কে বিজু জানের কি , বিজুর ভালোবাসার জয়নাল হাজারীর আর নেই, বিজু’র বিচার চাই! মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী শুধু ক্যাডার পোষেনি, প্রেম পুষে আজও চির কুমার, প্রেমিক হাজারী!, যার জন্য ‘চিরকুমার’ হাজারী, কেমন আছেন সেই বিজু?

আজকের বিষয়: যার জন্য ‘চিরকুমার’ ছিলেন জয়নাল হাজারী

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন হাজারী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। 

ফেনী-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

জয়নাল হাজারী ১৯৮৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ফেনী-২ (সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে টানা তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

ফেনীর রাজনীতিতে কয়েক দশক ধরে ব্যাপকভাবে আলোচিত ফেনীর আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী চির প্রস্থানের পথে যাত্রা করেছেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে অনেকটা নিভৃতচারী হয়ে উঠলেও আলোচনা ও বিতর্ক তাকে পিছু ছাড়েনি। রাজনীতিতে নামিদামি থেকে শুরু করে জনসাধারণ পর্যায়ে বহু মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিলেও ব্যক্তিগত জীবনে কোনো সঙ্গিনীর বাহুডোঁরে বাঁধা পড়া হয়নি তার। বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিকদের ৫০ পেরোনো বয়সে বিয়ে ও ঘর-সংসার করতে দেখা গেলেও এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমৃত্যুই ছিলেন ‘চিরকুমার’।

কিন্তু কেন তার এই একলা যাপন? কেন চার হাত এক হয়নি তার? কেনইবা কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেননি? সদ্য মারা যাওয়া জয়নাল হাজারীর অবিবাহিত জীবন নিয়ে রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে জনমানুষের মধ্যে কৌতূহলে কখনোই ভাটা পড়েনি। তিনি নিজেও গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে একাধিকবারই ব্যক্তিগত জীবনের বাহাস শুনিয়েছেন। তবে চিরকুমার জয়নাল হাজারী কখনোই অবিবাহিত জীবনকে কোনো ‘গ্যাপ বা শূন্যতা’ হিসেবে স্বীকার করেননি।

বিয়ে না করার পেছনে ‘বিজু’ নামের এক তরুণীর সঙ্গে এই রাজনীতিকের সম্পর্ক ও বিচ্ছেদের কাহিনি অনেকবারই সামনে এসেছে। নিজের লেখা ‘বিজুর বিচার চাই’ নামের বইতেও ওই নারীর সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের নানা মুহূর্ত উঠে আসে। বইটি ব্যাপক আলোচনায় এসেছিল।

১৯৮৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ২০ বছরের বেশি সময় ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা জয়নাল হাজারী ফেনী-২ (সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ‘হাজারিকা প্রতিদিন’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক ছিলেন।

বিয়ে না করা প্রসঙ্গে ক’বছর আগেই জয়নাল হাজারী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, এটা আমার রাজনৈতিক জীবনে কোনো ‘গ্যাপ’ নয়। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যদি বলি- অনেক বাম রাজনীতিক যারা কমিউনিস্ট বা কংগ্রেস পার্টি করতেন তারা বিয়ে করেননি। আর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যদি দেখি পৃথিবীর অনেক দার্শনিক, বিজ্ঞানীও বিয়ে করেননি, বিয়ে নিয়ে চিন্তাও করেননি। বিয়ে হলো কি হলো না, চিরকুমার থাকলাম কি থাকলাম না- এটি রাজনীতির কোনো বাধাও নয়, পরিপূরকও নয়।

তার ভাষ্য ছিল এরকম- আমার যখন বিয়ের বয়স তখন আমি সেই ’৬৯, ’৭০, ’৭১-এর উত্তাল সময়ে ছিলাম। তখন প্রেম, বিজু ও বিয়ে নিয়ে চিন্তা করার সময় ছিল না। এরপর মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে ছয় মাসের মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাই। আসলে আমার জীবনটা সবসময় বিপদসংকুল ছিল। ফলে বিয়েটা আর করা হয়নি।

সেই আলোচিত নারী বিজু সম্পর্কে জয়নাল হাজারী বলেন, বিজু বাস্তব আবার কাল্পনিকও। বিজুকে নিয়ে আমি অসংখ্য গল্প লিখেছি। বাস্তবের যে বিজু সেই বিজুকে যেভাবে আমার গল্পে চিত্রায়িত করা হয়েছে সেভাবে কোনোদিনই ভালোবাসিনি। এটি ছিল আগাগোড়াই কাল্পনিক।

গত জুলাই মাসের শুরুতে চিত্রনায়িকা পরীমনি প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য করে নতুন করে আলোচনায় আসেন জয়নাল হাজারী। ঢাকার সাভারের বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পরীমনির মামলা দায়েরের পর গত ২ জুলাই সন্ধ্যায় ফেসবুক লাইভে এসে জয়নাল হাজারী এ ঘটনার জন্য নায়িকাকেই দায়ী করেন। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক তরুণীকে প্রকাশ্যে নিপীড়নকারী যুবকদের পক্ষ নিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ১৬ আগস্ট রাতে তার বাড়িতে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। তিনি তখন পালিয়ে ভারতে চলে যান। ২০০৪ সালে হাজারীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে তিনি ভারত থেকে দেশে ফিরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তার বিরুদ্ধে করা একে একে সব মামলা থেকে অব্যাহতি পান প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ।

ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য ও আলোচিত রাজনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী মারা গেছেন। সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আলোচিত এই রাজনীতিকের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে রয়েছেন নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি ফেনীতে ‘হাজারী রাজত্ব’ কায়েম করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বর্ণাঢ্য রাজনীতির অধিকারী জয়নাল হাজারী পঁচাত্তর-পরবর্তী রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করা, বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধে স্থানীয় পর্যায়ে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে তার নাম অন্যতম। তিনি ফেনীর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।

রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী

আলোচিত জয়নাল আবেদীন হাজারী ছিলেন একজন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৭১ সালে ২ নং সেক্টরের অধীনে ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের পরামর্শে রাজনগর এলাকায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর রাজনগরে গিয়ে ওই এলাকার বেকার যুবকদের নিয়ে তিনি একটি সিভিল ডিফেন্স টিমও গঠন করেছিলেন।

ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির হাতেখড়ি

ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি শুরু করেন বর্ণাঢ্য এই রাজনীতিক। ছাত্রাবস্থায় ফেনী কলেজে তৎকালীন ছাত্র মজলিশের (বর্তমান ছাত্র সংসদ) জিএস ছিলেন। এরপর বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। পরে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদেও দায়িত্বপালন করেন জয়নাল হাজারী।

টানা ২০ বছর ছিলেন জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক

ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ার অধিবাসী জয়নাল হাজারী ১৯৮৪ সালে প্রথম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ২০ বছর দায়িত্বপালন করেন। এর মধ্যে ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হন। এসময়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদেও দায়িত্বপালন করেন তিনি। মূলত ১৯৯৬ সালের পর তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় ফেনীতে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের শিকার হয়ে প্রায় ১২০ জন নেতাকর্মী মারা যান।

বিদেশে আত্মগোপন, দল থেকে বহিষ্কার

২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ১৬ আগস্ট রাতে তার বাড়িতে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। তখন তিনি পালিয়ে আত্মগোপনে ভারতে চলে যান। ২০০৪ সালে হাজারীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে তিনি ভারত থেকে দেশে ফিরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। একে একে তার বিরুদ্ধে করা সব মামলা থেকে অব্যাহতি পান। ২০১০ সাল থেকে ঢাকায়ই থাকেন তিনি।

বহিষ্কার হওয়ার দেড় দশক পর ফিরে পান আ’লীগের পদ

যৌথবাহিনীর অভিযানের মুখে দেশ ছাড়ার পর বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক আওয়ামী লীগের পদ হারান। ২০০৯ সালে দেশে ফেরার পর আর হারানো পদ ফিরে পাননি। স্থানীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা হওয়ার পর রাজধানীতে অবস্থান করেন। সেখানে তিনি ‘হাজারিকা প্রতিদিন’ নামে পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পান তিনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাকে এ পদে মনোনয়ন দেন।

১৯৪৫ সালের ২৪ আগস্ট ফেনী শহরের সহদেবপুরের হাবিবুল্লাহ পণ্ডিতের বাড়িতে আব্দুল গণি হাজারী ও রিজিয়া বেগমের সংসারে জন্ম নেন জয়নাল হাজারী। হাবিবুল্লাহ পণ্ডিত ছিলেন তার নানা।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment