Google Adsense Ads
কত হওয়া উচিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের পার্থক্য, স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান কত হওয়া উচিত, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের পার্থক্য ঠিক কত হওয়া উচিত?, ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান কত হওয়া উচিত, স্বামী-স্ত্রীর বয়সের আদর্শ ব্যবধান!
কত হওয়া উচিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের পার্থক্য, স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান কত হওয়া উচিত
স্বামী-স্ত্রী সমবয়সী হওয়া কিংবা বয়সের তারতম্য থাকা উভয় অবস্থায় বিবাহ বৈধ। দেশে দেশে স্বামী-স্ত্রীর বয়সের স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক ব্যবধানেরও বহু নজির আছে। শরিয়তে বয়সে তারতম্যময় বিবাহ নিষিদ্ধ নয়। আবার ইসলাম এ বিষয়ে কাউকে উৎসাহও দেয়নি। এ ক্ষেত্রে আছে প্রশস্ততা ও অবাধ স্বাধীনতা। কিন্তু বিষয়টি নির্ভর করে বাস্তবতা, সমাজ, সংস্কৃতি ও পরস্পর বোঝাপড়ার ওপর।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রথমা স্ত্রী খাদিজা (রা.) রাসুল (সা.)-এর চেয়ে বয়সে বড় ছিলেন। প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী, খাদিজা (রা.) ছিলেন রাসুল (সা.)-এর চেয়ে ১৫ বছরের বড়।
Table of Contents
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বয়স ছিল তখন ২৫ বছর। নবী করিম (সা.) ও খাদিজা (রা.)-এর মধ্যে শুভ বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় শাম দেশ থেকে প্রত্যাবর্তনের দুই মাস পর। তিনি সহধর্মিণী খাদিজা (রা.)-কে মোহরানাস্বরূপ ২০টি উট প্রদান করেন। ওই সময় খাদিজা (রা.)-এর বয়স হয়েছিল ৪০ বছর।
বংশমর্যাদা, সহায়-সম্পদ, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সমাজের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়া। তাঁর জীবদ্দশায় রাসুল (সা.) অন্য কোনো নারীকে বিবাহ করেননি। (ইবনে হিশাম ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৯-১৯০; ফিকহুস সিরাহ, পৃষ্ঠা ৫৯) আর রাসুল (সা.) যখন তার সবচেয়ে কম বয়সী স্ত্রী আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক শুরু করেন, তখন তাঁদের বয়স ছিল যথাক্রমে ৫৩ ও ৯। যদিও বিবাহ আরো আগেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
মহানবী (সা.) আয়েশা (রা.)-কে প্রধানত পাঁচ কারণে বিয়ে করেছিলেন :
১. আয়েশা (রা.)-এর পিতা আবু বকর (রা.)-এর অতি আগ্রহ ছিল যে তিনি [আবু বকর (রা.)] যেভাবে ঘরের বাইরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গী হয়ে যাবতীয় খেদমত আঞ্জাম দেন, অনুরূপ ঘরের ভেতরও যেন তাঁর পরিবারের কেউ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমত করতে পারেন। তাই আবু বকর (রা.) মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আত্মীয়তার সম্পর্কে রূপান্তর করেন।
২. সব ইতিহাসবিদ এ ব্যাপারে একমত যে আয়েশা (রা.) ছিলেন তৎকালীন আরবের অন্যতম মেধাবী নারী। তাই মহানবী (সা.) তাকে বিবাহ করার মাধ্যমে ইসলামের বিধি-বিধান, বিশেষ করে নারীদের একান্ত বিষয়াদি উম্মতকে শিক্ষা দিতে চেয়েছেন।
৩. মহানবী (সা.) তাকে বিয়ে করেছেন ওহির নির্দেশ অনুসরণ করে। ওহির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাকে বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৩৮৯৫)
৪. শুধু আরবের সংস্কৃতি নয়, গোটা বিশ্বে সেই সময়ে ধর্মীয় নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবার মধ্যে অল্প বয়সী নারীকে বিবাহ করার ব্যাপক প্রচলন ছিল।
৫. মহান আল্লাহ তার হিকমত অনুযায়ী, মহানবী (সা.)-এর মাধ্যমে এমন কিছু কাজ করিয়েছেন, যেসব কাজের উদ্দেশ্য ছিল তার উম্মতের জন্য বৈধতা ও অবৈধতার সীমারেখা চিহ্নিত করা এবং সংস্কৃতির নামে মানুষের কল্পিত অলিখিত আইনগুলো ভিত্তিহীন প্রমাণ করা। যেমন নামাজ কাজা হওয়া, পালক পুত্রের স্ত্রীকে বিবাহ করা ইত্যাদি। মহানবী (সা.) নিজে এগুলোর নজির স্থাপন করেছেন। অনুরূপ নিজের চেয়ে বেশি বয়সের কিংবা কম বয়সের স্ত্রী গ্রহণ বৈধ প্রমাণ করার জন্য মহান আল্লাহ মহানবী (সা.)-এর মাধ্যমে নজির স্থাপন করেছেন। এর মাধ্যমে বিবাহের বিধানে প্রশস্ততা ও অবারিত সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যুগে যুগে দেশে দেশে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই সুযোগ গ্রহণ করেছে। স্বামীদের যেমন নিজেদের চেয়ে কম বয়সী স্ত্রীকে বিবাহ করার নজির আছে, অনুরূপ স্ত্রীদের মধ্যে নিজেদের চেয়ে কম বয়সী স্বামী গ্রহণের নজিরও দেশে দেশে আছে।
স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য সবচেয়ে বেশি ছিল রাসুল (সা.)-এর পালক পুত্র জায়িদ ইবনে হারিসা (রা.) ও তার স্ত্রীর। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন রাসুল (সা.) লালন-পালনকারী বারাকাহ (রা.)। তার প্রসিদ্ধ নাম উম্মে আইমান। জায়িদ ইবনে হারিসার চেয়ে তার স্ত্রী উম্মে আইমান (রা.) কমপক্ষে ৩০ বছরের বড় ছিলেন। উম্মে আইমান (রা.) ছিলেন রাসুল (সা.)-এর পালক মা। রাসুল (সা.)-কে কোলে-কাঁধে করে যাঁরা বড় করেছেন, তিনি তাদের একজন। রাসুল (সা.) একদিন সাহাবায়ে কিরামকে বলেন, কেউ যদি জান্নাতি নারীকে বিয়ে করতে চায় সে যেন উম্মে আইমানকে বিয়ে করে। জায়েদ (রা.) দেরি না করে রাসুল (সা.)-এর সন্তুষ্টির জন্য তাকে বিয়ে করেন। উম্মে আইমান (রা.) তখন বয়স্কা নারী। আর জায়েদ (রা.) অবিবাহিত যুবক। তাঁর উদরে (মক্কায়) জন্মলাভ করেন বিখ্যাত সেনানায়ক উসামা ইবনে জায়েদ (রা.)। (উসদুল গাবাহ ২/১৩০; আল-ইসাবাহ ২/৪৯৬)
স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ভারসাম্য
স্বামী-স্ত্রীর বয়সে ভারসাম্য রক্ষা করা উচিত। বয়স স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আচরণগত (স্বভাব ও দৈহিক) বিষয়ে প্রভাবক। এ ক্ষেত্রে কোরআনের সরাসরি নির্দেশনা না থাকলেও ইঙ্গিত আছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং (জান্নাতে) তাদের পাশে থাকবে সমবয়সী আনতনয়না (জান্নাতি রমণী)।’ (সুরা : সাদ, আয়াত : ৫২)
Google Adsense Ads
অন্য আয়াতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি জান্নাতি রমণীদের উত্তমরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদের করেছি চিরকুমারী, সোহাগিনী, সমবয়স্কা।’ (সুরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ৩৫-৩৮) সুতরাং স্বামী-স্ত্রীর বয়স কাছাকাছি হওয়া বাঞ্ছনীয়।
বয়সের বেশি ব্যবধানে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তাই প্রয়োজন ভারসাম্য। ফাতেমা (রা.)-কে বিয়ে করার প্রস্তাব সর্বপ্রথম আবু বকর (রা.) দেন। অতঃপর ওমর (রা.) প্রস্তাব দেন। উদ্দেশ্য ছিল তারা রাসুল (সা.)-এর জামাতা হওয়ার সম্মান অর্জন করবেন। রাসুল (সা.) বলেন, সে [ফাতেমা (রা.)] অনেক ছোট। তাঁদের বয়স অনেক বেশি ছিল। রাসুল (সা.) বয়সের কথা বিবেচনা করে তাদের আবেদন নাকচ করে দেন।
এতে বোঝা যায়, মেয়ের বয়স কম হলে স্বামীর বয়স অতিরিক্ত বেশি হওয়া উচিত নয়। বয়সের বেশি অসমতায় বিয়ে দেওয়াও ঠিক নয়। (ইত্তিহাফুস সায়েল বিমা লিফাতিমাতা মিনাল মানাকিবি ওয়াল ফাদাইল, পৃষ্ঠা : ৩৪-৩৬)
ফাতেমা (রা.)-এর বিয়ের সময় বয়স ছিল সাড়ে ১৫ বছর। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, পৃষ্ঠা : ৪২৩)। তবে ইবনে সাদের মতে, সে সময় তার বয়স ছিল ১৮ বছর। আর আলী (রা.)-এর বয়স ছিল ২১, মতান্তরে ২৫ বছর। ইসলামে আলী (রা.) ও ফাতেমা (রা.)-এর বিয়ে একটি আদর্শ বিয়ে।
এই দীর্ঘ আলোচনা থেকে জানা যায়, বর-কনের বয়সের ভারসাম্য রাখা উচিত। উত্তম হলো, বয়স কাছাকাছি হওয়া। স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর বয়স কিছু কম হওয়া মন্দ নয়। কেননা নারীর গ্রোথ পুরুষের চেয়ে প্রবল। তাই পরস্পরের বয়সে ভারসাম্য আনতে স্বামীর তুলনায় স্ত্রীর বয়স কিছু কম হওয়া কাম্য। অভিজ্ঞরা বলেন, স্ত্রী যদি স্বামীর চেয়ে বয়সে একটু ছোট হয় তাহলে ভালো। আর নারীর শারীরিক কাঠামো থাকে দুর্বল। ফলে সে আগে বৃদ্ধা হয়ে যায়। যদি দুই-চার বছরের পার্থক্য থাকে তাহলে সমতা আসে।
(হুকুকুল জাওজাইন, পৃষ্ঠা ৩৭০)পরিশেষে, আমৃত্যু এক ছাদের নিচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে মানুষ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। আর স্বামী-স্ত্রীর বয়সের অতিরিক্ত তারতম্যের পরিণতি অনেক ক্ষেত্রে সুখকর হয় না। বিবাহ শুধু কিছুদিন এবং কয়েক বছরের উপভোগের জন্য হওয়া উচিত নয়। আর এ ক্ষেত্রে পরস্পর বোঝাপড়া ও শারীরিক সক্ষমতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত থাকে। তাই কাছাকাছি বয়স বা সামান্য ব্যবধান দীর্ঘস্থায়ী দাম্পত্যজীবনের অনুকূল।
পরিশেষে : ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান কত হওয়া উচিত, স্বামী-স্ত্রীর বয়সের আদর্শ ব্যবধান!
আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট
স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ
Google Adsense Ads