সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের সপ্তম অধ্যায় গুলতির

গুলতি (Gulti) ছোট পাথর, মাটির বা মার্বেলের গুলি প্রভৃতি ছোড়ার প্রাচীন ও দেশি অস্ত্রবিশেষ। অঞ্চলভেদে একে গুলই, ছটকা, বাটুল প্রভৃতি নামেও ডাকা হয়। বাংলা সাহিত্যে অনেক জায়গায় গুলতির ব্যবহার লক্ষ করা যায়। আবহমান বাংলায় কিশোর জীবনের বিভিন্ন ক্রীড়াসামগ্রী যেমন—লাটিম-নাটাইয়ের পাশাপাশি গুলতির গুরুত্বও কম ছিল না।

প্রাচীনকালে গুলতির একটি বড় রূপ যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো। এই যন্ত্র প্রথম আবিষ্কার করে গ্রিকরা। পড়ে বিভিন্ন যুদ্ধে বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনী কোনো দুর্গের মাঝে বড় বড় পাথর ও আগুনের গোলা ছুড়ে মারার জন্য এটি ব্যবহার করত।

বর্তমানে যুদ্ধক্ষেত্রে এর ব্যবহার নেই বললেই চলে।

গাঁয়ের শিশু-কিশোররা অনায়াসে গুলতি তৈরি করতে পারে। পেয়ারা, জাম, বেল ইত্যাদি শক্ত গাছের চিকন এক টুকরা ডাল দিয়ে হাতল বা দোডালা তৈরি করা হয়। অনেকটা ইংরেজি ‘ওয়াই’ (Y) অক্ষরের মতো।

এর বাকল রোদে শুকিয়ে এই হাতলের Y-এর দুই বাহুর সঙ্গে রাবারের ফিতা বা সাইকেলের টিউব বা ভয়েল টিউব সুতা দিয়ে বেঁধে গুলতি তৈরি করা হয়। নিচের প্রান্তটি ব্যবহার করা হয় হাতল হিসেবে। রাবারের ফিতাকে বলা হয় ব্লক।

ব্লকের ঠিক মাঝখানে চামড়া বা রেক্সিন জাতীয় বস্তুর তুলনামূলক চওড়া টুকরা রাবারের নলের সঙ্গে সুতা দিয়ে গিঁট দেওয়া হয়। এটা গুলির আধার বা রাখার স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

গুলতির প্রধান গোলাবারুদ হলো পোড়া মাটির গোল মার্বেল। অতীতে মাটি কাদা করে মার্বেলের মতো গোল গোল করে পাকিয়ে রোদে শুকিয়ে উনুনে পুড়িয়ে গুলতির গুলি বানানো হতো। এর পরিবর্তে এখন কাচের মার্বেল, নুড়িপাথর বা ইটের ছোট টুকরা প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়। একসময় গুলি প্যান্টের পকেটে পুরে গ্রামের কিশোররা বেরিয়ে পড়ত মাঠে বা বনবাদাড়ে। শক্তির পরীক্ষা হতো দীঘি বা পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে। তবে শিশু-কিশোররা শক্তির পরীক্ষার প্রতিযোগিতার চেয়ে গুলতি দিয়ে গাছের পাকা ফল পাড়তে বা পাখি শিকার করতেই বেশি পছন্দ করে।

গ্রামের মুদি দোকানগুলোতে এখনো গুলতি কিনতে পাওয়া যায়। শহরে বৈশাখী মেলাসহ বিভিন্ন মেলা ছাড়া এই গুলতির দেখাই পাওয়া যায় না বলে চলে। তাই শহরের শিশুরা গুলতির অভাবে বেছে নিয়েছে খেলনা পিস্তল-বন্দুক। এসব খেলনা নিয়েই তারা খেলতে বেশি পছন্দ করে। এখনকার অনেক শিশুই ঐতিহ্যবাহী গুলতি চেনেই না।

শিক্ষা

1 thought on “সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের সপ্তম অধ্যায় গুলতির”

Leave a Comment