‘আমার পথ- কাজী নজরুল ইসলাম’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক দাম্ভিক হতে চান কেন?,কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু মুসলমানদের মিলনের অন্তরায় দূর করতে চেয়েছিলেন কেন?

বিষয়: ‘আমার পথ- কাজী নজরুল ইসলাম’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক দাম্ভিক হতে চান কেন?,কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু মুসলমানদের মিলনের অন্তরায় দূর করতে চেয়েছিলেন কেন?

১। ‘আমার পথ- কাজী নজরুল ইসলাম’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক দাম্ভিক হতে চান কেন?
উত্তর : ‘দম্ভ’ আত্মাকে চেনার সহজ স্বীকারোক্তি হওয়ায় ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক দাম্ভিক হতে চান। ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে বর্ণিত প্রাবন্ধিক চিরকাল নিজেকে চেনার চেষ্টা করেছেন। নিজেকে চেনা, নিজ সত্যের পথপ্রদর্শককে জানার মাঝে তিনি কোন অহংকার খুঁজে পাননি। আর কেউ যদি এই নিজ সত্যকে জানার আকাঙ্খাকে দম্ভ মনে করে তবে প্রাবন্ধিক দাম্ভিক হতে চান। মূলত নিজেকে জানার জন্যেই প্রাবন্ধিক দাম্ভিক হতে চান।

২। কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু মুসলমানদের মিলনের অন্তরায় দূর করতে চেয়েছিলেন কেন?
উত্তর : মানবধর্মকে সবচেয়ে বড় ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করায় কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু মুসলমানের মিলনের অন্তরায় দূর করতে চেয়েছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম আজীবন মানবধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর কাছে মানবধর্মই ছিল সবচেয়ে বড় ধর্ম। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু মুসলমানের মিলনের অন্তরায় বা ফাঁকি কোনখানে তা দেখিয়ে দিয়ে এর গলদ দূর করা এবং দেশব্যাপী মানবধর্ম তথ্য সব ধর্মের মানুষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা। আর এ কারণেই তিনি হিন্দু মুসলমানের মিলনের অন্তরায় দূর করতে চেয়েছিলেন।

৩। কাজী নজরুল ইসলাম এর মতে, দেশের দীর্ঘদিনের পরাধীনতার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলামের মতে, আত্মনির্ভরশীলতার অভাবই দেশের দীর্ঘদিনের পরাধীনতার কারণ। কাজী নজরুল ইসলাম মনে করেন, আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে। তিনি বিশ্বাস করেন, এই আত্মনির্ভরতা যেদিন সত্যি সত্যিই আমাদের আসবে, সেই দিনই আমরা স্বাধীন হব। কিন্তু আমরা সেদিন নিজের প্রতি বিশ্বাস না রেখে গান্ধীজির মতো মহাপুরুষের ওপর নির্ভর করেছিলাম। ফলে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন বিলম্বিত হয়েছিল। অর্থাৎ স্পষ্টতা বোঝা যায় কাজী নজরুল ইসলাম আত্মনির্ভরশীলতা অভাবকেই পরাধীনতার কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন।

৪। ‘আমার কর্ণধার আমি’ উক্তিটি দ্বারা প্রাবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : ‘আমার কর্ণধার আমি’ উক্তিটি দ্বারা প্রাবন্ধিক নিজের ওপর কর্তৃত্বের গুরুত্বকে বুঝিয়েছেন। সমাজের প্রত্যেকেই একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা স্বাধীন মত প্রকাশে বাধার সৃষ্টি করে। একে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে। কিন্তু নিজের ওপর কর্তৃত্ব থাকলে অনেক কাজ সহজেই করা যায়। ‘আমার কর্ণধার আমি’ উক্তিটি দ্বারা প্রাবন্ধিক নিজের ওপর নিজের কর্তৃত্বের এ গুরুত্বকেই বুঝিয়েছেন।

৫। ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে বর্ণিত প্রাবন্ধিক কেন ভুল করতে রাজি আছেন?
উত্তর : ভুল স্বীকারের মাধ্যমে আত্মাকে জানা যায় বলে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক ভুল করতে রাজি আছেন। সত্যকে জানতে আত্মাকে জানার জন্য ভুল সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। ভুলের মাধ্যমেই কোন ব্যক্তি নিজেকে জানতে পারে এবং নিজেকে সংশোধনও করতে পারে। কিন্তু ভুল করে যদি তা স্বীকার করা না হয়, তবে তা হয় ভণ্ডামির শামিল। প্রাবন্ধিক এরূপ ভণ্ডামি করতে রাজি নন। তাই বলা যায়, আত্মকে জানার জন্যেই প্রাবন্ধিক ভুল করতে রাজি আছেন।


আরো ও সাজেশন:-

৬। প্রাবন্ধিক সত্যকে সত্যি করে চিনতে চেয়েছে কেন?
উত্তর : আপন সত্যকে না চিনলে দাসত্ববৃত্তি এবং পরাবলম্বন থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না বলে প্রাবন্ধিক সত্যকে সত্যি করে চিনতে চেয়েছেন। সত্যই সকল তাপশক্তিকে পরাজিত করে পূর্ণতার পথে নিয়ে যায়। সত্যকে ভালো করে জানতে না পারলে তা অধরাই থেকে যাবে। মিথ্যা ও ভনিতার বেড়াজালে ছিন্ন করে আলোর পথ খোঁজা সম্ভব হবে না, পরাবলম্বন এবং দাসত্ব শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকতে হবে। তাই প্রাবন্ধিক সত্যকে সত্যি করে চিনতে চেয়েছেন।

৭। রাজভয়, লোকভয় কেন প্রাবন্ধিককে বিপথে নিয়ে যাবে না?
উত্তর : প্রাবন্ধিক তাঁর অন্তরের সত্যকে চেনেন বলে রাজভয় লোকভয় তাঁকে বিপথে নিয়ে যাবে না। প্রাবন্ধিক মনে করেন মানুষ যদি সত্যি করে তার আপন সত্যকে চিনে থাকে, তার অন্তরে মিথ্যার ভয় না থাকে, তাহলে বাইরের কোন ভয়ই তার কিছু করতে পারবে না। সত্য মানুষকে পথ দেখাবে আর মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করবে। নিজেকে চিনলে তার মনোবলই তাকে নতুনের পথে যুদ্ধ করার শক্তি জোগাবে। এখানে রাজ্যের ভয়, রাজ্যের ভেতরের বা বাইরের কোন শক্তিই তাকে বিপথে নিয়ে যাবে না।

৮। “যার ভিতরে ভয়, সে-ই ভয়, সে-ই ভয় পায়”- কথাটি দিয়ে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : “যার ভেতরে ভয়, সেই বাইরে ভয় পায়”- কথাটি দিয়ে লেখক বুঝিয়েছেন, যার হৃদয়ে ভয় আছে সে চারদিকে শুধু ভয়ই অনুভব করে। মানবহৃদয়ে সত্য না থাকলে মিথ্যা এসে বাসা বাঁধে। মানুষ যদি মনে সত্যকে ধারণ করতে না পারে তবে মিথ্যা তাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। মিথ্যা মানুষের জন্য সমস্যা সংকট ও ভয় ডেকে আনে। মানবহৃদয়ে এই দুর্বলতার কারণেই মানুষ বাইরের সবকিছুকে ভয় পায়। উক্ত বাক্য দ্বারা লেখক এটাই বুঝিয়েছেন।

৯। “আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে।”- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সত্য জানা ও আত্মাশক্তির বিকাশের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা আসে। অন্যের ওপর নির্ভর বেঁচে থাকাকে বলা হয় পরনির্ভরতা। যার নিচের শক্তির ওপর বিশ্বাস নেই, যে আত্মশক্তি ও সত্যকে জানে না সে-ই পরনির্ভর। লেখকের মতে, পরনির্ভরশীলতাকে বর্জন করতে হলে নিজের সত্যকে জানতে হবে, নিজের শক্তির ওপর আত্মা স্থাপন করতে হবে। আর তা হলেই মানুষ হয়ে উঠবে আত্মনির্ভরশীল। এভাবেই আত্মনির্ভরতা আসে।
১০। ‘এটা দম্ভ নয়, অহংকার নয়।’- কথাটি বুঝিয়ে দাও।

উত্তর : নিজেকে জানা, নিজের অন্তরের সত্যকে উপলদ্ধি করা, এটা দম্ভ নয়, অহংকার নয়- প্রশ্নোক্ত বাক্যে কবি এ ভাবটাই বোঝাতে চেয়েছেন। যে মানুষ নিজেকে চেনে তার মনের মধ্যে অপরিসীম জোর আসে। এই মনের জোরেই সে আর কাউকে ভয় করে না। আপন সত্যের শক্তিতে সে সব বাধা জয় করে। লেখকের মতে এভাবে নিজেকে চেনা এবং নিজের শক্তিতে আস্থা স্থাপন করা কোন দণ্ড নয়, অহংকার নয়- তা তার আত্মনির্ভরশীলতা।

১১। “যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে, সে কখনো অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না।”- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : আলোচ্য উক্তিটির দ্বারা লেখক সাম্প্রদায়িকতার প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। লেখক অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী। হিন্দু মুসলমানের মিলনের অন্তরায় কোথায় তা দেখিয়ে দেওয়া এবং সব জটিলতা দূর করাই তাঁর উদ্দেশ্য। মানুষে মানুষে যেখানে প্রাণের মিল, সত্যের মিল থাকে সেখানে কোন ধর্মের বৈষম্য বা হিংসার ভাব থাকতে পারে না। দেশের পক্ষে যা ভালো বা সত্য তা লক্ষ্য করেই লেখকের এ যাত্রা। তাঁর বিশ্বাস, যার নিজের ধর্মের ওপর বিশ্বাস আছে, যে নিজের সত্যকে চিনেছে, সে অন্যের ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক মাধ্যম গুলোতে ও

Leave a Comment