পাকা আমের নানা পুষ্টিগুণ,পাকা আমের যত উপকারিতা,পাকা আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারীতা, আমের চমকপ্রদ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা,আমের নানা পুষ্টিগুণ ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়ক

বিষয়: পাকা আমের নানা পুষ্টিগুণ,পাকা আমের যত উপকারিতা,পাকা আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারীতা, আমের চমকপ্রদ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা,আমের নানা পুষ্টিগুণ ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়ক

চলছে আমের মৌসুম। স্বাদে গন্ধে ভরা এই পাকা আম সবার পছন্দের তালিকায় রয়েছে। শুধুমাত্র স্বাদেই নয়, দেখতেও মনকাড়া আম বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। জুস থেকে শুরু করে আচার তৈরি করে খাওয়া যায়। সংরক্ষণ করে রাখা যায় বিভিন্ন উপায়ে। আমে রয়েছে পুষ্টিগুণে ভরা। এবার জেনে নিন এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে-

আমের পুষ্টিগুণ

আমে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ এবং ভিটামিন যেমন- ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬ রয়েছে। তা ছাড়া আরও কিছু পুষ্টি উপাদান পটাসিয়াম, কপার লৌহ এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে। এ ছাড়াও এতে বায়োলজিকাল উপাদান, প্রো ভিটামিন এ, বেটা ক্যারোটিন, লুশিয়েন জিলাইক অ্যাসিড, আলফা ক্যারোটিন, পলি পিথানল কিউরেচিন কাম্ফারল, ক্যাফিক অ্যাসিডসহ আরও অনেক বিশেষ উপাদান- যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

স্বাস্থ্য উপকারিতা

১) আম আমাদের ত্বক সুন্দর, উজ্জ্বল ও মসৃণ করে। শুধু তাই নয়, এটি আমাদের ত্বককে ভেতর ও বাইরে থেকে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। আম আমাদের ত্বকের লোমের গোড়া পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং ব্রণের সমস্যা সমাধানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

২) আমে পর্যাপ্ত পরিমাণে খনিজ লবণের উপস্থিতি রয়েছে। শরীরের দাঁত, নখ, চুল ইত্যাদি মজবুত করার জন্য আমের খনিজ লবণ উপকারী ভূমিকা পালন করে।

৩) সাধারণত পাকা আম ত্বকের লোমের গোড়া পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। ফলে মুখের ও নাকের উপর জন্মানো ব্ল্যাকহেড দূর করতে অনেকাংশে সাহায্য করে। আপনি যদি প্রতিদিন ১০০ গ্রাম পাকা আম খান তাহলে আপনার মুখের কালো দাগ দূর হবে।

৪) পাকা আমের আঁশে কিছু উপাদান যেমন- ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ থাকায় তা হজমে সহায়তা করে থাকে। আমে আছে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম এটা আমাদের শরীরের প্রোটিন অণুগুলো ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করে, যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

৫) আমে প্রায় ২৫ রকমের বিভিন্ন কেরাটিনয়েডস, উপকারী ব্যাকটেরিয়া আছে যা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে সুস্থ ও সবল রাখে।

৬) আমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স। এই ভিটামিন আমাদের শরীরের স্নায়ুগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহ সচল রাখতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরকে রাখে পুরোপুরি সতেজ। যার ফলে খুব দ্রুত ঘুম আসতে সাহায্য করে।

৭) আমে বেটাক্যারোটিন, ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়ামের পরিমাণ পর্যাপ্ত থাকায় তা হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি আমাদের হার্টকে সুস্থ ও সবল রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৮) আপনি যদি প্রতিদিন এক কাপ আম খেতে পারেন তাহলে এটি আপনার শরীরে ভিটামিন ‘এ’ এর চাহিদার প্রায় পঁচিশ শতাংশের যোগান দিতে পারবে। ভিটামিন ‘এ’ আমাদের চোখের জন্য খুবই উপকারী। এটি আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে।

৯) আমে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসিড থাকে যেমন- টারটারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড ও সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে,যা আমাদের শরীরে অ্যালকালাই বা খার ধরে রাখতে সহায়তা করে অনেকাংশেই।

১০) আমের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,যা কিনা শরীরের ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। স্তন, লিউকেমিয়া, কোলন প্রোস্টেট ক্যানসারের মতো মারাত্মক ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে প্রয়োজনীয় এনজাইমও পাওয়া যায়।

১১) পাকা আম পটাশিয়ামসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আমদের হার্টবিট ও রক্তস্বল্পতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। আমাদের হার্টবিটকে সচল রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

১২) আম আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কারে সহায়তা করে। এতে থাকা টারটারিক, ম্যালিক ও সাইট্রিক অ্যাসিড শরীরে অ্যালকোহল ধরে রাখতে সহায়তা করে।

১৩) আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। পাকা আমের তুলনায় কাঁচা আমে ভিটামিন-সি এর পরিমাণ বেশি। যা আমাদের দাঁত ও হাড় গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

১৪) আম আমাদের শরীরের ক্ষয়রোধ করে। প্রতিদিন এটি খেলে দেহের ক্ষয়রোধ হয় এবং স্থূলতা কমিয়ে শারীরিক গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।

১৫) শুধু তাই নয়, আমের ভেষজ গুণ আমাদের স্কিন ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগ থেকে রক্ষা করে।

এক আমের খোসায় ১০ রোগের সমাধান!

আম একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল। বাজারে সবে কাঁচা আম উঠতে শুরু করেছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই পাকা আমের গন্ধে ভরে উঠবে ফলের বাজার। সাধারণত আমের খোসা ফেলে ভেতরের কাঁচা বা পাকা রসালো অংশ আমরা খেয়ে থাকি।

তবে ফেলে দেওয়া আমের খোসা স্বাস্থ্যের হন্য কতটা উপকারী তা কি জানেন? শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা এমনকি নানা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে আমের খোসায় থাকা পুষ্টিউপাদানসমূহ।

আমের খোসায় থাকে ফেনোলিক যৌগ, ক্যারোটিনয়েড ও বায়োঅ্যাকটিভ যৌগসমূহ। আরও অন্যান্য যৌগগুলোর মধ্যে রয়েছে- রেসভেরাট্রল, ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম ও আয়রন।

ম্যাঙ্গিফেরিন, একটি পলিফেনল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমের খোসার প্রধান সক্রিয় যৌগ। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক এক আমের খোসা যেভাবে ১০ রোগের সমাধান করে-

হার্টের জন্য ভালো

গবেষণায় বলা হয়েছে, আমের খোসা ক্যারোটিনয়েড ও ফেনোলিক্সের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। যা হৃদরোগের মতো রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগগুলো শরীরের ফ্রি রেডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এমনকি স্থূলতার সমস্যার সমাধান করে।

ক্যানসার প্রতিরোধক

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমের খোসায় থাকা ফেনোলিক অ্যাসিড ও ফ্ল্যাভোনয়েড ক্যানসার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ। বিশেষ করে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় আমের খোসা।

এতে থাকা পুষ্টিগুণ ক্যানসার কোষের বিস্তার ও টিউমারের ঝুঁকি প্রতিরোধ করে। আমের খোসার মধ্যে থাকা ম্যাঙ্গিফেরিন বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার যেমন- কোলন ক্যানসারের বিরুদ্ধেও প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব দেখায়।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো

আমের খোসায় থাকে ডায়েটারি ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা শক্তিশালী অ্যান্টি-ডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বলে বিবেচিত। আমের খোসা খেলে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রার আকস্মিক বৃদ্ধি রোধ করা যায়। এমনকি অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণে অগ্ন্যাশয়ের ক্ষতিও রোধ করা যায়। অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন উৎপাদনে সাহায্য করে যা গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

ওজন কমায়

পেকটিন আমের খোসায় পাওয়া একটি অনন্য ফাইবার। পেকটিন স্থূলতার ঝুঁকি কমায়। উচ্চ প্রোটিন খাবারের তুলনায় আমের খোসা খাওয়ার মাধ্যমে ক্যালোরির সংখ্যা কমাতে পারবেন। কারণে আমের খোসায় থাকা পেকটিন ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ইমিউন সিস্টেমের জন্য ভালো

আমের খোসা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। একটি আমে ১৮-২৫৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আছে। যা ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতার জন্য একটি দুর্দান্ত পুষ্টি। এটি অভিযোজিত ও সহজাত ইমিউন সিস্টেম সম্পর্কিত বিভিন্ন সেলুলার ফাংশনের উন্নতি ঘটায় ও শরীরে প্রবেশকারী রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করে।

ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী

ভিটামিন ই ত্বক ও চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আমের খোসা, বিশেষ করে পাকা আম এই ভিটামিনে ভরপুর। এটি ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মির কারণে ত্বকের ক্ষতি কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এই ভিটামিন ত্বকের বার্ধক্য ও প্রদাহকেও ধীর করে দেয়। আমের খোসা খেলে চুল বড় হয় ও মাথার স্ক্যাল্পেও উন্নতি ঘটে।

অ্যালঝাইমারের ঝুঁকি কমায়

অক্সিডেটিভ স্ট্রেস আলঝেইমারের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আমের খোসায় থাকা ম্যাঙ্গিফেরিন, একটি সক্রিয় ফাইটোকেমিক্যাল। এটি আলঝাইমার ও অন্যান্য অক্সিডেটিভ-স্ট্রেস সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি প্রতিরোধে সহায়তা করে।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে

আমের খোসায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ক্রিয়াকলাপ আছে। যা ইকোলি ও সালমোনেলার মতো ব্যাকটেরিয়া ও অ্যাসপারগিলাস নাইজারের মতো ছত্রাক প্রতিরোধে সহায়তা করে।

অন্ত্র সুস্থ রাখে

আমের খোসায় প্রিবায়োটিকও থাকে। যা অন্ত্রে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়। শুকনো আমের খোসায় প্রায় ৪০ শতাংশ ফাইবার থাকে। আর তাজা আমের খোসার এর চেয়েও বেশি ফাইবার থাকে।

ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে

আমের খোসায় থাকা ভিটামিন ই ক্ষত নিরাময় করে। পোড়া ও অস্ত্রোপচারের ক্ষত সারাতেও সাহায্য করে। তবে আমের খোসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। এর খোসায় উচ্চ পরিমাণে একটি যৌগিক উরুশিওল থাকে, যা মারাত্মক অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। উরুশিওলের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে চুলকানি, লালভাব, ফোসকা ও ত্বকের ফোলা অন্তর্ভুক্ত।

আমের খোসা প্রসাধনী শিল্পে অ্যান্টি-এজিং পণ্য তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। রান্নাতেও আমের খোসা ব্যবহার করতে পারেন। তবে যদি কেউ এটি সরাসরি সেবন করেন তবে পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখুন।

এর খোসা ভালোভাবে ধুয়ে সেবন করুন। আমের খোসার গুঁড়া নিয়মিত খেতে পারেন। শারীরিক কোনো জটিলতা থাকলে আমেকর খোসা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও

Leave a Comment