চেকের জালিয়াতী ও প্রতারণার বিপক্ষে ব্যাংকের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা কী কী?

Advertisement

চেকের প্রতারণা ও জালিয়াতি : ইচ্ছাকৃত ভাবে চেকে কোন ভুল তথ্য প্রদান করে ব্যাংকে উপস্থাপন করে ব্যাংক থেকে টাকা তোলাকে চেকের প্রতারণা বা জালিয়াতি বলা হয়। অপরদিকে কোন প্রস্তুতকৃত চেকে অবৈধভাবে কোনরূপ পরিবর্তন করে অথবা আদেষ্টার স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংকে চেক উপস্থাপনের মাধ্যমে টাকা তোলাকে জালিয়াতি বলে।

ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা আমানত রাখে এবং গ্রাহকদের চাহিদামাত্র ব্যাংক প্রয়োজনীয় অর্থ দিতে বাধ্য থাকে। এর ফলে সমাজের কিছু লোভী, প্রতারক ও হীনচক্রান্তকারী লোকেরা চেকের জালিয়াতি ও প্রতারণা করার প্রয়াস গ্রহণ করে।


কোন জামানতাকারীর হিসাবে যে পরিমাণ টাকা আছে তা থেকে বেশী অংকের টাকা চেকে লিখা, ভুল হিসাব নম্বর লিখা, একই ব্যাংকের অন্য শাখার চেক উপস্থাপন করা, এক হিসাবের চেক অন্য হিসাবের জন্য জমা করা, যথাযথ হস্তান্তর ব্যাতিরিকে চেক জমা দেয়া প্রভৃতি পন্থা ইচ্ছাকৃত ভাবে অবলম্বন করে ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর চেষ্টা করাকে চেকের প্রতারণা বলা হয়

অপর দিকে চেকের কোন ধরনের পরিবর্তন করা যেমন- স্বাক্ষর জাল করা, প্রাপকের নাম, টাকার পরিমাণ, চেকের তারিখ পরিবর্তন অনুমোদনের স্বাক্ষর জাল, হিসাব নম্বর পরিবর্তন ইত্যাদি কৌশল অবলম্বন করে ব্যাংক থেকে অর্থ উঠানোর জন্য চেক ইস্যু বা উপস্থাপন করা হলে তাকে জালিয়াতি বলা হয়।

অতএব কোন অবৈধ পন্থা অবলম্বন করার মাধ্যমে ব্যাংক থেকে যে কেউ টাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা করলে তাকে চেকের প্রতারণা ও জালিয়াতি বলা হয়।
চেকের জালিয়াতি ও প্রতারণার বিপক্ষে ব্যাংকের শতর্কতা বা করণীয় সমূহ :

জনসাধারণ ব্যাংকে টাকা জমা রাখে তাদের টাকার নিরাপত্তার জন্য। যাতে করে সময়মত প্রয়োজনীয় অর্থ যথাযথ ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু প্রায়সতই ব্যাংকের টাকা জালিয়াতি ও প্রতারণার খরব পাওয়া যায়। যার ফলে আমানতকারীদের
ব্যাংকের প্রতি আস্থা ব্যবহৃত হ্রাস পায়। এর ফলে আমানত বৃদ্ধি হয় এবং মূলধন গঠনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

তাই ব্যাংকের আমানত নিরাপদ রাখা এবং প্রতারণা ও জালিয়াতি বন্ধ করার জন্য ব্যাংক কতিপয় ব্যবস্থাগ্রহণ করে থাকে। ব্যাংক চেকের প্রতারণা ও জালিয়াতি বন্ধ করার জন্য যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে নিচে বর্ণনা করা হলো :

Advertisement

১. ব্যাংক ও শাখা : কোন চেক ব্যাংকে উপস্থাপন করা হলে প্রথমেই দেখতে হবে উক্ত চেক তাদের ব্যাংকের ও শাখার কিনা।

২. স্বাক্ষর পরীক্ষা : জমাকৃত চেকটি নির্দিষ্ট জায়গায় চেকের আদেষ্টার স্বাক্ষর আছে কিনা ও উক্ত স্বাক্ষর তার ব্যাংকে জমাকৃত নমুনা স্বাক্ষরের সাথে হুবহু মিল আছে কিনা।

৩. চেকের তারিখ : চেকে তারিখ আছে কিনা তা পরীক্ষা করা। মেয়াদ উত্তীর্ণ চেক বা অগ্রিম চেকের টাকা পরিশোধ করা যাবে না। এমনকি চেকে তারিখ কাটা কাটি থাকলে আদেষ্টার নমুনা স্বাক্ষর না থাকলেও টাকা প্রদান করা যাবে না।

৪. চেকের পাতা সঠিক কি না : ব্যাংক কোন আমানত কারীকে একটি নির্দিষ্ট চেক বই দেয় যেখানে নির্দিষ্ট ক্রমিক নম্বর থাকে। যা উক্ত গ্রহকের লেজার বইয়ে লিপিবদ্ধ করা থাকে। চেকের টাকা পরিশোধ করার পূর্বে দেখতে হবে যে উক্ত
চেকের নম্বর তার নামে ইস্যুকৃত সিরিয়াল নম্বরের সাথে বা মধ্যে কিনা।

৫. অর্থের পরিমাণ : চেকে উলে−খিত টাকার পরিমাণ কথায় ও অংকে লিখা আছে কিনা এবং অংকে ও কথায় টাকার পরিমাণ একই কিনা তা পরীক্ষা করা।

৬. প্রাপকের স্বাক্ষর : চেকের প্রস্তুতকারক ব্যাতিত অন্য কেউ ব্যাংকে উপস্থাপন করলে তার স্বাক্ষর অবশ্যই দিতে হবে।

৭. চেকের পরিবর্তন: চেকে কোন ধরনের পরিবর্তন যেমনঃ তারিখ পরিবর্তন, টাকার অংক পরিবর্তন ইত্যাদি। এক্ষেত্রে আদেষ্টার ব্যাংকে রক্ষিত নমুনা স্বাক্ষর চেকে আছে কিনা তা পরীক্ষা করা।

৮. ছেড়া চেক : চেক ছেড়া বা মুচড়ান আছে কিনা তা দেখা। ব্যাংকে উপস্থাপিত চেক যদি ছেড়া বা মুচড়ান হয় তবে ব্যাংক প্রত্যাখান করবে।

৯. চুরি করা চেক : কোন চেক চুরি করা বা পথে পাওয়া হয়ে থাকলে ব্যাংক টাকা প্রদান করবে না।

১০. হিসাব নম্বর : ব্যাংকে উপস্থাপিত চেকে যে হিসাব নম্বর আছে তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এক হিসাব নম্বরের চেক অন্য হিসাব নম্বরে জমা দেয়া হয়ে ব্যাংক টাকা প্রদান করবে না।

১১. চেকের প্রকৃত মালিক পরীক্ষা বা যাচাই করা : হুকুম চেক হলে চেকে উলে−খিত ব্যক্তি এবং টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি একই কিনা তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হবার পর টাকা প্রদান করা।

১২. আদালতের নিষেধাজ্ঞা : কোন চেকের মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে আদালতের কোনরূপ নিষেধাজ্ঞা থাকলে চেকের টাকা প্রদান করা যাবে না।

১৩. আদেষ্টার মৃত্যু বা দেউলিয়া হলে : চেকের আদেষ্টার মৃত্যু বা দেউলিয়া ঘোষিত হলে উক্ত চেকের বিপরীতে টাকা প্রদান করা যাবে না।

Advertisement 2

১৪. আদেষ্টার নিষেধাজ্ঞা : চেক দাতা ও প্রস্তুতকারক কোন কারণে কোন চেকের টাকা পরিশোধ করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে থাকলে উক্ত চেকের টাকা পরিশোধ করা যাবে না।

১৫. আদেষ্টা অপ্রকৃতিস্ত বা পাগল হলে : চেকের আদেষ্টা মস্তিষ্ক বিকৃতি বা পাগল হলেও চেকের টাকা পরিশোধ করা যাবে না।

১৬. সন্দেহযুক্ত : চেকের মূল্য পরিশোধ করার পূর্বে চেকে কোন প্রকার সন্দেহ আছে কিনা তা নিশ্চিত করার পরই শুধু টাকা পরিশোধ করবে। কোনরূপ সন্দেহ থাকলে চেকের টাকা পরিশোধ করা যায় না।

H.S.C

Advertisement 5

Advertisement 2

Advertisement 3

3 thoughts on “চেকের জালিয়াতী ও প্রতারণার বিপক্ষে ব্যাংকের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা কী কী?”

Leave a Comment