কেন ব্রিটিশ সরকার ‘ভাগ কর ও শাসন কর’ নীতি গ্রহণ করেছিল?,১৯৩৫ সালে প্রবর্তিত ভারতীয় প্রাদেশিক শাসন কীরূপ ছিল?,জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্ব সম্পর্কে তুমি কী জান ?

প্রশ্ন সমাধান: কেন ব্রিটিশ সরকার ‘ভাগ কর ও শাসন কর’ নীতি গ্রহণ করেছিল?,১৯৩৫ সালে প্রবর্তিত ভারতীয় প্রাদেশিক শাসন কীরূপ ছিল?,জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্ব সম্পর্কে তুমি কী জান ?

১. বঙ্গভঙ্গ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : বঙ্গভঙ্গ বলতে ১৯০৫ সালে বাংলা প্রেসিডেন্সিকে ২ ভাগে বিভক্ত করাকে বোঝায়। প্রায় ২ লক্ষ বর্গমাইল আয়তনের বাংলা প্রেসিডেন্সিকে প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে পূর্ব বঙ্গ ও আসাম এবং বাংলা প্রদেশ নামে ২টি প্রদেশে বিভক্ত করা হয়। ব্রিটিশ ভারতের তদানীন্তন ভাইসরয় লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করেন। যা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ নামে পরিচিত। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়।

২. ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ হলো ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের একটি রাজনৈতিক মতবাদ।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪০ সালের ২২ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের কাউন্সিলে সভাপতির ভাষণে মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র আবাসভূমি গঠনের লক্ষ্যে ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ ঘোষণা করেন।

তার মতে, হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ই ধর্মীয় দর্শন, সামাজিক রীতি, জীবন পরিচালনা, সাহিত্য, ইতিহাস প্রভৃতি ক্ষেত্রে দুটি স্বতন্ত্র অবস্থানে রয়েছে। সুতরাং জাতীয়তার মানদণ্ডে তারা পৃথক দুটি জাতি। তার এই মতবাদটি ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ নামে পরিচিত।


আরো ও সাজেশন:-

৩. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বলতে কী বোঝ?
উত্তর : প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বলতে প্রদেশগুলোর নিজস্ব স্বাধীন শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন করা হয়েছিল। এতে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন তিনটি নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। প্রথমত, সংবিধান অনুযায়ী প্রাদেশিক সরকারের ওপর ন্যস্ত বিষয়গুলোর ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না।

দ্বিতীয়ত, প্রদেশগুলোতে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রদেশ আত্মনির্ভরশীল হবে। মোটকথা, প্রদেশগুলোর সুনির্দিষ্ট ক্ষমতা প্রাপ্তি এবং প্রাদেশিক সরকারের দায়িত্বশীল হওয়াই হলো প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন।

৪. দ্বৈতশাসন বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুর দিকে বাংলার শাসনভার সংক্রান্ত দায়িত্ব দুটি পৃথক কর্তৃপক্ষের হাতে ন্যস্ত করাই হলো দ্বৈত শাসন। ৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে দেওয়ানি লাভের (রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা) পর লর্ড ক্লাইভ বাংলায় দ্বৈতশাসন প্রবর্তন করেন। দ্বৈত শাসনের অর্থ হলো দু’জনের শাসনব্যবস্থা।

এ ব্যবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ফৌজদারি বিচার, শান্তিরক্ষা, দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলার নামেমাত্র নবাবের হাতে। অন্যদিকে, বাংলার রাজস্ব আদায়, দেওয়ানি ও জমির বিবাদ সম্পর্কিত বিচার ইত্যাদি লাভজনক কাজ কোম্পানি নিজের হাতে রাখে। বলা হয়, দ্বৈত শাসন ব্যবস্থায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লাভ করে দায়িত্বহীন ক্ষমতা আর অন্যদিকে নবাব পান ক্ষমতাহীন দায়িত্ব।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

৫. লাহোর প্রস্তাব বলতে কী বোঝ?
উত্তর : ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের দাবি জানিয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবনাই হচ্ছে লাহোর প্রস্তাব। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের লাহোরে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ সম্মেলনে শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। বস্তুতপক্ষে, ভারতের মুসলিম লীগ এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের আদর্শগত পার্থক্যের ফল ছিল ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব। এ প্রস্তাবকে ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়।

৬. বেঙ্গল প্যাক্ট বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : ব্রিটিশ আমলে বাংলার হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য সম্পাদিত একটি চুক্তি হলো বেঙ্গল প্যাক্ট। ব্রিটিশ শাসনের অধীনে বাংলার জনসংখ্যার শতকরা ৬০ ভাগই ছিল মুসলমান। সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অশিক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের তুলনায় পিছিয়ে ছিল।

অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার জন্য খ্যাত নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এ বৈষম্য দূর করতে বেঙ্গল প্যাক্ট এর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এ. কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীসহ বাংলার মুসলিম নেতৃবৃন্দের সাথে ১৯২৩ সালে বেঙ্গল প্যাক্ট সম্পাদিত হয়। অনগ্রসর মুসলিমদের কিছু বাড়তি সুবিধা দিয়ে সরকারি চাকরি ও আইন পরিষদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য হ্রাস করাই ছিল এর প্রধান লক্ষ্য।


Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Storiesউত্তর লিংক
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেলউত্তর লিংক

৭. মুসলিম লীগ কেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?
উত্তর : ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন করে গড়ে তোলা এবং তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকেই ভারতের মুসলিম সম্প্রদায় সর্বদিক হতে অবহেলিত ও বঞ্চিত হতে থাকে।

১৮৮৫ সালে সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গঠিত হলেও এটি অবহেলিত ও বঞ্চিত মুসলমানদের দাবি-দাওয়া আদায় করতে ব্যর্থ হয়। মুসলমানদের এ অবহেলিত ও হীন অবস্থা হতে উদ্ধারকল্পে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের বিশেষ প্রয়োজন অনুভূত হয়। এ অনুভূতির সার্থক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুসলিম স্বার্থ সংরক্ষণের ধারক ও বাহক হিসেবে ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের জন্ম হয়।

৮. কেন ব্রিটিশ সরকার ‘ভাগ কর ও শাসন কর’ নীতি গ্রহণ করেছিল?
উত্তর : ভারত উপমহাদেশে বসবাসরত প্রধান দুটি সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্যই ব্রিটিশরা ‘ভাগ কর ও শাসন কর’ নীতি গ্রহণ করেছিল। ব্রিটিশরা ১৯০ বছর ভারতবর্ষ শাসন করে। এ দীর্ঘ সময় তারা এ উপমহাদেশে নানা শোষণ, অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে। তাদের শাসননীতির উল্লেখযোগ্য দিক ছিল হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি করে নিজেদের শাসনকাল দীর্ঘস্থায়ী করা। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের গৃহীত বঙ্গভঙ্গ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

৯. ১৯৩৫ সালে প্রবর্তিত ভারতীয় প্রাদেশিক শাসন কীরূপ ছিল?
উত্তর : ১৯৩৫ সালে প্রবর্তিত ভারত শাসন আইনে ভারতের প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন করা হয়। এতে বলা হয়, কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে প্রদেশগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দায়িত্বশীলরা তাদের কাজের জন্য প্রাদেশিক আইনসভার নিকট দায়ী থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং এর অনুগত প্রাদেশিক গভর্নর প্রদেশে কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। তাই বলা যায় যে, ১৯৩৫ সালে প্রবর্তিত ভারতীয় প্রাদেশিক শাসন ছিল অনেকটা নামমাত্র ও অর্থহীন।

১০. জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্ব সম্পর্কে তুমি কী জান ?
উত্তর : মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কর্তৃক প্রবর্তিত দ্বি-জাতি তত্ত্ব হলো ব্রিটিশ ভারতকে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত করার নির্ণায়ক ও আদর্শাশ্রয়ী একটি রাজনৈতিক মতবাদ। ১৯৪০ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বি-জাতি তত্ত্বটি প্রদান করেন। তিনি ধর্মের ভিত্তিতে ভারতীয় উপমহাদেশকে দুই ভাগে বিভক্ত করার কথা বলেন।

তিনি বলেন, হিন্দু ও মুসলিম দুইটি আলাদা জাতি। তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতি সম্পূর্ণ আলাদা। অতএব, তারা কখনো এক হতে পারে না। সুতরাং, দুটি জাতিকে আলাদা করে মুসলমানদের আলাদা জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তার এ ঘোষণাটি ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে ‘দ্বি-জাতি তত্ত্ব’ নামে খ্যাত।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment