গল্প- হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা

গল্প- হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা
১২৮৪সাল। শহরটির নাম হ্যামেলন হলেও সবাই হ্যামিলন নামেই চিনতো। শহরটি ছিলো খুব সুন্দর।কিন্তু ঐ শহরের মানুষের মনে শান্তি ছিলোনা, ছিলো অনেক দুঃখ।
কারণ ঐ শহরটি যেন দিন দিন ইঁদুরের শহরে পরিণত হয়েছিল। সবখানে যেন ইঁদুর, ইঁদুর এবং ইঁদুর।

ঘরের ভেতরে বা বাইরে সবখানেই ইঁদুর।অফিস আদালত সহ সকল কাগজপত্র কেটেকুটে শেষ করে ফেলছে এই ইঁদুরের দলেরা। ইঁদুরের অত্যাচারে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল।যেখানে মানুষ দেখে ইঁদুর ভয় পাবে সেখানে ইঁদুর দেখে মানুষ ভয় পেত।

এভাবেই কাটছিল দিন। সবাই যেন দিশেহারা।
শহরের মেয়রের ঘুম হারাম হয়ে গেল এই ইঁদুরের জন্য।কি করবেন তিনি শহরবাসীর জন্য???
এমনই একদিন হঠাৎ এক আজব লোক এলো এই শহরে। পরণে ছিলো নানা রঙের আলখাল্লা।মাথায় চোঙার মতো ঝুলে পড়া টুপি।তার হাতে ছিলো একটা লম্বা বাঁশি।

মেয়রের অফিস ছিলো শহরের মাঝখানে। একসময় এখানে এসে সবাই বিশ্রাম করতো।কিন্তু আজ আর সেই দিন নেই।লোকজন ইঁদুরের অত্যাচারে কোনরকমে ঘরে থাকে।
শহরের গন্যমান্য ব্যক্তিরা মিটিং করছেন কিভাবে এই ইঁদুর দূর করা যায়। কিন্তু কেউ কোন উপায় বের করতে পারছিলেন না।
এই সময় ঐ মিটিং এ পৌছুলো সেই বাঁশিওয়ালা অদ্ভুত লোকটি। লোকটি সবাইকে বলল সে ইঁদুর তাড়াতে পারবে।

বিনিময়ে সে কি পাবে জিজ্ঞেস করতেই মিটিংয়ের সবাই একসাথে বলে ওঠলো “যা চাও তাই পাবে।টাকা, সোনা, ঘর, বাড়ি, জমি সব পাবে।”
একথা শুনে লোকটি মুচকী হেসে বেরিয়ে এলো রাস্তায়। রাস্তায় নেমে দারুণ একটা বাঁশি বের করে বাজাতে থাকলো হ্যামিলনের পথে পথে।
বাঁশির এই অচেনা সুরের মায়ায় ইঁদুরের দল যেন ছুটে চলল বাশিঁওয়ালার পিছু পিছু। শহরের লোক যেন অবাক হয়ে দেখছিলো সে দৃশ্য।

ঐ শহরের পাশেই একটা নদী ছিলো যার নাম ভেজার।লোকটি বাঁশি বাজাতে বাজাতে নদীর ধার এসে এক উঁচু জায়গায় এসে বাঁশিওয়ালা তার সুর থামিয়ে দিলো।ইঁদুরগুলো তাদের উন্মাদনা যেন থামাতে পারছিলোনা।লাফিয়ে পড়লো নদীতে। মুহুর্তেই ইঁদুরের যন্ত্রনা থেকে রক্ষা পেল হ্যামিলন শহর।

ইঁদুরের যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করার পর বাঁশিওয়ালা এসে তার সম্মানি চাইলে সবাই সেটা অস্বীকার করলো। উপরন্তু তাকে অপমান করে বের দিলো।
বাঁশিওয়ালা খুব দুঃখ পেল। আর মনে মনে একটা পরিকল্পনা করলো।
একদিন শহরের লোকজন যখন গীর্জায় প্রার্থণা করছিলেন।তখন সেই বাঁশিওয়ালা রাস্তায় বেরিয়ে এলো।
মাথায় তার লম্বা টুপি। আগের পোশাক টি খাটো হলেও এবারের পোশাকটি ছিলো লম্বা।

এবার সে বের করলো ছোট্ট একটা বাঁশি। এবারের সুর যেন একেবারেই আলাদা।
এবারের সুরে কোন ইঁদুর বেরিয়ে এলোনা বেরিয়ে এলো শহরের সমস্ত শিশুর দল।সেখানে মেয়রের একমাত্র মেয়েও ছিলো।

সুরের টানে সবাই যেন বাঁশিওয়ালার পেছন পেছন ছুটছিলো।একসময় শিশুদের নিয়ে বাশিওয়ালা পাহাড়ের পেছনে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। অনেক খোজাখুজির পরেও তাদের পাওয়া গেলোনা।
পাওয়া গেলো কেবল দুটি শিশু। তারা ওদের সাথে তাল মিলিয়ে আগাতে না পারায় পিছিয়ে পড়েছিলো।

দুঃখজনক ব্যাপার এদের একজন ছিলো অন্ধ, যে দেখেনি তাই বলতে পারেনা ওরা কোথায় গিয়েছে আর অপরজন ছিলো বোবা।বোবা বলে সে জেনেও বলতে পারলোনা।

তারপর আর কখনো ঐ শহরে ঐ বাঁশিওয়ালাকে দেখা যায়নি।
( সম্পূর্ণ নিজের ভাষায় লিখা)
আমি আপনাদের রিকা আপু

গোপান রোগ

Leave a Comment