মূল্য নির্ধারণে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানসমূহ আলোচনা কর,মূল্য নির্ধারণ নীতি ও কৌশল,পণ্যের মূল্য নির্ধারণ কৌশল

প্রশ্ন সমাধান: মূল্য নির্ধারণে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানসমূহ আলোচনা কর,মূল্য নির্ধারণ নীতি ও কৌশল,পণ্যের মূল্য নির্ধারণ কৌশল

পণ্য বা সেবার মূল্য নির্ধারণের উপর প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ উন্নতি নির্ভরশীল। কিন্তু যথাযথ মূল্য নির্ধারণ করা খুবই জটিল কাজ, কেননা মূল্য নির্ধারণের কতগুলো উপাদান জড়িত রয়েছে যা পণ্যের মূল্য ধার্যের ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।

প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান : মূল্য নির্ধারণ সিদ্ধান্তে প্রভাববিস্তারকারী উপাদানগুলো দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
বাহ্যিক উপাদান

অভ্যন্তরীণ উপাদান : ব্যবসায়ী এবং অব্যবসায়ী সকল প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা মূল্য নির্ধারণে কতগুলো অভ্যন্তরীণ উপাদান রয়েছে যা পণ্যের মূল্য নির্ধারণে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে । নিম্নে উপাদানসমূহ আলোচনা করা হল ।

(ক) বাজারজাতকরণ উদ্দেশ্য মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে চিহ্নিত করতে হবে প্রতিষ্ঠানের বাজারজাতকরণ উদ্দেশ্য কি। কেননা বাজারজাতকরণ উদ্দেশ্যাবলি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকলে মূল্য নির্ধারণ সহজ হয়। আর তাই বাজারজাতকরণ উদ্দেশ্যের সাথে মিল রেখেই মূল্য নির্ধারণের কৌশল গ্রহণ করতে হয়। উদ্দেশ্যের ভিন্নতার সাথে সাথে মূল্য নির্ধারণের কৌশলও ভিন্নতর হয়ে থাকে । প্রতিষ্ঠানে যে সকল উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে পণ্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়, সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো :


আরো ও সাজেশন:-

১. বাজারে টিকে থাকা : বর্তমান যুগ প্রতিযোগিতা ও পরিবর্তনশীল যুগ। আর তাই বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা এবং ভোক্তার রুচির পরিবর্তনশীলতার কারণে অনেক কোম্পানি উদ্দেশ্য হিসেবে মুনাফার্জনের চেয়ে টিকে থাকাকে প্রাধান্য দেয়। এ জন্য কোম্পানি যখন শুধুমাত্র পণ্যের Cost উঠানো সম্ভব এরূপ মূল্য ধার্য করে ।
২. চলতি মুনাফা সর্বোচ্চকরণ : কোম্পানির উদ্দেশ্য হতে পারে চলতি মুনাফা সর্বোচ্চকরণ। বিভিন্ন মূল্য স্তরে পণ্যের চাহিদা ও ব্যয় বিবেচনা করে যে মূল্যের মাধ্যমে মুনাফা সর্বোচ্চ করা যাবে, সেই মূল্যই নির্ধারণ করা হয়।

৩. বাজার অংশ সর্বোচ্চকরণ : অনেক কোম্পানির বাজার অংশে আধিপত্য করতে চায়। তারা মনে করে যে, কোম্পানি বাজারের বৃহত্তম অংশ দখল করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদে সর্বোচ্চ মুনাফার্জন সম্ভব হবে। বাজার অংশের নেতা হওয়ার জন্য তারা যতদূর সম্ভব কম মূল্য ধার্য করে ।

৪. বিক্রির পরিমাণ বাড়ানো : কোন কোন কোম্পানি বিক্রির পরিমাণ বাড়ানোর উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে । পণ্যের মূল্য একটু কম হলেই অনেক ক্রেতা আকৃষ্ট হয় এবং বিক্রির পরিমাণ বাড়ে ।

৫. পণ্যমানে নেতৃত্ব দান : একটি কোম্পানি তার পণ্য বাজারে সর্বোচ্চ মানের হবে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। পণ্যের উচ্চমান এবং গবেষণা ও উন্নয়ন খরচ অত্যধিক হওয়ার কারণে এক্ষেত্রে কোম্পানিকেই উচ্চমূল্য ধার্য করতে হয় ।

৬. বিনিয়োগ তুলে নেয়া : কোন কোন কোম্পানির উদ্দেশ্য থাকে এমন পর্যায়ে মূল্য ধার্য করা যার মাধ্যমে বাজার থেকে দ্রুত বিনিয়োগ তুলে নেয়া যায়। ফলে এখানে পণ্যের জন্যে উচ্চমূল্য ধার্য করা হয়।

৭. অন্যান্য উদ্দেশ্য : একটি কোম্পানির মূল্যকে অন্যান নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অর্জনের জন্যও ব্যবহার করতে পারে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

(খ) বাজারজাতকরণ মিশ্রণ কৌশল : একটি কোম্পানির বাজারজাতকরণ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যে বাজারজাতকরণ মিশ্রণ হাতিয়ার ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে মূল্য অন্যতম। ধারাবাহিক এবং ফলপ্রসূ বাজারজাতকরণ কর্মসূচি তৈরির জন্য মূল্য সিদ্ধান্তকে পণ্যের ডিজাইন, বন্টন এবং প্রদর সিদ্ধান্তের সাথে সমন্বিত করতে হয়। বাজারজাতকরণ মিশ্রণের অন্য চলকের জন্যে গৃহীত সিদ্ধান্ত মূল্যের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। অতএব মূল্য নির্ধারণের সময় বাজারজাতকারীতে পুরো বাজারজাতকরণ মিশ্রণের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে।

(গ) উৎপাদন খরচ নির্ধারণ : পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যয়কে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। কেননা কোম্পানিতে তার পণ্যের মূল্য এমনভাবে নির্ধারণ করতে হয়। যেন বিক্রয় ব্যয় উঠে আসে। পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোম্পানিকে স্থির ব্যয়, পরিবর্তনশীল ব্যয়, মোট উৎপাদনের বিভিন্ন স্তরে ব্যয়, উৎপাদন অভিজ্ঞতার চলক হিসেবে ব্যয় ইত্যাদি খরচের উপাদানগুলো বিবেচনা করতে হয়।

(ঘ) সাংগঠনিক বিবেচ্য বিষয়সমূহ : কোম্পানির অভ্যন্তরীন বিভিন্ন পক্ষ ও পণ্যের মূল্য নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। ছোটখাট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উচ্চ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে । বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিভাগীয় বা পণ্য লাইন ব্যবস্থাপকগণ পণ্যের মূল্য ধার্য করে। কখনো কখনো নিম্ন স্তরের ব্যবস্থাপকদের বা বিক্রয়কর্মীদের মূল্য নির্ধারণের জন্য ক্ষমতা দেয়া হয়। এ ছাড়াও উৎপাদক বা ব্যবস্থাপক, আর্থিক ব্যবস্থাপকগণ এবং হিসাবরক্ষকেরও মূল্য নির্ধারণে প্রভাব থাকে।

বাহ্যিক উপাদান : যে কোনো বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানে মূল্য নির্ধারণে তার অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলো যেমন প্রভাব বিস্তার করে তেমনি বাহ্যিক উপাদানগুলোও মূল্য নির্ধারণে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে । নিচে মূল্য নির্ধারণের বাহ্যিক উপাদানগুলোর প্রভাব আলোচনা করা হলো-

১. বাজার ও চাহিদা : খরচ মূল্যের নিম্নসীমাকে আর বাজার ও চাহিদা উচ্চ সীমাকে নির্দেশ করে। ভোগ্যপণ্য ও শিল্পপণ্য উভয় পণ্যের ক্রেতাই পণ্য বা সেবা থেকে প্রাপ্ত সুবিধার আলোকে মূল্যকে বিবেচনা করে। ফলে মূল্য নির্ধারণের পূর্বে বাজারজাতকারীকে পণ্যের মূল্য এবং চাহিদা সম্পর্কে বুঝতে হবে ।

২. বিভিন্ন ধরনের বাজারমূল্য নির্ধারণ : বিভিন্ন ধরনের বাজারের কারণে বিক্রেতার পণ্য মূল্যের তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। পণ্যের মূল্য নির্ধারণে বিভিন্ন ধরনের বাজার যে প্রভাব বিস্ত ার করে থাকে নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো :

(i) পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার : এ বাজারে বহু সংখ্যক ক্রেতা ও বিক্রেতা থাকে এবং একই মানের পণ্য বিক্রয় করা হয়। এ ক্ষেত্রে কোম্পানির পৃথক কৌশল অবলম্বনের সুযোগ থাকে না বিধায় অন্যান্য প্রতিযোগীর ন্যায্য মূল্য নির্ধারণের কৌশল অবলম্বন করতে হয়।

(ii) একচেটিয়ামূলক বাজার : যে বাজারে একজন মাত্র বিক্রেতা এবং বহু সংখ্যক ক্রেতা থাকে তাকে একচেটিয়ামূলক বাজার বলে। এ ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্যের উপর কোম্পানির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। ফলে কোম্পানি সুবিধাজনকভাবে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করতে পারে ।

(iii) অলিগোপলি বাজার : যে বাজারে গুটিকয়েক বিক্রেতা থাকে এবং প্রত্যেকেই পৃথক মূল্য নাতি অনুসরণ করে, তাকে অলিগোপলি বাজার বলে। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগীদের প্রতিক্রিয়া এবং ক্রেতাদের আচরণ বিবেচনা করে সতর্কতার সাথে বিক্রেতাকে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করতে হয়।


Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Storiesউত্তর লিংক
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেলউত্তর লিংক

৩. মূল্য ও দাম সম্পর্কে ভোক্তার প্রত্যক্ষণ : মূল্য নির্ধারণে ভোক্তার পণ্য সম্পর্কে প্রত্যক্ষণের বিষয়টি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এ ক্ষেত্রে পণ্যটি সম্পর্কে ভোক্তার মনোভাব কেমন, পণ্যটির জন্য কত দাম দিতে প্রস্তুত এবং পণ্য ক্রয়ের সামর্থ্য রয়েছে কি না তা যাচাই করে দেখা যায়। তাই পণ্যের মূল্য নির্ধারণে ভোক্তার প্রত্যক্ষণের বিষয়টি বিবেচনা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ।

৪. মূল্য ও চাহিদার সম্পর্ক বিশ্লেষণ : পণ্যের মূল্যের সাথে চাহিদার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। মূল্যের পরিবর্তনে তাই চাহিদারও পরিবর্তন ঘটে। সাধারণত মূল্য কমে গেলে পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় এবং মূল্য বেড়ে গেলে চাহিদা কমে যায়। পরিবর্তনে চাহিদার পরিবর্তনের এ ক্রিয়াগত সম্পর্ককে চাহিদা বিধির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। চাহিদা বিধির জ্যামিতিক প্রকাশ হলো চাহিদা রেখা। চাহিদা রেখা একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন দামে ক্রেতারা কি পরিমাণ পণ্য কিনে তা প্রকাশ করা ৷
মূল্যের

৫. চাহিদার মূল্য স্থিতিস্থাপকতা : এটি পণ্যের মূল্য নির্ধারণে প্রভাব ফেলে থাকে। চাহিদার মূল্য স্থিতিস্থাপকতা হচ্ছে, মূল্যের পরিবর্তনের সাথে চাহিদার পরিবর্তনশীলতার হার। যে সকল পণ্যের চাহিদা মূল্য পরিবর্তনের সাথে সাথে দ্রুত পরিবর্তন হয়, সে সকল পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিক্রেতাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ।

৬. প্রতিযোগীদের মূল্য এবং অর্পণ : পণ্যের মূল্য সিদ্ধান্তের উপর প্রভাববিস্তারকারী অন্যতম নিয়ন্ত্রণযোগ্য উপাদান হলো প্রতিযোগী কোম্পানির পণ্যের মূল্য ও প্রদেয় অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। যেমন : ক্রেতা যখন একটি পণ্য কিনবে তখন সে অন্যান্য কোম্পানির একই ধরনের পণ্যের সাথে সমন্বয় করবে। যদি অন্য পণ্যগুলোর চেয়ে বেশি সুবিধা পায় তাহলে প্রথমত পছন্দের পণ্যটি ক্রয় করবে। তাছাড়া বাজারে কি পরিমাণ প্রতিযোগিতা রয়েছে তার উপরও পণ্যের মূল্য নির্ভর করে।

৭. অন্যান্য বাহ্যিক উপাদান : মূল্য নির্ধারণের সময় কোম্পানিকে বাহ্যিক পরিবেশের অন্যান্য আরও কিছু উপাদানের প্রভাব বিবেচনা করতে হবে। অর্থনৈতিক উপাদান যেমন : দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, মন্দাবস্থা, সুদের হার ইত্যাদি মূল্য সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। কারণ এ সকল উপাদান একদিকে উৎপাদন খরচকে প্রভাবিত করে অন্যদিকে পণ্যের মূল্য সম্পর্কে ভোক্তার প্রত্যক্ষণকে প্রভাবিত করে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, একটি প্রতিষ্ঠানের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে সকল উপাদান প্রভাব বিস্তার করে তার মধ্যে বাহ্যিক উপাদানগুলো অন্যতম। তাই বাজারজাতকারীকে পণ্য মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে উপরিউক্ত বাহ্যিক উপাদানগুলো বিবেচনায় এনে পণ্য মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment