Google Adsense Ads
জাবেদার কাকে বলে । জাবেদার কত প্রকার ও কি কি । জাবেদার সুবিধা ও অসুবিধা । জাবেদার বৈশিষ্ট্য । জাবেদার গুরুত্ব
জাবেদার কাকে বলে । জাবেদার কত প্রকার ও কি কি । জাবেদার সুবিধা ও অসুবিধা । জাবেদার বৈশিষ্ট্য । জাবেদার গুরুত্ব
জাবেদার কাকে বলে :-
ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সংঘটিত লেনদেনসমূহ লিপিবদ্ধকরণের সর্বপ্রথম পর্যায় হলো জাবেদা। ইংরেজি Journal শব্দটি ফরাসি ‘Jour’ শব্দ হতে উৎপত্তি হয়েছে। ‘Jour’ এর অর্থ হলো দিন। দৈনন্দিন হিসাবের লেনদেনগুলো যে বইতে সর্বপ্রথম প্রাথমিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়, তাকে জাবেদা বা Journal বলে।
অর্থাৎ কারবারি প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত লেনদেনসমূহ যে হিসাবের বইতে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুযায়ী ডেবিট ও ক্রেডিট বিশ্লেষণ করে তারিখের ক্রমানুসারে লিপিবন্ধ করা হয়, তাকে জাবেদার বলে।
হিসাব শাস্ত্রবিদগণ জাবেদাকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিচে এর কয়েকটি সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো।
Kieso & Weygandt-এর মতে জাবেদা হলো হিসাববিজ্ঞানের একটি রেকর্ড বা বিবরণী যেখানে লেনদেনগুলো তারিখের ক্রমানুসারে লিপিবন্ধ করা হয়।
Pyle & Larson এর মতে, “জাবেদা হলো প্রাথমিক দাখিলার একটি বই যাতে লেনদেনসমূহ প্রথমে লিপিবন্ধ করা হয়, যা হতে পরবর্তীতে লেনদেনসমূহ খতিয়ান হিসাবসমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়।”
অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনগুলো সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে তারিখ অনুযায়ী ডেবিট ও ক্রেডিট দিক বিশ্লেষণ করে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ ক্রমান্বয়ে সাজিয়ে সর্বপ্রথম যে প্রাথমিক হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়, তাকেই জাবেদা বা Journal বলে।
জাবেদা বা জার্নাল কত প্রকার ও কি কি:-
যথা নিয়মে লেনদেনসমূহকে জাবেদায় লিখাকে জাবেদা দাখিলা বলে। ব্যবহারিক প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রকার জাবেদা দাখিলা দিতে হয়। এতে হিসাব প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও সমন্বিত হয়। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার জাবেদা দাখিলার বর্ণনা প্রদান করা হলো।
১. সরল জাবেদা দাখিলা (Simple journal entry) :-
একটি লেনদেনের জন্য জাবেদা দাখিলাতে যখন একটি হিসাব ডেবিট এবং আরেকটি হিসাব ক্রেডিট থাকে, তখন তাকে সরল জাবেদা দাখিলা বলা হয়।
২. মিশ্র জাবেদা দাখিলা (Compound journal entry) :-
কোনো লেনদেনে দুইয়ের অধিক পক্ষ থাকলে এবং একাধিক পক্ষকে ডেবিট অথবা ক্রেডিট করে জাবেদা করতে হলে, তাকে মিশ্র জাবেদা দাখিলা বলা হয়।
৩. প্রারম্ভিক জাবেদা দাখিলা (Opening journal entry) :-
যে জাবেদা দাখিলার মাধ্যমে একটি চলমান প্রতিষ্ঠানের গত বছরের সম্পত্তি ও দায়সমূহ বর্তমান বছরের প্রারম্ভিক সম্পত্তি ও দায় হিসাবে বছরের নতুন হিসাবের বইতে লিখা হয়, তাকে প্রারম্ভিক জাবেদা দাখিলা বলা হয়।
[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
জাবেদারের বৈশিষ্ট্য :-
জাবেদা হিসাব প্রক্রিয়ার প্রথম বই। কারণ লেনদেন সংঘটিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম প্রতিটি লেনদেনকে সংক্ষিপ্ত বিবরণীসহ ডেবিট ও ক্রেডিট বিশ্লেষণ করে ধারাবাহিকভাবে জাবেদায় সংরক্ষণ করা হয়। তাই জাবেদায় কতকগুলো বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। জাবেদার বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো।
১. প্রাত্যহিক রেকর্ড বই :-
জাবেদাকে প্রাত্যহিক রেকর্ড বই বলা হয়। কারণ দৈনিক সংঘটিত লেনদেনসমূকে প্রতিদিন জাবেদাভুক্ত করা হয়।
আরও পড়ুন :- জাবেদার কাকে বলে । জাবেদার কত প্রকার ও কি কি
২. ধারাবাহিকতা :-
লেনদেনসমূহকে জাবেদায় তারিখ অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে পর পর লিখতে হয়। তাই জাবেদাকে হিসাবের ধারাবাহিক বইও বলা হয়।
৩. খতিয়ানের সহায়ক বই :-
হিসাবের খাতা অনুযায়ী জাবেদায় লেনদেনসমূহকে লিপিবদ্ধ করা হয় বলে লেনদেনগুলোকে সহজে সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে স্থানান্তর করা যায়। তাই জাবেদাকে খতিয়ানের সহায়ক বইও বলা হয়।
৪. দ্বৈতসত্তার উল্লেখ :-
দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুযায়ী জাবেদায় প্রতিটি লেনদেনের সাথে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহকে ডেবিট ও ক্রেডিট করে লিখা হয়।
৫. প্রাথমিক বই :-
ব্যবসায়ে সংঘটিত লেনদেনকে সর্বপ্রথম জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়। তাই জাবেদাকে হিসাবের প্রাথমিক বই বলা হয়।
৬. বিভিন্ন ঘরে বিভক্ত :-
জাবেদার প্রতিটি পৃষ্ঠাকে তারিখ বিবরণ, খতিয়ান পৃষ্ঠা, ডেবিট ও ক্রেডিট এ পাঁচটি পৃথক কলামে বিভক্ত করতে হয়।
Google Adsense Ads
৭. টাকার অংক লিখন :-
জাবেদায় সমপরিমাণ টাকার অংকে প্রতিটি লেনদেনকে ডেবিট ও ক্রেডিট করে লিখতে হয়।
৮. শ্রেণিবিভাগ :-
ব্যবসায়ের আকার ও প্রকৃতি এবং লেনদেনের সংখ্যা বিবেচনা করে জাবেদাকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। যেমন- ক্রয় বই, বিক্রয় বই, ক্রয় ফেরত বই, বিক্রয় ফেরত বই, প্রাপ্য বিল, প্রদেয় বিল, নগদান বই এবং প্রকৃত জাবেদা বই। প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন বিবেচনা করে জাবেদা বইয়ের ব্যবহার নির্ধারণ করা হয়।
৯. ব্যাখ্যা প্রদান :-
লেনদেনের সার্বিক উৎস নিরুপণের লক্ষ্যে জাবেদাভুক্ত প্রতিটি লেনদেন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিতে হয়।
জাবেদার উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো দেখতে পাওয়া যায়। এসব বৈশিষ্ট্যের জন্যই জাবেদা বইকে অন্যান্য হিসাবের বই থেকে সহজেই পৃথক করা যায়।
জাবেদারের প্রয়োজনীয়তা ও সুবিধা এবং গুরুত্ব :-
সংঘটিত লেনদেনগুলো প্রথমে জাবেদাভুক্ত না করে সরাসরি খতিয়ান বহিতে লিপিবদ্ধ করলে ভবিষ্যতে ঝামেলা হতে পারে। কোন নির্দিষ্ট তারিখে দেনাদার ও পাওনাদারের মধ্যে দেনা পাওনা নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে খতিয়ান বই হতে তথ্য বের করা সময় সাপেক্ষ। কাজেই দ্রুত সময়ে তথ্য বের করার জন্য জাবেনা বইয়ের প্রয়োজন।
আরও পড়ুন :- জাবেদার কাকে বলে । জাবেদার কত প্রকার ও কি কি
ব্যবসায় জগতে প্রতিদিন অনেক লেনদেন সংঘটিত হয়। এই লেনদেনগুলোকে সরাসরি খতিয়ান বইতেও দেখা যায়। কোন একটি লেনদেন খতিয়ান বইতে লেখা না হলে তা খুঁজে বের করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এই কষ্টসাধ্য বা ঝামেলাপূর্ণ কাজ হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য জবেদা বইয়ের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। নিম্নে এর প্রয়োজনীয়তা বা সুবিধা আলোচনা করা হলোঃ
১. হিসাবের প্রাথমিক বই :-
কোন লেনদেন সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সর্বপ্রথম এই বইতে হিসাবভুক্ত করা হয়। ফলে কোন লেনদেন হিসাবভুক্ত করণে বাদ পড়ে না। এ সব কার্যক্রমের ফলে নিখুঁত হিসাব সংরক্ষিত হয়।
২. দু’তরফা দাখিলার প্রয়োগ :-
সংঘটিত লেনদেনগুলোকে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির নীতি অনুসারে ডেভিড ও ক্রেডিট নির্ণয় করে লিপিবদ্ধ করা হয়। ফলে ইহা বিজ্ঞানসম্মত এবং সর্বজনের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
৩. খতিয়ানের সাহায্যকারী :-
জাবেদা হতে খতিয়ান বইতে লেনদেনগুলো তারিখের ক্রমানুসারে লিপিবদ্ধ হয় বলে কোন লেনদেন হিসাব হতে বাদ পড়ে না। ফলে খতিয়ান বইতে সঠিক ফলাফল প্রদর্শিত হয়।
আরও পড়ুন :- রেওয়ামিল কাকে বলে?
৪. ভুল ত্রুটি হ্রাস :-
প্রতিদিনের লেনদেন তারিখের ক্রমানুসারে প্রথমে এই বইতেতে লেখা হয় বলে হিসাবের ভুল ত্রুটি হ্রাস পায়।
৫. তথ্যের উৎস :-
লেনদেনগুলোকে তারিখের ক্রমানুসারে প্রথমে জাবেদা বইতে লেখা হয়। ফলে একটি নির্দিষ্ট তারিখের প্রয়োজনীয় তথ্য অতি সহজেই খুঁজে বের করা যায়।
সুতরাং পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, নিখুঁত হিসাব এবং সর্বেজিনের নিকট গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য জাবেদার কোন বিকল্প নেই। তাই ইহার প্রয়োজনীয়তা ও সুবিধা অনস্বীকার্য।
Google Adsense Ads