আমাকে একটি কথা বলাও তিনি আবশ্যক বোধ করিলেন না,‘ফল্গুর বালির মতো তিনি আমাদের সমস্ত সংসারটাকে নিজের অন্তরের মধ্যে শুধিয়া লইয়াছেন’,আমি তো চমকিয়া উঠিলাম’- কথাটি বুঝিয়ে লেখ

বিষয়: আমাকে একটি কথা বলাও তিনি আবশ্যক বোধ করিলেন না,‘ফল্গুর বালির মতো তিনি আমাদের সমস্ত সংসারটাকে নিজের অন্তরের মধ্যে শুধিয়া লইয়াছেন’,আমি তো চমকিয়া উঠিলাম’- কথাটি বুঝিয়ে লেখ

১। ‘আমাকে একটি কথা বলাও তিনি আবশ্যক বোধ করিলেন না।”- উক্তিটি বুঝিয়ে দাও।


উত্তর : কল্যাণীর পিতা অনুপমের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুপমকে একবার জানানোরও প্রয়োজন বোধ করেন নি। উক্তিটির মাধ্যমে অনুপম এ কথাটিই বোঝাতে চেয়েছে। অনুপমের মামা ছিলেন তাদের পরিবারের কর্তা। বিয়ের আসরে তিনি কনের গা থেকে গয়না খুলে সেকরাকে দিয়ে পরীক্ষা করান। কনের পিতা শম্ভুনাথ সেন অনুপমের কাছে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেও কোন সদুতত্তর পাননি। তাই বরপক্ষকে জানিয়ে দেন তিনি অনুপমের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। শম্ভুনাথ সেনের যা কথা হয় সব অনুপমের মামার সঙ্গে। তিনি অনুপমকে গুরুত্বহীন বিবেচনা করে তার সঙ্গে কোন কথাই বলেন না। অনুপম তাই নিজের গুরুত্বহীনতার কথা অনুভব করে উক্তিটি করে।

২। ‘ফল্গুর বালির মতো তিনি আমাদের সমস্ত সংসারটাকে নিজের অন্তরের মধ্যে শুধিয়া লইয়াছেন’- ব্যাখ্যা কর।


উত্তর : প্রশ্নোক্ত কথাটি অনুপম তার মামাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে। কারণ মাত্র ছয় বছরের বড় হলেও মামাই ছিলেন তার অনুপমের ভাল মন্দের প্রধান নির্ধারক। অনুপমের মামা ছিলেন তার প্রধান অভিভাবক। এমনকি অনুপমের বিয়ের ব্যাপারেও তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্তরূপে গ্রহণ করা হয়। প্রশ্নোক্ত কথাটিতে অনুপম তার মামার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও ব্যক্তিমানসিকতার পরিচয় তুলে ধরেছে। তিনি যা কিছু ভাবেন তা অনুপমের মঙ্গলের জন্যই ভাবেন। তিনি তার ভাহ্য দেবতা। অনুপমের সঙ্গে কল্যাণীর বিয়ে না হওয়ার ক্ষেত্রে তার মামার ভূমিকাই মুখ্য।

৩। “আমি তো চমকিয়া উঠিলাম’- কথাটি বুঝিয়ে লেখ।


উত্তর : ‘আমি তো চমকিয়া উঠিলাম’ বলতে গাড়িতে ওঠার জন্য কল্যাণীর আহনে অনুপমের চমকে ওঠাকে বোঝানো হয়েছে। অনুপম মাকে নিয়ে তীর্থে যাওয়ার পথে অপরিচিত এক মেয়ের কন্ঠস্বর শুনে মুগ্ধ হয়। অনুপম মেয়েটিকে দেখার চেষ্টা করে কিন্তু দেখতে পায় না। বাঙালি সেই মেয়ের কণ্ঠস্বর অনুপমের হৃদয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরদিন বড় স্টেশনে গাড়ি বদল করার সময় একটি মেয়ে তাদের গাড়িতে ওঠার জন্য আহŸান করে। তখন ঐ মেয়েটির কন্ঠস্বর শুনে অনুপম চমকে ওঠে। কারণ এটি তার পূর্বে শোনা সেই কন্ঠস্বর।

৪। “কিন্তু মেয়ের বিয়ে হইবে না এই ভয় যার মনে নাই তার শাস্তির উপায় কী?”- মন্তব্যটি ব্যাখ্যা কর।


উত্তর : এখানে শম্ভুনাথ সেনের আত্মসম্মানবোধ ও গৌরববোধকে বড় করে দেখানো হয়েছে। মেয়ের গহনা সেকরাকে দিয়ে পরখ করায় অপমানিত বোধ করেন বাবা শম্ভুনাথ সেন। বরযাত্রীদের ফিরিয়ে দেওয়ায় অনুপমের মামা রেগে যান। কীভাবে শম্ভুনাথ তার মেয়েকে বিয়ে দেন তা দেখে নিবেন বলে হুমকি দেন। কিন্তু তার সেই কথায় মেয়েকে বিয়ে দিতেই হবে বা হবে না এ ভাবনা শম্ভুনাথ বাবুর মনে দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করে না। তাই তাকে সহজে শাস্তি দেওয়া সম্ভব নয়।


আরো ও সাজেশন:-

৫। সুধা কণ্ঠধারী মেয়েটির পরিচয় কী?


উত্তর : সুধা কন্ঠধারী মেয়েটির নাম কল্যাণী। মায়ের সাথে অনুপমের তীর্থে যাওয়ার পথে যে চঞ্চল তরুণী দুটি তিনটি ছোট ছোট মেয়েকে নিয়ে সেই গাড়িতে উঠেছিল তার নাম কল্যাণী। তার পিতা ডাক্তার শম্ভুনাথ সেন। কল্যাণীর কন্ঠস্বর লালিত্য মাখা। প্রাণচঞ্চল কল্যাণী অনায়াসেই ছোটদের সাথে মিশতে পারে। সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং দেশ সেবায় নিবেদিত প্রাণ।

৬। গায়ে হলুদে কন্যাপক্ষকে নাকাল করা হয় কীভাবে?


উত্তর : মাত্রাতিরিক্ত লোকজন বা বাহক পাঠিয়ে কন্যাপক্ষের ওপর বোঝা চাপিয়ে অনুপমের মামা ও মা কন্যাপক্ষকে নাকাল করার বন্দোবস্ত করেন। গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান অসম্ভব রকম ধুমধাম করে হয়েছিল। কন্যার বাড়িতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বাহক পাঠানো হয়েছিল। এতে লোককে আপ্যায়ন করাতে হলে কন্যাপক্ষকে যে নাকাল হতে হবে তা ভেবেই অনুপমের মা ও মামা অনুরূপ রসিকতা করেছেন।

৭। গল্পটির নাম ‘অপরিচিতা’ রাখা হয়েছে কেন?


উত্তর : গল্পের নায়িকা কল্যাণী নায়ক অনুপমের কাছে শেষ পর্যন্ত অপরিচিত থাকায় গল্পটির নাম ‘অপরিচিতা’ রাখা হয়েছে। অনুপমের সাথে কল্যাণীর বিবাহ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বিবাহের কথা চলাকালে অনুপম মনের মধ্যে কল্যাণীর একটি ছবি ধারণ করেছে, স্বপ্ন সাজিয়েছে। অথচ সারা জীবনের জন্য তাকে পাওয়া হয় না, জানা হয়ে ওঠে না। কল্যাণী অনুপমের কাছে অপরিচিতা হিসেবেই থেকে যায়। যে কারণে এ গল্পের নামকরণ করা হয় ‘অপরিচিতা’।



৮। অনুপমকে পণ্ডিত মশায়ের বিদ্রুপ করতেন কেন?


উত্তর : অনুপমকে পণ্ডিত মশায়েরা বিদ্রুপ করতেন সুন্দর চেহারা অথচ গুণনীয়কতার কারণে। ছোটবেলায় অনুপমের চেহারা অত্যন্ত সুন্দর ছিল। অথচ সে পড়াশোনায় সন্তোষজনক পারদর্শিতা প্রদর্শন করতে পারত না। অন্যদিকে শিমুল ফুল সুবাস ছড়ায় না, সুন্দর দেখায় ; আর মাকাল ফল বাইরে দেখতে সুন্দর অথচ ভেতরে দুর্গন্ধ ও শাঁসযুক্ত হওয়ায় খাওয়ার যোগ্য নয়। তাই পণ্ডিত মশায়েরা তাকে শিমুল ফুল ও মাকাল ফলের সাথে তুলনা করতেন।

৯। মা অনুপমকে কেমন করে মানুষ করেছেন?


উত্তর : মা অনুপমকে মাতৃস্নেহে ও অর্থপ্রাচুর্যে অতি যতেœ মানুষ করেছেন। মা গরিব ঘরের মেয়ে ছিলেন বলে অনুপমকে কখনো ভুলতে দিতেন না যে তারা ধনী। সে সব ঐশ্বর্যে বেড়ে উঠছিল। শিশুকালে কোলে কোলেই সে বড় হয়েছে। যে কারণে শেষ পর্যন্ত তার পুরোপুরি জ্ঞানবুদ্ধিজাত বয়সই হয়ে ওঠেনি।

১০। পাত্র হিসেবে নায়কের বৈশিষ্ট্য কেমন?


উত্তর : ‘অপরিচিতা’ গল্পের নায়ক অনুপম সৎপাত্র। কোন সমস্যা নেই বলে অনুপম নিতান্ত ভালো মানুষ। ধূমপান পর্যন্ত করে না সে। মায়ের আদেশ শিরোধার্য করে ঘরের সব রকম বাধ্যবাধ্যকতা অনুসরণ করে চলতে পারাকে সে নিজেই সুলক্ষণ মনে কর।

১১। “তাহাদের হৃদয়ের উপর প্রাণের ঝর্ণা ঝরিয়া পড়ে।’- কথাটি কেন বলা হয়েছে?


উত্তর : কল্যাণীর সুধাকণ্ঠের ললিত বাক্য তার সঙ্গের দু-তিনজন ছোট মেয়ের ওপর প্রাণের ঝরনাস্বরূপ ঝরে পড়ে। অনুপম যে গাড়িতে চড়ে মায়ের সাথে তীর্থে যাচ্ছিল সেই গাড়িতে কল্যাণী দু তিনটি ছোট ছোট মেয়েকে সাথে নিয়ে উঠেছিল। কল্যাণীর প্রাণচাঞ্চল চলাফেরাও কথা বলা অনুপমকে মুগ্ধ করে। তার মধুর কণ্ঠে উচ্চারিত সব কথাই যেন মনোমুগ্ধকর। ছোটদের সঙ্গে সে অনায়াসে এবং আনন্দচিত্তে ছোট হয়েই মেশে, তাদের গল্প শোনায়। আর কল্যাণীর সুধাকণ্ঠের ললিত বাক্য সঙ্গের মেয়েদের ওপর প্রাণের ঝরনাস্বরূপ ঝরে পড়ে।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক মাধ্যম গুলোতে ও

Leave a Comment