ব্যয়যােগ্য মূল্য নির্ধারণ ও ভ্যালুভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির মধ্যে কোন পদ্ধতিটি বেশি উপযুক্ত বলে তুমি মনে কর

ব্যয়যােগ্য মূল্য নির্ধারণ ও ভ্যালুভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির মধ্যে কোন পদ্ধতিটি বেশি উপযুক্ত বলে তুমি মনে কর

ব্যয়ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি : এ দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে পণ্য উৎপাদন ও বিপণন করার জন্য যে ব্যয় করা হয়েছে তার ভিত্তিতে পণ্যের মূল্য স্থির করা হয়। এ দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনটা পদ্ধতি নিম্নে আলোচনা করা হলো :

(ক) খরচ যোগ করে মূল্য নির্ধারণ : এ পদ্ধতি অনুসারে মোট উৎপাদন ব্যয়ের সাথে
কাক্সিক্ষত মুনাফা যুক্ত করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি উৎপাদন করতে যদি দশ টাকা খরচ হয় এবং উৎপাদক যদি উৎপাদন ব্যয়ের উপর ১০% মুনাফা প্রত্যাশা করেন, তবে একটি সাবানের বিক্রয় মূল্য হবে এগারো টাকা (১০+১)। এ পদ্ধতি খুবই সরল এবং সহজে প্রয়োগ করা যায়।

এ পদ্ধতি ব্যবহার করার সময় বিভিন্ন প্রকার ব্যয় যথা, প্রান্তিক ব্যয় , গড় মোট ব্যয়, গড় পরিবর্তনশীল ব্যয়, গড় স্থায়ী ব্যয় ইত্যাদি বিবেচনা করা হয় না। অথচ উৎপাদনের হ্রাসবৃদ্ধির সাথে সাথে এসব ব্যয়ও প্রভাবিত হয়। এ পদ্ধতির সমর্থকরা মনে করেন যে, উৎপাদিত সামগ্রী সবই বিক্রয় হয়ে যাবে।

যদি উৎপাদনের পরিমাণ কম হয়, তবে সব ব্যয় কভার করে মুনাফা দেখানোর জন্য প্রত্যেকটা ইউনিট বেশি দামে বিক্রয় করতে হবে। কিন্তু ব্যবসায়ের মন্দার দরুন উৎপাদন হ্রাস পেলে ইউনিট মূল্য বাড়ানো উচিত হবে না। ফলে দেখা যাচ্ছে যে, এ পদ্ধতিতে বাজারে চাহিদার প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয় না। এ কারণে উৎপাদকদের জন্য এ পদ্ধতির উপযোগিতা বিশেষভাবে সীমিত।

(খ) সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ: মূল্য নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে আরেকটি উপায় সমচ্ছেদ
বিশ্লেষণ। সমচ্ছেদ বিশ্লেষণের প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো সমচ্ছেদ বিন্দু নিরূপন করা।

সমচ্ছেদ এমন একটি বিন্দু যেখানে কতিপয় পণ্যের বিক্রয়লব্ধ আয় মোট ব্যয়ের সমান হয় (একটি আনুমানিক বিক্রয়-মূল্যের ভিত্তিতে)। ফলে ভিন্ন ভিন্ন বিক্রয়-মূল্যের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সমচ্ছেদ বিন্দুর উদ্ভব হয়। সমচ্ছেদ বিন্দুর ওপরে পণ্য বিক্রয় হলে মুনাফা হয়; আর এর নিচে বিক্রয় হ্রাস পেলে লোকসানের শিকার হতে হয়।

111

চিত্র ঃ সমচ্ছেদ বিন্দু

এ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠান যখন পণ্যের চারটি একক বিক্রি করছে তখনই সমচ্ছেদ বিন্দুতে পৌঁছে গেছে। প্রতিষ্ঠান যত পরিমাণই উৎপাদন ও বিক্রি করুক না কেন, স্থায়ী ব্যয় ২০০ টাকাতেই স্থির থাকছে। একক প্রতি
পরিবর্তনশীল ব্যয় হলো ২৫ (১০০ টাকা  ৪)। প্রতিষ্ঠান যদি ৪ একক পণ্য বিক্রি করে তাহলে মোট ব্যয় হবে ৩০০ টাকা (৪ এককের পরিবর্তনশীল ব্যয় + স্থায়ী ব্যয়)। একক প্রতি বিক্রয় মূল্য ৭৫ টাকা হলে ৪ এককের বিক্রয়ালব্ধ আয় হবে ৩০০ টাকা। ফলে মোট ব্যয় ও মোট আয় সমান। একই মূল্যে ৪ এককের বেশি বিক্রি করলে প্রতিষ্ঠান মুনাফা অর্জন করতে পারবে।

মূল্য নির্ধারণের হাতিয়ার হিসেবে সমচ্ছেদ বিশ্লেষণের প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো, বিভিন্ন বাজার-চাহিদা বিবেচনায় এর ব্যর্থতা। পণ্যের মূল্য ভিন্ন ভিন্ন হলে পণ্যের চাহিদা বাজারে কিরূপ হবে তা বিবেচনা করা হয় না বলে সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ প্রকৃত মূল্য নিরূপণে সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারে না। এর মাধ্যমে শুধু বলা যায় যে, যদি (একমাত্র যদি) বিশেষ মূল্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য বিক্রি করা যায়, তবেই বিক্রেতা সমচ্ছেদ বিন্দুতে পৌঁছতে পারবে। সমচ্ছেদ চিত্র থেকে আমরা বলতে পারি না, বিক্রেতা বাস্তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য বিক্রয় করতে পারবে কি-না। বাজারে ধরাবাঁধা মূল্যে যে পরিমাণ পণ্য বিক্রি হবে তা সমচ্ছেদ বিন্দুর অনেক নিচেও হতে পারে। উদাহরণস্বরুপ, আগের উদাহরণে দেখা যাচ্ছে, একক প্রতি ৭৫ টাকা বিক্রয়-মূল্যে সমচ্ছেদ বিন্দু হলো ৪ একক। কিন্তু বাজারে যদি ২টি বা ৩টি একক বিক্রি হয় হাহলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ব্রেক ইভেন করা সম্ভব হবে না তাকে লোকসান দিতে হবে।

২. ব্যবসায়িক মর্যাদাভিত্তিক মূল্য পদ্ধতি : পণ্যের ক্রেতার ব্যবসায়িক মর্যাদার
ভিত্তিতে ভিত্তিমূল্যের তারতম্য ঘটতে পারে। একজন ক্রেতা পাইকারও হতে পারেন, আবার খুচরা বিক্রেতা বা শিল্পীয়
ও প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকও হতে পারেন। উৎপাদক পাইকার এবং খুচরা বিক্রেতা উভয়ের নিকট পণ্য বিক্রয় করার নীতি

অনুসরণ করলে তিনি খুচরা বিক্রেতার তুলনায় পাইকারের জন্য কম মূল্য নির্ধারণ করবেন। এভাবে মূল্য পার্থক্য সৃষ্টি
করে তিনি বন্টন প্রণালিতে পাইকারের স্বার্থ রক্ষা করেন।

ভ্যালুভিত্তিক মূল্য-নির্ধারণ :

এরূপ পদ্ধতিতে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয় গ্রাহক কর্তৃক
পণ্যের মূল্য-সম্পর্কিত ধারণার ভিত্তিতে, উৎপাদকের ব্যয়ের ভিত্তিতে নয়। গ্রাহকরা একটি পণ্যের উপযোগিতাকে কতটুকু মূল্যবান মনে করে, তার ওপর ভিত্তি করে উৎপাদক পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের বা ভোক্তাদের প্রয়োজন ও ভ্যালু-সম্পর্কিত ধারণা বিশ্লেষণ করার পর ভোক্তাদের ধারণাকৃত মূল্য হিসাব করা খুবই কঠিন
কাজ। তবে গবেষণার মাধ্যমে তাদের ধারণা সম্পর্কে অনুমান করা সম্ভব। তবে এরূপ পদ্ধতির ব্যাপারে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ উৎপাদক যদি ভোক্তাদের অনুমানের তুলনায় অধিক মূল্য ধার্য করে, তাহলে
বাজার হারাতে পারে।

আবার যদি মূল্য কম নির্ধারণ করা হয়, তাহলে মুনাফার পরিমাণ কমে যাবে। তাছাড়া,
সমচ্ছেদ বিশ্লেষণে আরও কতিপয় অনুিমতি গ্রহণ করা হয় যা ব্যবসা-জগতে অসম্ভব। এতে অনুমান করা হয় যে, ব্যয়সমূহ স্থির। তাই যে প্রতিষ্ঠানে গড় একক-ব্যয় ঘন ঘন উঠানামা করে সেখানে সমচ্ছেদ বিশ্লেষণের মূল্য তেমন থাকে না। অনুরূপভাবে, বাজারে চাহিদা হিসেব করার সময় সমচ্ছেদ বিশ্লেষণে চাহিদা পরিস্থিতিকে খুব সহজভাবে গ্রহণ করা হয় যা বাস্তবে জটিলও হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিযোগিতা ও অন্যান্য কারণে সমচ্ছেদ বিন্দুর পরিমাণ পণ্য প্রতিষ্ঠান বিক্রি করতে সক্ষম নাও হতে পারে।

H.S.C

4 thoughts on “ব্যয়যােগ্য মূল্য নির্ধারণ ও ভ্যালুভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির মধ্যে কোন পদ্ধতিটি বেশি উপযুক্ত বলে তুমি মনে কর”

Leave a Comment