো সাংবাদিকতা।

একজন সাংবাদিক মূলত ভাবে সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, রেডিও, টেলিভিশন ও ওয়েব পোর্টালের জন্য খবর জোগাড় করেন।সংবাদ ও কলাম লেখা, সম্পাদনা, পরিমার্জন, পরিবেশন ও ছবি সংগ্রহ ইত‍্যাদি কাজে সবসময় নিযুক্ত থাকেন।।এছারাও একজন সাংবাদিক আরো অনেক কাজ করেন যেমন-বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী একজন সাংবাদিকের কাজের ধরন আলাদা হয়। তবে যে কোন মাধ্যমে সাধারণ কিছু কাজ থাকে যেমনঃ সংবাদ সংগ্রহ করা সংবাদের সত্যতা যাচাই করা সংবাদ সম্পাদনা করা প্রয়োজনে মানুষের সাক্ষাৎকার নেয়া বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করা কলাম লেখা ও বাছাই করা তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করা প্রয়োজনীয় ছবি সংগ্রহ করা।যেহেতু সাধারণ মানুষের জীবনে গণমাধ্যমের সরাসরি প্রভাব রয়েছে, সেহেতু বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা একজন সাংবাদিকের অনেক গুলো দায়িত্বের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এছাড়া সংবেদনশীল খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে তথ্যদাতার গোপনীয়তা রক্ষা করা অবশ্যই সকল সাংবাদিকদের বাঞ্ছনীয়।

আমাদের সমাজের মধ্যে তিনিই হবেন একজন জনপ্রিয় সাংবাদিক যার রয়েছে সর্বস্ত্মরে সোর্স। তবে সোর্স নিয়োগের ক্ষেত্রে সবসময় সতর্কতা। অবলম্বন করতে হবে। সোর্স নিয়োগের পূর্বে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার জ্ঞান কতটুকু আছে এছাড়াও সংবাদের ব্যাপারে কতটা নিরপেক্ষতা বহন করে সেটা অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে।তা না হলে ভুল তথ্যের জজন্য আপনার সংবাদটি গ্রহণযোগ্য হারাতে পারে।এবং আপনার সম্পর্কে মানুষের মিথ্যা ধারণা জন্মাতে পারে।

আধুনিক ইলেকট্রনিক্স যুগে সংবাদপত্রের পুরাতন ধ্যান ধারণা অনেকটা পাল্টিয়েছে। সংবাদ লেখার অনেক নিয়ম কানুনেরও ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তবে সংবাদ লেখার প্রথমেই ঠিক করে নিতে হবে ”সংবাদ শিরোনাম” সংক্ষিপ্তাকারে সুন্দর করে লিখতে হবে শিরোনাম, যাতে পাঠকের সংবাদ পড়ার আগ্রহ অনেক বেশি বেড়ে যায়। এরপরে লিখতে হবে”সূচনা সংবাদ”। ইংরেজীতে যাকে” ইনট্রো” বলে। সূচনা সংবাদ হলো পুরো সংবাদের সংক্ষিপ্ত রূপ। সূচনা সংবাদ পড়েই পাঠক বুঝতে পারবেন সংবাদের পুরো বিষয়বস্তু। আসলে কি। সংবাদ লেখার শব্দ ও বাক্য হতে হবে সহজ সরল ও বোধগম্য। ছোট ছোট বাক্যে সাবলীল ভাষায় লেখা হলে পাঠকরা পড়ে স্বস্ত্মি পাবেন। সংবাদটি অবশ্যই তথ্য নির্ভর হতে হবে। অনুমান কিংবা আবেগের কোন স্থান নেই সাংবাদিকতায়।।সংবাদের মধ্যে যিনি যত বেশী তথ্য সংযোজন করতে পারবেন তার লেখা সংবাদটি পাঠকের কাছে তত বেশি গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করি।

উদাহরণ স্বরূপ দুটি শিরোনাম লেখা যেতে পারে-

ক) “ঢাকার নিউ মার্কেটে ভোররাতে একটি জুয়েলারি থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে’ ।
খ) ‘ঢাকার নিউমার্কেটে ভোররাতে ফিল্মি স্টাইলে ছিনতাই’।

এই দুটির শিরোনামের মধ্যে কোনটি পাঠকদের ভালো লেগেছে? নিশ্চয়ই দ্বিতীয়টি। লক্ষ্য করুন-দ্বিতীয় শিরোনামে একটা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে ‘ফিল্মি স্টাইলে’। এই ফিল্মি স্টাইলে শব্দের জন্য পাঠকদের মনে সংবাদ পড়ার আগ্ৰহ অনেক বেড়ে যেতে পারে।

সংবাদের শিরোনামে সবসময় কম শব্দ ব্যবহার করলে ভালো হয় তবে বিশেষ ক্ষেত্রে পনের থেকে ষোল টি শব্দ ব‍্যাবহার করা যেতে পারে।

কখনোই বলা যাবে না যে,আজকে কোনো সংবাদ নেই!!অনেক সময় দেখা যায় যে,খুন-খারাপি, ধর্ষণ,ক্রস, বোমা হামলা, আত্মহত্যা, অপহরণ, সংঘাত, সংঘর্ষ দূর্ঘটনা, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, গ্রেফতার, অগ্নিকান্ড না ঘটলে সেদিন আমরা বলে থাকি আজ কোন সংবাদ নেই। একজন পেশাদার সংবাদিকের জন্য এই কথাটি বড়ই লজ্জাকর বিষয় বলে আমি মনে করি।প্রতিদিন ঘটে যাওয়া ঘটনাই শুধু সংবাদ নয়। আমাদের চারেপাশে যে কোন সমস্যাই হতে পারে একটি ভালো সংবাদ। “পৌরসভার ড্রেন পরিস্কার না করার কারণে মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে নাগরিকদের জনজীবন অতিষ্ট”এছারাও “বর্তমান নেশায় আসক্ত হয়ে হাজার হাজার স্কুল কলেজের ছাত্র/ছাত্রীরা হারিয়ে ফেলে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা”।একটু ভাবুন তো এই সংবাদ গুলো কি কম গুরুত্বপূর্ণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিংবা সমাজে?

সংবাদ প্রকাশের মধ্যে ক্রাইম রিপোর্ট সংবাদ পত্রের জন্য একটি গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। ক্রাইম রিপোর্ট একজন সাংবাদিককে রাতারাতি জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যেতে পারে। আবার ভুল তথ্যের কারণে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক বিড়ম্বনার শিকার হতে পারে। তাই ক্রাইম রিপোর্ট লেখার আগে সাংবাদিককে চরম সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যা করতে হবে তা হলো, যাদের বিরুদ্ধে যে তথ্য আছে তা গোপনে সংগ্রহ করতে হবে। সম্ভব হলে সকল ডকুমেন্ট(ছবি, পেপার) নিজ আয়ত্বে আনতে হবে। তথ্য সংগ্রহ করা শেষ হলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার বক্তব্য গ্রহণ করতে হবে (বক্তব্য ক্যাসেট বন্দী করতে পারলে ভালো হয়)। সাংবাদিকের নিজের কোন কথা সংবাদের মধ্যে সংযোজ না করাই উচিত। ডকুমেন্ট ও সূত্রের কাঁধে ভর করেই সংবাদ লিখতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তির ব্যক্তব্য সংবাদের মধ্যে গুরুত্ব সহকারে লিখতে হবে। প্রতিবেদকের কাছে যদি তাঁর বক্তব্য খন্ডন করার মত উপযুক্ত প্রমাণ থাকে তাহলে”প্রতিবেদকের ভাষ্য” হিসেবে তা সংবাদের মধ্যে উপস্থাপন করা বাঞ্চনিয়।

আমাদের সাংবাদিকদের উচিত সংবাদ লেখার পর কমপক্ষে একবার হলেও ভালভাবে বিষয়টি পড়ে নেওয়া। বানান ভুল হলে, তথ্য বাদ পড়লে বা বাক্য অসম্পূর্ণ থাকলে তা সংশোধন করে পত্রিকায় পাঠাতে হবে। প্রেরিত সংবাদের ফটোকপি অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর মিলিয়ে দেখতে হবে। লেখা সংবাদটি হুবহু ছাপা হয়েছে নাকি এডিট করা হয়েছে। যদি এডিট করা হয়ে থাকে তবে পরবর্তীতে সংবাদ লেখার সময় ক্রটিগুলো সংশোধণ করলে সুবিধা হবে।

বস্তুনিষ্ঠ সংবাদই একজন সাংবাদিককে সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে। এক্ষেত্রে নৈতিকতার বিষয়টি অগ্রহণ্য। এছাড়া ভালো রিপোর্টার বা সাংবাদিক হতে হলে নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে। যে সংবাদগুলো তথ্য হিসেবে ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে তা সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিদিনের ঘটনা ডাইরীতে লিপিবদ্ধ করতে হবে। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার

বিষয়ে বই পত্র সংগ্রহ করে তা নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। যে সংবাদগুলো তথ্য হিসেবে ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে তা সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিদিনের ঘটনা ডাইরীতে লিপিবদ্ধ করতে হবে। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার বিষয়ে বইপত্র সংগ্রহ করে তা নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। সাংবাদিকতার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারলে অনেকটা ভালো হবে। প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে এবং তাদের লেখা সংবাদ প্রতিনিয়ত অনুসরণ করতে হবে।

অবশেষে বলা যায় যে, সংবাদই লেখা হোক না কেনো তা হতে হবে বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ। সাংবাদিকতার মত মহান পেশার কাজে যদি আমরা নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে পারি তাহলে এর চাইতে ভালো কিংবা মহৎ অন্য কোনো পেশা থাকতে পারে না। সাংবাদিকদের সবসময় অধ্যাবসায়, সততা, সহনশীলতা,আর নিরপেক্ষতা থাকা প্রয়োজন। একজন সাংবাদিকদের মূল লক্ষ্য। হলো মিথ্যাকে ধ্বংস করা আর সত‍্য তথ্য উম্মোচিত করা।মিথ্যা সবসময় বর্জন করতে হবে । কোনো ধরনের লোভ ও লালসার শিকার হওয়া যাবে না সত‍্যের জন্য সবসময় কলমের লড়াই করে যেতে হবে।

নবীন লেখক ও সাংবাদিক
মোঃ ফিরোজ খান
ঢাকা বাংলাদেশ

Leave a Comment