বীমা: ঝুঁকি কী? ঝুঁকির প্রকারভেদ এবং ঝুঁকি পরিমাপের উদ্দেশ্য কী?,ঝুঁকির সংজ্ঞা কী?

বীমা: ঝুঁকি কী? ঝুঁকির প্রকারভেদ এবং ঝুঁকি পরিমাপের উদ্দেশ্য কী?,ঝুঁকির সংজ্ঞা কী?, ঝুঁকির প্রকারভেদ, অবিমাযোগ্য ঝুঁকি, বিমাযোগ্য ঝুঁকি, ক. আদর্শিক ঝুঁকি, উত্তম আদর্শিক ঝুঁকি

ব্যক্তি পর্যায়ে ও ব্যবসাক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের ক্ষতিই হোক না কেন, বিমার ক্ষেত্রে তা অর্থের অংকে পরিমাপ করা হয়। সে কারণে বিমার ক্ষেত্রে ঝুঁকি (Risk) বলতে আর্থিক ক্ষতি সংক্রান্ত অনিশ্চয়তাকে বোঝানো হয়েছে। মানুষের জীবনে সর্বত্রই ঝুঁকি জড়িত। ঝুঁকি পুরোপুরি নিরসন করা সম্ভব নয়। কিন্তু ঝুঁকিজনিত ক্ষতিকে চুক্তিবদ্ধ পক্ষসমূহের মধ্যে বণ্টন করা সম্ভব। আর এ কারণেই বিমা ব্যবসায় শুরু হয়েছে। বিমা (Insurance) ব্যবসায়ের মূল বিষয় হলো ঝুঁকি।

ঝুঁকির সংজ্ঞা কী? (What is the Definition of Risk?)

ভবিষৎ অনিশ্চয়তা থেকে ঝুঁকির উদ্ভব হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের জীবন চলার পথে প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিপদাপদ, অনিশ্চয়তা ও বিপর্যয় রয়েছে। এগুলো ঘটতেও পারে, আবার না-ও ঘটতে পারে। আর এ অনিশ্চয়তাজনিত ঝুঁকি নিরসনের জন্যই বিমার উদ্ভব হয়েছে। বিমা ব্যবসার মূল উৎস হলো :

  • অনিশ্চয়তাজনিত ঝুঁকি
  • কোন আর্থিক ক্ষতি সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা
  • পরিমাপযোগ্য ও নির্ধারণযোগ্য অনিশ্চয়তা। 

সংক্ষেপে বলা যায়, কোন আর্থিক ক্ষতি সংক্রান্ত অনিশ্চয়তাই হচ্ছে ঝুঁকি। 

ঝুঁকির প্রকারভেদ (Types of Risks)

ঝুঁকির মাত্রা অনুসারে ঝুঁকি ২ প্রকার। যথা: অবিমাযোগ্য ঝুঁকি ও বিমাযোগ্য ঝুঁকি। 

অবিমাযোগ্য ঝুঁকি (Un-Insurable Risk)

এ ধরনের ঝুঁকি মোটামোটি নিশ্চিত। বিমা কোম্পানি যে ঝুঁকি গ্রহণ করার জন্য রাজি হয় না, তাকে অবিমাযোগ্য ঝুঁকি বলে। যেমন, বৃদ্ধ মানুষের জীবনবিমা অবিমাযোগ্য। ভুমিকম্প বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যে ক্ষতি হয়, তা অবিমাযোগ্য ঝুঁকি।

বিমাযোগ্য ঝুঁকি (Un-Insurable Risk)

যে সকল ঝুঁকি নিরসনের জন্য বিমা করা যায়, তাকে বিমাযোগ্য ঝুঁকি বলে। বিমা কোম্পানিগুলো ঝুঁকি পরিমাপের জন্য একটি standard বা আদর্শ মান ব্যবহার করে। কোন ঝুঁকি যদি আদর্শ মান থেকে বেশি না হয়, তাকে বিমাযোগ্য ঝুঁকি বলে। এটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। 

বিমাযোগ্য ঝুঁকি তিন প্রকার। যথা: ক) আদর্শিক ঝুঁকি, খ) উত্তম-আদর্শিক ঝুঁকি ও গ) উপ-আদর্শিক ঝুঁকি।


আরো ও সাজেশন:-

ক. আদর্শিক ঝুঁকি (Standard Risk)

আদর্শিক ঝুঁকি মানুষের স্বাভাবিক (ঘড়ৎসধষ) জীবনযাপনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। স্বাভাবিক জীবনযাপনের আদর্শিক মাত্রা ১০০ ধরে ২৫ পয়েন্ট যোগ-বিয়োগ সীমা পর্যন্ত আদর্শিক ঝুঁকির ব্যাপ্তি নির্ধারণ করা হয়। 

খ. উত্তম আদর্শিক ঝুঁকি (Super Standard Risk)

যে বিষয় বা জিনিসটি বিমার আওতাভুক্ত, সেটিকে বিমার ‘বিষয়বস্তু’ বলে। যখন কোন বিষয়বস্তুতে আদর্শিক ঝুঁকির চেয়ে কম ঝুঁকি বিদ্যমান থাকে, তখন তাকে উত্তম আদর্শিক ঝুঁকি বলে। ঝুঁকি মূল্যায়নের আংকিক পদ্ধতি অনুযায়ী ৭৫ পয়েন্টর নিচের মাত্রায় ঝুঁকি থাকলে তাকে উত্তম আদর্শিক ঝুঁকি বলে। এ ঝুঁকিটি বিমা কোম্পানির জন্য লাভজনক। 

গ. উপ-আদর্শিক ঝুঁকি (Sub-Standard Risk)

কোন বিষয়বস্তুতে আদর্শিক ঝুঁকির চেয়ে বেশি ঝুঁকি বিরাজমান থাকলে তাকে উপ-আদর্শিক ঝুঁকি বলে। অর্থাৎ ১২৫ থেকে ৫০০ পর্যন্তু পয়েন্টের ঝুঁকিকে উপ-আদর্শিক ঝুঁকি বলে। বিপজ্জনক পেশায় নিয়োজিত ঝুঁকিকে এ জাতীয় ঝুঁকির আওতায় ফেলা হয়। বিমা কোম্পানি এ ধরনের ঝুঁকির বিমা করতে চায় না। যেমন, কয়লার খনিতে কর্মরত মানুষের জীবন বিমা এ ঝুঁকির আওতাভুক্ত। 

[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

ঝুঁকি পরিমাপের উদ্দেশ্য (Purpose of Measuring Risk)

বিমা কোম্পানি ঝুঁকি পরিমাপের জন্য আর্থিক অংক ব্যবহার করে। অর্থাৎ ঝুঁকিকে আর্থিকভাবে প্রকাশ করে। তবে এর কতিপয় উদ্দেশ্য রয়েছে। নিচে ঝুঁকি পরিমাপের উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হলো: 

১. আর্থিক সিদ্ধান্তগ্রহণ

কোন ঝুঁকি গ্রহণ করা হবে কিনা সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ঝুঁকি পরিমাপ করা হয়। 

২. প্রিমিয়াম নির্ধারণ

ঝুঁকি বেশি হলে প্রিমিয়াম বেশি দিতে হবে, আর ঝুঁকি কম হলে প্রিমিয়াম কম হবে। বিমা কোম্পানি বিমা প্রস্তাব পাওয়ার পর বিষয়বস্তুর ঝুঁকি নির্ধারণ করে। এরপর প্রিমিয়ামের পরিমাণ নিরূপণ করে। 

৩. ঝুঁকির শ্রেণীবিভাগ করা

বিষয়বস্তুর ঝুঁকির উপর নির্ভর করে কোনটির ঝুঁকি কত? পৃথকভাবে বিষয়বস্তুর ঝুঁকি পরিমাপ 

করে পৃথক পৃথক প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে এটি বেশ কঠিন। তাই ঝুঁকিকে পৃথক পৃথক শ্রেণীতে বিভক্ত করে বিমা কোম্পানিতে প্রিমিয়ামের হার নিরূপণ করা হয়।

পরিশেষ:

ব্যক্তি পর্যায়ে ও ব্যবসাক্ষেত্রে যে ধরনের ক্ষতিই হোক না কেন বিমার ক্ষেত্রে তা অর্থের অংকে পরিমাপ করা হয়। যে কারণে বিমার ক্ষেত্রে ঝুঁকি বলতে আর্থিক ক্ষতি সংক্রান্ত অনিশ্চয়তাকে বোঝানো হয়েছে। ঝুঁকি হলো ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা। ঝুঁকির মাত্রা অনুসারে ঝুঁকিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা, অবিমাযোগ্য ঝুঁকি ও বিমাযোগ্য ঝুঁকি। বিমা কোম্পানি যে ঝুঁকি গ্রহণ করার জন্য রাজি হয় না তাকে অবিমাযোগ্য ঝুঁকি বলে। ঝুঁকিকে আর্থিকভাবে পরিমাপ করা হয়। আর এ পরিমাপের ভিত্তিতেই বিমা কোম্পানি ঝুঁকি গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

Leave a Comment