প্রশ্ন সমাধান: বাংলা গ্রন্থ সমালোচনা- আরেক ফাল্গুন, আরেক ফাল্গুন কাব্যের সার্থকতা আলোচনা,বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি আরেক ফাল্গুন , আরেক ফাল্গুন বিসিএস গ্রন্থ সমালোচনা ,আরেক ফাল্গুন
গ্রন্থ সমালোচনা
প্রিলি+লিখিত প্রস্তুতি
গ্রন্থ সমালোচনা: আরেক ফাল্গুন
লেখক: জহির রায়হান
২ মিনিট সময় নিয়ে অবশ্যই পড়ুন।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষার এক্সামে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে গ্রন্থ-সমালোচনা। লিখিত পরীক্ষায় গ্রন্থ সমালোচনার উপর ১৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে। আবার ইদানীং দেখা যাচ্ছে বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর চরিত্র থেকে প্রিলিতে প্রশ্ন থাকে। গল্প/উপন্যাস না পড়া থাকলে চরিত্র মনে রাখা বেশ কঠিন। এক্ষেত্রে উপন্যাসের কাহিনি জানলে একসাথে প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষার জন্য কাজে দিবে।
আরেক ফাল্গুন
ভাষা আন্দোলনভিত্তিক প্রথম উপন্যাস আরেক ফাল্গুন। উপন্যাসটির কাহিনি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। এটি ১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পালনের প্রস্তুতিকে কেন্দ্র করে রচিত। তবে ‘৫২-এর সেই আন্দোলন তখনো যে জীবিত তা প্রতিক্ষণে বোঝা যাচ্ছিল। তখনো ভাষার জন্যে যারা জীবন দান করেছেন তাদের আত্মত্যাগের কোন মূল্যায়ন করা হয়নি, আদায় হয়নি মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার ও স্বীকৃতি পায়নি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা। উপন্যাসের কাহিনির স্থিতিকাল মাত্র তিনদিন দুই রাত। প্রথম দিনের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে কাহিনির সূচনা। প্রথম দিন ও রাত এবং দ্বিতীয় দিন ও রাত ধরে চলেছে একুশ পালনের বিরামহীন প্রস্তুতি।
তৃতীয় দিন কাহিনির চূড়ান্তকাল। মিছিল এবংপুলিশের সংঘর্ষের মাধ্যমে অতিক্রান্ত হয়েছে চূড়ান্ত কালটি। অতঃপর দিনের শেষে জেলগেইট প্রাঙ্গণে কাহিনির সমাপ্তি। সেই জন্য কাহিনির ব্যপ্তিকাল সীমিত। কিছুঘটনা ও উদঘটনায় বিস্তৃত উপন্যাসের কলেবর। সিপাহী বিদ্রোহের নির্মম স্মৃতি বিজড়িত ভিক্টোরিয়া পার্কের বর্ণনা দিয়ে ঔপন্যাসিক উপন্যাসের কাহিনি শুরু করেন- ‘সকালে কুয়াশায় ঢাকা পড়েছিল পুরো আকাশটা।
আরো ও সাজেশন:-
আকাশের অনেক নিচু দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে মন্থর গতিতে ভেসে চলেছিল এক টুকরো মেঘ। রঙ তার অনেকটা জমাট কুয়াশার মতো দেখতে। ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশ দিয়ে সেই মেঘের মতো একটি ছেলেকে হেটে যেতে দেখা গেল নবাবপুরের দিকে। দক্ষিণ থেকে উত্তরে। পরনে তার সদ্য ধোয়ান সাদা শার্ট, সাদা প্যান্ট, পা- জোড়া খালি (জুতো নেই)।’
এই ছেলেটিই ‘আরেক ফাল্গুন’ উপন্যাসের নায়ক মুনিম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা। সিপাহী বিদ্রোহের স্মৃতিময়তা এই উপন্যাসের সূচনাকে করেছে তাৎপর্যময় এবং বর্ণনায় প্রকৃতির পরিচর্যা কাহিনিকে করেছে সংকেতময়।
মেঘের গতি উত্তর থেকে দক্ষিণে আর মুনিমের গতি দক্ষিণ থেকে উত্তরে। এভাবে সংকেতময় ইঙ্গিতে লেখক বুঝিয়ে দিলেন স্রোতের বিপরীতে চলছে মুনিম। ভাষা আন্দোলনের শহিদের স্মরণে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কিছু তরুণ-তরুণী এক সকালে হঠাৎ করেই খালি পায়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ে । স্থাপন করে কাগজ আর বাঁশের শহিদ মিনার।
ক্ষণস্থায়ী এ শহিদ মিনার খুব বেশি সময় টেকেনি পুলিশের তোপের মুখে। যাদের একান্ত চেষ্টা আর সংগ্রামে আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত, পেছনের সেই মানুষগুলোর গল্প আরেক ফাল্গুন।
উঠে এসেছে তাদের বিদ্রোহী চেতনা আর পরিণয় এর মাঝের দ্বান্দ্বিকতা। বাদ যায়নি আন্দোলনের লাভের গুড় খাওয়া মানুষগুলোর কথাও। সরকার ছাত্রছাত্রীদের শহিদ দিবস পালন করতে দিবে না। রাস্তায় স্লোগান দেয়া নিষিদ্ধ। মিছিল, শোভাযাত্রা বেআইনি ঘোষণা করেছে। কিন্তু ছাত্ররা বদ্ধপরিকর, তারা যে কোন মূল্যে শহিদ দিবস পালন করবে।
সেজন্য তারা পূর্ব থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করে আসছে। তাদের কর্মসূচীর মধ্যে ছিল তিন দিন খালি পায়ে (জুতা ছাড়া) চলা, রোজা রাখা, কালো ব্যাজ ধারণ, ২১ ফেব্রুয়ারিতে কালো পতাকা উত্তোলন ইত্যাদি।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
ছাত্রদের কর্মসূচী বাস্তবায়নে মুনিম, আসাদ দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। পোস্টার ও লিফলেট ছাপানো, কালো ব্যাজ বিতরণ, কালো পতাকা উত্তোলন, স্লোগান ও অন্যান্য সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে মুনিমের সক্রিয়তা বিরামহীন।
আন্দোলনের সময় প্রেমিকা ডলির জন্মদিন পালনের উৎসবে মুনিমকে খালি পায়ে আসতে হয়। বিত্তশালী ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে ডলি যতটা ব্যক্তি মুনিমের ভক্ত, তার আদর্শের প্রতি ততটাই বিরক্ত।
উৎসবে খালি পায়ে মুনিমের উপস্থিতিতে ডলি বিব্রতবোধ করে। সে চায় না মুনিম উপহাসের পাত্র হোক। এছাড়া মুনিম ব্যস্ততার কারণে ডলিকে সময় দিতে পারে না। অভিমানী ডলি রাগে ক্ষোভে মুনিমের উপহার সামগ্রী ফেরত পাঠায়, সাথে রিফিউজ লেটার। মুনিম আহত হয়। কিন্তু রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ থেকে সে এক মুহুর্তের জন্যও বিচ্যুত হয় না। এটা তার রাজনৈতিক আদর্শনিষ্ঠা ও কর্তব্য। আন্দোলনে মুনিম একা নয়। সংগ্রামী উদ্দীপনায় এগিয়ে এসেছে সালমা, নীলা, রানু, বেনু, রাহাত, আসাদ, কবি রসুল, সাহানা প্রমুখ শত শত ছাত্রছাত্রী। রাজপথে তাদের আন্দোলন নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা ভিন্ন পথ অবলম্বন করে।
অবশেষে ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শহিদ দিবসের উন্মাদনা ও আত্মদানের মহান ব্রত দেখা যায়। সারারাত কেউ ঘুমায় না। মেডিকেল হোস্টেল, মুসলিম হল, চামেলি হাউজ, ইডেন হোস্টেল, ফজলুল হক হল সহ অন্যান্য হলের ছাত্রছাত্রীরা অতন্দ্রপ্রহরীর মতো সারারাত জেগে রইল। সকাল ১০টার দিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে জমায়েত হতে থাকল এবং সেখানেকালো পতাকা উত্তোলন করা হলো। পুলিশ তাদের উপর গুলি চালায় ও শতশত ছাত্রছাত্রীকে গ্রেফতার করে।
উপন্যাসে তৃতীয় দিনে শেষ ঘটনাংশে পূর্বের তুলনায় মুনিম অপেক্ষা আসাদকে বেশি সক্রিয় মনে হয়। মিছিলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে মুনিম আহত হয়। গ্রেফতার হয়ে কারাগার প্রাঙ্গণে ডলি আর সাহানার আকস্মিক আবির্ভাবে বেদনাবিহ্বল মুনিম হয়ে উঠে আনন্দে উদ্বেল। ডলি এক গুচ্ছ ফুল নিবেদন করে মুনিমকে। ডলির বিচ্ছেদ বেদনার পরিবর্তে কারাযাত্রায় মুনিম আনন্দবোধ করে। জেলগেটের সামনে বন্দি ছাত্র-ছাত্রীদের জড়ো করা হলো। এদের সংখ্যা এক দুই জন নয়, আড়াইশো’র উপরে। খবর পেয়ে আত্মীয় স্বজনরা খোঁজ নিতে এসেছেন, কাগজে টুকে নিচ্ছেন কার কি প্রয়োজন।
Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Stories | উত্তর লিংক |
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
সালমার বিছানাপত্র আর কাপড়চোপড় নিয়ে এসেছিল শাহেদ। সালমা মেডিকেলের ছাত্রী, কারারুদ্ধ বিপ্লবী রওশনের স্ত্রী। রওশন সালমার বড় ভাইয়ের বন্ধু, ভালবেসে বিয়ে করেছিল তাকে। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনে রওশন পা হারায়, রাজশাহী কারাগারে বন্দী থাকে। রওশনের কারামুক্তির সম্ভবনাও অনিশ্চিত। তবু সালমা আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয় না। শাহেদ সালামাকে রওশনের একটি চিঠিও দিয়ে যায়। উপন্যাসের শেষাংশে সম্ভবনাময় ও সদূরপ্রসারী একটি ইঙ্গিত বর্ণনা করা হয়েছে- “নাম ডেকে ডেকে তখন একজন একজন করে ছেলেমেয়েদের ঢোকানো হচ্ছিল জেলখানার ভেতরে। নাম ডাকতে ডাকতে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন ডেপুটি জেলার সাহেব।
এক সময় বিরক্তির সঙ্গে বললেন, উহ অত ছেলেকে জায়গা দেব কোথায়? জেলখানাতো এমনি ভর্তি হয়ে আছে। ওর কথা শুনে কবি রসুল চিৎকার করে উঠল, জেলখানা আরো বাড়ান সাহেব। এত ছোট জেলখানায় হবে না। আর একজন বলল, এতেই ঘাবড়ে গেলেন নাকি? “আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দিগুণ হবো।”
উপন্যাসের কাহিনি বিস্তারে আপোষহীন ছাত্রনেতা হিসেবে মুনিম ও আসাদের চরিত্র উজ্জ্বল। মুনিম পিতৃহীন, দরিদ্র বিধবা মায়ের সন্তান। সংসারের টানাপোড়ন ও প্রবল আন্দোলনের সময় ডলির প্রত্যাখ্যান কোন কিছুই আন্দোলনের গতিধারা থেকে তাকে বিচ্যুত করতে পারে নি। তাই মুনিম চরিত্রে রাজনৈতিক আদর্শনিষ্ঠা ও প্রণয়নিষ্ঠা উভয়ই সমান্তরাল গতিতে বিদ্যমান।
অন্যদিকে আসাদও একজন একনিষ্ঠ বিপ্লবী ছাত্রকর্মী। পিতার গালিগালাজ ও আর্থিক অসহযোগিতা তাকে আন্দোলনের মাঠ থেকে স্থানচ্যুত করতে পারে নি। উপন্যাসে শেষ দিকে আসাদকে বেশ সক্রিয় মনে হলো।
এ উপন্যাসে অনেক চরিত্রের সমাবেশ ঘটিয়েছেন লেখক। অনেক চরিত্রের সমাবেশ ঘটলেও কোন চরিত্র অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয় নি। সবাই যার যার দায়িত্ব পালন করছে। সব চরিত্রের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অবদান বইটির আবেদন বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
উপন্যাসের অসাধারণ কিছু চরিত্র কোন কিছুকেই পরোয়া করে না। সব বাধা উপেক্ষা করে খালি পায়ে রাস্তায় নামাকে যারা পরিণত করে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে। যাদের সাদা ড্রেস, নগ্ন পা হয়ে উঠে ভাষা শহিদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক। উপন্যাসে ছাত্রদের আত্মত্যাগী ও সংগ্রামী চেতনার পাশাপাশি সুবিধাভোগী শ্রেণীর কথাও জহির রায়হান সুনিপুণভাবে বর্ণনা করেছেন। সুবিধাভোগী শ্রেণীর প্রতিনিধি সরকারি গোয়েন্দা মাহমুদ ও বজলে।
বজলে বলে- ‘আমরা হলাম সাহিত্যিক। সমাজের আর দশটা লোক, মিছিল আর শোভাযাত্রা বের করে পুলিশের লাঠি খেয়ে প্রাণ দিলে কিছু এসে যায় না। কিন্তু আমাদের মৃত্যু মানে দেশের এক একটি প্রতিভার মৃত্যু।’
জহির রায়হানের জীবনদৃষ্টি রোমান্টিক। আরেক ফাল্গুন উপন্যাসে তিনি এই রোমান্টিক দৃষ্টির প্রতিফলন ঘটিয়েছেন সফলভাবে। উপন্যাসটি রাজনৈতিক পটভূমিতে রচিত হলেও প্রণয় উপেক্ষিত নয়। ডলি মুনিমের প্রেমানুভূতি আর সালমার প্রতি রওশনের আকর্ষণ এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ। উপন্যাসের মূল কাহিনির সাথে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য উপকাহিনি। প্লট সংগঠনে লেখকের নৈপুণ্য সর্বত্র রক্ষিত হয়নি। চরিত্র অনুসারে লেখক ভাষা ব্যবহারে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
ভাষা আন্দোলন পরবর্তী সময়ে বাঙালি তরুণ সমাজ নিজেদের মধ্যে ভাষা আন্দোলনের অনুপ্রেরণাকে জাগিয়ে রেখে সালাম রফিক জব্বারের মত মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে যেভাবে রাজপথে অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যায় সেই সব দিকগুলো লেখক বেশ সুন্দরভাবেই বইটিতে তুলে ধরেছেন। সর্বোপরি বর্ণনার আবেগের সঙ্গে ঘটনার প্রবাহমানতা একাত্ম করে জহির রায়হান ভাষা আন্দোলন তথা একুশের প্রথম উপন্যাস রচনা করে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization
- সমাজদর্শন ও রাষ্ট্র দর্শনের সম্পর্ক, সমাজদর্শ ও রাষ্ট্রদর্শনের সম্পর্ক, Relation between Social Philosophy & Political Philosophy
- দর্শনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়?, দর্শনের বিষয়বস্তু হিসেবে অধিবিদ্যা আলোচনা করুন।
- দর্শনের প্রকৃতি ও স্বরূপ আলোচনা কর