পদ্য : আমি কিংবদন্তির কথা বলছি, কিংবদন্তি শব্দের অর্থ কী?

পদ্য : আমি কিংবদন্তির কথা বলছি

২। কবিরা গােলাপের মত সুন্দর-সুন্দর কথা বলেন, চাঁদের মত স্বপ্ন দেখেন। কবিরা শব্দ দিয়ে লিখেন নানান। রকমের কবিতা। কখনাে তারা খুব হাসির কথা বলেন। কখনাে বলেন কান্নার কথা।

(ক) ‘কিংবদন্তি শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: কিংবদন্তি শব্দের অর্থ জনশ্রুতি

খ) “আমরা কি তাঁর মত কবিতার কথা বলতে পারবাে”_চরণটির অর্থ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: “আমরা কি তাঁর মত কবিতার কথা বলতে পারবাে” এখানে কবি একটা প্রশ্ন রেখে গেছেন আমাদের কাছে।

পূর্বপুরুষরা নানা শোষণ বঞ্চনা স্বীকার করে যে স্বাধীনতা ও মুক্ত বাতাস আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন, আমরা কি তা অক্ষত রেখে সামনে এগিয়ে যেতে পারব? আমরা ও কি পারব কবিতার শক্তিতে জ্বলে উঠতে? উজ্জ্বীবিত হতে?

(গ) উদ্দীপকটি “আমি কিংবদন্তির কথা বলছি” কবিতার কোন্ বিষয়টির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: উদ্দীপকটি “আমি কিংবদন্তির কথা বলছি” কবিতার কোন্ বিষয়টির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হলো কবি ও কবিতা কথা

‘আমি কবি এবং কবিতার কথা বলছি।
সশস্ত্র সুন্দরের অনিবার্য অভ্যুত্থান কবিতা
সুপুরুষ ভালোবাসার সুকন্ঠ সংগীত কবিতা
জিহবায় উচ্চারিত প্রতিটি মুক্ত শব্দ কবিতা
রক্তজবার মতো প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা।’

কবিরা গােলাপের মত সুন্দর-সুন্দর কথা বলেন, চাঁদের মত স্বপ্ন দেখেন। কবিরা শব্দ দিয়ে লিখেন নানান। রকমের কবিতা। কখনাে তারা খুব হাসির কথা বলেন। কখনাে বলেন কান্নার কথা।

কবি এখানে কবিতাকেই সকল মুক্তির উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সশস্ত্র সুন্দরের অনিবার্য অভ্যুত্থান- মানে বুঝানো হয়েছে কবিতার শক্তিই সম্মুখ সমরে সশস্ত্র হয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে। ভালোবাসার সুকন্ঠ সংগীত ও কবিতা। প্রতিটি মুক্ত শব্দ যা আমাদের দ্বারা উচ্চারিত হয়- সেটিও কবিতা, এখানে কবিতা হয়ে উঠেছে মুক্তি, প্রতিরোধ ও জাতীয়তাবোধের প্রতীক।
.

(ঘ) “আমি কিংবদন্তির কথা বলছি” কবিতার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।’- মন্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ কর।

উত্তর: আমি কিংবদন্তির কথা বলছি” কবিতার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে

কবিতাটি আবু জাফর ওবায়দুলল্লাহর বিখ্যাত কাব্যগন্থ ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতা। রচনাটি বিষয় ও আঙ্গিকগত অভিনবত্ব রয়েছে। আলোচ্য কবিতাটিতে উচ্চারিত হয়েছে ঐতিহ্যসচেতন শিকড়সন্ধানী মানুষের সর্বাঙ্গীণ মুক্তির দৃপ্ত ঘোষণা। প্রকৃতপক্ষে, রচনার প্রেক্ষাপটে আছে বাঙালি সংস্কৃতির হাজার বছরের ইতিহাস, এই জাতির সংগ্রাম বিজয় ও মানবিক উদ্ভাসনের অনিন্দ্য অনুষঙ্গসমূহ।

কবিরা গােলাপের মত সুন্দর-সুন্দর কথা বলেন, চাঁদের মত স্বপ্ন দেখেন। কবিরা শব্দ দিয়ে লিখেন নানান। রকমের কবিতা। কখনাে তারা খুব হাসির কথা বলেন। কখনাে বলেন কান্নার কথা।

তিনি এই কবিতায় পৌনঃপুনিকভাবে মানবমুক্তির আকাঙ্ক্ষায় সোচ্চার হন। কবির একান্ত প্রত্যাশিত মুক্তির প্রতীক হয়ে উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে তাঁর বক্তব্যকে এগিয়ে নিয়ে চলেন। কবির বর্ণিত এই ইতিহাস মাটির কাছাকাছি মানুষের ইতিহাস; বাংলার ভূমিজীবী অনার্য ক্রীতদাসের লড়াই করে টিকে থাকার ইতিহাস। ‘কবিতা‘ ও সত্যের অভেদকল্পনার মধ্য দিয়ে কবি নিয়ে আসেন মায়ের কথা, বোনের কথা, ভাইয়ের কথা, পরিবারের কথা। কবি এ-ও জানেন মুক্তির পূর্বশর্ত যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধে পরিবার থেকে দূরে সরে যেতে হয়।

ভালোবাসার জন্য, তাদের মুক্ত করবার জন্যই তাদের ছেড়ে যেতে হয়। এই অমোঘ সত্য কবি জেনেছেন আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস থেকে। কবিতাটির রসোপলব্ধির অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এর আঙ্গিক বিবেচনা। এক্ষেত্রে, প্রথমেই যে বিষয়টি পাঠককে নাড়া দেয় তা হলো একই ধাঁচের বাক্যের বারংবার ব্যবহার। কবি একদিকে ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ পঙক্তিটি বারংবার প্রয়োগ করেছেন, অপরদিকে ‘যে কবিতা শুনতে জানে না/সে…’ কাঠামোর পঙক্তিমালার ধারাবাহিক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে কবিতা আর মুক্তির আবেগকে তিনি একত্রে শিল্পরূপ প্রদান করেছেন

‘কিংবদন্তি’ শব্দটি দ্বারা লোকপরম্পরায় শ্রæত ও কথিত এমন কোনো বিষয় বুঝায়, যা একটি জাতির ঐতিহ্যের
পরিচয়বাহী। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতাটিতে কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ঐতিহ্যসচেতন শিকড়সন্ধানী
মানুষের সর্বাঙ্গীণ মুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। বাঙালি জাতির হাজার বছরের সংগ্রাম ও বিজয়ের ইতিহাস এ কবিতার

প্রেক্ষাপট তৈরিতে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেছে। এ কবিতায় কবি মানবমুক্তির আকাক্সক্ষা এবং তাঁর পূর্বপুরুষের সাহসী

ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা বলেছেন। শত্রæরা কীভাবে ভীরু কাপুরুষের মতো পেছন থেকে আক্রমণ করে বা বন্দি
ক্রীতদাসের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তা কবি তুলে ধরেছেন। কবি মাটির কাছাকাছি মানুষের ইতিহাসের সঙ্গে বাংলার

ভ‚মিজীবী অনার্য-ক্রীতদাসের লড়াই করে টিকে থাকার ইতিহাস তুলে ধরেছেন। তিনি কবি ও কবিতার কথা বলেছেন।

Leave a Comment