গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

Google Adsense Ads

গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য

গর্ভকালীন সময়ে আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সুষম, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার রাখা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি গর্ভকালের বাড়তি পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করে আপনার ও গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। গর্ভের শিশুর উপযুক্ত গঠন ও বিকাশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা প্রতিরোধে একটি সুষম খাবার তালিকা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

গর্ভাবস্থায় খাবার তালিকা কেমন হওয়া দরকার?

গর্ভকালীন সময়ে খাবার তালিকায় একই ধরনের খাবার বেশি রাখা ঠিক নয়। প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। এতে করে সব ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সহজ হবে। পাশাপাশি কোনো খাবারের প্রতি একঘেয়েমিও আসবে না।

গর্ভাবস্থায় আপনার কোনো কোনো খাবারে অনেক বেশি রুচি আসতে পারে। এমন খাবারের ক্ষেত্রেও এক সাথে বেশি করে খেয়ে ফেলবেন না। চেষ্টা করবেন পরিমিত পরিমাণে খেতে।

কারও কারও ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় খাবারে অরুচি হয়। আবার কখনো বমি বমি লাগে কিংবা বুক জ্বালাপোড়া করে। খেতে তেমন ইচ্ছা করে না। এমন ক্ষেত্রে তিনবেলা অনেকখানি করে খাবার না খেয়ে দিনে ছয়বার অল্প অল্প করে খেতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় কী খেতে হবে গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য

গর্ভাবস্থায় কোন মাসে কতটুকু বেশি খাবার খেতে হবে?

গর্ভধারণ করেছেন বলেই যে খাওয়াদাওয়া অনেক বাড়িয়ে দিতে হবে—বিষয়টি এমন নয়। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসে সাধারণত বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। তবে এর পরের মাসগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি খাবার খেতে হবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া যতটা সম্ভব বাদ দেওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় কতটুকু অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে সেটি খাবারে থাকা ক্যালরির সাহায্যে হিসাব করা যায়। তবে গর্ভাবস্থায় বাড়তি খাবারের বা ক্যালরির এই চাহিদা একই ধরনের খাবার বেশি পরিমাণে খেয়ে পূরণ না করে বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে মেটানো উচিত। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় বৈচিত্র্য থাকলে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ হবে।

১ মাস থেকে ৩ মাসের গর্ভবতীর খাবার তালিকা

গর্ভকালীন সময়ের প্রথম তিন মাসে তেমন একটা অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।

এসময়ে আপনার খাবার তালিকা তথা ক্যালরির চাহিদা আপনার উচ্চতা, ওজন ও দৈনন্দিন শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণসহ বেশ কিছু জিনিসের ওপরে নির্ভর করবে। ওজন বাড়তে থাকলে সেই অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ কমিয়ে এবং ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে স্বাভাবিক ওজনে আসার চেষ্টা করতে পারেন।

আবার ওজন কমতে থাকলে ব্যায়াম স্বাভাবিক রেখে খাবারের পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়ে দিতে পারেন। এসব বিষয়ে একজন রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন। তিনি আপনার জন্য বিশেষভাবে খাবার তালিকা প্রস্তুত করতে সাহায্য করতে পারবেন।

গর্ভবতী নারীর সারাদিনের খাবার তালিকার একটি নমুনা নিচে তুলে ধরা হয়েছে। এই তালিকাটি ১৮০০ ক্যালরির। উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি, গর্ভধারণের আগের ওজন ৫৫ কেজি ও সপ্তাহে ২–৩ দিন হালকা ব্যায়াম করেন এমন নারীর জন্য এই তালিকাটি প্রযোজ্য।

গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য খাবারের ধরনপরিমাণ
ভাত (লাল চালের হলে ভালো হয়)২.৫–৩ কাপ (৫০০–৬০০ গ্রাম)
গাঢ় সবুজ ও রঙিন শাক১–১.৫ বাটি (২৫০–৩৭৫ গ্রাম)
হলুদ অথবা কমলা ফল ও সবজি১ বাটি (২৫০ গ্রাম)
ডিম১টি
দুধ১ গ্লাস (২৫০ গ্রাম)
মাছ অথবা মাংস১ টুকরা (৫০ গ্রাম)
ঘন ডাল২ বাটি (৫০০ গ্রাম)

উল্লেখ্য, এই তালিকার খাবারগুলো রান্না করার সময়ে প্রয়োজনে সীমিত পরিমাণে তেল ব্যবহার করা হয়েছে। অতিরিক্ত রান্নার তেল ব্যবহার খাবারের পুষ্টিগুণ তেমন না বাড়ালেও ক্যালরির পরিমাণ বেশ খানিকটা বাড়িয়ে দিতে পারে।

৪ মাস থেকে ৯ মাসের গর্ভবতীর খাবার তালিকা

গর্ভের শিশুর বেড়ে ওঠার সাথে সাথে গর্ভবতী নারীর খাবারের চাহিদাও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তাই গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের পর থেকে খাওয়াদাওয়ার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বাড়াতে হয়। একজন স্বাভাবিক ওজনের ৪ মাস থেকে ৬ মাসের গর্ভবতীর প্রথম তিন মাসের চেয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৪০ ক্যালরি পরিমাণ অতিরিক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন।

অন্যদিকে একজন স্বাভাবিক ওজনের ৭ মাস থেকে ৯ মাসের গর্ভবতীকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অতিরিক্ত প্রায় ৪৫০ ক্যালরির খাবার খেতে হবে। তবে আপনার ওজন বেশি হলে আরেকটু কম পরিমাণে অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে। এই বিষয়ে আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে বিস্তারিত পরামর্শ নিন।

অতিরিক্ত খাবারের চাহিদা পূরণে প্রতিদিন তিন বেলার খাবার খাওয়ার পাশাপাশি দিনে আরও দুই বার হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। খাবারটি হতে পারে একটি ফল, ৫–৬টি বাদাম অথবা আধা কাপ টক দই। এ ছাড়াও ক্ষুধা লাগলে আপনি যেকোনো সময়েই পরিমিত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে নিতে পারেন।খাবারে ক্যালরির হিসেব কীভাবে আন্দাজ করবেন?

গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য সতর্কতা

গর্ভাবস্থায় বিভিন্নভাবে ডিম খেতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে যেন সেটি পুরোপুরি সিদ্ধ বা রান্না হয়। দুধের ক্ষেত্রে পাস্তুরিত দুধ বেছে নিতে হবে। এই বিষয়ে আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, আপনার গর্ভে যমজ অথবা একসাথে দুইয়ের বেশি বাচ্চা থাকলেই যে আপনাকে সে অনুযায়ী বেশি করে অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে, এমনটা নয়। সাধারণত গর্ভে যমজ শিশু থাকলে দৈনিক প্রায় ৬০০ ক্যালরি সমমানের বাড়তি খাবার খেতে হয়। আর একত্রে তিনটি সন্তান গর্ভধারণ করলে দৈনিক প্রায় ৯০০ ক্যালরি অতিরিক্ত খাবার খেতে হয়।

গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকায় যা যা রাখতে হবে গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য

গর্ভকালীন সময়ে আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সুষম, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার রাখা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি গর্ভকালের বাড়তি পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করে আপনার ও গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। গর্ভের শিশুর উপযুক্ত গঠন ও বিকাশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা প্রতিরোধে একটি সুষম খাবার তালিকা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

১) দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য

গর্ভকালীন অবস্থায় ভ্রুণের সঠিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য অতিরিক্ত প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামের প্র‍য়োজন হয়।

দুগ্ধ জাতীয় খাবারের মধ্যে ‘ছানা’ এবং ‘ঘোল বা মাঠা’, খুবই উচ্চমানসমৃদ্ধ প্রোটিনের যোগান দেয়।

দুধ থেকে তৈরী এসব খাদ্য ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে বড় চাহিদা পূরক এবং একইসাথে যোগান দেয় অনেক বেশি ফসফরাস, বিভিন্ন বিভামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিংক।

বিশেষভাবে “দই” গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।

দই অনান্য দুগ্ধজাতীয় খাদ্য থেকে বেশি ক্যালসিয়াম বহন করে। বিভিন্ন ধরনের দই প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াও বহন করে; যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।

দুগ্ধজাতীয় এসব খাবারসমূহ গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ কমানো, স্ত্রীযোনির সংক্রামক এবং এলার্জি থেকে রক্ষা করে।

গর্ভাবস্থায় যেসব ভিটামিন ও পুষ্টি বিশেষভাবে প্রয়োজন গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য

(২) শুঁটি

শুঁটি বহনকারী খাদ্যসমূহ হচ্ছে ডাল, মটরশুঁটি, শিম, ছোলা, সয়াবিন, চিনাবাদাম – ইত্যাদি।

শুঁটি অতি সহজলভ্য এবং অসাধারণ খাদ্য গর্ভবতী মায়েদের জন্য যা যোগান দেয় আঁশ, প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি-৯।

ভিটামিন বি-৯ খুবই গুরুত্বপূর্ণ মা এবং ভ্রণের স্বাস্থ্যের জন্য, বিশেষভাবে প্রথম তিনমাসকাল সময়ে।

যাই হোক, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ সহ বিভিন্ন দেশের গর্ভবতী মায়েরা ভিটামিন বি-৯ এর অভাব সঠিকভাবে পূরণ করতে পারে না বা এ সম্পর্কে অজ্ঞাত।

এই ভিটামিনের অভাবের ফলে শিশুর স্নায়ুসংক্রান্ত জটিলতা হতে পারে, সেইসাথে শিশুর ওজনও স্বাভাবিকের চেয়ে কম হতে পারে। এছাড়াও শিশুর পরবর্তী জীবনে ইহা বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলতে পারে যেমন, ইনফেকশনের ঝুঁকি বেশি থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়ে থাকে।

শুঁটি সাধারণত প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-৯ বহন করে থাকে।সাধারণত এক কাপ মসূর ডাল, ছোলা অথবা মটরশুঁটি ৬৫-৯০% আরডিএ এর যোগান দেয়।

যাই হোক, শুঁটি উচ্চমানসম্পন্ন আঁশ সরবরাহ করার পাশাপাশি আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফসফরাসও সরবরাহ করে থাকে।

(৩) মিষ্টি আলু

মিষ্টি আলু বিটা ক্যারোটিনের অনেক শক্তিশালী যোগানদাতা; শরীরের প্রবেশের পর ভিটামিন-এ তে পরিণত হয়।

ভিটামিন-এ শরীরের বিভিন্ন কোষ এবং টিস্যুর বেড়ে উঠার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। এইসাথে, ভ্রুণের বেড়ে উঠার ক্ষেত্রেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

গর্ভবতী মহিলাদের সাধারণত ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকেন ভিটামিন-এ গ্রহণের পরিমাণ ১০-৪০% বাড়ানোর জন্য।

লক্ষ্যণীয় যে, তাদের এটাও পরামর্শ দেওয়া হয় প্রাণী হতে উদ্ভব ভিটামিন-এ হতে দূরে থাকার জন্য বা কম গ্রহণের জন্য কারণ ইহা বেশি পরিমাণে শরীরে গেলে বিষাক্ততা দেখা দেয়।

এই কারণে উদ্ভিদ হতে প্রাপ্ত ভিটামিন-এ তথা মিষ্টি আলু হতে প্রাপ্ত বিটা ক্যারোটিনই গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম।

প্রাত্যহিক ১০০-১৫০ গ্রাম মিষ্টিআলুই যথেষ্ট শরীরের চাহিদা পূরণ করার জন্য।

এছাড়াও মিষ্টিআলু ‘আঁশ’ বহন করে, যা তৃপ্তির অনুভূতি ঘটায়, রক্তের চিনির পরিমাণ কমায়, হজমশক্তি বর্ধিত করে এবং সক্রিয়তা বাড়ায়।

(৪) রুই মাছ

রুই মাছ শরীরের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের যোগান দেয়।

বেশিরভাগ মানুষ একইসাথে গর্ভবতী মহিলারাও সঠিকভাবে ওমেগা-৩ হতে সাধারণত বঞ্চিত হয়ে থাকেন।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই কার্যকরী, বিশেষভাবে দীর্ঘ শৃঙ্খল ডিএইচএ এবং ইপিএ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড।

Google Adsense Ads

এগুলো বিশেষভাবে বিভিন্ন সামুদ্রিক খাদ্যে পাওয়া যায়; ভ্রুণের ব্রেইন এবং চোখ তৈরীতে সাহায্য করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব গর্ভবতী মহিলারা প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার চর্বিযুক্ত মাছ গ্রহণ করে তাদের শরীরে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের অভাব পূরণ হয়ে থাকে। একইসাথে তাদের রক্তের ইপিএ এবং ডিএইচএ লেভেল বৃদ্ধি পায়।

এছাড়াও ইহা ভিটামিন-ডি এর অন্যতম একটি প্রাকৃতিক উৎস। ইহা আমাদের শরীরে হাড়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান এবং ইহা আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও উন্নত করে।

(৫) ডিম

ডিম হচ্ছে একটি মৌলিক স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ডিম অল্প করে হলেও বহন করে।

একটি বড় ডিম ৭৭ ক্যালরি শক্তি বহন করে। সেইসাথে বহন করে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং চর্বি। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান।

এছাড়াও ডিম কোলিনের (choline) এর উৎসদাতা। কোলিন এমন একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যা ব্রেইন এবং শরীরকে বিভিন্নভাবে উপকার করে থাকে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ মানুষই কোলিন এর শূন্যতায় ভুগছেন।

কোলিনের পরিমাণ কম হলে ভ্রণের ব্রেইন তৈরীতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় এবং শিশুর বিভিন্ন প্রকার সমস্যা দেখা দেয়।

শুধু ১ টি ডিম ই ১১৩ মিলিগ্রাম কোলিন সরবরাহ করে থাকে, যা গর্ভবতী মহিলার আরডিআই এর ২৫%।

(৬) ফুলকপি এবং সবুজ শাক-সবজি

ফুলকপি এবং বিভিন্ন সবুজ শাক-সবজি, বিশেষভাবে পাতাকপি এবং শাক এমন অনেক পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে, যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

এগুলো বহন করে থাকে অতি-প্রয়োজনীয় আঁশ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-এ, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম – ইত্যাদি।

বলাবাহুল্য, ফুলকপি এবং সবুজ শাকসমূহ বিশাল পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধারণ করে। একইসাথে এগুলো দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।

বেশি পরিমাণে আঁশ বহন করার দরুণ এই খাবারগুলো কৌষ্ঠ্যকাঠিন্য প্রতিরোধ করে থাকে; গর্ভবতী মহিলাদের একটি সর্বজনীন সমস্যা।

এছাড়াও সঠিক পরিমাণে সবুজ শাক-সবজি গ্রহণের ফলে শিশুর ওজনও সঠিক থাকে।

(৭) মাংস

গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং মুরগির মাংস অবশ্যই উচ্চমানসম্পন্ন প্রোটিনের যোগান দেয়।

বিশেষভাবে গরুর মাংসে রয়েছে অধিক পরিমাণে আয়রন, কোলিন এবং বিভিন্ন ভিটামিন-বি; যাদের প্রত্যেকটিরই গর্ভকালীন সময়ে অত্যাধিক পরিমাণে চাহিদা থাকে।

আয়রন আমাদের দেহের জন্য অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ উপাদান যা হিমোগ্লোবিনের কার্যকরিতা বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হয়। আয়রন গুরুত্বপূর্ণ কারণ ইহা আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি কোষে অক্সিজেনের সরবরাহ করে।

গর্ভবতী মহিলাদের এটা বিশেষভাবে প্র‍য়োজন কারণ তাদের দেহে রক্তের প্রবাহ বাড়তে থাকে। বিশেষকরে শেষ তিন মাসে ইহা বেশি পরিমাণে প্রয়োজন হয়।

যদি গর্ভকালীন অবস্থার প্রথম ও মধ্যবর্তীসময়ে তথা প্রথম ৬-৭ মাস আয়রনের অভাব থাকে তাহলে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে; যার ফলে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে শিশু জন্মগ্রহণ করতে পারে এবং ওজন কম হতে থাকে।

অবশ্য অনেক গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভাবস্থায় বিতৃষ্ণা জেগে থাকে। কিন্তু আয়রনের চাহিদা পূরণ করা অত্যাবশকীয়।

যাই হোক, প্রাত্যহিক যেকোনো ধরনের মাংসই আয়রনের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।

এছাড়াও এমন সব খাদ্য যেগুলো অত্যাধিক পরিমাণে ভিটামিন-সি সরবরাহ করে, যেমন- কমলা এবং মরিচ, সেগুলোও আয়রন সরবরাহ করে থাকে।

(৮) মাছের যকৃৎের তেল

মাছের যকৃৎের তেল মাছের যকৃৎ বা কলিজা হতে উৎপন্ন হয়।

এসব তেল ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের যোগান দেয় যা ভ্রুণের ব্রেইন এবং চোখ তৈরীতে সাহায্য করে।

মাছের যকৃৎের তেল প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ডি সরবরাহ করে থাকে যা হতে বেশিরভাগ মানুষই বঞ্চিত। এই তেলটি ওইসব মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যারা সামুদ্রিক মাছ গ্রহণ করতে পারে না বা অন্য কোনো উপায়ে ভিটামিন-ডি এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সরবরাহ করতে পারে না।

ভিটামিন-ডি কম থাকলে গর্বভতী মহিলার বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন- উচ্চরক্তচাপ বেড়ে যায়, হাত-পা ফুলে যায় বা স্ফীত হয়, প্রসাবের সাথে প্রোটিন বের হয়ে যায় – ইত্যাদি।

মাছের যকৃৎের তেল গ্রহণ করলে শিশুর ওজন বৃদ্ধি পায় এবং ভবিষ্যৎ জীবনের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।

খুবই সামান্য পরিমাণ মাছের যকৃৎের তেল ( অন্তত ১৫ মিলিগ্রাম) প্রাত্যহিক ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন-ডি এবং ভিটামিন-এ এর চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট।

যাই হোক, এসব পুষ্টি উপাদান অত্যাধিক গ্রহণ করা ক্ষতিকর। কারণ বেশি পরিমাণ ভিটামিন-এ ভ্রুণের জন্য খুবই ক্ষতিকর হতে পারে এবং অত্যাধিক ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মায়ের রক্তকে তরলীকরণ করে দিতে পারে।

(৯) শুকনো ফল

শুকনো ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, আঁশ, বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান।

এক টুকরো শুকনো ফল ঠিক ততটুকুই পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে যতটুকু এক টুকরো তাজা ফলে থাকে; তবে পানি ছাড়া এবং ছোট আকারে।

এছাড়াও শুকনো ফল বহন করে থাকে শরীরের জন্য অত্যাধিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন, আয়রন এবং পটাসিয়াম।

আলুবোখারাতে আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, পটাসিয়াম, ভিটামিন-কে এবং সর্বিটল। এতে আছে প্রাকৃতিক রুচিবর্ধক উপাদান এবং কৌষ্ঠ্যকাঠিন্যের উপশম করে।

শুকনো খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, আঁশ, পটাসিয়াম এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় যৌগিক উপাদান। শেষ তিন মাসে প্রত্যেহ শুকনো খেজুর গ্রহণ করলে ইহা গ্রীবার প্রসারণ সহজ করে।

ওছাড়াও, শুকনো ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি। ইহা সাহায্য করে শরীরের ক্যালরি এবং পুষ্টি বাড়াতে। তবে, দৈনিক একবারই শুকনো ফল গ্রহণ করা গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালো।

গর্ভাবস্থায় পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় খাবার

(১০) পর্যাপ্ত পানি

গর্ভকালীন সময়ে রক্তের প্রবাহের মাত্রা বেড়ে দেড় লিটার বা ৫০ আউন্স হয়ে থাকে। তাই এ সময়টাতে সঠিকভাবে পানি পান করে হাইড্রেটেড থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ভ্রণ সাধারণত সকল খাদ্য উপাদান মায়ের থেকে পেয়ে থাকে তবে পানি সঠিক পরিমাণে না পান করলে মায়ের ডিহাইড্রেশন হতে পারে।

হালকা ডিহাইড্রেশনের উপসর্গগুলো হচ্ছে মাথাব্যাথা, রাগ, ক্লান্তি, খারাপ মেজাজ এবং স্মৃতিশক্তি হীনতা।

পানি পান বৃদ্ধি করলে, ইহা কৌষ্ঠ্যকাঠিন্য হতে মুক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং মূত্রধার অঞ্চলের ইনফেকশন হতে রক্ষা করে; যা গর্ভবতীদের সাধারণত হয়ে থাকে।

সাধারণত প্রত্যেককে বলা হয় অন্তত যেনো ২ লিটার বা ৬৮ আউন্স পানি সে দৈনিক পান করে। কিন্তু এটা বয়স এবং অবস্থাভেদে প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা হতে পারে।

তাই প্রত্যেককে অন্তত দৈনিক ১-২ লিটার পানি পান করতেই হবে। আবার এটা ভুলে গেলেও চলবে না, আমরা বিভিন্ন খাবার এবং পানীয় থেকে পানি গ্রহণ করে থাকি, যেমন – ফল, শাকসবজি, চা, কফি – ইত্যাদি।

পরিশেষে : গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য, গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট

স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ

Google Adsense Ads

Leave a Comment