ইসলামের দৃস্টিতে দাড়ি রাখার আবশ্যকতা, ইসলামে দাড়ি রাখার বিধান,একজন মুসলমানের জন্য দাড়ি রাখা কি বাধ্যতামূলক ?, দাড়ি রাখা ফরজ, ওয়াজিব আর মুণ্ডন করা হারাম কবিরা গুনাহ,দাড়ি রাখা ওয়াজিব,দাড়ি রাখার সুন্নত,দাড়ি রাখা সুন্নাত নাকি ওয়াজিব?,দাড়ি রাখার বিধান,

দাড়ি রাখা ফরজ/ওয়াজিব আর মুণ্ডন করা হারাম কবিরা গুনাহ !!

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, রাসুল (সঃ) ইরশাদ করেন, “তোমরা গোঁফ কর্তন কর এবং দাড়ি ছেড়ে দাও (লম্বা কর ) । তোমরা অগ্নিপুজারকদের বিপরীত কর”। (মুসলিম ১/১২৯; মুসলিম ২/৫১০)

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করিম (সঃ) থেকে রেওয়ায়েত করেন যে, রাসুল (সঃ) ইরশাদ করেন যে, ” তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর, গোঁফ সমূহ কর্তন কর এবং দাড়ি সমূহ লম্বা কর”। (বুখারী ২/৮৭৫; মুসলিম, ২/৫০৭; সহীহ মুসলিম হাঃ নং ৬০০, ৬০২ , সহীহ বুখারী হাঃ নং ৫৮৯২, ৫৮৯৩)

আয়শা সিদ্দিকা (রঃ) বলেন যে, রাসুল (সঃ) বলেন “দশটি কাজ প্রকৃতির অন্তর্গত । গোঁফ খাটো করা, দাড়ি বড় করা বা লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেওয়া, নখ কাটা, আঙ্গুলের গিরাগুলো ঘষে মেজে ধৌত করা, বগলের পশম উপড়িয়ে ফেলা, নাভির নিচের লোম কাটা, কুলি করা ও মলমুত্র ত্যাগের পর পানি ব্যাবহার করা” । (মুসলিম ১/১২৯; মুসলিম, ২, ৫১১)

‘তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো : দাড়ি বড় করো এবং গোঁফ ছোট করো । (বুখারী: ৫৮৯২; মুসলিম: ৬২৫)

বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা রাহ. বলেন, জনৈক অগ্নিপূজক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসেছিল। তার দাড়ি মুন্ডানো ছিল ও মোচ লম্বা ছিল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এটা কী?’ সে বলল, ‘এটা আমাদের ধর্মের নিয়ম।’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কিন্তু আমাদের দ্বীনের বিধান, আমরা মোচ কাটব ও দাড়ি লম্বা রাখব।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১৬-১১৭, হাদীস : ২৬০১৩)

পারস্যের সম্রাট কিসরা ইয়েমেনের শাসকের মাধ্যমে রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে দু’জন দূত পাঠান। এদের দাড়ি ছিল কামানো আর গোঁফ ছিল বড় বড়। রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে তাদের এই অবয়ব এতই কুৎসিত লেগেছিল যে তিনি মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের ধ্বংস হোক, এমনটি তোমাদের কে করতে বলেছে? তারা উত্তর দিল, আমাদের প্রভু কিসরা। তিনি (সাঃ) তখন উত্তর দেন, আমার রব্ব, যিনি পবিত্র ও সম্মানিত আদেশ করেছেন যেন আমি দাড়ি ছেড়ে দেই এবং গোঁফ ছোট রাখি। (ইবনে জারির আত তাবারি, ইবন সা’দ ও ইবন বিশরান কর্তৃক নথিকৃত। আল আলবানি এক হাসান বলেছেন। দেখুন আল গাযালির ফিক্বহুস সিরাহ ৩৫৯ পৃষ্ঠা)

যেই ব্যাপারে আল্লাহ এবং তার রাসুলের নির্দেশ রয়েছে সেই ব্যাপার ফরয না হয়ে ঐচ্ছিক কিভাবে হয়? যে ব্যাপারগুলোতে নির্দেশ না এসে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে বা ফজিলত বলা হয়েছে কিন্ত নির্দেশ দেওয়া হয়নি যেমন দিনে রাতে ১২ রাকাত সুন্নাত সলাত আদায় করলে তার জন্য জান্নাতে ঘর তৈরি হয় এখানে শরিয়ত উৎসাহ দিয়েছে,

ফজিলত বলেছে কিন্তু নির্দেশ করে সবার জন্য ফরয করে দেয় নি অর্থাৎ একটা হচ্ছে উৎসাহ দেওয়া বা চাইলে করতে পার বা করলে ফজিলত আছে এই পর্যায়ের আর আরেকটা আল্লাহ এবং তার রাসুলের পক্ষ থেকে নির্দেশসুচক যা কিনা আবশ্যক অর্থ বহন করে আর আল্লাহ এবং তার রাসুলের নির্দেশ আবশ্যক না হলে আর কি এমন বিষয় রয়েছে যা আবশ্যক হতে পারে?
আল্লাহ সুবহানাহু তা’লা বলেন
وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ لَهُ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অমান্য করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।’(সুরা জিন- আয়াত ২৩)
وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
যদি তোমরা মুমিন হও, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর। (সুরা আনফাল- আয়াত ১)
فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
যারা তার (রাসুলের) নির্দেশের বিপরিতে চলে তারা সতর্ক হয়ে যাক যে, তারা ফিতনায় পরে যাবে অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে। (সুরা নূহ- আয়াত ৬৩)

আল্লাহুল মুস্তায়ান, আল্লাহ এবং তার রাসুলের নির্দেশ অমান্য করলে শরিয়ত কি বলেছে তা স্পষ্ট ই বুঝলেন।

অনেকের আবার এই ভুল ধারনা আছে যে দাড়ি রাখা ওয়াজিব কিন্ত ফরয নয় কিন্তু তারা জানে না ওয়াজিব আর ফরয একই বিষয় অর্থাৎ ২টার অর্থই অবশ্যই পালনীয় এমনকি উলামাদের সবাই ওয়াজিব ফরজকে একই বিষয় বলেছেন যেমন ৪ মাজহাবের ইমাম তাদের ৩ জনই ওয়াজিব আর ফরজকে একই বলেছেন আর ইমাম আবু হানিফা (রঃ) কিছুটা আলাদা বলেছেন যাই হোক ২-১ জন বাদে প্রায় সব উলামায়ে দ্বীনের কাছে ফরজ আর ওয়াজিব একই বিষয় অর্থাৎ সেটা নামে ভিন্ন হলেও পালনের দিক থেকে আবশ্যকীয় বিধান।

অবশেষে দাড়ি রাখা এবং মুণ্ডন সম্পর্কে সালাফদের অভিমত দেখুন যারা কিনা কুরআন সুন্নাহকে আমাদের চেয়ে কোটি গুণ সচ্ছভাবে বুঝতেন-

১-ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রঃ) বলেন দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম।

২- ইমাম কুরতুবি (রঃ) বলেন, দাড়ি মুণ্ডন, উঠানো বা কর্তন করা কোনটাই জায়েজ নেই।

৩- বিগত সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ বিন বাজ (রঃ) বলেন, দারিকে সংরক্ষন করা, পরিপূর্ণ রাখা ও তা ছেড়ে দেওয়া ফরয। এই ফরজের প্রতি অবহেলা করা জায়েজ নয়।

৪- শাইখ ইবনে উসাইমিন (রঃ) বলেন, দাড়ি রাখা ওয়াজিব, উহা মুণ্ডন করা হারাম বা কাবিরা গুনাহ।

৫- শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) আরও বলেন, আল কুরআন, সুন্নাহ এবং ইজমা (আলেমগনের ঐকমত) হচ্ছে মুসলিমগণ
কুফফারদের হতে সকল বিশয়ে সতন্ত্র হবে এবং তাদের অনুকরন করবে না কেননা তাদের বাহ্যিক অনুকরনও একসময় আমাদেরকে তাদের বদ অভ্যাস এবং কুকর্ম করতে বাধ্য করে এমনকি তারা যা বিশ্বাস করে তাও বিশ্বাস করিয়ে ছাড়ে। তাই আমাদের অন্তর থেকে তাদের প্রতি বাৎসল্য দূর করতে হবে কারণ তাদের প্রতি যদি কোন বাৎসল্য অন্তরে লুকায়িত থাকে তাহলে তার প্রকাশ ঘটে বাহ্যিক ভাবে তাদের অনুকরন অনুসরনের মাধ্যমে। আল তিরমিজি হতে উল্লেখিত রাসুল (সাঃ) বলেন, সে আমাদের দলভুক্ত নয় যে আমাদের বেতিত অন্যদের অনুকরন করে। ইহাহুদি এবং খ্রিস্টানদের অনুকরন কর না। আরেকটি বর্ণনা মতে, যে যাকে অনুকরন করে সে তাদের অন্তর্গত। (আহমাদ)

কোন একটিও বর্ণনা নেই যেখানে সালাফে সালেহিনগনের(সাহাবাগন, তাবেয়িগন এবং যারা সরল পথের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন) একজনও নেই যিনি তার দাড়ি কামিয়েছেন কেননা এই কাজটা একটা হারাম কাজ। যদি এটি কোন ভালো কাজ হত তাহলে তারাই সরবাগ্রে তা সম্পাদন করতেন কেননা এমন কোন ভালো কাজ নেই যা করতে তারা একে অন্যের আগে প্রতিযোগিতা করেন নি। মারাতিবুল ইজমা নামক গ্রন্থে ইমাম ইবনে হাজম (রঃ) বলেন- তারা(সালাফে সালেহিনগন) একমত হয়েছেন যে, পুরো দাড়ি কামিয়ে ফেলা হচ্ছে মুথলা(আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতি ঘটানো) ফলে এর অনুমতি নেই।
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) সেই লোকের থেকে সাক্ষ্য গ্রহন করতেন না যে তার দাড়ি কামিয়ে ফেলেছে।

৬- ইমাম ইবন আবদ আল বার “আল তাহমিদ” গ্রন্থে বলেন, দাড়ি কামানো হারাম এবং এই কাজ সেই লোক ছাড়া আর কেও ই করে না যে কিনা মেয়েলী স্বভাবের।

তাই হে দাড়ি মুণ্ডনকারী, উলামাদের মতে আপনি একজন মেয়েলী স্বভাবের পুরুষ। উপরন্তু, উমার (রাঃ), ইবনে আবি ইয়ালা প্রমুখ সেই বেক্তির থেকে কোন সাক্ষ্য গ্রহন করতেন না যে তার দাড়ি কামিয়ে ফেলে। কাজেই হে দাড়ি কামানো বেক্তি, ইসলামে আপনার কোন সাক্ষ্য গ্রহন নেই, আপনি একজন অবিশ্বস্ত লোক।

এই সকল শারয়ি দলিলের পরিপ্রেক্ষিতে উম্মতের ফকিহগন ঐকমত হয়েছেন যে, দাড়ি লম্বা করা ওয়াজিব এবং উহা ইসলামের বৈশিষ্ট্য এবং উহা মুণ্ডন এবং কর্তন করা (যখন শারয়ি পরিমাণ থেকে কম করানো হয় তখন) হারাম এবং কবিরা গুনাহ।

আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন আর ঐ সমস্ত নারীদের ঈমানকেও হেফাজত করুন যারা স্বামীর দাড়ি পছন্দ করেন না বা রাখতে দেন না বা কেটে ফেলতে বাধ্য করেন এতে করে স্বামী যেমন আল্লাহ এবং তার রাসুলের উপর তার স্ত্রীকে প্রাধান্য দিল তেমনি ঐ নারী আল্লাহ এবং তার রাসুলের বিধানকে অপছন্দ করায় উভয়েরই ঈমান বড় ধরনের ঝুকির মধ্যে পরে যায়, আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন এবং তার বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করার তাওফিক দিন।

Leave a Comment