জাহেলিয়া যুগের আরবের সামাজিক অবস্থা, রাসুল(স.) এর নবুয়ত লাভ, প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার, মদিনায় ইসলাম

জাহেলিয়া যুগের আরবের সামাজিক অবস্থা, রাসুল(স.) এর নবুয়ত লাভ, প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার, মদিনায় ইসলাম

নিদের্শনা:
১.জাহেলিয়া যুগের আরবের সামাজিক অবস্থা,
২.রাসুল(স.) এর নবুয়ত লাভ,
৩.প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার,
৪.মদিনায় ইসলাম প্রচার,

উত্তর সমূহ:

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের পূর্বে আরবের অবস্থা কুসংস্কারে ভরপুর ছিল। এমন কোন অরাজকতা, অনাচার, পাপাচার ছিলনা যা তারা করত না।

সমগ্র আরবে পূর্ণ অরাজকতা বিরাজমান ছিল। সারা আরব দৌরাত্ম্য অসভ্যতার লীলা ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল।

ব্যাপকভাবে সর্বত্র অত্যাচার, অনাচার, ব্যভিচার, চুরি, ডাকাতি, আত্মকলহ, হত্যা, রক্তপাত ও প্রতিহত ভাবে চলতে থাকতো। তার আগমনের পূর্ব যুগকে অন্ধকার যুগ বলা হয়। এ সম্পর্কে আমরা একটু বিস্তারিত জানব।


জাহেলিয়া যুগের আরবের সামাজিক অবস্থা

আইয়ামে জাহেলিয়ার পরিচয়: মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়াত প্রাপ্তির পূর্ব যুগকে আইয়্যামে জাহেলিয়া (الايام الجاهليه) বা অন্ধকার যুগ বলা হয়। আইয়্যাম অর্থ যুগ এবং জাহেলিয়া অর্থ অন্ধকার, কুসংস্কার, বর্বরতা, অজ্ঞতা।

যে যুগে আরব দেশে কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও আল্লাহ প্রদত্ত ধর্মীয় অনুভূতি লোপ পেয়েছিল সে যুগকেই অন্ধকার যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

তবে অন্ধকার যুগের সময়কাল সম্বন্ধে ইসলামী চিন্তাবিদদের মধ্যেও মতবিরোধ রয়েছে।

অনেকের মতে হযরত আদম আলাইহিস সালাম হতে মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত প্রাপ্তি পর্যন্ত দীর্ঘ সময়কেই অন্ধকার যুগ বলা যেতে পারে। কিন্তু এই অভিমত সর্বতোভাবে পরিত্যাজ্য। কারণ এক্ষেত্রে সকল নবী-রাসূলকে অস্বীকার করা হয়।(পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ দুই ভাবেই) হযরত আদম আলাইহিস সালাম হতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আবির্ভাব পর্যন্ত বিশ্বের ইতিহাসে যেসকল সভ্য জাতি ও সভ্যতা চির স্মরণীয় হয়ে আছে, সে গুলোকে তমাচ্ছন বলে আখ্যায়িত করা ইতিহাসকে অস্বীকার করা ছাড়া কিছুই নয়।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের পূর্বে আরবের অবস্থা যেমন ছিল।

অপর একদল গবেষক মনে করেন যে,হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের তিরোধানের পর হতে মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আবির্ভাব পর্যন্ত প্রায় ছয় শতাব্দি কালকে অন্ধকার যুগ বলে চিহ্নিত করা যায়। কারণ এ সময় ঐশী জীবনবিধান সম্পর্কে জগত সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিল। ইহুদি ও খ্রিস্টানদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এযুগের তমসাকে আরো পরিবর্তিত করে ও কুসংস্কারের দিকনির্দেশনা প্রদান করে। কিন্তু পরীক্ষার কষ্টিপাথরে এ অভিমতও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারণ খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ ও সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত দক্ষিণ আরব ও উত্তর আরবে শিক্ষাদীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-সাহিত্য, রাজনৈতিক চেতনাবোধ, অর্থনৈতিক উন্নতি, সামাজিক ব্যবস্থার সুষ্ঠু ব্যবহার যতখানি উৎকর্ষতা লাভ করেছিল, তাকে অন্ধকার বলে আখ্যায়িত করলে সত্যের অপলাপ করা হবে।

তবে বলা যায় ইসলাম পূর্ব যুগের আরববাসী বা আরব জাতি বলতে আইয়্যামে জাহেলিয়ার অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল অর্থাৎ হেজাজ এবং এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অধিবাসীরা অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীদের তুলনায় অধিকতর বর্বর, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, নৈতিকতাহীন, উশৃংখল এবং অজ্ঞানতায় নিমজ্জত ছিল।
ঐতিহাসিক বর্ণনায় জানা যায় যে, মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্মের প্রাক্কালে উত্তর এবং দক্ষিণ আরবে সমৃদ্ধশালী রাজবংশ স্বীয় আধিপত্য বিস্তার করেছিল।

উত্তর আরবের ‘হীরা’ ছিল একটি সমৃদ্ধশালী নগরী। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক 633 খ্রিস্টাব্দে হীরা অধিকৃত হলে এর সুরম্য হর্মরাজি মুসলিম বাহিনীকে স্তম্ভিত করে তোলে। প্রণিধানযোগ্য যে, পরবর্তীতে কুফা শহর ও মসজিদ সম্প্রসারণে হীরার স্থাপত্য রীতির অনুকরণ করা হয়েছিল। বস্তুত দক্ষিণ আরবের ‘হিমইয়ারী’ রাজ্য খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী এক বিস্ময়কর প্রতিভা।

এ রাজ বংশের অহংকারী আব্রাহা কাবা গৃহ ধ্বংস করতে গিয়ে নিহত হয়েছিল। সুতরাং একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, দক্ষিণে আরব মিনাইয়ান, সাবিয়ান ও হিমইয়রী সভ্যতাকে অজ্ঞতার আবর্তে নিক্ষেপ করা যায় না। অপরদিকে উত্তর আরবের নুফুদ অঞ্চলে নাবাতিয়ান, পালমিরা গাসসানী ও লাখমিদ রাজ্যগুলোর সমৃদ্ধির প্রতি লক্ষ্য করলে এগুলোকেও অন্ধকারাচ্ছন্ন বলা যায়না।

তাছাড়া উত্তর আরবের মরুময় নুফুদ অঞ্চলসহ নজদ ও হিজায প্রদেশ মরুচারী বেদুইনদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র ছিল। অন্তর্দ্বন্দ্ব, গোত্র কলহ, কাব্যে কুৎসা রচনায় মত্ত, রক্তলোলুপ লুটেরা বেদুইনদের মধ্যে পার্শ্ববর্তী সভ্যতার দাগ কাটতে পারেনি। দুর্দমনীয়, দুর্বিনীত অত্যাচারী হিজায ও নজদবাসীর ইতিহাস প্রাক-ইসলামী যুগের অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায়। বিশেষত হিজায ও তৎপার্শ্বস্থ এলাকায় নৈরাজ্যের ঘনঘটা বিরাজমান ছিল।

হিজাজের প্রচলিত আরবী ভাষায় কোরআন অবতীর্ণ হয়। এজন্য অন্ধকার যুগের আরব বলতে হেজাজ ও পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং অন্ধকার যুগ বলতে সে সময়কে বোঝানো হয়। দ্রষ্টব্য: ‘ইসলামের ইতিহাস’, দাখিল নবম-দশম শ্রেণী
ইসলাম-পূর্ব যুগে আরবের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অবস্থা একেবারে অবর্ণনীয় ছিল।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

তৎকালীন আরবের রাজনৈতিক অবস্থা বিশৃঙ্খলাপূর্ণ এবং হতাশাব্যঞ্জক ছিল। কোন কেন্দ্রীয় শক্তির নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্ব না থাকায় আরবে গোত্র প্রাধান্য লাভ করে। তাদের মধ্যে কোন ঐক্য ছিল না। গোত্রসমূহের মধ্যে সবসময় বিরোধ লেগেই থাকত।

তাদের সামাজিক জীবন অনাচার, পাপাচার, দুর্নীতি, কুসংস্কার, অরাজকতা, ঘৃণ্য আচার-অনুষ্ঠান এবং নিন্দনীয় কার্যকলাপে পরিপূর্ণ ছিল। আরবরা মদ, নারী ও যুদ্ধ নিয়ে মত্ত থাকত। তারা এত বেশি মদ্যপায়ী ছিল, যে কোন গর্হিত কাজ করতে তারা দ্বিধা বোধ করত না।

তাদের সমাজে নারীদের কোন সম্মান মর্যাদা বলতে কিছু ছিল না। নারী মানে ভোগ-বিলাসের সামগ্রী ও অস্থাবর সম্পত্তির মতো ছিল। অবৈধ প্রণয়, অবাধ মেলামেশা, একই নারীর বহু স্বামী গ্রহণ প্রথা ব্যাপক আকারে ছিল। ব্যভিচার এতো জঘন্য আকার ধারণ করেছিল তা বর্ণনাতীত।

বিষয় সম্পত্তিতে স্ত্রীদের কোন অধিকার ছিল না। নির্মমতা কতদূর পৌঁছালে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবরস্থ করা হয়! এমন নির্মম প্রথা তাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছিল। কন্যা সন্তানকে তারা অভিশপ্ত লজ্জাজনক ও অপয়া মনে করত।

দাস-দাসীদের জীবন ছিল অত্যন্ত দুর্বিষহ ও করুণ। মানবিক মর্যাদা ও ব্যক্তি স্বাধীনতা বলতে তাদের কিছুই ছিল না। হাটে বাজারে বিভিন্ন পণ্যদ্রব্যের মত দাস-দাসী ক্রয়-বিক্রয় হত। নির্মম অত্যাচারে দাস-দাসীদের নিরাপত্তা দারুণভাবে বিঘ্নিত হতো। তাদেরকে মানুষ হিসেবে গণ্য করার কথা আরবরা বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিল।


রাসুল(স.) এর নবুয়ত লাভ

মানবতার মুক্তিদূত হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন। খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ অধ্যাপক কে. আলী লিখেছেন, “৪০ বছর বয়সে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়তপ্রাপ্ত হন (৬১০ খ্রি.) এবং হেরা পর্বতের গুহায় তার কাছে প্রথম অহি নাজেল হয়। প্রথম প্রত্যাদেশ প্রাপ্তির পর তিনি গভীরভাবে বিচলিত হয়ে পড়লেন। কম্পিত ও ভীত-সন্ত্রস্ত হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রী বিবি খাদিজাকে (রা.) সব ঘটনা বর্ণনা করলেন।

ঘটনা শ্রবণের পর পবিত্রতা রমণী খাদিজা (রা.) বুঝতে পারলেন যে, তার স্বামীর ওপর মহান সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ বর্ষিত হয়েছে। তিনি তাকে সাহস ও উৎসাহ দান করলেন। অতঃপর তিনি তার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা-বিন-নওফেলের কাছে এ সংবাদ পেঁৗছালেন।

ওয়ারাকা ছিলেন তৎকালীন আরব বিশ্বের প্রখ্যাত পণ্ডিত। ইহুদি ও খ্রিস্টধর্ম সম্বন্ধে তাকে বিশেষজ্ঞ বলে ভাবা হতো। এ ঘটনা শ্রবণে তিনি অভিমত ব্যক্ত করলেন যে, মুসা (আ.) ও ঈসা (আ.) অনুরূপ ঐশীবাণী লাভ করেছিলেন। তাঁর এ উৎসাহসূচক কথাবার্তা ও আশ্বাসের বাণীতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।

কোরআন শরিফ অবতীর্ণ হওয়ার কিছু দিন পর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অহি নাজেল হলো : হে আমার রাসূল, তোমাকে তোমার প্রভু যে সত্য দান করেছেন, তা প্রচার কর।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

নবুয়ত প্রাপ্তির পর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিপথগামী মক্কাবাসীর কাছে ইসলাম প্রচার করতে শুরু করলেন। তিনি আরবাসীকে পৌত্তলিকতা হতে বিরত হয়ে সত্যধর্ম গ্রহণের দাওয়াত দিয়ে বললেন, ‘আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, তিনি স্রষ্টা ও সৃষ্টিকর্তা। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যুর মাধ্যমে তিনি আবার তা ফিরিয়ে নেন।

তার মতো আর কেউ নেই। সর্বপ্রথমে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অন্তরঙ্গ আত্দীয়-স্বজন ও বন্ধুদের কাছে অত্যন্ত গোপনে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। বিবি খাদিজাই (রা.) প্রথম তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও তাঁর প্রচারিত ধর্ম গ্রহণ করলেন। এর পর যদিও আলী ও জায়েদ ছিলেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, কিন্তু আবুবকরই বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে প্রথম তাঁর ধর্মমতকে সর্বান্তঃকরণে গ্রহণ করেছিলেন। শীঘ্রই খাদিজা, আবুবকর, আলী ও যায়েদসহ বিশজন লোক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন।

তাদের মধ্যে পাঁচজনকে দীক্ষা দেন আবুবকর। তারা হলেন পরবর্তীকালে পারস্য বিজেতা সা’দ-বিন-আবি ওয়াক্কাস, যুবাইর ইবনে আল-আওয়াম, ইসলামের তৃতীয় খলিফা ওসমান-বিন-আফফান, পরবর্তীকালে ইসলামের বীর যোদ্ধা তালহা এবং সম্পদশালী ও মহৎ চরিত্রের অধিকারী আবদুর রহমান-বিন-আউফ। আবদুর রহমান আরও চারজন মুসলমানকে ইসলামের পতাকাতলে সমবেত করেন।

তাদের মধ্যে সিরিয়া বিজেতা আবু ওবায়দা ইবনে আল-জাররাহও ছিলেন। এসব নবদীক্ষিত মুসলমানদের মধ্যে যায়েদ ব্যতীত সবাই কুরাইশ বংশের লোক ছিলেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন ক্রীতদাসও ছিলেন, যেমন ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হজরত বেলাল, ‘ক্ষুদ্রদেহী অথচ প্রগাঢ় বিশ্বাসী’ নামে খ্যাত হজরতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহাবা আবদুল্লাহ-বিন-মাসুদ প্রমুখ।

নবুয়ত লাভের তিন বছর পরে (৬১৩ খ্রি.) হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করার জন্য অহী পেলেন : ‘এবং তুমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের আত্দীয়-স্বজনদের নিকট পাপ ও আল্লাহদ্রোহিতার অবশ্যম্ভাবী ফল সম্বন্ধে সতর্ক করে দাও।

‘ অতঃপর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকাশ্যে সাফা পাহাড়ের পাদদেশে একটি সম্মেলন আহ্বান করলেন এবং পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন, ‘হে কুরাইশগণ তোমরা একত্রিত হও, হে কুরাইশগণ তোমরা একত্রিত হও।

আল-আমিনের এ ঘোষণায় কুরাইশরা জাতির সম্মুখে আসন্ন বিপদ ঘনায়মান ভেবে পাহাড়ের পাদদেশে সমবেত হলো এবং তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো- ব্যাপার কি? তিনি তখন বললেন, ‘আপনারা একটা কথা বিবেচনা করুন, যদি আমি আপনাদের বলি- এ পাহাড়ের পেছনে একদল শত্রু আপনাদের আক্রমণ করার জন্য অপেক্ষা করছে, আপনারা কি আমাকে বিশ্বাস করবেন?

তারা বলল, হ্যাঁ, কেননা আপনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি সারা জীবনে একটাও মিথ্যা কথা বলেননি।’


প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার

তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেওয়ার পর আল্লাহর হুকুমে নবীজি (সা.) প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দেন। মক্কার প্রচলন অনুযায়ী নবীজি সাফা পাহারে আরোহণ করে এক একটি গোত্রের নাম ধরে সমবেত হতে আহ্বান করেন।

সকলে সমবেত হওয়ার পর প্রথমে নবীজির সত্যবাদিতার ওপর তাদের বিশ^াসের সত্যায়ন গ্রহণ করলেন। এরপর সবাইকে একত্ববাদের দিকে ও তাঁকে নবী হিসেবে গ্রহণের আহ্বান করেন। তিনি বলেন, আমি আপনাদের আহ্বান করছি, আপনারা সাক্ষ্য দিন, ‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তিনি একক। তাঁর অংশীদার নেই। এবং আমি আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।’

প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা আসার পর নবীজি মক্কার মুশরিকদের চরম বিরোধিতার মুখে পতিত হন। তারা নানাভাবে নবীজিকে উপহাস করে। যন্ত্রণা দেয়। পথে কাঁটা বিছিয়ে দেয়।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

নবীজিও (সা.) নিজের দাওয়াতি মিশনে অবিচল থাকেন। কোরাইশের নেতারা জোট বেঁধে আবু তালিবের শরণাপন্ন হয়। আবু তালিবকে কখনও হুমকি ধমকি দিয়ে কখনও প্রলোভন দেখিয়ে মহানবীকে (সা.) সহযোগিতা না করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। আবু তালিব কখনও নরমে কখনও গরমে তাদের শান্ত করে বিদায় করেন। আবু তালিব নিজে মুসলমান না হলেও নবীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন।

দুর্বল মুসলমানদের ওপরও নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। হজরত বেলাল, মুসআব ইবনে উমায়ের, আম্মারসহ অনেক সাহাবিকে অমানুষিক নির্যাতন করে। জুলুম নির্যাতনের মাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠলে নবীজি সাহাবিদের হাবশায় হিজরতের অনুমতি দেন। সাহাবায়ে কেরাম দুইবার হাবশায় হিজরত করেন। প্রথমবার দশজন পুরুষ ও পাঁচজন মহিলা হিজরত করেন। দ্বিতীয়বার তিরাশিজন পুরুষ ও উনিশজন মহিলা হিজরত করেন। এই হিজরত নবুয়তের পঞ্চম বছর রজব মাসে সংঘটিত হয়। (সীরাত বিশ^কোষ : ৩/৩৬০)
মুসলমানরা হিজরত করে হাবশায় নিরাপদ জীবনযাপন করায় কোরাইশের কাফেররা আক্রোশে ফেটে পড়ছিল।

মুসলমানদের ফিরিয়ে আনতে অর্থ ও দামি উপহারসহ হাবশার শাসকের কাছে প্রতিনিধি দল পাঠাল তারা। আব্দুল্লাহ বিন আমর ও আমর বিন আস কোরাইশের পক্ষ থেকে উপঢৌকন নিয়ে নাজ্জাশির দরবারে উপস্থিত হয় এবং মুসলমানদের নামে নানা বিষোদগার করে তাদেরকে হাতে তুলে দেওয়ার আবেদন করল। নাজ্জাশি একপক্ষীয় কথায় সিদ্ধান্ত না দিয়ে মুসলমানদেরও দরবারে ডাকলেন। তাদের কথাও শুনলেন।

মুসলমানরা ইসলাম, তাওহিদ, নবীজির অনুপম চরিত্র এবং মক্কায় মুসলমানদের ওপর কাফেরদের অত্যাচারের বিষয়ও জানালেন। সবকিছু শুনে বাদশাহ মুসলমান পূর্ণ নিরাপত্তাদানের ঘোষণা দিলেন। কোরাইশি প্রতিনিধি দল ব্যর্থ হয়ে মক্কায় ফিরে আসে। (সীরাত বিশ^কোষ : ৩/৩৮৫)
এদিকে মক্কায় ধীরে ধীরে হজরত হামজা, হজরত উমরসহ অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেন। নবীজির (সা.) ওপর কাফেরদের অত্যাচারও বৃদ্ধি পায়।

কাফেররা নবীজিকে কোনোভাবে আটকাতে না পেরে তাঁর কাছে এক অসম্ভব দাবি করে বসল। তাঁরা বলল, যদি আপনি আসমানের চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করে এক খণ্ড কুবাইস পাহাড়ে আরেক খণ্ড কুআইকিয়ান পাহাড়ে দেখাতে পারেন তাহলে আমরা বিশ^াস করব আপনি নবী। নবীজি (সা.) আল্লাহর হুকুমে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করে দেখালেন। কিন্তু হতভাগা কোরাইশ ঈমান আনল না। (সীরাত ইবনে হিশাম : ৩/৪১৭)

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]


মদিনায় ইসলাম প্রচার

নবুয়্যত লাভের পর প্রথমে নিকটাত্মীয়দের কাছে ইসলামের দাওয়াত দেন মুহাম্মদ । সর্বপ্রথম মুহাম্মদ এর স্ত্রী খাদিজা ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর মুহাম্মদ আল্লাহর নির্দেশে মক্কায় সরাসরি ইসলাম প্রচার শুরু করেন।

কিন্তু তৎকালীন মক্কাবাসীরা এই নতুন ধর্মকে মেনে নিতে পারেনি। তারা মুহাম্মদ ও তার অনুসারীদের প্রতি নির্যাতন শুরু করে। তাই আল্লাহর নির্দেশে মুহাম্মদ ও তার অনুসারীরা মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন।

এই হিজরতইক আরবী বর্ষপঞ্জীর (হিজরি) ভিত্তি। এটি ছিল মুম্মদের এর জীবনের অন্যতম উল্ল্যেখ যোগ্য ঘটনা। মদিনায় মুহাম্মদ ও তার সহচররা পূর্ণ উদ্দমে ইসলাম প্রচার শুরু করেন।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

আমাদের YouTube এবং Like Page

  • ১১ম -১২ম শ্রেণীর এইচএসসি ও আলিম এসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক
  • ১০ম শ্রেণীর এসএসসি ও দাখিল এসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক
  • ৬ষ্ঠ ,৭ম,৮ম ৯ম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক
  • ৯ম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক
  • ৮ম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক
  • ৭ম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক
  • ৬ষ্ঠ শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক

এখানে সকল প্রকাশ শিক্ষা বিষয় তথ্য ও সাজেশন পেতে আমাদের সাথে থাকুন ।

Leave a Comment