চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে ভাবুন, চাকরিতে যোগদানের আগে যা জানতেই হবে, কাজে যোগদানের সময় নির্ণয়, বেসরকারি শিক্ষক হবার আগে যা বিবেচনা করা উচিত , নতুন চাকরিতে যোগদানের আগে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালো মন্দ জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ

আজকের বিষয়: চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে ভাবুন, চাকরিতে যোগদানের আগে যা জানতেই হবে, কাজে যোগদানের সময় নির্ণয়

নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য ডাক পেয়েছেন? খুব ভালো কথা। কিন্তু ওই কাজে যোগ দেওয়ার আগে কয়েকটি বিষয় ভেবে দেখুন। সম্ভাব্য নতুন কর্মস্থল সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নিন। বেতন অবশ্যই বেশি গুরুত্ব পাবে। কারণ অঙ্কটার ওপর আপনার সিদ্ধান্ত অনেকটাই নির্ভরশীল। তবে ভালো বেতনের প্রস্তাব পেলেই আনন্দে গদগদ হওয়ার কারণ নেই। বাস্তবসম্মত আরও কিছু বিষয় আপনাকে বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ অনেক বিষয় আছে, যা যোগদানের পরে জানা যাবে-এমনটা ভাবলে ভবিষ্যতে অসুবিধায় পড়তে পারেন। কাজেই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার আগে কী কী বিষয় ভেবে নিতে হবে, সে ব্যাপারে কয়েকটি পরামর্শ:

প্রস্তাবটা মূল্যায়ন করুন
‘হ্যাঁ’ বলার আগে ওই চাকরিটার খুঁটিনাটি বিষয় যাচাই করুন। যেমন: বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা, কাজের পরিবেশ ও সময়সূচি ইত্যাদি। নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে জানুন এবং ভেবে দেখুন, প্রতিষ্ঠানটিতে ওই পদে কাজ করে আপনি আসলে সন্তুষ্ট হবেন কি না। অনুকূল ও প্রতিকূল বিষয়গুলো খতিয়ে দেখুন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর আগে প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নিতে পারেন।
কর্মী হিসেবে কী কী সুবিধা
স্বাস্থ্যবিমা, অবসর পরিকল্পনা, অবকাশযাপন ও অসুস্থতাকালীন ছুটি, দুর্ঘটনার শিকার হলে প্রতিষ্ঠান কতটুকু সহযোগিতা করবে ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা যাচাই করে নিন। এসব পর্যালোচনার জন্য সময় প্রয়োজন। বিষয়টি কর্মজীবনসংশ্লিষ্ট হলেও নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে ভাবুন।

অবসর পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য
আপনার অবসর পরিকল্পনার সঙ্গে সব প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুন না-ও মিলতে পারে। চাকরি থেকে বিদায় নেওয়ার সময় যদি বিশেষ কিছু সুবিধা পান, তাহলে আপনার চাকরির সামগ্রিক মূল্য অনেকখানি বেড়ে যাবে। কোনো কোনো কর্মী উচ্চ বেতনের চেয়েও এই বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিতে দিয়ে থাকেন।

বেতন নিয়ে আলাপ-আলোচনা
চাকরির সব দিক যাচাই করে দেখার পর বেতনের বিষয়টি আবার পর্যালোচনা করুন। বেতনের অঙ্কটা কি যথেষ্ট? আপনার কি আরও বেশ অর্থ উপার্জনের যোগ্যতা ও সুযোগ আছে? যদি অঙ্কটা অপর্যাপ্ত হয়, তাহলে অন্যান্য সুবিধা যত বেশিই হোক না কেন, চাকরিটা আপনার জন্য ভবিষ্যতে সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিকল্প কোনো প্রস্তাব
কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার আগে আলোচনা সাপেক্ষে বেতন নির্ধারণ করা হয়। এসব ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সতর্কতার সঙ্গে আলোচনা করুন, যেন আপনার চাকরিটাও হয় এবং দাবিগুলোও আদায় হয়। বিকল্প কোনো প্রস্তাব থাকলে কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন।
কখন ফিরিয়ে দেবেন: চাকরির জন্য যোগ্য নির্বাচিত হওয়ার পরও যোগদান না করার অনেক কারণ থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে ‘না’ করে দেওয়াটা মোটেও ভুল নয়, বরং যুক্তিসংগত। তবে বিনীতভাবে জানাতে হবে যে আপনি প্রস্তাবটা গ্রহণ করতে পারছেন না।

কতটুকু সময় নেওয়া যায়
চাকরিটা করবেন কি করবেন না, সেই সিদ্ধান্ত যখনই আপনি নিয়ে নেবেন এবং কর্তৃপক্ষকে জানাতে দেরি করবেন না। আগে সময় চেয়ে নিন এবং সেই সময় পেরোনোর আগেই আপনার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিন। সিদ্ধান্তের দ্রুততা আপনার পেশাদারত্বের প্রমাণ দেবে এবং কর্তৃপক্ষও আরেকজনকে চূড়ান্ত করার সুযোগ পাবে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

নতুন চাকরিতে যোগদানের আগে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালো মন্দ জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। বিশেষ করে অফিসের কর্ম পরিবেশ এবং সেখানকার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। যদিও এখনকার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারলেই টুকটাক তথ্য জানা যায়। তবে সংশ্লিষ্ট কারও কাছ থেকে এসব বিষয় জেনে নেওয়া ভালো। তাহলে চলুন জেনে নিই নতুন চাকরিতে যোগদানের আগে যেসব তথ্য জানতেই হবে-

চাকরি সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন

অফিসের বিভিন্ন কাজ সম্পর্কে প্রার্থী নিয়োগকারীর কাছে প্রশ্ন করতে পারেন। এক্ষেত্রে তার সুযোগ কেমন রয়েছে সেটিও জেনে নিতে পারেন।

১। পদের নাম কি?

২। এ পদে কাজ করতে হলে অফিসের কোন কোন দায়িত্ব পালন করতে হবে?

৩। প্রতিষ্ঠানের অবস্থা কেমন?

৪। ঘরে বসে কাজ করার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা কি?

৫। সাপ্তাহিক ছুটি অথবা উৎসবকালীন ছুটির ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা কি?

৬। অফিসের কোন কোন বিষয় জানাতে হবে?

৭। ট্যুর প্ল্যানিং আছে কি না?

৮। কোম্পানিতে যাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে তাদের সম্পর্কে বলুন।

৯। কখন থেকে আমি কাজ শুরু করবো? 

ক্ষতিপূরণ ও লাভের প্রশ্ন

নিয়োগের আগে প্রার্থীকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ ও লাভ সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। প্রমোশন, ইনক্রিমেন্টসহ আরও নানা বিষয়ে আগে থেকেই প্রশ্ন করে নেওয়া ভালো।

১। বেতন কত?

২। উৎসবকালীন ভাতা কত?

৩। পারফরম্যান্স বোনাস, কমিশন বা অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ কত?

৪। স্বাস্থ্য খাতে কত টাকা দেওয়া হবে?

৫। বিকল্প তহবিল নিয়ে কোনও পরিকল্পনা আছে কি না।

৬। বিকল্প তহবিলের ব্যাপারে কোনও সময়সূচী নির্ধারণ করা হয়েছে কি?

৭। কোম্পানি থেকে ল্যাপটপ, স্মার্টফোনসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হবে কি?

প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা

প্রার্থীকে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে। সে কারণে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন করা প্রয়োজন।

১. প্রতিষ্ঠানের মূলধনের উৎস কোথায়?

২. বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের মূলধন কত রয়েছে?

৩. প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ কারা করছেন?

৪. বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কি আমাকে কাজ করতে হবে?

৫. প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব কত?

৬. বাজারে প্রতিষ্ঠানের সম্ভাবনা কতটুকু? 

প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য, দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান বিষয়ক প্রশ্ন

চাকরি করার আগে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য, দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান বিষয়ে জেনে নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা সম্পর্কেও সম্যক ধারণা রাখা জরুরি।

১. প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি কি?

২. প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা কি?

৩. আগামী বছর প্রতিষ্ঠানের মাইলস্টোন কোনগুলো?

৪. প্রতিষ্ঠানের সম্ভাবনাময় বিষয়গুলো কি কি?

৫. প্রতিষ্ঠানের চ্যালেঞ্জ কি কি?

৬. অন্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে এই প্রতিষ্ঠান ভিন্ন কেন?

৭. প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রতিযোগী কারা?

এবং আরও..

চাকরির শুরুতেই প্রার্থীকে নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে জেনে নিতে হবে-

১. নোটিশ না দিয়ে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে?

২. প্রতিষ্ঠানটি কি কোনও আইনি জটিলতায় রয়েছে?

৩. চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর প্রার্থীর ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কিনা? 

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

বেসরকারি শিক্ষক হবার আগে যা বিবেচনা করা উচিত 

এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রসায় শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত ৩০ মার্চ ২০২১ তারিখ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে এনটিআরসিএ। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে সারাদেশে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শূন্য পদের সংখ্যা ৩১ হাজার ১০১টি, যার মধ্যে এমপিও ২৬ হাজার ৮৩৮টি এবং ননএমপিও পদ চার হাজার ২৬৩টি। মাদরাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায় ২০ হাজার ৯৯৬টি পদের মধ্যে এমপিও ১৯ হাজার ১৫৪ এবং ননএমপিও এক হাজার ৮৪২টি। আবেদনের সময় ০৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখ থেকে ৩০ এপ্রিল ৩০২১ তারিখ পর্যন্ত। প্রতিটি আবেদনের জন্য ১০০ (একশত) টাকা ফি দিয়ে পৃথক পৃথক আবেদন করতে হবে। একটি আবেদন করে পছন্দক্রম নির্ধারণ করার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। যথাযথ যোগ্যতা থাকলে একজন প্রার্থী একাধিক প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে আবেদন করতে পারবেন। দেশের যে কোন স্থানে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। পদ শূন্য থাকলে নিজের যোগ্যতা ও ইচ্ছা অনুসারে বাড়ির পাশে/ দূরে/ বহুদূরে/ শহরে/ গ্রামে/ স্কুলে/ কলেজে/ মাদ্রাসায় আবেদন করতে পারবেন।

মনে রাখতে হবে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান পৃথক, প্রতিটি পদ পৃথক, প্রতিটি আবেদনও পৃথক। এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে সরাসরি বদলি হওয়ার কোনো সুযোগ বিদ্যমান নেই। কেন নেই সে ব্যাখ্যা অনেক বিস্তৃত, অনেক বিতর্কিত। প্রতিষ্ঠান বদলের সহজ কোনো সুযোগ আদৌ তৈরি হবে কিনা, হলেও কতদিনে হবে তা অনিশ্চিত। যখনই হোক, যে নীতিমালা তৈরি করা হবে সেই নীতিমালায় কে কতটুকু সুযোগ পাবে তাও অজানা। বর্তমানে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ থাকলেও এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে নতুন করে নিয়োগের জন্য আবেদন করে যোগ্যতা প্রমাণ করে নিয়োগ লাভ করে সেখানে গিয়ে নতুন করে যোগদান করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সমপদ হলে পূর্ব অভিজ্ঞতা গণনাযোগ্য হবে।

শূন্য পদের বিপরীতে প্রার্থীসংখ্যা অত্যধিক থাকায় যে কোনো প্রার্থী মনে করতে পারেন যে, তিনি একটি বা দুটি আবেদন করলে তার চাকরি নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিনি নিজের বাড়ির আশেপাশে অবস্থিত একাধিক প্রতিষ্ঠানে এবং অনেক দূর-দূরান্তে অবস্থিত একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার তাগিদ অনুভব করতে পারেন। যে প্রতিষ্ঠানেই আবেদন করুন না কেন; একজন প্রার্থীর অবশ্যই উচিত সেই প্রতিষ্ঠান ও এলাকা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে, শুনে, দেখে আবেদন করা। এমনকি নিয়োগ পাওয়ার পরেও কোন প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার পূর্বে সেই প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ও অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে-বুঝে নেওয়া উচিত। বিশেষ করে দূরবর্তী কোনো প্রতিষ্ঠানে আবেদন ও যোগদান করার পূর্বে জেনে নেওয়া উচিত সেখানে যাতায়াত সুবিধা কেমন, থাকা-খাওয়ার সুবিধা আছে কিনা, ছুটিতে বা যখন তখন নিজের আপনজনের কাছে যাওয়া-আসা করা যাবে কিনা, যে সকল অসুবিধা আছে সেগুলো সহজে মেনে নেওয়া যাবে কিনা ইত্যাদি।

অপরদিকে একজন প্রার্থী যে পদে আবেদন করবেন সেই পদের মর্যাদা কতটুকু, এমপিও ভুক্ত কিনা, বেতন স্কেল কী, বর্তমান মূল বেতন কত, অন্যান্য ভাতাদি পরিমাণ কত, মাসিক কর্তনের পরিমাণ কত, বিভিন্ন বোনাসের পরিমাণ কত, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট আছে কিনা, পদোন্নতির সুযোগ আছে কিনা, যে প্রতিষ্ঠানে যোগদান করবেন সেখানে সুযোগ-সুবিধা কেমন, আধুনিক শিক্ষকতায় কাজের ধরন-পরিধি কেমন, লেখাপড়ায় লেগে থাকতে ভালো লাগে কিনা, শিক্ষকের দায়িত্ব-কর্তব্য কতটুকু, কর্মকালে ছুটি ভোগের বিধান কেমন, অবসরকালে প্রাপ্য সম্ভাব্য আর্থিক সুবিধা কেমন, অন্যান্য পেশার তুলনায় সুযোগ-সুবিধা কতটুকু কমবেশি, নিজের যোগ্যতা ও মন-মানসিকতার সাথে এই পেশা খাপ খায় কিনা ইত্যাদি খুব ভালোভাবে জেনে সার্বিক বিবেচনায় মনোপুত হলেই আবেদন ও যোগদান করা উচিত।

হাজার বছর ধরেই এদেশের শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা অত্যন্ত কম ছিল। এখনো আমাদের শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় অর্ধেকেরও কম বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকদের। বর্তমানে এমপিও এর মাধ্যমে সরকার মাধ্যমিক স্তরের একজন সহকারি শিক্ষককে ন্যূনতম মূল বেতন দিয়ে থাকে মাত্র ১২,৫০০ টাকা! উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের একজন প্রভাষককে প্রাথমিক মূল বেতন দেওয়া হয় ২২,০০০ টাকা। এছাড়া সকল স্তরের শিক্ষকদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট অনধিক ৫ শতাংশ, বাড়ি ভাড়া ভাতা ১,০০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা, উৎসব ভাতা ২৫ শতাংশ, বাংলা নববর্ষ ভাতা ২০ শতাংশ দেওয়া হয়ে থাকে। অপরদিকে এই মূল বেতন থেকে অবসর + কল্যাণ তহবিলের জন্য ১০ শতাংশ টাকা জমা রাখা হয়। নিয়মিত ২৫ বা ততোধিক বৎসর চাকরি করে অবসরে গেলে কল্যাণ + অবসর তহবিল থেকে সর্বশেষ মূল বেতনের প্রায় ১০০ গুন টাকা পাওয়ার বিধান বিদ্যমান। উল্লিখিত সরকারি সুবিধার অতিরিক্ত কোন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্বচ্ছলতা ও বিধি-বিধানের উপর নির্ভরশীল। এই ডিজিটাল যুগে নিজেকে তৈরি করতে জানলে এর চেয়ে অধিক উপার্জনের বহুমুখী সুযোগ দেশে ও বিদেশে অবারিত। বেসরকারি শিক্ষকদের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা কতদিনে কতটুকু বৃদ্ধি পাবে তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। কতকালে কতটি প্রতিষ্ঠান সরকারি হবে তা আরো বেশি অনিশ্চিত। আমার দীর্ঘ অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে বারবার।

কেউ যদি ধারণা করেন, অন্যান্য চাকরির তুলনায় শিক্ষকতায় সময়, শ্রম ও মেধা কম দিতে হয় তো সেটি ভুল। শিক্ষকতায় কাজের পরিধি এখন অনেক বিস্তৃত। নিত্যনতুন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঠিক জ্ঞান দেওয়ার জন্য শিক্ষককে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হয় প্রতিনিয়ত। আয়ত্ত করতে হয় অত্যাধুনিক পাঠদান ও মূল্যায়ন কৌশল। আত্মনিবেদিত থাকতে হয় সর্বক্ষণ। বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনের জন্য ছুটির দিনেও আসতে হয় প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষার্থীর কল্যাণার্থে চিন্তাচেতনার দিক থেকে প্রকৃত শিক্ষকের কোনো ছুটি নেই। শিক্ষক হবার আগে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে এসব।

মোট কথা হচ্ছে, না জেনে না বুঝে শিক্ষকতায় এসে কেউ যদি হতাশায় ভোগেন তো তিনি নিজে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন তেমনি শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সবকিছু জেনে বুঝে, মেনে নিয়ে, মনে নিয়ে, তবেই শিক্ষকতায় আসা উচিত বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকতায়। তা না হলে এখানে এসে সারাক্ষণ মন খারাপ করে, দাবিদাওয়া করে, আন্দোলন করে, দলাদলি করে, অন্যকে দোষারোপ করে, অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করে, বিক্ষুব্ধ বা হতাশাগ্রস্ত হয়ে নিজের পেশাকে মন্দ বলে বলে মন্দ সময় পার করে; না হওয়া যায় শিক্ষক, না পাওয়া যায় শান্তি, না পাওয়া যায় সচ্ছলতা!

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment