ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করলে কি হয়?, ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট খারাপ দিক, ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট সুবিধা ও অসুবিধা

ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করলে কি হয়?, ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট খারাপ দিক, ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট সুবিধা ও অসুবিধা

ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করলে কি হয়?, ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট খারাপ দিক, ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট সুবিধা ও অসুবিধা

রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট- অর্থাৎ প্লাস্টিক সার্জারি করে নিজের স্তন যুগলকে বড় করা। যুগে যুগে পুরুষের কাছে পরম আকাঙ্ক্ষার বিষয় হচ্ছে নারীর স্তন। আর এই বড় স্তন পেতে নারীদেরও চেষ্টা অন্ত নেই। ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে এখন যে কেউ পেতে পারেন নিজের পছন্দসই আকারের স্তন। স্তনের মাঝে সিলিকনের প্যাড অপারেশনের সাথে ভরে এই স্তন বৃদ্ধির কাজটা করা হয়। যদিও আমাদের দেশে মুখে কেউ স্বীকার না করলেও আজকাল অনেক নারীই কিন্তু করিয়ে থাকেন ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট।

এছাড়া পাশের দেশ ভারত সহ অন্যান্য উন্নট দেশগুলতে আসলে এটা নিয়ে খুব বেশী রাখঢাক এখন নেই। খুবই সাধারণ অপারেশনের মাধ্যমে স্তনে সিলিকন ইমপ্ল্যান্ট ভরে স্তনকে আকারে বৃদ্ধি ও সুগঠিত করে দেয়াটাই হচ্ছে সোজা ভাষায় ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট। এর উদ্দেশ্য একটাই, সৌন্দর্য বৃদ্ধি। কিন্তু এই সৌন্দর্য বৃদ্ধির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো কী কী? স্তনে অপারেশনের পর কি বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে সমস্যা হয়? স্তনের আকার কি নষ্ট হয়ে যেতে পারে? ঝুঁকিগুলো কী কী?

বর্তমানে ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট এখনকার আলোচিত বিষয়। একজন চিত্রনায়িকা ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করে আসার পর এই বিষয়টি নিয়ে অনেকের কৌতুহল লক্ষ্য করা গেছে। তার দাবি, ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে তিনি ট্যাবু ভাঙ্গার চেষ্টা করেছেন। কারণ, স্তন শরীরেরই একটি অঙ্গ। অন্যান্য অঙ্গের ন্যায় এই অঙ্গের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার চেষ্টা দোষের কিছু নয়। যাই হোক, সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কেউ যদি ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করতে চায়, এটা তার ব্যাপার। তবে, যেহেতু এই বিষয়টিকে ট্যাবু ভাঙ্গা হিসেবে দেখানো হচ্ছে, তাই কেউ যদি ভাবেন ট্যাবু ভাঙ্গতে হলে ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করা যেতেই পারে, তাদের জন্য এই লেখা। মেডিক্যাল সাইন্স ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্টকে কিভাবে দেখে, এবং এটার কোন ক্ষতিকর দিক আছে কিনা সেটা জেনে নেয়া দরকার সবার জন্যেই। ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট নিয়ে হাসাহাসি করুন আর যা-ই করুন এই বিষয়টিকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। এটা অনেক ব্যয়বহুল অপারেশনই শুধু নয়, এই কাজ করলেই যে ফলাফল ঠিকঠাক থাকবে তারও গ্যারান্টি পাওয়া যায় না।

ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট অপারেশনে সময় লাগে ৬০ থেকে ৯০ মিনিট সচরাচর। সার্জারির পর নতুন অবস্থার সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্যে শরীরের জন্য কিছু সময়ের দরকার হয়। সার্জারির পর কিছু সময়ের জন্যে ব্যাথা অনুভব হবার সুযোগ আছে। কয়েক সপ্তাহ শরীরে অস্বস্তি অনুভব হয়। ব্রেস্ট ফুলে যেতে পারে, থেতলানো একটা ভাব হতে পারে৷ আঁটসাঁট একটা অনুভূতি হতে পারে। তবে এই সার্জারি ঝুঁকিপূর্ণও বটে। যদি অপারেশন ঠিকঠাক না হয়, সার্জন অভিজ্ঞ না হয় তাহলে এই অপারেশনে হিতে বিপরীতও হতে পারে।

ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্টে যেসব জটিলতা হতে পারে-

১। অপারেশনের ফলে ক্ষতদাগ দৃশ্যমাণ থাকে।
২। ব্রেস্ট টিস্যু শক্ত হয়ে যায়। টিস্যুর ক্ষত হওয়া জায়গা কুঁকড়ে থাকে।
৩। ইমপ্ল্যান্ট হওয়া স্থান লিক হয়ে ফেটে পিন্ড দলা হবার সম্ভাবনা থাকে।
৪। ইমপ্ল্যান্ট হওয়া জায়গায় ভাঁজ তৈরি হতে পারে৷
৫। ব্রেস্টের মধ্যে ইমপ্ল্যান্ট হওয়া জায়গা চক্রগতিতে ঘুরতে থাকে, ঢেউ ওঠে যা অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে।
৬। ইমপ্ল্যান্ট রিমুভ করতে গেলে ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা থাকে।
৭। সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হলো, ইমপ্ল্যান্টের ফলে আপনি ব্রেস্ট ফিড খাওয়াতে পারবেন না বাচ্চাকে, যদিও বা পারেন তাহলে সেই পরিমাণও খুব সামান্য!
৮। আরেকটি জটিলতা যা দেখা যেতে পারে, ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট এর মাধ্যমে আপনি যে ফলাফল আশা করবেন সেটা মনঃপুত নাও হতে পারে, ফলে আবার অপারেশন করতে হতে পারে।
৯। ব্রেস্ট নিপলের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আরো কিছু জটিলতা হতে পারে তবে এগুলো কম হয়। যেমন-

১। অপারেশনের সময় মাত্রাতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে।
২। এলার্জি হতে পারে।
৩। রক্তচাপ হতে পারে শরীরের অভ্যন্তরে।

এছাড়া, ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্টের সাথে লিমফোমা নামক স্তন ক্যান্সারের যোগসূত্র আছে বলে জানা যায়। এটা সচরাচর হয় না, তবে হবার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাছাড়া এই ক্যান্সারটি সাথে সাথে না হলেও ইমপ্ল্যান্টের কয়েকবছর পরেও হতে পারে৷

বিভিন্ন ধরণের ইমপ্ল্যান্ট আছে। যেমন- সিলিকন ইমপ্ল্যান্ট, স্যালাইন ইমপ্ল্যান্ট।

সিলিকন ইমপ্ল্যান্টে তুলনামূলক ব্রেস্ট কুঁচকানো, টিস্যু টানটান হয়ে যাওয়া, ক্ষতের দাগ থেকে যাওয়ার সমস্যা কম হয় স্যালাইন ইমপ্ল্যান্টের চেয়ে। এখানে দেখতে হবে সিলিকনটা কিসের, যদি নরম জেল টাইপ সিলিকন হয় তাহলে এটা গোটা ব্রেস্টে ছড়িয়ে যেতে পারে। সিলিকন ফেটে গেলে ইমপ্ল্যান্টই বাদ করে দিতে হয় পুরোপুরি। একটা ইমপ্ল্যান্ট দশ থেকে পনেরো বছর থাকে সাধারণত, এরপর এটাকে অন্তত একবার বদলিয়ে নিতে হয়৷ ফলে একবার ইমপ্ল্যান্ট করাটাই আসলে সব সমস্যার সমাধান না।

স্যালাইন ইমপ্ল্যান্ট যেটা এটাতে লবন পানির স্যালাইন দিয়ে ইমপ্ল্যান্ট করা হয়৷ এই ইমপ্ল্যান্টের ভাল দিক হলো, ফেটে গেলে এটা শরীর থেকে নিরাপদে বের করে ফেলা যায়। কারণ, এই ইমপ্ল্যান্ট লিক করলে এটা সহজেই বোঝা যায় এবং ছড়িয়ে পড়ার আগেই ব্যবস্থা নেয়া যায়। তবে যে ব্রেস্টে সমস্যা হয়, সেটা অন্য ব্রেস্টের তুলনায় ছোট হয়ে যায়।

যাহোক, যারা ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করবে তাদের জানা উচিত সার্জারির পরপরই কিছু সমস্যা দেখে আঁচ করা যায়, ব্রেস্টে সমস্যা হয়েছে কি না। যেমন- ব্রেস্টের চারপাশের স্কিন লালচে হয়ে যেতে পারে। হঠাৎ করে ব্রেস্ট ফুলে যেতে পারে৷ তীব্র ব্যাথা হতে পারে। যদি ইমপ্ল্যান্টের পর কেউ এই সমস্যাগুলোতে পড়েন, তাহলে দ্রুতই যেখান থেকে অপারেশন করানো হয়েছে সেখানে যোগাযোগ করতে হবে। কারণ, ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্টের অপারেশন অনেকসময়ই ভুল পথে ডাইভার্ট হয়ে যেতেই পারে।

ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্টের সাইড এফেক্ট যেকোনো সময়েই দেখা যেতে পারে। ২০ শতাংশ নারী সৌন্দর্য বৃদ্ধির আশায় ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করিয়েছেন তারা মাত্র ৮-১০ বছর পরই ইমপ্ল্যান্ট সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। আর একবার সরানোর পর নতুন করে রিপ্লেস না করলে ব্রেস্ট শেপ তো নষ্ট হবেই, তারউপর রিপ্লেস করলেও ফলাফল মনঃপুত না হবার সম্ভাবনা থাকে।

ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট সম্পর্কে বিয়ানকা নামক এক নারী Qoura প্ল্যাটফর্মে মন্তব্য করেছেন, “ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্টের একটাই দিক যে ব্রেস্ট বড় হবে এবং এতে করে আপনি পুরুষদের কাছ থেকে বেশি সেক্সচুয়াল এটেনশন পাবেন। আপনি যদি পর্নস্টার কিংবা স্ট্রিপার হন তাহলে এটা আপনার আয়কে বাড়িয়ে দিবে। আর বাকি সবই ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্টের ক্ষতিকর দিক। আপনার স্বাস্থ্যসমস্যায় ভুগতে হবে। যেহেতু এটা লাইফটাইম না, তাই দশবছরের মাথায় আবার ইমপ্ল্যান্ট সরাতে হবে, রিপ্লেস করতে হবে৷ আর এই সার্জারির সাথে ঝুঁকির ব্যাপারটি তো আছেই।”

জেসিকা নামক আরেক নারী যিনি ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করিয়েছেন তিনি এখন মনে করেন, যারা প্লাস্টিক সার্জারি করে তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুখী তারাই যারা সার্জারি করে ব্রেস্ট কমিয়ে ফেলে। ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করে অন্যের চোখে সুন্দর দেখানোর চেয়ে নিজের জীবনে এমন কিছু করা উচিত যেন কাজের জন্যই মানুষ এটেনশন দেয়। এই নারী ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করার পর সাময়িক এটেনশন পেলেও এটাতে যে অস্বস্তি এটাই বুঝেছেন তিলে তিলে।

বাংলাদেশী সেই নারী যিনি নাকি আবার চিত্রনায়িকাও, তিনি ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করার পর বেশ আলোচনায় আছেন কদিন ধরে৷ তিনি বিভিন্ন ইন্টারভিউতে এসে হাস্যকর কথা বলেও হাসির উপাদান হচ্ছেন, তারচেয়ে বেশি হাস্যকর তার ফেসবুক লাইভ। তিনি বলেন, ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করার পর সবাই এখন তার দিকে তাকিয়ে থাকে, মানুষ তাকে দেখতেই দেখতেই রাস্তায় উষ্টা খায়। এসব কথা তিনি এমনভাবে বলেন, যে তিনি উপভোগই করছেন, তাকে দেখে মানুষও আনন্দ পায়। তার বয়ফ্রেন্ডও নাকি ফেরত আসতে চায় আবার। খোঁজ খবর নেয়া বাড়িয়ে দিয়েছে আগের চেয়ে।

কথা হলো, তিনি যা করেছেন সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তার দাবি এটা সাহসের কাজ, ট্যাবু ভাঙ্গার মতো কাজ করেছেন তিনি। সমস্যা হলো, তিনি এটিকে নারীদের পিরিওড নিয়ে কথা বলার সাথে তুলনা করছেন। পিরিওড অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক ক্রিয়া, নারীদের জন্যে। এটি নিজে আজকাল অনেকেই সাহসী হয়ে কথা বলছে। এটা বেশ অদ্ভুতই। কারণ, ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করা প্রাকৃতিক কোনো চর্চা না, শরীরের স্বাভাবিকতাকে সার্জারি করে নতুন শেপ দেয়া৷ এখানে ট্যাবু ভাঙ্গার কিছু নেই। কারণ, নারীর সৌন্দর্য শুধু স্তনেই থাকে না।

তবুও, কারো সৌন্দর্যবোধের সংজ্ঞায় যদি মনে হয় তার ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করা দরকার সেটা তার ব্যাপার। তবে ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট যে চিরস্থায়ী সমাধান নয় সেটা জেনে নেয়াও জরুরী৷ ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করলেই যে সবাই আশানুরূপ ফল পায়, সেটারও নিশ্চয়তা নেই। তার উপর ঝুঁকি তো আছেই। তাই যারা ইমপ্ল্যান্ট করতে চান, তাদের এইদিকগুলোও মাথায় রাখা উচিত।

পরিশেষে : কখন ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করা যৌক্তিক,ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট নিয়ে যত কথা,ব্রেস্ট ক্যান্সার

আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট

স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ

Leave a Comment