লকডাউন ও মানসিক অবসাদ একটি রচনা লিখুন, রচনা লকডাউন ও মানসিক অবসাদ , রচনা লকডাউন ও মানসিক অবসাদ রচনা, লকডাউন ও মানসিক অবসাদ রচনা PDF Download,রচনা নিয়োগ পরীক্ষায় আসা লকডাউন ও মানসিক অবসাদ, লকডাউন ও মানসিক অবসাদ রচনা বাংলা ২য় পত্র রচনা

বিষয়: লকডাউন ও মানসিক অবসাদ একটি রচনা লিখুন, রচনা লকডাউন ও মানসিক অবসাদ , রচনা লকডাউন ও মানসিক অবসাদ রচনা, লকডাউন ও মানসিক অবসাদ রচনা PDF Download,রচনা নিয়োগ পরীক্ষায় আসা লকডাউন ও মানসিক অবসাদ, লকডাউন ও মানসিক অবসাদ রচনা বাংলা ২য় পত্র রচনা

লকডাউন একটি রচনা লিখুন

ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বের হটনিউজ করোনাভাইরাস। ২০২০ সালের শুরু থেকে চলছে তার দাপট। কেউ তাই ২০২০ সালকে বলেছেন বিষসাল, কেউবা প্রহর গুনেছেন কবে শেষ হবে এই অভিশপ্ত সময়। তবে এই ২০২০ সাল থেকে করোনা ভাইরাসের সঙ্গে নানান নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করেছে আমাদের, তার মধ্যে অন্যতম হল- ‘লকডাউন’

লকডাউন কি : এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ‘পথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা’র বিশেষ কর্মসূচির কারণে যে শ্লোগান আমাদের কানে বাজে তা হল “Safe Drive, save Life”. এর সঙ্গে এই বছরের নবতম সংযোজন হল- “Stay home stay safe”. আর একেই কার্যকরী করতে বিশ্বব্যাপী শুরু হয়েছে লকডাউন। ‘লকডাউন’ ইংরেজি শব্দ, যার বাংলা করলে হয় বন্ধাবস্থা। লকডাউন সাধারণত জনস্বার্থে গৃহীত প্রশাসনিক ব্যবস্থা যার দ্বারা সমস্ত রকম পরিষেবা যেমন যান চলাচল, শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র সমস্ত বন্ধ থাকবে। এই লকডাউন সাধারণত দুই প্রকারের হয়-

  • প্রতিরোধমূলক লকডাউন – এটি একটি প্রাকৃতিক কর্ম পরিকল্পনা যা জনগণ, সংগঠন এবং সিস্টেমের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য গ্রহণ করা হয়।
  • জরুরিকালীন লকডাউন – মানুষের জীবনে কোনো বিশেষ সংকটময় পরিস্থিতিতে যখন কোনো আঘাতের আশঙ্কা থাকে তখন জরুরি লকডাউন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

লকডাউনের ইতিহাস : কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে জনগণের স্বার্থে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় লকডাউনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর থেকে আমেরিকায় তিনদিনব্যপি লকডাউন সূচিত হয়েছিল। এরপর কানাডায় ২০০৩ সালে আগ্নেয়াস্ত্রের প্রয়োগের হুমকির কারণে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লকডাউন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রায় একই ঘটনার কারণে ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ শে জানুয়ারী ২০০৮ সালে ছয় ঘন্টার জন্যে লকডাউনের আদেশ জারি করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে প্যারিস হামলার কারণে সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ রুখতে বেশ কয়েক দিনের জন্য শহরটিকে অবরুদ্ধ করা হয়েছিল। আর আমাদের ভারতবর্ষের জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা এড়াতে বছরের নানা সময় কখনো কিছুদিন কখনো বা কিছুক্ষণ ব্যাপি লকডাউন চলে আসতেছে। কিন্তু এই লকডাউনের ইতিহাসে দীর্ঘকালীন এবং বিশ্বব্যাপী লকডাউন জারি করা হয়েছে এই ২০২০ সালে করোনা মহামারী সংক্রমণ রুখতে। ২০২০ সালের এপ্রিলের প্রথমদিকে বিশ্বের প্রায় ৩.৯ বিলিয়ন মানুষকে লকডাউনের আওতায় রাখা হয়েছিল যা বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি। আর এপ্রিলের শেষে দিকে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ লকডাউনের আওতায় ছিল যার মধ্যে ৯০ শতাংশই ইউরোপের দেশগুলিতে। আর ভারতের প্রায় ১.৩ বিলিয়ন মানুষই পড়েছেন এই লকডাউনের আওতায়।

তবে, ১৯২০ সালে স্প্যানিশ ফ্লুর কারণে যে মহামারী হয়েছিল সেসময়ও বেশ কয়েকমাস ধরে লকডাউন চলেছিল বলে জানা যায়।


আরো ও সাজেশন:-

দীর্ঘকালীন লকডাউনের কারণ : বর্তমান বিশ্বের ত্রাস করোনাভাইরাস, যার অতিসংক্রমণের ফলে মাত্র কয়েকমাসের মধ্যেই বৈশ্বিক মহামারীর সৃষ্টি হয়েছে। করোনাভাইরাসের এই প্রজাতি কোভিড–১৯ যার বাহক মানুষ, মানুষের দ্বারা সংক্রমিত হয়ে ভাইরাসটি নাক মুখের মধ্যে দিয়ে অপর মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ফুসফুসকে আক্রমণ করে, যার ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আর এই করোনা ভাইরাসের কারণে মাত্র কয়েকমাসের মধ্যে চিন, আমেরিকা, ইটালি, রাশিয়া, ভারত সহ ১৮০ টির ও বেশি দেশ আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা ৫ লক্ষ ছাড়িয়েছে এবং বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেননি। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO-র নির্দেশনামা অনুযায়ী সোশ্যাল ডিসট্যান্স অর্থাৎ মানুষের থেকে মানুষের দূরত্ব বজায় রাখাই একমাত্র করোনা সংক্রমণ রুখতে পারে, আর বর্তমানে জনবহুল পৃথিবীতে মানুষের থেকে মানুষের দূরত্ব বজায় রাখার একমাত্র উপায় হল মানুষকে বাড়িতে রাখা, আর তার জেরেই বিভিন্ন দেশগুলিতে নানা সময় জুড়ে চলেছে দীর্ঘকালীন লকডাউন। অর্থাৎ প্রতিষেধকবিহীন এই মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে নিজেকে বাঁচাতে লকডাউন মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।

লকডাউনের প্রভাব : যেহেতু সংকটময় পরিস্থিতিতে জনগণের স্বার্থে কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের প্রতিঘাত বিপজ্জনক অবস্থা এড়াতে লকডাউন জারি করা হয় ফলে তার সুপ্রভাবই পড়ে জনগণের ওপর। বিশেষ পরিস্থিতিতে নানান প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা, গ্যাস লিক, সন্ত্রাসমূলক হুমকি এড়াতে হাসপাতাল স্কুল কলেজ মন্দির ইত্যাদি জনবহুল ক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক জরুরিকালীন লকডাউনের আদেশ জারি করা হয় এবং এর কারণে নানা বিপদ আতঙ্ক এবং হতাহত এড়ানো গেছে কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে বিশ্বব্যাপী যে দীর্ঘকালীন লকডাউনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তার প্রভাব যেমন সুদূর প্রসারী তেমনি ভালো মন্দ উভয়ই আছে।

কুপ্রভাব : এই দীর্ঘকালীন লকডাউনের কারণে মানুষ গৃহবন্দি। কেবলমাত্র জরুরিকালীন স্বাস্থ্য পরিসেবা চালু রাখতে হাসপাতাল, ওষুধের দোকান এবং খাদ্য সামগ্রীর জন্য মুদির দোকান ও সবজির বাজার নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে খোলা ছিল। অন্যান্য সমস্ত পরিসেবা বন্ধ থাকার কারণে একটা বড় সড় অর্থনৈতিক ধাক্কার মুখোমুখি হয়েছে বিশ্ব। বিভিন্ন দেশের দিনমজুর, নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ রোজগার হারিয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এমনকি যান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে অসুস্থ রোগী সময়মত চিকিৎসার চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারাচ্ছে। লকডাউনের বিভিন্ন বার্ষিক পরীক্ষা অসমাপ্ত থেকে গেছে যার কারণে সমস্ত ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যতও নানা প্রশ্নচিহ্নের সম্মুখীন হয়েছে। কাজ হারিয়ে নানা মানুষ সামনের অন্ধকার ভবিষ্যতের কথা ভেবে আত্নহননের পথ বেছে নিচ্ছে। মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রাখার ভাবনায় সিনেমাহল, শপিং মল থেকে স্কুল কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে এবং আদৌ খুলতে পারবে কি না কিংবা খুললেও তা কীভাবে সেইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে। আমাদের দেশে লকডাউন চালু হয়েছে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা করার ফলে বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়া মানুষজন নানা দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। লকডাউন চলাকালীন বিশেষভাবে তাদের ফিরিয়ে আনতে গিয়ে সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে। এই অবস্থার পুর্ববর্তী লকডাউন কর্মসূচী গ্রহণটাই একটা প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে গেছে।

রচনা ,প্রবন্ধ উত্তর লিংক ভাবসম্প্রসারণ উত্তর লিংক
আবেদন পত্র উত্তর লিংক অনুচ্ছেদ রচনা উত্তর লিংক
চিঠি ও ইমেল উত্তর লিংক প্রতিবেদন উত্তর লিংক
Paragraphউত্তর লিংক Compositionউত্তর লিংক
Applicationউত্তর লিংক Emailউত্তর লিংক
Essayউত্তর লিংক Letterউত্তর লিংক

সুপ্রভাব : এই সুদীর্ঘসময় জুড়ে লকডাউন গৃহবন্দীত্ব সকল মানুষের জীবনযাত্রাতেই বড় ধরণের প্রভাব ফেলেছে, অর্থনীতির পারদ নেমেছে। কিন্তু এর পাশাপাশি অন্য সব কিছুর মতো এই লকডাউনের ভালো দিকও আছে। আর তার প্রভাব পড়েছে মনুষ্যতর জগতে প্রকৃতি ও প্রাণিদের মধ্যে। মানুষের করালগ্রাস থেকে কিছুদিন মুক্তি পেয়ে পশুপাখিরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। তাদের অবাধ বিচরণের ছবি চোখে পড়েছে। এর পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের পরিমানও অনেক কমেছে, গরমের মাত্রা কমেছে। এমনকি ওজোন স্তরের গহব্বর বেশি পূর্ণ হয়েছে। প্রকৃতি ধূসর থেকে সবুজ হয়েছে অনেকটাই।

লকডাউন – নানা মতামত : বেশিরভাগই মানুষই এই দীর্ঘকালীন লকডাউনের নির্দেশে সিস্টেমের ভুলকে অথবা পরিকল্পনার অভাবকে দায়ি করেছেন। যেহেতু দেশের বাইরে থেকে আসা মানুষদের মধ্যে রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি ছিল তাই তাদের আসা যাওয়ায় বিধি নিষেধ আরোপ করাটাই বেশি জরুরি ছিল।দেশের মধ্যবর্তী মানুষদের বিশেষ কয়েকদিনের কর্মসূচীতে ঘরে ফিরিয়ে সকলের গৃহবন্দিত্ব শুরু করাটাই ভালো হত বলে মনে করেছেন সাধারণ মানুষের একাংশ। এর সঙ্গে স্কুল কলেজের বিশেষত মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের বাকি থাকা পরিক্ষাও সম্পূর্ণ করা যেতে পারত বলে মনে করেছেন শিক্ষক, শিক্ষিকা ও অভিভাবকমহল। তাদের মতে, পরিকল্পনার অভাবেই লকডাউন অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে দীর্ঘকালব্যাপী করতে হচ্ছে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে সরকার বা প্রশাসন কেউই এই মহামারীকালীন বিপর্যয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না, ফলে অজানা বিপদ এড়াতে পরিকল্পনা গ্রহণে কর্মপটুতার অভাব দেখা দেবেই। কিন্তু পরিকল্পনার অভাবের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাব দেখা গেছে। দূরত্ববিধি লঙ্গন, জামায়াত, মাস্ক ব্যবহার না করার মতো নানা অসচেতনতাই লকডাউন চলাকালীন করোনার অত্যাধিক সংক্রমণের অন্যতম একটা কারণ।

উপসংহার : বর্তমান করোনা সংক্রমণের প্রবণতা অনুযায়ী জায়গাগুলিকে রেড, অরেঞ্জ ইত্যাদি জোন হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন কঠোর থেকে শিথিল করা হচ্ছে। বিভিন্ন পরিসেবা ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে। তবে মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু, বার্ড ফ্লুর মতো কোভিড–১৯ ও আমাদের এখন নিত্য পথ চলার সঙ্গী। তাই নিজের জন্য নিজেকে সচেতন হতেই হবে। যতটা সম্ভব আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে, সময় লাগবে, কিছু পরিবর্তন আসবে এবং তা সঙ্গে নিয়ে ফিরেও আসবে আগের অবস্থা। তখন লকডাউন ডায়েরির পাতায় কিংবা স্মৃতির গহরে ভালো মন্দ মুহূর্ত মেশা অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে কেবল।



অথবা, লকডাউন একটি রচনা লিখুন

২০২০ সালে করোনা মহামারীর প্রকোপ প্রাথমিক পর্যায়ে রোধ করার জন্য সমগ্র বিশ্বব্যাপী প্রতিটি দেশের সরকারের তরফ থেকে জারি করা হয়েছিল আংশিক তথা সম্পূর্ণ লকডাউন।এই লকডাউন এর ফলে ব্যস্ত মানুষের গৃহবন্দি দশায় সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছিল ব্যক্তি তথা সমগ্র সমাজের মানসিক সত্ত্বা। এই পর্যায়ে মানুষের মনে যে অবসাদের অন্ধকার চেপে বসেছিল সেই অন্ধকারের গহনে সাধ্যমত আলোকপাত করার উদ্দেশ্য নিয়েই এই প্রতিবেদনের উপস্থাপনা।

ভূমিকা:

২০২০ সালটি বিশ্বের সবার কাছে একটি অভিশপ্ত বছর হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই বছরে অন্যান্য সকল দুঃসংবাদকে অতিক্রম করে বছরটির শীর্ষক রূপে জায়গা করে নিয়েছিল করোনা মহামারী। কোন্ এক অজানা অচেনা ভাইরাস এসে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্তব্ধ করে দিয়েছিল সমগ্র বিশ্বের জীবনযাত্রা।

সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার অনিবার্য ফল হিসেবে মানুষের জীবনে এসেছিল অসংখ্য সমস্যা। সেই সকল সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি হল মানসিক অবসাদ। লকডাউনে ঘরে দীর্ঘদিন ধরে বন্দী জীবন যাপনের ফলে মানুষের মন ভারাক্রান্ত হতে হতে ধীরে ধীরে ধীরে পড়েছিল অবসাদের দিকে।

এই মানসিক অবসাদ থেকে সমগ্র সমাজে তৈরি হয়েছিল এক সামাজিক অবসাদের বাতাবরণ। এর স্বাভাবিক ফলশ্রুতি হিসেবে এসেছিল মূল্যবোধের অবক্ষয়, পারিবারিক হিংসা, কলহ ইত্যাদি।

মহামারী এবং লকডাউন:

২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ রোধের উদ্দেশ্যে মার্চ মাসের শেষের দিকে সমগ্র দেশব্যাপী জারি হয়েছিল সম্পূর্ণ লকডাউন। এই লকডাউন এর ফলে কেবলমাত্র প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি এবং পরিষেবা ছাড়া অন্য সবকিছু অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।

মানুষ আটকে পড়ে ঘরের চার দেওয়ালের অভ্যন্তরে। প্রশাসনের তরফে বারবার প্রচার করা হতে থাকে এই মহামারীর সংক্রমণ রোধের একমাত্র উপায় মানুষে মানুষে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। সমগ্র সমাজ জুড়ে তৈরি হয় আশঙ্কার বাতাবরণ। শুনশান রাস্তাঘাট, আর বন্ধনহীন সমাজে মানুষ বাড়ির অভ্যন্তরে ইঁদুরের জীবন-যাপন করতে থাকে।

দৈনন্দিন জীবনে স্তব্ধতা:

লকডাউন এর সাথে সাথেই সমগ্র দেশ তথা বিশ্ব জুড়ে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নেমে আসে হঠাৎ স্তব্ধতা। সমস্ত অফিস কাছারি, দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্রন্থাগার, প্রেক্ষাগৃহ সবই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় সাধারণ গণপরিবহন। যে রেল স্টেশন গুলি এতদিন মানুষের ভিড়ে গমগম করত সেখানে শুধুই বিরাজ করে শ্মশানের নিস্তব্ধতা।

রাস্তাঘাট ফাঁকা পড়ে থাকে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ হয়ে যায়। মানুষ যাতে বাড়ি থেকে না বের হয় তার জন্য প্রতিনিয়ত চলতে থাকে প্রশাসনিক টহলদারি। শুধু মাঝেমধ্যে শুনশান রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন মানুষের আশঙ্কাকে আরো বাড়িয়ে দিয়ে চলে যায়। 


[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]


Work-from-Home সংস্কৃতি:

মহামারী রোধের উদ্দেশ্যে এই লকডাউনের ফলে সমাজের সম্ভবত সবচেয়ে অভিনব প্রাপ্তিটি হল work-from-home সংস্কৃতি। মহামারীর পূর্বে এই ব্যবস্থার প্রচলন যে ছিল না এমনটা নয়, তবে লকডাউনের ফলে সমাজ জুড়ে এই ব্যবস্থা রীতিমত একটি সংস্কৃতির পর্যায়ে উন্নীত হয়। এই সংস্কৃতিতে বাড়িতে বসে অফিসের কাজ ডিজিটাল মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাহায্যে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।

প্রাথমিকভাবে শুনতে আকর্ষণীয় লাগলেও এই পদ্ধতিতে কাজ করা অনেক বেশি প্রতিকূল। বাড়ির পরিবেশ এবং অফিসের পরিবেশ সম্পূর্ণরূপে আলাদা। সে কারণে অফিসের কাজকে বাড়ির পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে মানুষকে বেশ বেগ পেতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘদিন ধরে এই মানিয়ে নেওয়া এবং মেনে নেওয়ার মধ্যে দিয়ে মনের ওপর চেপে বসে হতাশা, এবং যার অনিবার্য ফল হিসেবে সময়ের সাথে আসে মানসিক অবসাদ।

শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব:

সমাজ সৃষ্টি হয়েছিল মানুষের প্রয়োজনেই। মানুষ একা বাঁচতে পারে না। সমাজের বন্ধনহীন স্রোতে একা বাঁচতে গেলে কালের খরস্রোতায় মানুষকে একাই হারিয়ে যেতে হয়। মহামারী রোধের উদ্দেশ্যে জারি হওয়া এই লকডাউন মানুষকে সেই সমাজ থেকেই সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল।

শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বিশেষভাবে মানতে হয়েছিল সামাজিক দূরত্ব। আর সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার অর্থ হলো কোন প্রকার সামাজিক জমায়েতে অংশগ্রহণ না করা। এইভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য একা বাঁচতে বাঁচতে শুধুমাত্র ডিজিটাল মাধ্যম, ইন্টারনেট আর work-from-home সংস্কৃতির চোরাস্রোতে মানুষের মনে জন্ম নেয় হতাশার গ্লানি এবং মানসিক অবসাদ। 


রচনা ,প্রবন্ধ উত্তর লিংক ভাবসম্প্রসারণ উত্তর লিংক
আবেদন পত্র উত্তর লিংক অনুচ্ছেদ রচনা উত্তর লিংক
চিঠি ও ইমেল উত্তর লিংক প্রতিবেদন উত্তর লিংক
Paragraphউত্তর লিংক Compositionউত্তর লিংক
Applicationউত্তর লিংক Emailউত্তর লিংক
Essayউত্তর লিংক Letterউত্তর লিংক

বিনোদনগত অভাব:

জীবনে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানের সাথে মানুষের একান্ত প্রয়োজন হল বিনোদন। বিনোদন ছাড়া মানুষের জীবন হয়ে ওঠে একঘেয়ে এবং মানুষ এই জীবনে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য খুঁজে পায়না। বিনোদন মানুষকে দৈনন্দিন একঘেয়ে জীবন থেকে সাময়িকভাবে হলেও মুক্তির স্বাদ এনে দেয়।

এই লকডাউন মানুষের জীবন থেকে সামাজিক বিনোদনের সেই সামান্য উপায়টুকুও কেড়ে নিয়েছিল। যদিও বর্তমান যুগে বিনোদন বিশেষভাবে ভার্চুয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবুও সামাজিকভাবে বিভিন্ন প্রকার বিনোদনের মাহাত্ম্য যে কতখানি তা এই লকডাউনের ফলে প্রতি মুহূর্তে অনুভূত হয়েছিল। আর সেই বিনোদনহীন জীবনে মানসিক অবসাদের থাবা সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মতোই অনিবার্য।

একঘেয়ে ঘরবন্দি জীবন:

সমাজহীন, বিনোদনহীন স্তব্ধ জীবন আর work-from-home এর নাগপাশে জীবনে একঘেয়েমি আসা অত্যন্ত স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ারই ব্যাপক রূপের প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল লকডাউনের সময়কার সামাজিক জীবনে।

পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে ছিল,  মানুষ জানত না কবে সব কিছু স্বাভাবিক হবে, কবে আবার মানুষ বাড়ি থেকে বেরোতে পারবে, সমাজের সাথে মিশতে পারবে আর সর্বোপরি প্রতিনিয়ত মাথায় চলত সংক্রমনের আশংকা। এই বীভৎস পরিস্থিতি মানুষকে ধীরে ধীরে একঘেয়েমি, হতাশা এবং অবসাদের অন্ধকূপের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। এরই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে উঠে এসেছিল সামাজিক অবক্ষয়মূলক বিভিন্ন অন্ধকার দিক।

পারিবারিক কলহ এবং হিংসা:

ঘরবন্দী একঘেয়ে জীবন এবং তার ফলে মনের উপর চেপে বসা মানসিক অবসাদের প্রতিক্রিয়া রূপে সমাজে যে সকল অবক্ষয়মূলক অন্ধকার দিকগুলি উঠে এসেছে সেগুলির মধ্যে অন্যতম হলো ক্রমাগত বেড়ে চলা পারিবারিক কলহ এবং হিংসার কথা। ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে বাড়ির পরিবেশ এবং কাজের পরিবেশ সম্পূর্ণরূপে আলাদা।

দুই ধরনের বিপরীতমুখী পরিবেশের মধ্যে ক্রমাগত সংঘর্ষের ফলে যে পারিবারিক অশান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি হচ্ছে তা মানুষের মনকে আরো অবসাদের দিকে ঠেলে দিয়েছে। পারিবারিক অশান্তি এবং অবসাদ শিথিল করেছে সম্পর্কের বন্ধনকেও। তবে সমাজতত্ত্ববিদ এবং মনস্তত্ত্ববিদদের মতে যে মাত্রায় পারিবারিক হিংসা এবং অশান্তির কথা লকডাউনের প্রারম্ভে কল্পনা করা হয়েছিল, বাস্তবে ততখানি মাত্রায় সমস্যা দেখা যায়নি।

অবসাদ দূরীকরণের উপায়:

এই ধরনের মানসিক অবসাদ দূরীকরণে ব্যক্তিগত স্তরে বেশ কয়েকটি উপায় অবলম্বনের প্রয়োজন আছে। প্রথমত work-from-home সংস্কৃতির মধ্যেও ঘরে বসে নিজের ব্যক্তিগত সময় এবং কাজের সময়কে সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলতে হবে। ব্যক্তিগত সময়ে শুধুমাত্র পরিবারের সঙ্গে এবং পারিবারিক বিনোদনে মনোযোগী হতে হবে। পারিবারিক মতানৈক্য হতেই পারে, তবে বিতর্কের সময় নিজের উত্তেজনা প্রশমন করতে শিখতে হবে। সর্বোপরি নিজেকে তথা নিজের পরিবারকে ভালোবেসে সম্পর্কের দৃঢ়তার প্রতি যত্নবান হতে হবে।

উপসংহার:

যে মহামারীর অন্ধকার আমাদের পৃথিবীর বুকে চেপে বসেছিল, তার আবহ ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপি প্রায় সমস্ত দেশেই লকডাউন উঠে গিয়ে মানুষ আবার পুরানো জীবনে নতুন করে ফিরে আসছে। এই লকডাউনের সাথে সাথে মানুষের মনের অন্ধকার অবসাদও সম্পূর্ণ কেটে যাবে, এই আশা নিয়েই সভ্যতা পা রাখুক ভবিষ্যতের পৃথিবীতে।


এখানে সকল প্রকাশ শিক্ষা বিষয় তথ্য ও সাজেশন পেতে আমাদের সাথে থাকুন ।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

Leave a Comment