সহজ শর্ত ঋণ পেতে করণীয়, ব্যাংকঋণ পেতে যেসব নথি লাগে

সহজ শর্ত ঋণ পেতে করণীয়, ব্যাংকঋণ পেতে যেসব নথি লাগে

ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের উদ্যোক্তারা সাধারণত ব্যাংকে যেতে ভয় পান। এ জন্য এসব গ্রাহক বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন, যেখানে কোনো কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় না। এমনকি কোনো ধরনের জামানতও লাগে না।

আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থার বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ পরিবেশ খুব সুন্দর ও গোছানো। এ কারণেও গ্রামের সহজ-সরল ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের উদ্যোক্তারা ব্যাংকিং সেবার জন্য ব্যাংকের শাখায় যেতে ইতস্তত বোধ করেন।

তাঁদের অনেকে মনে করেন, ব্যাংকঋণ পেতে হলে অনেক কাগজপত্র লাগে, বাড়ি বা জমি বন্ধক রাখতে হয়, জামিনদারসহ আরও অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। আসলেই কি তাই? ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে আসলে কী কী কাগজপত্র লাগে এবং কেন লাগে, তা-ই তুলে ধরা হলো এ লেখায়।

এসব কাগজপত্র কোথায় এবং কীভাবে পাওয়া যেতে পারে, তার একটা সম্যক ধারণা দেওয়া হলো এখানে। মূলত চারটি কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে বিভিন্ন কাগজপত্র বা দলিল লাগে। এ চার কারণ হলো—

১. নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাধ্যবাধকতা

২. ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই

৩. ঋণের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য এবং

৪. ঋণ আদায়ে প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নিতে

প্রথমত, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যেসব দলিল বা সনদ দরকার, তার মধ্যে রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যবসার সনদ বা ট্রেড লাইসেন্স, কর শনাক্তকরণ নম্বর বা আয়কর সনদ ইত্যাদি। নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে ১৮ বছর বয়স হলেই নির্বাচন কমিশন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। সিটি করপোরেশন অধ্যাদেশ-১৯৮৩ অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের বৈধ ব্যবসা ও স্বাধীন পেশার জন্য ট্রেড লাইসেন্স বা ব্যবসার নিবন্ধন সনদ নিতে হয়।

ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা চাইলে যেকোনো সময় এ জন্য জরিমানাসহ শাস্তি দিতে পারে। তাই ব্যবসা শুরুর আগে স্থানীয় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের নির্ধারিত ফরম পূরণ করে এবং প্রয়োজনীয় ফি জমা দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া যায়। এ ছাড়া করযোগ্য আয় হলে অনলাইনে আবেদন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের কাছ থেকে আয়কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন সনদ পাওয়া যায়।

দ্বিতীয়ত, একজন গ্রাহক ঋণ নিলে তা যথাসময়ে পরিশোধ করতে পারবেন কি না বা কী পরিমাণ ঋণ নিলে গ্রাহক তা পরিশোধ করতে পারবেন, তা নিরূপণের জন্য ব্যাংক প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র চায়। ছোট ছোট উদ্যোক্তা যেহেতু তাঁদের ব্যবসার আর্থিক বিবরণী তৈরি করেন না, তাই ব্যাংকারের পক্ষে গ্রাহকের সক্ষমতা যাচাই করা একটু কঠিন হয়ে যায়। তখন গ্রাহকের ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা পেতে গ্রাহকের বিক্রয় ও মুনাফার তথ্য সংগ্রহ করে ব্যাংক। অনেক সময় ছোট উদ্যোক্তাদের হিসাব খাতা কিংবা ক্রয়-বিক্রয় রসিদ থেকে এই তথ্যগুলো নিজেদের মতো করে তৈরি করে নেন ব্যাংকাররা। গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলেই সেটি প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। তাই ঋণ নেওয়ার আগে গ্রাহকের ব্যবসার আর্থিক বিবরণী, আয়-ব্যয়ের বিবরণী এবং নগদ প্রবাহের হিসাব যদি গ্রাহকের তৈরি করা না থাকে, তাহলে ব্যাংকের কর্মকর্তারা তা তৈরি করে তাতে গ্রাহকের স্বাক্ষর নিয়ে থাকেন। এ ছাড়া গ্রাহকের অন্য কোনো ব্যাংকে ঋণ থাকলে তার বিবরণী এবং কিস্তি পরিশোধের তথ্যসংবলিত প্রমাণপত্রও সংগ্রহ করে ব্যাংক। কারণ, ঋণ পরিশোধের অতীত রেকর্ড থেকে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের মানসিকতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

তৃতীয়ত, গ্রাহকেরা অনেক সময় ঋণের প্রয়োজনীয়তা যথাযথভাবে নিরূপণ না করেই ঋণের আবেদন করেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা ও ঋণ পরিমাপের বিভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে ঋণের পরিমাণ নির্ধারণে কিছু তথ্য লাগে। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে গ্রাহকের বিনিয়োগ পরিকল্পনা, বর্তমান মালামালের পরিমাণ, দেনাদার ও পাওনাদারের বিবরণসহ দেনা-পাওনার পরিমাণ, ব্যবসায় মৌসুমি প্রভাব আছে কি না ইত্যাদিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। মালামাল ও দেনাদারের তালিকা প্রস্তুতির সময় অবশ্যই বাতিল বা মেয়াদোত্তীর্ণ মালামাল এবং তামাদি বকেয়া আছে কি না, তা-ও বিবেচনায় নেওয়া হয়। এ ধরনের মালামাল ও তামাদি বকেয়া হিসাব থেকে বাদ দেওয়া হয়।

চতুর্থত, ব্যাংকঋণ মানেই অনাদায়ের ঝুঁকি। এ ঝুঁকি দুই কারণে তৈরি হতে পারে। যেমন অনেক সময় সামর্থ্য থাকার পরও গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করেন না।

আবার ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণেও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ঋণগ্রহীতাকে তদারকির মধ্যে রেখে পাওনা আদায়ের চেষ্টা করা হয়। তাতে ব্যর্থ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কিছু দলিলপত্রের প্রয়োজন হয়। এ কারণে ব্যাংক ঋণ দেওয়ার আগে কিছু আইনি দলিল সম্পাদন করে থাকে।

এদিকে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রায় এক কোটি টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে দুজন জামিনদারের দরকার হয়। তাই ঋণগ্রহীতাকে ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী জামিনদার ঠিক করতে হয়।

তাই কোনো সংকোচ না করে আপনার পাশের যেকোনো ব্যাংকের শাখায় ব্যবসায়িক হিসাব খোলার পর লেনদেন করতে থাকুন, তারপর ছয় মাস বা এক বছর পর ঋণের আবেদন করুন। প্রয়োজনে ব্যাংক কর্মকর্তার সহযোগিতা নিন। ঋণ নিয়ে আপনার ব্যবসাকে সমৃদ্ধ করুন এবং দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বেগবান করুন।

Some more insurance and finance related posts for you

বীমা ও অর্থায়ন বিষয় কিছু প্রশ্ন

Some more insurance and finance related posts for you

Leave a Comment