পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ের সুন্দরবনের প্রাণী প্রবন্ধে ‘গণ্ডার’

গণ্ডার রাইনোসেরোটিডি পরিবারের অন্তর্গত একপ্রকার তৃণভোজী স্তন্যপায়ী প্রাণী। ইংরেজিকে একে বলে Rhinoceros। নামটি Rhino (নাক) ও ceros (খড়্গ) নামের দুটি গ্রিক শব্দ থেকে এসেছে। এর পাঁচটি প্রজাতি এবং ১১টি উপজাতি রয়েছে। প্রজাতিগুলো হলো ভারতীয় গণ্ডার, জাভাদেশীয় গণ্ডার, সুমাত্রার গণ্ডার, সাদা গণ্ডার ও কালো গণ্ডার ।

বিশালদেহী এই প্রাণীর প্রজাতিভেদে আকার-আকৃতিতে পার্থক্য দেখা যায়। আকৃতির দিক থেকে আফ্রিকার সাদা গণ্ডারই বৃহত্তম। এদের ঘাড়ের উচ্চতা ৫.৯ থেকে ৬.১ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ১২ থেকে ১৪ ফুট। ওজনে একটি সাদা গণ্ডার হয়ে থাকে প্রায় দুই হাজার ৩০০ কেজি। অন্যদিকে সবচেয়ে ছোট গণ্ডার প্রজাতি হলো জাভাদেশীয় গণ্ডার। এরা উচ্চতায় প্রায় ৪.৮ ফুট এবং লম্বায় ৮-১০ ফুট হয়। জাভাদেশীয় এসব গণ্ডারের ওজন হয় প্রায় ৮০০ কেজি।

আফ্রিকার সাদা ও কালো উভয় প্রজাতিসহ সুমাত্রার গণ্ডারের নাকের ওপর দুটি করে খড়্গ রয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় ও জাভার গণ্ডারের নাকের ওপর একটি খড়্গ দেখা যায়। এদের চামড়া অত্যন্ত ভারী, বর্মের মতো, মোটা ও অনেক খাঁজযুক্ত। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গণ্ডার আছে আফ্রিকায়। এখানে আছে গণ্ডারদের বিশালকায় সাদা ও কালো প্রজাতি। ভারতীয় গণ্ডার পাওয়া যায় উত্তর-পূর্ব ভারতে এবং নেপালের তেরাই সংরক্ষিত বনে। এ ছাড়া পাকিস্তান ও মিয়ানমার সীমান্তেও এদের দেখতে পাওয়া যায়। একসময় বাংলাদেশে গণ্ডার পাওয়া যেত। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে এটি একটি বিলুপ্ত প্রাণী।

গণ্ডার অত্যন্ত বদরাগী ও একগুঁয়ে স্বভাবের। এদের দৃষ্টিশক্তি অত্যন্ত কম। তবে এরা তীক্ষ ঘ্রাণ ও শ্রবণশক্তির অধিকারী। আফ্রিকান কালো গণ্ডার অন্য প্রজাতির তুলনায় অপেক্ষাকৃত অধিক ভয়ংকর। এরা সাধারণত এককভাবেই বিচরণ করে। বিশাল দেহের কারণেই এদের প্রায় সারা দিন খেতে হয়। অনেক সময় এদের শরীরে কাদা মাখতেও দেখা যায়। শরীরে লেগে থাকা এই কাদা এদের পোকামাকড় থেকে রক্ষা করে এবং প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবেও কাজ করে। এরা মোটা হলেও ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৫০ মাইল গতিতে ছুটতে পারে।

স্ত্রী গণ্ডার প্রতি আড়াই থেকে পাঁচ বছর পরপর বাচ্চা দিয়ে থাকে। এদের গর্ভকাল ১৫ থেকে ১৬ মাস। জন্মের সময় বাচ্চার ওজন থাকে ৪০ থেকে ৬৪ কেজি। তিন বছর বয়সে বাচ্চাটি নিজের পরিবার ত্যাগ করে চলে যায়। সাধারণত একটি গণ্ডার ৪৫ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।

P.S.C

1 thought on “পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ের সুন্দরবনের প্রাণী প্রবন্ধে ‘গণ্ডার’”

Leave a Comment