ছবির ভদ্রলোকের নাম চন্দন কুমার বনিক। পেশায় একজন ব্যাংকার

ছবির ভদ্রলোকের নাম চন্দন কুমার বনিক। পেশায় একজন ব্যাংকার; সোনালী ব্যাংকের ঠাকুরগাঁও প্রিন্সিপাল অফিসের কর্মকর্তা।

উনার উচ্চতা তিন ফুট। স্ট্রেচারের সাহায্য ছাড়া হাঁটা-চলা করতে পারেন না। জন্মের পর থেকেই এমন। এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।

অদম্য এই মানুষটিকে জীবনে অনেক কঠিন পথ পারি দিতে হয়েছে। হাজারো কটুক্তি শুনেও থেমে যাননি। শুধুমাত্র মেধা আর নিরলস প্রচেষ্টার জোরে বলার মতো একটা পর্যায়ে এসেছেন। আর্থিক ও পারিবারিক সঙ্কটকে রূপান্তর করেছেন শক্তিতে।

চন্দন দা এখন পর্যন্ত ২০টি চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে দশটি পরীক্ষা তিনি সুদূর ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকায় এসে দিয়েছেন। সোনালী ব্যাংকসহ চারটি ভাইবা দিয়ে আগের তিনটি চাকরি পাননি।

কিন্তু তিনি থেমে যাননি। কোথাও কোনো কোচিংও করেননি। আবার নতুন করে শুরু করলেন। সোনালী ব্যাংকে প্রিলি ও লিখিত পাস করলেন। অবশেষে জীবনের চতুর্থ ভাইবা দিয়ে সফল হলেন; চাকরি পেলেন।

একবার ভাবুন তো- যে মানুষটি শারীরিকভাবে স্বাভাবিক নয়, স্ট্রেচার ছাড়া হাঁটতে পারেন না; পারিবারিক ও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তিনি যদি নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেতে পারেন,

তাহলে আপনি কেন পারবেন না?
অনেকেই বলতে পারেন- চন্দন দা’র তো কোটা ছিল। হ্যাঁ ছিল, কিন্তু সেটা তো লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পর কার্যকর হয়। নিজ মেধার যোগ্যতায় লিখিত পরীক্ষায় পাস করেছেন তিনি। অনেক কষ্টের বিনিময়ে ভালো চাকরি পেয়েছেন। বিয়েও করেছেন, নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন…।

গুনে গুনে বলুন তো- আপনি জীবনে মোট কয়টা পরীক্ষা দিয়েছেন? এর মধ্যে কয়টা পরীক্ষা যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে দিয়েছিলেন? চন্দন দা কিন্তু দশটি পরীক্ষা প্রস্তুতি নিয়ে দিয়ে সফল হয়েছেন।

আসলে আমাদের প্রস্তুতি আর মনোবলের ঘাটতি রয়েছে। যার ফলে অল্পতেই হতাশ হয়ে যাই। আপনি-আমি চন্দন দা’র থেকে অনেক ভালো অবস্থায় আছি। উনি পারলে আমরাও পারবো। মানুষ চাইলে পারে না- এমন কিছুই নেই!

Leave a Comment