ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এগারো দফা দাবি বর্ণনা করো,১১ দফা কর্মসূচী কী ,১১ দফা আন্দোলন কী এবং কবে ঘোষনা করা হয়?,ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের কর্মসূচি কী ছিল?

প্রশ্ন সমাধান: ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এগারো দফা দাবি বর্ণনা করো,১১ দফা কর্মসূচী কী ,১১ দফা আন্দোলন কী এবং কবে ঘোষনা করা হয়?,ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের কর্মসূচি কী ছিল?

১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৭ ও ৮ জানুয়ারি  গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি বা ড্যাক (উঅঈ) গঠিত হয়।

এগারো দফা কর্মসূচি

১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই জানুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এগারো দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা জানুয়ারি  ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। এই পরিষদ ১১ দফা ও ৬ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন গড়ে তোলে। এই আন্দোলনের ফলে সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় এবং শেখ মুজিবকে শর্তহীন মুক্তি দেয়।

এগারো দফা

পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে এ দেশের ছাত্রসমাজ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ দেশের ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকা শুরু হয়। পরবর্তীকালে ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তাদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সক্রিয়। অতঃপর তারা ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর হতে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছাত্ররা যে এক সুসংবদ্ধ ও সফল আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তা ইতিহাসে বিরল। 

১১ দফা কর্মসূচি :

১. শিক্ষা সমস্যার আশু সমাধান। অর্থাৎ, হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় সমস্ত আইন বাতিল করা এবং ছাত্রদের সকল মাসিক ফি কমিয়ে আনা।

২. প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং পত্রিকাগুলোর স্বাধীনতা দেওয়া এবং দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশনার নিষেধাজ্ঞা তুলে ফেলা।

৩. ছয় দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তানে পূর্ণসায়ত্তশাশন প্রতিষ্ঠা।

৪. পশ্চিম পাকিস্তানের সকল প্রদেশগুলো অর্থাৎ উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ, বেলুচিস্তাান, পাঞ্জাব,সিন্ধু) স্বায়ত্তশাসন দিয়ে একটি ফেডারেল সরকার গঠন।


আরো ও সাজেশন:-

৫. ব্যাংক, বীমা, পাটকল-সহ সকল বৃহৎ শিল্প জাতীয়করণ।

৬. কৃষকদের উপর থেকে কর ও খাজনা হ্রাস এবং পাটের সর্বনিম্নমূল্য ৪০ টাকা(স্বাধীনতার দলিলপত্রে উল্লেখ রয়েছে) ধার্য করা।

৭. শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা এবং শ্রমিক আন্দোলনে অধিকার দান।

৮. পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও জল সম্পদের সার্বিক ব্যবহারের ব্যবস্থা গ্রহণ।

৯.জরুরি আইন, নিরাপত্তা আইন এবং অন্যান্য নির্যাতনমূলক আইন প্রত্যাহার।

১০. সিয়াটো (SEATO), সেন্ট্রো (CENTRO)-সহ সকল পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল এবং জোট বহির্ভূত নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ।

১১. আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি-সহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক ও রাজনৈতিক কর্মীদের মুক্তি ও অন্যান্যদের উপর থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

এই দাবীর সমর্থনে ডাকসুর সহ-সভাপিত তোফায়েল আহমেদ ও সাধারন সম্পাদক নাজিম কামরান চৌধুরী , ছাত্র ইউনিয়ন(মতিয়া)এর সাইফ উদ্দিন আহম্মদ মাণিক ও নুরুল ইসলাম, ছাত্রলীগের আবদুর রউফ ও খালেদ মোহাম্মদ আলী এবং ছাত্র ইউনিয়ন(মেনন)এর মোস্তফা জামাল হায়দার এই সাতজন ছাত্রনেতা বিবৃতি প্রদান করেন। ছাত্রলীগ , ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) ও ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) এই তিনটি ছাত্র সংগঠন মিলে গঠন করে ‘সম্মিলিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’। জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন-এন এস এফ (দোলন)ও এর সাথে একাত্ম হয়।

এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোও ঐক্যবদ্ধ হয়ে গঠন করে ‘ডেমোক্রেটিক এ্যাকশন কমিটি’-‘ডাক’। নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান হন ‘ডাক’এর আহ্বায়ক। ছাত্র জনতা ১১-দফা দাবীর মধ্যে তাদের মুক্তির নিশান দেখতে পায়। তাদের কাঙ্খিত আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটে এই ১১-দফা দাবীর মধ্যে। তাই ‘সম্মিলিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ ও ‘ডাক’ আহুত সকল আন্দোলন সংগ্রামে তারা প্রাণবাজী রেখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহণ করে। সকল যুগেই দেখা গেছে ক্ষমতা বিবেকহীন মানুষকে অন্ধ করে তোলে।

স্তাবকদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে এসব ক্ষমতাসীনেরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তাই জনগণের সমস্যাবলী নিরসন করে সুশাসন কায়েমের বদলে তারা স্বৈরাচারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। জনগণের সাথে ছলচাতুরী ও তাদের দমন পীড়নের মাধ্যমেই এই স্বৈরাচারী শাসকেরা ক্ষমতার ভিত্তি পাকাপোক্ত করতে চায়।

১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। শাসকগোষ্ঠি অস্ত্রের ভাষা প্রয়োগ করে নিজেদেরই চরম লাঞ্ছনাকর পরাজয় ডেকে আনলো। সিরাজুল আলম খান, কাজী আরেফ আহমেদ ও আবদুর রাজ্জাকের এর নেতৃত্বে বাংলার স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে গঠিত গোপন সংগঠন ‘ নিউক্লিয়াস ’ এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে কৌশলে গঠন করে তার রাজনৈতেক ডানা (Wing) ‘বেঙ্গল লিবারেশেন ফোর্স ’ ও সামরিক ডানা ‘জয় বাংলা বাহিনী’ । এরা এই আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ সাহসী ভূমিকা রাখে।

মূলত এই ‘নিউক্লিয়াস’ই ১১-দফা আন্দোলনের পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়ন করে। এই দাবী ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১১-দফার ঝান্ডা উড়িয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে স্বৈরশাসকগোষ্ঠির গুলির আঘাতে শাহাদত বরন করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিপ্রাপ্ত এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় আইন মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুজ্জামান , নবকুমার ইনষ্টিটিউটের দশম শ্রেণীর ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক , শিশু সন্তানকে স্তন্যদানরত নাখালপাড়ার গৃহবধূ আনোয়ারা বেগম , পাবনার সুজানগরের ছাত্র আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।

এঁদের রক্তস্্েরাতে গণজোয়ার প্রবল থেকে প্রবলতর হতে থাকলো । তথাকথিত ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র ’ মামলার অন্যতম আসামী সার্জেন্ট জহুর , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ডঃ জোহাকেও প্রাণ দিতে হলো। অতঃপর জনদাবীর কাছে মাথা নোয়ালো স্বৈরশাসকগোষ্ঠি।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment