Google Adsense Ads
খোজা নাসের কে ছিলেন | খোজা নসের সম্পর্কে একটি টীকা লিখ
উত্তর ভূমিকা : খোজা নাসের দ্বিতীয় আব্দুর রহমানের দরবারের একজন প্রতিভা সম্পন্ন সচিব ছিলেন। তিনি অসামান্য দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা ও প্রতিভা দ্বারা সামান্য পদ থেকে রাজদরবারের গুরুত্বপূর্ণ পদ লাভ ও রাজকার্যে প্রভাববিস্তার করতে সক্ষম হন। তার নাটকীয় জীবনের অবসান হয় নাটকীয়ভাবে।
→ খোজা নাসের : দ্বিতীয় আব্দুর রহমানের রাজদরবারে তৃতীয় যে ব্যক্তি অসামান্য প্রভাববিস্তার করেন তিনি হলেন একজন ক্রীতদাস। তিনি অনারব মূক। অসামান্য প্রতিভা বলে তিনি আমির আব্দুর রহমানের অনুগ্রহভাজন হয়ে উঠেন এবং হাজিবের পদ লাভ করেন। রাজকর্মে তার দক্ষতা ছিল প্রচুর।
তার উপর রাজকার্যের সার্বক্ষণিক দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়ে আব্দুর রহমান প্রায়ই সংগীতজ্ঞ জিরয়াবের সংগীত আসরে চিত্তবিনোদন করতেন।
সুলতানা তারুবও তাকে অত্যন্ত পছন্দ করতেন। রাজদরবারের সর্বত্র তার প্রভাব ছিল। সুলতানার অপরিসীম লোভ ছিল। সুলতানা তারুব তরুণ খোজা নাসেরকে দিয়ে ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী আমিরজাদা মোহাম্মদকে বিষ প্রয়োগে প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র করেন।
সুলতানার ইচ্ছে ছিল নিজ পুত্র আব্দুল্লাহকে বসানো। কিন্তু ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেলে আব্দুর রহমান অত্যন্ত কঠোর নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “যে বিষ মুহম্মদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল সেই বিষ দিয়েই যেন নাসেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।” ৮৫০ খ্রিস্টাব্দে হতভাগ্য খোজা নাসেরের জীবনাবসান হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আমির দ্বিতীয় আব্দুর রহমানের স্ত্রী সুলতানা তারুব এর প্ররোচণায় খোজা নাসের ষড়যন্ত্র করে ভুল করেন। তার ভুলের মাশুল দিতে হয় নিজের জীবন দিয়ে । এভাবে একজন রাজকর্মে দক্ষতাসম্পন্ন সচিবের জীবনাবসান ঘটে ।
আরো ও সাজেশন:-
জিরয়াবের পরিচয় দাও | জিয়াবের সম্পর্কে যা জান লিখ | জিরয়াব কে ছিলেন
উত্তর : ভূমিকা : স্পেনের আমির দ্বিতীয় আব্দুর রহমানের রাজত্বকালে যে চারজন ব্যক্তি স্পেনের রাজনীতি ও সমাজনীতির উপর বিশেষ প্রভাববিস্তার করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ জিরয়াব। জিরয়াব ছিলেন তার যুগের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি ইতিহাস, ভূগোল, জীবনী গ্রন্থ ও সুশিল সাহিত্যে ব্যাপকভাবে প্রভাব রাখেন।
→ জিরয়াব : সঙ্গীতজ্ঞ জিয়ার আমির দ্বিতীয় আব্দুর রহমানের উপর দারুন প্রভাববিস্তার করতে সক্ষম হন। তিনি ছিলেন জাতিতে পারসিক।
তার উপনাম ছিল আবুল হাসান আলী ইবনে নাফি (৭৮৯- ৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ) । তিনি বাগদাদের বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ও গায়ক ইসহাক আল মাউসিলির ছাত্র ছিলেন। একবার আব্বাসীয় খলিফা হারুন অর রশিদ ইসহাককে বলেন যে, তার কোনো নতুন গায়কের সন্ধান জানা আছে কিনা।
ইসহাক তখন তার সর্বশ্রেষ্ঠ ছাত্র জিরয়াবের কথা খলিফাকে বলেন । খলিফা যথা সময়ে তাকে তার সামনে হাজির করার জন্য বলেন।
ইসহাক তার ছাত্র জিরয়াবকে খলিফার সামনে হাজির করেন। খলিফা জিরয়াবকে গান গাইতে বললে জিরয়াব নিজের আবিষ্কৃত বাদ্যযন্ত্রে সাহায্যে গান গেয়ে শুনান। খলিফা তার প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হলে গুরু ইসহাক ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে বাগদাদ ত্যাগ করতে বলেন। তিনি বাগদাদ ত্যাগ না করলে তাকে হত্যা করার হুমকি প্রদান করেন।
তাই জিরয়াব গোপনে বাগদাদ ত্যাগ করেন। জিয়ার উত্তর আফ্রিকার কায়রোয়ানের আগলাবীয় শাসক প্রথম জিয়াতুল্লাহর দরবারে এসে উপস্থিত হন। একবার জিয়াতুল্লাহর সামনে জিরয়াব প্রাচীন আরবের কবি আনতারার একটি গান পরিবেশন করেন।
গানটির কদার্যতার জন্য সুলতান তাকে বেত্রাঘাত করেন এবং রাজ্য থেকে বের করে দেন। উপায়ন্ত না পেয়ে জিয়াব স্পেনের আমির হাকামের দরবারে আশ্রয়ের প্রার্থনা করেন। হাকাম তাকে আমার জন্য অনুমতি দেন কিন্তু ইতিমধ্যে তার মৃত্যু হয়।
Google Adsense Ads
পরে আমির দ্বিতীয় আব্দুর রহমান দরবারে তাকে সাদরে গ্রহণ করেন। আব্দুর রহমান তাকে স্বাগত জানাবার জন্য নিজে প্রাসাদ থেকে কর্ডোভার প্রবেশ দ্বারে আসেন। তাকে জাঁকজমকপূর্ণ একটি প্রাসাদে বাস করতে দেওয়া হয়।
জিয়াবের জন্য আমির দ্বিতীয় আব্দুর রহমান বাৎসরিক ৪০ হাজার দিনার বেতন দিতেন বলে পি কে হিট্টি অভিমত ব্যক্ত করেন। অতঃপর জিরয়াব আমিরের উপর এতো বেশি প্রভাববিস্তার করেন যে, যেকোনো অভিযোগকারী মনে করতেন যে, জিরয়াবের মাধ্যমে তাদের ফরিয়াদ আমিরের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব ।
জিরয়াব ছিলেন তার যুগের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতকারদের একজন এবং সম্ভবত স্পেনে সমগ্র ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত রচনাকারীদের একজন। স্পেনীয় মুসলিম সুশীল সমাজে তিনি নতুন রীতি নীতি প্রবর্তন করেন।
[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
পোশাক পরিচ্ছদ, কেশ বিন্যাস, ব্যক্তিগত স্বাস্থ, লন্ড্রি, প্রসাধন, গৃহস্থালী আসবাবপত্র এবং রন্ধন শিল্পে নতুন ধারার অবতারণা করেন। জিরয়াব বিচিত্র রকমের বাগদাদী রান্নার কৌশল স্পেনে প্রবর্তন করেন । মোটকথা গোটা স্পেনের সমাজের প্রতি ক্ষেত্রে জিরয়াব এক নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হন।
তিনি সঙ্গীতের মাধ্যমে আমিরের হৃদয় জয় করেছিলেন। কদাচিত তিনি রাজদরবারে তার প্রভাববিস্তারের চেষ্টা করতেন। তিনি সঙ্গীত শিল্পের একজন শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবক হিসেবে খ্যাতিঅর্জন করেন। কীর্তিমান এই সঙ্গীত শিক্ষক খ্যাতির সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেন।
তিনি কর্ডোভায় একটি সঙ্গীতনিকেতন চালু করেন। এতে উমাইয়া শাসকগণ পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। মুসলিম স্পেনে এই সঙ্গীতের ধারা খিলাফতের পতন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল এবং জিরয়াবই প্রথম পাশ্চাত্যে প্রাচ্য সঙ্গীত প্রবর্তন করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জিরয়াব ছিলেন সম্ভবত স্পেনের সমগ্র ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত রচনাকারীদের একজন। ৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে জিরয়াব একজন অপরিমেয় ধনসম্পদের অধিকারী হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন।
স্পেনের ইতিহাসে জিরয়াব এক অসাধারণ অবদান রেখে যেতে সক্ষম হন। জিরয়াবের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তার ছয়পুত্র এবং দুই কন্যা পিতার গুণের অধিকারী হন ।
Google Adsense Ads