ফ্যাটি লিভার হলে কি খাবেন কি খাবেন না,ফ্যাটি লিভার হলে কি খাওয়া উচিত আর কি খাওয়া উচিত নয়,ফ্যাটি লিভারের ডায়েট চার্ট ,ফ্যাটি লিভারের সঠিক ডায়েট চার্ট। ফ্যাটি লিভার হলে কি খাবেন আর কি খাবেন না।

আজকাল ঘরে ঘরে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা। তাই এই রোগকে কেউ খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু এই রোগের চিকিৎসা না করে ফেলে রাখলে পরে পরিণতি আরও খারাপ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভারে কেউ আক্রান্ত হয়েছেন, তা বুঝতেই অনেকটা দেরী হয়ে যায়।

ফ্যাটি লিভারের আবার রকমফের হয়। একটি অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার। অন্যটি নন-অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার। লিভারে চর্বির পরিমাণ যখন ৫ থেকে ১০ শতাংশ বেড়ে যায়, তখনই তাকে ফ্যাটি লিভার বলা হয়।

অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার- মদ্যপান করলে লিভারে অতিরিক্ত মেদ জমলে তাকে বলে অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার।

নন অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার- যখন খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত ফাস্টফুড, অনিয়মিত জীবনযাপনের জন্য লিভারে মেদ জমলে তাকে নন অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার বলা হয়। এছাড়া বংশানুক্রমিক ভাবেও ফ্যাটি অ্যাসিড হতে পারে।

ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে বাঁচার রয়েছে কিছু ঘরোয়া সহজ উপায়। জেনে নেওয়া যাক এমন দুটি ঘরোয়া উপায়, যেগুলি ব্যবহার করলে আপনি ফ্যাটি লিভার থেকে রেহাই পেতে পারেন।

১) এক গ্লাস উষ্ণ জল নিন। তাতে ১ চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে নিন। প্রয়োজনে এর সঙ্গে মেশান ১ চামচ মধু। এই মিশ্রণ খালি পেটে নিয়মিত খান। যাঁদের অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা এই মিশ্রণ খেলে উপকার পাবেন।

২) ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে এক গ্লাস গরম জলের সঙ্গে ২ চামচ পাতি লেবুর রস ও মধু মেশান। রোজ সকালে খালি পেটে এই মিশ্রণ খান। পাতি লেবুতে ভিটামিন সি থাকে। এর অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট লিভারের মেদ বার্ন করতে সাহায্য করে।

প্রসঙ্গত, ফ্যাটি লিভার প্রথমে সাধারণ অসুখ মনে হলেও চিকিৎসা না করালে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। লিভার সিরোসিস মারাত্মক আকার নিতে পারে। তাই শুধু ঘরোয়া টোটকা নয়। ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারে ‘ফ্যাটি লিভার’ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় তথ্য পাওয়া গেছে।

জার্মানির গবেষকেরা বলছেন, চর্বিহীন মাংস, মাছ, শিম ও বাদামজাতীয় খাবার খেলে ছয় সপ্তাহের মধ্যে লিভার বা যকৃত থেকে যথেষ্ট পরিমাণ চর্বি কমাতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে যকৃতে অধিক চর্বি থাকলে প্রাণী বা উদ্ভিদ যেকোনো উৎস থেকে আসা উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে চর্বি ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত কমতে দেখা গেছে।

গবেষণা প্রবন্ধের প্রধান লেখক জার্মান ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন পটসডাম-রেহব্রুকের (ডিআইএফই) এন্ডোক্রিনোলজিস্ট অ্যানদ্রেয়াস এফ এইচ পেইফার বলেন, ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা না করানো হলে এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস তৈরির গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে পারে এবং তা লিভার সিরোসিস পর্যন্ত যেতে পারে। এটি জীবনঝুঁকি তৈরি করে।

‘গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণা-সংক্রান্ত নিবন্ধ।

গবেষণার দেখা গেছে, উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যকৃত ও লিপিড বিপাকে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। এ ছাড়া ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে।

এ গবেষণার জন্য গবেষকেরা উদ্ভিদ ও প্রাণী উৎস থেকে আসা দুই ধরনের উচ্চ প্রোটিনের প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা চালান। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ফ্যাটিলিভারের ৪৯ থেকে ৭৮ বছর বয়সী ৩৭ জন নারী-পুরুষকে নিয়ে এ গবেষণা চালানো হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে রেনাল ফাংশন বা গ্লুকোজ বিপাকে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি এবং রোগীরা উপকৃত হয়েছেন। অর্ধেকের বেশি রোগীর ক্ষেত্রে যকৃতের চর্বি কমতে দেখা গেছে।

ফ্যাটি লিভার থেকে হতে পারে লিভার সিরোসিস! এই লক্ষণগুলি দেখলেই সতর্ক হন!

ভার (Liver) বা যকৃৎ হল আমাদের শরীরের অন্যতম বড় অঙ্গ। আর শুধু বড় বললে ভুল হয়ে যাবে, এই অঙ্গটি আমাদের শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারে। খাদ্য হজমে সাহায্য করা থেকে শুরু করে, শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে দিতে পারে এই অঙ্গটি (Organ)। তাই এই অঙ্গের খেয়ালও আমাদের রাখতে হবে।

এক্ষেত্রে জানার বিষয় হল, লিভার কিছুটা পরিমাণ ফ্যাট সংরক্ষণ করে রাখে। তবে মুশকিল হয়, যখন এই সামান্য ফ্যাটের (Fat) পরিমাণে লিভারের উপর বাড়তে থাকে।

ফ্যাটি লিভার ডিজিজ
লিভারে সামান্য ফ্যাট থাকতেই পারে। তবে লিভারের ভিতরে যদি জমতে থাকে ফ্যাটের বিরাট আস্তরণ, তখন তাকে বলা হয় ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (Fatty Liver Disease)।
ফ্যাটি লিভার ডিজিজের মূলত দুটি ভাগ- অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (Alcoholic Fatty Liver Disease) এবং নন অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (Non Alcoholic Fatty Liver Disease)। মদ্যপানের কারণে লিভারে ফ্যাট জমলে বলা অ্যালকোহোলিক ফ্যাটিলিভার ডিজিজ। আর অপরদিকে ফ্যাটি লিভারের নেপথ্যে যখন মদ্যপান থাকে না, তখন বলা হয় নন অ্যালকোহোলিক ফ্যটি লিভার ডিজিজ।
ফ্যাটি লিভার থেকে ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল, লিভার সিরোসিসের মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ভুল ধারণা

আমরা বেশিরভাগ মানুষই ফ্যাটি লিভার ডিজিজ রোগটির নাম শুনেছি। আর সিংহভাগ মানুষই মনে করি, এই রোগটি মদ্যপানের কারণেই একমাত্র হয়। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, মদ্যপান ছাড়াও শুধুমাত্র জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে হতে পারে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। আর জানলে অবাক হবেন, এই নন অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও অনেক।

ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ
বহু ক্ষেত্রে এই রোগের তেমন কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে-
১. ক্লান্তি- সারাদিনই আপনাকে ক্লান্তি গ্রাস করে রাখে? তবে অবশ্যই একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হলেও হতে পারে।
২. পেটে ব্যথা- তলপেটে ব্যথা হতে পারে। চিনচিনে বা খুব ব্যথা হতে পারে। এমন লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে কোনও সমস্যা রয়েছে। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩. সারাদিন ঘুমঘুম ভাব- আপনার কাজ করতে একদম ভালো লাগছে না। শুধু শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে। এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে হতে পারে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ।

কী ভাবে নন অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের সমস্যা মেটাবেন?
নন অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ কোনওভাবেই ক্রনিক রোগ নয়। একটু আধটু চেষ্টা করলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। সেক্ষেত্রে মেনে চলুন এই নিয়মগুলি-
১. তেল-ঝাল-মশলা ছাড়ুন। এই ধরনের খাবার খাওয়া চলবে না।
২. ফ্যাট থাকা কোনও খাবার আপাতত নয়।
৩. মিষ্টি থেকে দূরে থাকুন। তবেই সমস্যা কমবে।
৩. বেশি করে ফাইবার জাতীয় খাবার খান। খেতে হবে ডালিয়া, ওটস, ঢেঁকি ছাঁটা চাল ইত্যাদি।
৪. ওজন কমান।
৫. ভুঁড়ি কমাতে হবে।
৬. রোজ করুন ব্যায়াম। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতেই হবে।
৭. দুশ্চিন্তা দূর করুন। প্রয়োজনে করতে হবে প্রাণায়াম।

গোপান রোগ

Leave a Comment