পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ের ‘এই দেশ এই মানুষ’ প্রবন্ধে ‘তঞ্চঙ্গ্যা’দের কথা উল্লেখ আছে

পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ের ‘এই দেশ এই মানুষ’ প্রবন্ধে ‘তঞ্চঙ্গ্যা’দের কথা উল্লেখ আছে

তঞ্চঙ্গ্যা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী একটি জনগোষ্ঠী। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে এদের জনসংখ্যা ৩১ লাখ ১৬৪।

রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায়, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার বইস্যাবিলি এলাকায়, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে এদের বসবাস। এ ছাড়া ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মণিপুর রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এবং মিয়ানমারের আরাকানেও তঞ্চঙ্গ্যাদের বসতি রয়েছে।

তারা ১২টি গোত্রে বিভক্ত। এগুলো হলো—মোগছা, কারওয়াগছা, ধন্যাগছা, মেলংগছা, লাংগছা, লাপুইসাগছা, অংয়োগছা, মুলিমাগছা, রাঙ্গীগছা, ওয়াগছা, তাশীগছা। মূলত জুমচাষ করে।

এখন তঞ্চঙ্গ্যাদের মধ্যে শিক্ষিতের হার বাড়ছে। বর্তমানে শিক্ষিত অনেকেই সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্য নারীদের মধ্য থেকে স্বকীয় পোশাকে তঞ্চঙ্গ্যা নারীকে সহজে পৃথক করা যায়।

নান্দনিক কারুকাজ করা চুলের কাঁটা ও চেইন সজ্জিত খোঁপাকে বেষ্টনী দিয়ে মাথায় খবং (পাগড়ি) বাঁধা তঞ্চঙ্গ্যা নারীর গায়ে থাকে ফুলহাতা জামা বা কেবোই। এই জামার কাঁধে ও হাতের প্রান্তে নানা রঙের সুতায় ফুল বোনা থাকে। পরনে থাকে সাতরঙা পিনুইন বা পিনন।

এর দুই প্রান্তে লম্বালম্বি কালো রঙের ডোরা, মাঝখানে দুই প্রান্তে লাল রঙের ডোরা এবং মধ্যে মিশ্রিত সুতার ডোরা। পিননকে তারা দুই প্রান্তে কারুকার্যখচিত সাদা ফাদুরী বা ফাদুই (কোমর বন্ধনী) দিয়ে পরিধান করে। নারীদের ঐতিহ্যবাহী অলংকারের মধ্যে রয়েছে কানে রাইজ্জু ও জংগা, কবজিতে বাঘোর, কিয়াইংশিক, বাহুতে তাজ্জুর, গলায় চন্দ্রহার, সিকিছড়া প্রভৃতি। পুরুষরা ঐতিহ্যগতভাবে ধুতি ও ফুলহাতা জামা পরে।

তঞ্চঙ্গ্যারা বিয়েকে সাঙ্গা বলে। তিন ধরনের বিয়ে হয়। কন্যার গৃহে বরকে নিয়ে আয়োজিত হয় সাধারণ বিয়ে। প্রেমিক-প্রেমিকা গোপনে বিয়ে করলে তাকে বলা হয় ‘ধে যানা সাঙ্গা’।

তৃতীয় ধরনের বিয়েকে বলা হয় রানীমেলার সাঙ্গা বা বিধবা বিয়ে। প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হলেও এদের অনেকে গাংপূজা, ভূতপূজা, চুমুলাংপূজা, মিত্তিনীপূজা, লক্ষ্মীপূজা, কেপূজা, বুরপারা ইত্যাদি দেব-দেবীর পূজা করে। তঞ্চঙ্গ্যারা বুদ্ধপূজা, সংঘদান, সূত্র শ্রবণ, অষ্ট পরিষ্কার দান, প্রবারণা অনুষ্ঠান, কঠিন চীবর দান, মাঘী পূর্ণিমায় ব্যুহুচক্র মেলা, ফাল্গুনী পূর্ণিমায় জাতি সম্মেলন প্রভৃতি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে। তারা বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায় অনুষ্ঠানকে ‘বিষু’ বলে।

তঞ্চঙ্গ্যা সমাজে পিতার অবর্তমানে পুত্র সম্পত্তির মালিকানা পায়। তবে পুত্র না থাকলে কন্যা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। তঞ্চঙ্গ্যাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী উবাগীত, বারোগীত ও আধুনিক সংগীত বিদ্যমান। বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে প্রধানত বাঁশি, বেহালা ইত্যাদি ব্যবহার করে।

P.S.C

Leave a Comment