আজ বিশ্ব নিদ্রা দিবস

Google Adsense Ads

ওয়ার্ল্ড স্লিপ ডে বা বিশ্ব ঘুম দিবস। প্রতি বছর মার্চ মাসের তৃতীয় শুক্রবার দিবসটি পালন করা হয়। ঘুম আল্লাহ তাআলার একটি মহা নেয়ামত। এর জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময় নির্ধারণ করা হয়েছে রাতকে। কেননা সারা দিন কর্মব্যস্ততার পর মানুষের একটু বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। তাই আল্লাহ তাআলা রাতকে বিশ্রামের উপযোগী করেই বানিয়েছেন। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের বিশ্রামের জন্য নিদ্রা দিয়েছি, তোমাদের জন্য রাত্রিকে করেছি আবরণস্বরূপ, আর দিনকে বানিয়েছি তোমাদের কাজের জন্য।’ (সুরা নাবা, আয়াত : ৯-১১)। সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম যে কতটা জরুরি, সে ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতেই ২০০৮ সাল থেকে প্রতি বছর মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শুক্রবার ঘুম দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

চরম ব্যস্ততার যুগে ঘুমের বিষয়টি মাথায় উঠেছে বর্তমান প্রজন্মের। ২০০৮ সালে প্রথমবার এই দিনটি পালন করে ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব স্লিপ মেডিসিন’ এর ওয়ার্ল্ড স্লিপ ডে কমিটি। এই কমিটির মূল উদ্দেশ্য, ঘুমের অভাবে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির বিষয়ে মানুষকে জানানো।
বিশ্ব ঘুম দিবস মূলত ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব স্লিপ মেডিসিনের অর্থায়নে অনুষ্ঠিত বার্ষিক ইভেন্ট। এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, ‘নিয়মিত ঘুম : স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’।

গবেষণায় ঘুমের নানা ইতিবাচক দিকের কথা বলা হয়েছে। নিয়মিত ভালো ঘুম হলে পরবর্তী জীবনে দারুণ প্রভাব পড়তে পারে। টেক্সাসের বেয়লর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড কগনিশন ল্যাবরেটরি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখানো হয়, মধ্যবয়সে ভালো ঘুম ভবিষ্যতের মানসিক প্রশান্তির জন্য দারুণ এক পুঁজি হিসেবে কাজ করে। মধ্যবয়স বলতে ত্রিশোর্ধ্ব সময়কে বোঝানো হয়েছে।

চিকিৎসকরা বলেন, ভালো ঘুমের সঙ্গে স্মৃতিশক্তির বেশ নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। সাধারণত বৃদ্ধ বয়সে স্বাভাবিকভাবেই স্মৃতিশক্তি লোপ পায়, মানসিক দুর্বলতাও তৈরি হয়। তাই শেষ বয়সে অনেকেরই অনিদ্রা সমস্যা দেখা দেয়। মধ্যবয়সে একজন মানুষ নিয়ম মেনে ঘুমালে তার সুফল বৃদ্ধ বয়সেও পেতে পারেন।
এছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে। নিয়ন্ত্রণে রাখে ওজন। অতিরিক্ত অথবা খুব কম ঘুমোলে তার প্রভাব পড়বে আপনার আয়ুষ্কালের উপর। ২০১০-এর একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৫০-৭৯ বছর বয়সে মৃত মহিলাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছে কম বা বেশি ঘুমনোর জন্য।
হার্টের অসুখ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিজ, অকাল বার্ধক্যের থেকে শরীরে জ্বলুনি অনুভূতি হয়। গবেষণা বলছে, যাঁরা রাতে ৬ ঘণ্টা বা তার কম ঘুমোন, তাঁরাই বেশিরভাগ এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন। কারণ তাঁদের রক্তে ইনফ্লামেটরি প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ২০১০-এর গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা কম ঘুমোন, তাঁদের শরীরে বেশি পরিমাণে দেখা দেয় সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন, যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।

আপনি যদি কোনও খেলোয়াড় হন, তবে আপনার সাফল্যের অন্যতম অস্ত্র নিঃসন্দেহে ঘুম। স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কলেজের ফুটবল খেলোয়াড়রা, যাঁরা রাতে ১০ ঘণ্টা ঘুমান, ৬-৮ সপ্তাহ পর তাঁদের স্ট্যামিনা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। দূরে চলে যায় যাবতীয় ক্লান্তি।
গবেষণা বলছে, কলেজে যেসব ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করেন, তাঁরা অন্যদের থেকে বেশি ঘুমোন। যাঁরা কম ঘুমোন, তাঁদের ফলাফল হয় খারাপের দিকে।
ঘুম কম হলে শিশুরা অমনোযোগী হয়ে পড়ে। ২০০৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৭-৮ বছরের শিশুরা রাতে ৮ ঘণ্টার কম ঘুমোলে বদরাগী ও অমনোযোগী হয়ে পড়ে।

ঘুম ভালো হলে দুর্ঘটনার প্রবণতাও কমে। ২০০৯ সালের ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্র্যাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের রিপোর্ট বলছে, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর থেকেও মারাত্মক দুর্ঘটনা বেশি হয় ক্লান্ত থাকার জন্য। এক রাত না ঘুমলেই গাড়ি চালানোর সময় আপনার মনে হবে, মদ্যপান করেছেন। কাজেই আজকের দিনে একটাই কথা বলার। ভালো থাকতে ভালো ঘুমোন।

Google Adsense Ads

জানা অজানা

Google Adsense Ads

Leave a Comment