ক্যানসার প্রতিরোধে আসুন, লড়াই করি

চলছে ক্যানসার সচেতনতার মাস। প্রতিবছর এ মাসজুড়ে মানুষকে ক্যানসার বিষয়ে সচেতন করা হয়। ক্যানসার এমন এক ভীতিকর শব্দ, শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মুত্যু পথযাত্রী অস্থিচর্মসার মানুষের ছবি।

কারণ বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর গড়ে এক কোটি ২৭ লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয় এবং ৭৬ লাখ মানুষ মারা যায়। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটি ৬০ লাখ এবং মারা যাওয়ার সংখ্যা পৌঁছবে এক কোটি ৭০ লাখে। যত মারা যাচ্ছে, তার ৭০ শতাংশই আমাদের মতো গরিব দেশের মানুষ।

ক্যানসার হলে মৃত্যু অনিবার্য- এটি প্রবাদতুল্য বাক্য। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উৎকর্ষে প্রবাদটির তুল্য এখন অনেকটাই মূল্যহীন। ক্যানসারে আক্রান্ত হলেই এখন আর মরতে হয় না। সুস্থভাবে বেঁচে থাকায়Ñ এমন উদাহরণ অনেক।

শুধু তা-ই নয়, ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়। ক্যানসারের অনেকগুলো কারণের একটি তারুণ্যের ফ্যাশন ধূমপান। এমন কোনো ক্যানসার নেই, যেটির সঙ্গে ধূমপানের সম্পর্ক নেই। আমাদের দেশের ২৫ শতাংশ ক্যানসার রোগীর ৯০ শতাংশই ধূমপায়ী। শুধু এটি পরিহারের মাধ্যমে ক্যানসার আক্রান্তের ঝুঁকি অনেকাংশ কমানো যায়।

মদ্যপান মুখ, গলা, যকৃৎ, খাদ্যনালি ও স্তন ক্যানসারের জন্য দায়ী। পান-সুপারি, জর্দা, তামাকপাতা মুখ ও গলার ক্যানসারের অন্যতম কারণ। আরও কিছু কারণের মধ্যে শারীরিক পরিশ্রমে অনীহা, ফাস্টফুড, শৈশব থেকে খেলাধুলার প্রতি অনীহায় মুটিয়ে যাওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। শুধু মুটিয়ে যাওয়ার কারণে নারীদেহের জরায়ু, স্তন, খাদ্যনালি ও পায়ুপথে দেখা দিচ্ছে ক্যানসার।

খাবারে ভেজাল, প্রিজারভেটিভ ও রঙিন খাবার, কম পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি, আঁশজাতীয় খাবার খাওয়া এবং বেশি পরিমাণে চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়ায় বাড়ছে ক্যানসারের ঝুঁকি।

পেশাগত কারণে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ও যৌনরোগের কারণেও কানসার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে।

কিন্তু এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। ক্যানসার হওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো এড়িয়ে চলার মাধ্যমে খুব ভালোভাবে সুস্থ থাকা যায়। কেউ আক্রান্ত হলে শুরুতেই যদি যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন, তা হলেও রোগটি নির্মূল করা সম্ভব।

ক্যানসার নিরূপণে দেশে আছে বিশেষায়িত সরকারী হাসপাতাল। কিছু ক্লিনিকেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকেও প্রাথমিকভাবে নির্ণয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। কাজেই রোগের শুরুতেই এটি নির্ণয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা নিন। আসুন, আমরা ক্যানসার প্রতিরোধ করি। প্রতিরোধে সবাই একসঙ্গে লড়ি।

লেখক : অধ্যাপক ও সাবেক পরিচালক

1 thought on “ক্যানসার প্রতিরোধে আসুন, লড়াই করি”

Leave a Comment