মুরগীর কলিজা কি সত্যিই বিষাক্ত? একটু পড়ার অনুরোধ রইল

মুরগীর কলিজা কি সত্যিই বিষাক্ত? একটু পড়ার অনুরোধ রইল।

আমিপুষ্টিবিদমোঃইকবালহোসেন

কিছুদিন ধরে পুরোনো একটা বিষয় আবার নতুন করে সামনে আসছে দেখছি, আর সেটা হচ্ছে মুরগীর কলিজা।
কলিজা অনেকেরই খুবই পছন্দের খাবার। ব্যাক্তিগতভাবে আমিও খুব পছন্দ করি। তবে এখন আমার ছেলে ভাগিদার হিসাবে আছে, তাই নিজের ভাগটা ছেড়ে দিতে হয়😍😍। খাসি, গরু মুরগীর কলিজা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। তবে মুরগির কলিজা নিয়ে রয়েছে ভিন্ন মত।

অনেকেই মনে করেন মুরগির কলিজা খাওয়া ক্ষতিকর। অনেকে এটাকে বিষের সাথেও তুলনা করেন। তবে ধারণাটি এখন আর সঠিক নয়।
বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই একটা বিষয় সবাই জেনে আসছেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক পরীক্ষা করে(গবেষনা নয় কিন্তু, পরীক্ষা আর গবেষণা ভিন্ন জিনিস) দেখেছেন যে, ফার্মের মুরগীর কলিজা ভীষন ক্ষতিকর। অনেকে বাচ্চাদের জন্য সেটাকে বিষেরমত মনে করেন।

ঢাবির স্যার বলেছেন যে, কলিজায় মাত্রারিক্ত ক্রোমিয়াম থাকে সাথে অন্যান্য কিছু হেভি মেটালও থাকে। তবে স্যারের পরীক্ষার কোন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ছিল না। উনি জাস্ট নিজের কৌতুহল মেটানোর জন্যই এগুলো পরীক্ষা করেছিলেন। আর উনি মুরগীকে সরাসরি ট্যানারী বর্জ্য খাওয়ায়ে ছিলেন। উনার পরীক্ষার ঐ মুরগীগুলো ১৫ দিন পরেই মারা গিয়েছিল। উনার কৌতুহলের একটা বিশেষ কারন ছিল, আর সেটা হচ্ছে পোল্ট্রি ফিড। কিন্তু সেই পোল্ট্রি ফিডের ব্যাবহার উনি করেন নি।

একটা সময় ছিল, যখন হয়ত বাংলাদেশের বেশকিছু অসাধু ব্যাবসায়ী পোল্ট্রি ফিডের কাচামাল হিসাবে ট্যানারী বর্জ্যের ব্যাবহার করত। যেটা স্বাস্থের জন্য বেশ ঝুকিপুর্ন ছিল। কিন্তু বিষয়টি প্রসাশনের নজরে আসার পর থেকে এই প্রক্রিয়া টা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন পোল্ট্রি শিল্পে কোন প্রকারের ট্যানারী বর্জ্যের ব্যাবহার হয় না। এখন প্রতিযোগিতার যুগ, পন্যের মান খারাপ করে কেউ নিজের ব্যাবসার লালবাতি জ্বালাতে চায় না।

এবারআসিস্যারেরপরীক্ষারমান_সম্পর্কেঃ

স্যার যেসব হেভিমেটালের পরিমান নির্ণয় করতে চেয়েছিলেন, সেগুলো নির্ণয় করতে উনি যেসকল যন্ত্র উপাদান ব্যাবহার করেছিলেন সেগুলো ঐসকল হেভিমেটালের সঠিক % নির্ণয়ের জন্য উপযোগী ছিল না।

কিছুদিনআগেদেশেঘটেযাওয়াদুইটাঘটনার_বলিঃ-

এক) গতবছর ঢাকার কিছু এলাকায়, ওয়াসা থেকে সাপ্লাইকৃত পানিতে প্রচুর ময়লা যাচ্ছিল সাথে দুর্গন্ধ। যেটা খাওয়ার উপযোগী ছিল না। সাধারন জনগন ওয়াসা ভবন ঘেরাও করল। ওয়াসার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল যে, পানির মান সঠিকভাবে নির্নয়ের যন্ত্রপাতি আমাদের নাই।

দুই) গতবছরের আর একটি ঘটনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবসহ দেশের বেশ কিছু ল্যাবে দেশের সমস্ত ডেইরী ফার্মের দুধের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। পরীক্ষার পর এবার রেজাল্টের পালা। রেজাল্ট শুনে তো সমস্ত ডেইরী ফার্মের মালিকগনের হার্টফেল হওয়ার অবস্থা। রিপোর্টে বলা হল দেশের প্রায় সকল খামারের দুধে মাত্রারিক্ত সীসাসহ অন্যান্য উপাদান পাওয়া গেছে, যা সকল শ্রেনীর মানুষের জন্য পানের অনুপোযোগী।

কিন্তু পরে দেশের বাইরে ঐ সকল দুধের স্যাম্পল পাঠানো হয়েছিল। এবার প্রতিটা বাইরের ল্যাব থেকে রিপোর্ট আসলো বাংলাদেশের সকল খামারীর দুধ নিরাপদ, আপনারা নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।

এই দুইটা ঘটনা দিয়ে আমি এটা বোঝাতে চাইলাম যে, আমাদের দেশে যেখানে পানি আর দুধের সঠিকভাবে মাননিয়ন্ত্রনের ব্যাবস্থা নেই, সেখানে এসব হেভি মেটালের উপস্থিতির বিষয়টা কতটা গ্রহনযোগ্য সেটা আপনারাই সিদ্ধান্ত নিবেন।

অনেকে আবার বাচ্চাকে ফার্মের মুরগীর ডিম খাওয়াতে চান না। কিন্তু কেন তার সঠিক কোন ব্যাখ্যা নাই। সমস্যা একটায় আর সেটা হচ্ছে ফার্মের ডিম তাই। আসলে আপনারা ফার্ম শব্দের মানেই বোঝেন না। একন তো প্রতিটা প্রডাক্ট ফার্মে উৎপন্ন হয়ে থাকে। এখন কৃষি ফার্ম, দুগ্ধ ফার্ম, হাসের ফার্ম, মুরগীর ফার্ম, কবুতরের ফার্ম, ছাগল গরু মহিষ ভেড়া সবকিছুই এখন ফার্মে তৈরী হয়।

তাহলে কি আপনি সবকিছুই বাদ দিচ্ছেন? তা নিশ্চয় না? আবার আপনি যখন বাজারে যাচ্ছেন বা শপিংমলে যাচ্ছেন বা কোন সুপারশপে যাচ্ছেন, তখন কিন্তু বেশিরভাগ পন্যই আপনি বিদেশিটা কিনছেন। শুধু মুরগীর বাজারে গিয়ে দেশি মুরগী কিনছেন। তাহলে কি আপনার দেশপ্রেম শুধু মুরগীতেই সীমাবদ্ধ?
বাজারে গিয়ে গরুর মাংস, খাসির মাংস, গরু খাসির কলিজা সব কিনছেন ফার্মের টা। শাকসব্জিও ফার্মের টা।

তারমানে কিন্তু আমি বলছি না যে, দেশি মুরগী আর ফার্মের মুরগীর মধ্যে গুনগত কোন পার্থক্য নেই, অবশ্যই কিছু পার্থক্য আছে। হয়ত কিছু মিনারেলস, প্রোটিন পার্সেন্টেজ, ফ্যাট পার্সেন্টেজ, পানির পার্সেন্টেজসহ কিছু উপাদান কমবেশি থাকতে পারে।

যেমন দেশি মুরগীর ডিমের কুসুমে ভিটামিন ডি এর পরিমান বেশি থাকে যেটা ফার্মের মুরগীর ডিমের কুসুমে অনেক কম থাকে। আবার হয়ত কিছু উপাদান ফার্মের ডিমে বেশি থাকে আর দেশি ডিমে কম থাকে।

আমার ছেলের বয়স দুই বছর। সে প্রতিদিন একটা করে ফার্মের ডিম কুসুমসহ খায়। মাঝেমাঝে আরো একটা সাদা অংশ খায়। গরু খাসি ফার্মের মুরগী সবকিছুর কলিজা সে খায়। তবে মুরগীর কলিজা একটু কম পছন্দ করে। আর তার খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে আর একদিন লিখব ইনশাআল্লাহ।

চলুনজেনেনিইকলিজাখাওয়ারউপকারিদিকগুলোঃ

মাংসের তুলনায় কলিজার পুষ্টিগুণ কোনো অংশে কম নয়। কলিজায় রয়েছে নানা রকম ভিটামিন, আয়রন, ক্যালশিয়াম ছাড়াও আরো অনেক উপকারী
মিনারেলস। কলিজায় থাকা ভিটামিন এ এবং বি আমাদের দৃষ্টিশক্তি ও মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক।

কলিজায় রয়েছে সেলেনিয়াম নামেরএকটি জরুরি উপাদান যা ক্লোন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে হেল্প করে সেলেনিয়াম শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ছোট-বড় সংক্রমণ, শরীরের গাঁটে গাঁটে ব্যথা, কৃমির সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে।

কলিজায় রয়েছে জিঙ্ক, যা জ্বর, টনসিলাইটিস, সর্দি-কাশি সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

এর কোলাজেন ওইলাস্টিন আমাদের শরীরের শিরা-উপশিরায় রক্ত প্রবাহ সহজ ও স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।

শরীরে রক্তের পরিমান কমে গেলে, নিয়মিত কলিজা খেলে রক্তের পরিমান বৃদ্ধি পায়।

তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হার্টের সমস্যা রয়েছে, তাদের মুরগির কলিজা না খাওয়াই ভালো।

পুষ্টিবিদ মোঃ ইকবাল হোসেন
সিনিয়র পুষ্টি কর্মকর্তা
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

কপি: ফেজবুক

2 thoughts on “মুরগীর কলিজা কি সত্যিই বিষাক্ত? একটু পড়ার অনুরোধ রইল”

Leave a Comment