মৃত মা বাবার জন্য সন্তানের করণীয়,মা বাবার জন্য সন্তানের দোয়া,মৃত মা বাবার জন্য সন্তানের দোয়া

আজকের বিষয়: মৃত মা বাবার জন্য সন্তানের করণীয়,মা বাবার জন্য সন্তানের দোয়া,মৃত মা বাবার জন্য সন্তানের দোয়া

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, সন্তানের নেক আমল পিতামাতার দোজগের আগুন নিভিয়ে দিতে পারে। কোন সন্তানই কখনও এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারে না। এ পৃথিবীতে সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে পিতামাতা। যার বাবা মা বেঁচে নেই সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অসহায়। পিতা-মাতার অভাব কখনো সম্পদের সাথে থাকে না। বাবা-মায়ের অভাবের সাথে কোন কিছুর তুলনা হয় না। তাই মা-বাবা বেঁচে থাকুক বা না থাকুক সব সময় আল্লাহর কাছে মা বাবার জন্য সন্তানের দোয়া করার কোনো বিকল্প নেই। আবার মৃত পিতা-মাতার জন্য কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত অনেক কাজ রয়েছে। মৃত বা জীবিত মা বাবার জন্য সন্তানের দোয়া ও করণীয় কিছু বিষয় নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা। তো চলুন শুরু করা যাক-


আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ  


আল্লাহ কুরআনুল কারীমে পিতামাতার জন্য তিনটি বিশেষ দোয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। তারা বেঁচে থাকুক বা না থাকুক, কোরআনে উল্লেখিত দোয়া তাদের জন্য সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। এ সকল ইবাদতে নিজের জন্য কল্যাণ লাভের ঘোষণা রয়েছে। তাহল-
১. رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
উচ্চারণ: ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সগিরা। ‘
অর্থ: (হে আমাদের) প্রভু! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া করুন; ছোটবেলায় তারা আমাকে যেভাবে লালন পালন করেছেন। (সূরা বনী ইসরাঈল: আয়াত ২৪)

2. رَبَّنَا ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ ٱلْحِسَابُ
উচ্চারণঃ ‘রাব্বানাগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’
অর্থ: ‘হে আমাদের রব! যেদিন হিসাব কায়েম হবে সেদিন তুমি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দেবে। (সূরা ইব্রাহিম: আয়াত ৪১)

3. رَّبِّ ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِىَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَٰتِ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا تَبَارًۢا
উচ্চারণ: ‘রাব্বিগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিমান দাখালা বাইতিয়া মুমিনাও ওয়া লিলমুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত ওয়া লা তাজিদিজ জাওয়ালিমিনা ইল্লা তাবারা। ‘
অর্থ: ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং যারা মুমিন হয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের ক্ষমা কর এবং জালেমদের ধ্বংস ছাড়া তাদের বৃদ্ধি করো না। (সূরা নূহ: আয়াত ২৮)

পিতামাতার জন্য করণীয়

পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর শব্দ হল ‘বাবা মা’। দুটি শব্দের মধ্যে কোন পরিমাপ বা তুলনা নেই। কারণ প্রতিটি পিতামাতা তাদের সন্তানকে যে প্রকৃত ভাল এবং কঠোর পরিশ্রম দেয় তা পরিমাপ করার কোন উপায় নেই। তাই বাবা-মায়ের জন্য তাদের সন্তানদের অনেক কিছু করার আছে। আর তাহল-

১. পিতামাতার জন্য দান-সাদকাহ করা

মা-বাবা কোনো কারণে বা সন্তানের দেখাশোনা করতে গিয়ে দান সাদকা করে যেতে পারেন নি। সে জন্য মা-বাবার জন্য সন্তানদেরকে বেশি বেশি দান সাদকা করতে হবে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! হঠাৎ করে আমার মা মারা গেছেন এবং কোনো ওয়াসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয়- তিনি যদি কথা বলতে পারতেন তাহলে ওয়াসিত করে যেতেন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে সাদকাহ করি তাহলে কি তিনি এর সাওয়াব পাবেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’।’ (মুসলিম)

তাই পিতা-মাতার জন্য সদকায়ে ব্যয় করা উত্তম। এগুলো হতে পারে: পানির কূপ খনন (নলকূপ স্থাপন), ধর্মীয় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, কুরআন শিক্ষার জন্য মক্তব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, স্থায়ী জনকল্যাণমূলক কাজ করা ইত্যাদি।

২. পিতামাতার জন্য রোজা রাখা

বাবা-মা বেঁচে নেই। যদি তাদের কোনো মান্নত বা রোজা থাকে তাহলে তাদের পক্ষ থেকে এ রোজা রাখার নির্দেশ হাদীসে রয়েছে। এতে তাদের মানত ও রোজা পূরণ হবে। শিশুরাও তাদের উদ্দিষ্ট উদ্দেশ্যে যেকোনো দিন রোজা করতে পারে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রোজার কাজা (যিম্মায়) রেখে যদি কোনো ব্যক্তি মারা যায় তবে তার অভিভাবক (রেখে যাওয়া সন্তান বা আপনজন) তার পক্ষ থেকে সওম বা রোজা আদায় করবে।’ (বুখারি)

তবে অনেক ইসলামিক স্কলার পিতা-মাতার জন্য তাদের সন্তানদের জন্য শুধুমাত্র ফরজ ও ওয়াজিব রোজা পালন করা নির্দেশ দিয়েছেন। নফল রোজা রাখার কোনো প্রমাণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন।

৩. পিতামাতার জন্য হজ্ব ও ওমরাহ পালন করা

পিতামাতার পক্ষ থেকে হজ্ব ও ওমরাহ করা। পিতা-মাতার উদ্দেশ্যে হজ্ব ও ওমরাহ করলে তা আদায় হবে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন যে, জুহাইনা গোত্রের এক মহিলা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, আমার মা হজ্ব করার মানত করেছিলেন; তবে হজ্ব পালনের আগেই তিনি মারা যান। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্ব করতে পারব?

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা তার পক্ষ থেকে হজ্ব কর। আপনি কি মনে করেন যে আপনার মায়ের কাছে আপনার ঋণ থাকলে আপনি কি তা শোধ করবেন না?
সুতরাং তোমরা আল্লাহর হক (হজ্জের মান্নত) পূর্ণ কর। কেননা আল্লাহর হক সবচেয়ে বেশি অর্জনযোগ্য। (বুখারী)

তবে বাবা-মার পক্ষ থেকে হজ্ব আদায় করার আগে নিজের হজ্ব বা ওমরাহ আদায় করতে হবে। নিজের হজ্ব-ওমরাহ আদায়ের পর বাবা-মার পক্ষ থেকে হজ্ব ও ওমরাহ আদায় করবে।

৪. পিতামাতার জন্য কোরবানী

মৃত পিতা-মাতার সওয়াবের জন্য সন্তানরা পিতা-মাতার পক্ষ থেকে কুরবানী করতে পারবে। তারা পুরস্কারের অধিকারী হবেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানি করার জন্য দুই শিং বিশিষ্ট দুম্বা আনতে আদেশ দেন। যেটি কালোর মধ্যে চলাফেরা করতো (সেটির পায়ের গোড়া কালো ছিল)। কালোর মধ্যে শুইতো (পেটের নিম্নাংশ কালো ছিল)। আর কালোর মধ্য দিয়ে দেখতো (চোখের চারদিকে কালো ছিল)। সেটি আনা হলে তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, ‘ছুরিটি নিয়ে এসো। তারপর বললেন, ওটা পাথরে ধার দাও। আমি (হজরত আয়েশা) ধার দিলাম। পরে তিনি সেটি নিলেন এবং দুম্বাটি ধরে শোয়ালেন। অতঃপর সেটা জবেহ করলেন এবং বললেন-
بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ
অর্থ : আল্লাহর নামে (জবাই করছি)। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ, মুহাম্মাদ পরিবার ও তার উম্মাতের পক্ষ থেকে এটা কবুল করে নাও। এরপর এটা কুরবানি করেন।’ (মুসলিম)

৫. পিতামাতার ওসিয়ত পূর্ণ করা

ইসলামি বিধান অনুযায়ী পিতা-মাতা অসিয়ত করলে তা পূরণ করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
হজরত শরীদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, তাঁর মা তাঁর (মায়ের) পক্ষ থেকে তাঁকে একজন স্বাধীন মুমিন দাসীর ওসিয়ত করেছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা (মৃত্যুর সময়) তাকে একজন স্বাধীন মুমিন দাসী অসিয়ত করেছিলেন। এখন আবিসিনিয়ার ‘নুবিয়া’ অঞ্চলে আমার একজন দাসী আছে। অতঃপর পূর্ববর্তী হাদীসে অনুরূপ বর্ণনা করা হয়েছে, তারপর-
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। রাবি বললেন, তাহলে আমি তাকে নিয়ে আসব। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আল্লাহ কোথায়? তিনি বলেন, আকাশে। তারপর জিজ্ঞেস করলেন- আমি কে? তিনি বললেন, আপনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে মুক্ত করে দাও। তিনি একজন মুমিন। (আবু দাউদ)

৬. পিতামাতার বন্ধু-বান্ধুবীদের সম্মান করা

পিতামাতার বন্ধু-বান্ধুবীদের সাথে ভাল ব্যবহার করা, তাদের সম্মান করা এবং তাদের সাথে দেখা করা এবং তাদের জন্য উপহার নেওয়া। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, মক্কার এক রাস্তায় আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে এক বেদুঈনের দেখা হলো। আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে সালাম দিলেন এবং তিনি যে গাধার পিঠে আরোহণ করতেন, সে গাধটি তাকে আরোহণের জন্য দিয়ে দিলেন। তিনি তার মাথার পাগড়ীটিও তাকে দান করলেন।
তখন (উপস্থিত) আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাকে বললেন যে, আমরা তাকে বললাম-
‘আল্লাহ আপনার কল্যাণ করুন। বেদুঈনরা তো অল্পেই সন্তুষ্ট হয়ে যায়। (এতো দেওয়ার প্রয়োজন কী ছিল?)
তখন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এ ব্যক্তির (বেদুইনের) বাবা ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর বন্ধু ছিলেন।
আর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘কোনো ব্যক্তির সর্বোত্তম নেকির কাজ হচ্ছে তার বাবার বন্ধুর সঙ্গে সহমর্মিতার সম্পর্ক বজায় রাখা।’(মুসলিম)

৭. পিতামাতার আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রাখা

পিতা-মাতার আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখাই সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصِلَ أَبَاهُ فِي قَبْرِهِ،فَلْيَصِلْ إِخْوَانَ أَبِيهِ بَعْدَهُ
‘যে ব্যক্তি কবরে তার পিতার সাথে সুসম্পর্ক রাখতে পছন্দ করে, সে যেন তার পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সুসম্পর্ক রাখে।’ (ইবনে হিব্বান)

৮. পিতামাতার ঋণ শোধ করা

পৃথিবীতে বসবাসরত অবস্থায় পিতা-মাতা মারা গেলে সন্তানের জন্য ঋণ পরিশোধ করা আবশ্যক। কেননা মহানবী (সা.) ঋণ পরিশোধের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: মুমিনের আত্মা ঋণের কারণে স্থবির অবস্থায় থাকে, যতক্ষণ না তা পরিশোধ করা হয়। (ইবনে মাজাহ)

এমনকি ঋণ পরিশোধ না করার কারণে জান্নাতে যাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়; আল্লাহর পথে শহীদ হলেও। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
‘বান্দার ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (নাসাঈ, তাবারানী, মুস্তাদরকে হাকিম)

৯. পিতামাতার কাফফারা আদায় করা

শপথ, অন্যায় হত্যাসহ যে কোনো কারণে পিতা-মাতার প্রায়শ্চিত্ত পরিশোধ করা সন্তানের একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে (ইশার নামাজ) গভীর রাতে জেগে থাকতেন। এরপর তিনি তার পরিবারের কাছে গিয়ে দেখেন শিশুরা ঘুমিয়ে আছে। তার স্ত্রী খাবার নিয়ে এলে তিনি শপথ করেন যে তিনি সন্তানদের কারণে খাবেন না। পরে তিনি মত পরিবর্তন করে খেয়ে নেন। অতঃপর সে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে ঘটনাটি বলল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন কিছুর শপথ করে, তারপর তার বিপরীতটিকে তার চেয়ে উত্তম মনে করে, সে যেন তা করে এবং তার শপথের প্রায়শ্চিত্ত করে অর্থাৎ কাফফারা আদায় করে।” (মুসলিম)

কাফ্ফারার এই বিধান জীবিত ও মৃত সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।মৃত পিতা-মাতার এ ধরনের কোনো কাফফারা থাকলে তা সন্তানদের আদায় করা আবশ্যক হয়ে পড়ে।

১০. পিতামাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা

পিতামাতার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানরা যখন তাদের পিতামাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন আল্লাহ তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, মৃত্যুর পর কোনো বান্দাহর মর্যাদা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তখন সে বলে- হে আমার রব! আমি তো এতো মর্যাদার আমল করিনি, কীভাবে এ আমল এলো? তখন বলা হবে- তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছ।’ (আদাবুল মুফরাদ)

১১. পিতা-মাতার কবর জিয়ারত করা

পিতা-মাতার কবর জিয়ারত করা সন্তানের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। এতে সন্তান এবং পিতামাতা উভয়েরই উপকার হয়। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
হজরত সুলাইমান ইবনে বুরাইদা রহমতুল্লাহি আলাইহি তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণনা করেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। মুহাম্মদ (সাঃ) কে তার মায়ের কবর জিয়ারত করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তাই কবর জিয়ারত করুন। কারণ এটা আমাকে পরকালের কথা মনে করিয়ে দেয়। (তিরমিযী)

তবে কবর জিয়ারতের জন্য কোনো দিন নির্দিষ্ট না করাই ভালো। কবর জিয়ারত করার সময় এই দোয়াটি পাঠ করা-
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ لَلَاحِقُونَ أَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمْ الْعَافِيَةَ
উচ্চারণ: ‘আস-সালামু আলাইকুম আহলাদ্দিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়াল মুসালিমনিয়া ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু লা লাহিকুনা আসসালিল্লাহু লানা ওয়া লাকুমুল আফিয়াতি।’
অর্থ: ‘হে কবরের মুমিন মুসলমানগন! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ, আমরাও আপনাদের সাথে যোগদান করব। আমি আল্লাহর কাছে আমাদের এবং আপনাদের জন্য নিরাপত্তা চাই। ‘(মুসলিম)

১২. কোনো গোনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা

যদি কোন পিতামাতা বেঁচে থাকা অবস্থায় কোন পাপ কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সঠিক পথে ডাকে, সে সেই পথ অনুসরণকারীর সমান সওয়াব পাবে। তাদের প্রত্যাবর্তনে সামান্য ঘাটতি থাকবে না। আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্টতার দিকে ডাকে, সে পথের অনুসারীদের মতই গুনাহের সম্মুখীন হবে। এটা তাদের পাপ হালকা করবে না। ‘(মুসলিম)

আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে জীবিত ও মৃত মা বাবার জন্য সন্তানের দোয়া ও পিতা-মাতার জন্য আরও বেশি কিছু করার তৈফিক দান করুন। পিতা-মাতার মৃত্যুর পর হাদীসে বর্ণিত দায়িত্ব ও মা বাবার জন্য সন্তানের দোয়া ও করনীয় বিষয় সমূহ যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

Leave a Comment