Google Adsense Ads
মৌমিতা’র ভীষণ ঘৃণা হচ্ছিলো। তবুও সে সিরাজকে কয়েকটা প্রশ্ন করার জন্য ফোন দিলো।
“সিরাজ?”
“হ্যাঁ, বলো মৌ।”
“সত্য করে একটা প্রশ্নের উত্তর দেবে?”
“উত্তর দিলে সত্য উত্তরই দেবো। তুমি বলো কী প্রশ্ন?”
“তুমি যে আমাদের বাসায় আসো, কখনো কি তনু’র রুমে যাও?”
”আমি তনু’র রুমে যাবো কেন? তনুই তো আমি তোমার ওখানে গেলে দৌড়ে এসে আমার কোলে বসে পড়ে। তাছাড়া আমি তো সারাদিন কাজের চাপে তোমার ওখানে যেতেই পারি না। রাতে যাও একটু যাই, অত রুমে রুমে ঘুরার সময় পাই কই বলো?”
মৌমিতা মনে মনে বললো, “ঠিকই তো! সিরাজ আসলেও তো দশ-পনেরো মিনিটের বেশি সময় থাকে না।”
অনেকক্ষণ মৌমিতা আর কিছু বলতে পারলো না। সিরাজ বললো, “এসব প্রশ্ন কেন করলে মৌ? তনু ঠিকআছে? কোনো সমস্যা হলো না-কি? মৌ, ও মৌ, কথা বলছো না যে!”
“না, কোনো সমস্যা হয় নি। রাখি।”
সিরাজের ফোন রাখতেই থানা থেকে ফোন এলো।
”বলুন অফিসার।”
“আপনি একটু থানায় আসুন, ম্যাডাম। মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পেয়েছি।”
“রিপোর্টে কী আছে বলুন আমায়?”
“ফোনে নয়। আপনি জলদি থানায় আসুন।”
মৌমিতা তখনই বেরিয়ে পড়লো থানার উদ্দেশ্যে। অফিসার গম্ভীরমুখে রিপোর্ট হাতড়াচ্ছেন। মৌমিতা অধীর আগ্রহে অফিসারের দিকে তাকিয়ে আছে। কী এক অজানা শংকায় স্তব্ধ হয়ে গেছে।
অফিসার বললেন, ” পুরো বিষয়টা এখন আমাদেরকে দেখতে হবে। আপনাকে একটা মামলা করতে হবে। তনু’র কাছে যে যে পুরুষের আনাগোনা আছে, সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। বাচ্চাটাকে একটানা অনেকদিন ধরে রেপ করা হচ্ছে।”
মৌমিতা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ওর সন্দেহ এভাবে সত্যি হোক -সেটা ও চায় নি। সত্যি যখন হয়েছেই, তখন বাকিটাও ওকেই করতে হবে। এর শেষটা ও দেখতে চায়। পুলিশ তখনই তনুকে প্রশ্ন করা শুরু করলো- ”তোমার কাছে কে কে এসেছিলো? তোমাকে কে কষ্ট দিয়েছে? তুমি কি তাকে চিনো? তার নাম বলতে পারবে?”
তনু কিছুই জবাব দিলো না। ভয়ে চুপসে গেছে। মৌমিতার পায়ের কাছে শক্ত করে চেপে ধরে ওর আঁচলের আড়ালে মুখ লুকাচ্ছে। মৌমিতা পুলিশকে থামিয়ে বললো, “প্লিজ অফিসার,আমাকে কয়েকটা দিন সময় দিন। তনু আমার কাছে সব বলবে। আপনার কোনো জিজ্ঞাসাবাদেরও দরকার পড়বে না। আমিই আপনাকে সব ধরনের তথ্য-প্রমাণ দিয়ে যাবো।
দেখুন, আমিই তনু’র বিষয়টা লক্ষ্য করে আপনার কাছে ওর মেডিকেল করার অনুরোধ করেছি। কারণ আমি চাই, অপরাধী শাস্তি পাক। অপরাধী যদি আমার সবচে’ কাছের মানুষও হয়, আমি তাঁর ভয়াবহ শাস্তি চাই।
আপনি আমার উপর ভরসা রাখতে পারেন। ইতঃপূর্বেও আমি অনেকভাবে আইনকে সহযোগিতা করেছি। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।”
“কিন্তু…”
- কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার সূচক সমূহ কি কি
- PSC এর উপ সহকারী পদের প্রশ্ন উত্তর pdf ২০২৫
- ব্যবসার সামাজিক দায়িত্ব বলতে কী বোঝায়,কারবারের সামাজিক দায়িত্ব বলতে কি বুঝ
- সরকারের সিএসআর কি বুঝ
- সিএসআর CSR নীতি প্রণয়ন বলতে কি বুঝ
“প্লিজ! কোনো কিন্তু নয় অফিসার। আমাদের এলাকার ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি’ চিনেন নিশ্চয়ই? আমিই ঐ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা। আমি নারী বিষয়ক অনেক মামলাতেই আইনকে সহযোগিতা করেছি। আপনি এ থানায় নতুন এসেছেন। তাই হয়তো এসব জানেন না।”
অফিসার কলম ঘুরাতে ঘুরাতে কী যেন ভেবে বললো,”আচ্ছা ঠিকআছে, আপনাকে আমি দায়িত্ব দিলাম। তবে সময় বেশি পাবেন না। এক সপ্তাহের মধ্যে আপনি কিছু বের করতে না পারলে আমরাই যা করার করবো। একটা বাচ্চা শিশুকে রেপ করা হয়েছে। ব্যাপারটা খুবই সেনসিটিভ।”
মৌমিতা মাথা নেড়ে অফিসারকে বিষয়টা সমাধান করার ব্যাপারে আশ্বস্ত করে থানা ত্যাগ করলো। কিন্তু ও আদৌ জানে না, ঠিক কোন কোণ থেকে শুরু করলে এর সঠিক সমাধান পাওয়া যাবে।
তবুও ও মনে মনে একটা প্ল্যান করলো। রাতের খাবারটা কোনোমতে সেরেই তনুকে নিয়ে রুমে এসে দরজা বন্ধ করলো। ও তনুর চোখে তাকালো। দেখলো, বাচ্চাটার চোখে ঘুমের রেখাটিও নেই। ওর কি তবে ঘুম আসে না? ও কি তবে বুঝতে পেরেছে– কতটা জঘন্য কিছু ঘটে গেছে ওর সাথে?
”তোর ঘুম পায় নি?”
তনু মাথা নাড়লো।
”তুই না কত সুন্দর ছবি আঁকতে পারিস? আমার মুখের একটা ছবি এঁকে দেখা তো!”
তনু রং-পেন্সিল নিয়ে আঁকতে বসে গেল। বিশ মিনিট পর মৌমিতা দেখলো, হুবুহু ওর মতো একটা মুখ এঁকেছে তনু। ও ভেবে বললো,”আচ্ছা এবার তোর ইচ্ছে মতো একটা ছবি এঁকে দেখা তো! তত পর্যন্ত আমি একটা বই পড়তে থাকি।”
বই পড়তে পড়তে মৌমিতা কেমন বইয়ের জগতে ডুবে গেল! কখন দুইঘণ্টা পার হলো! তনু ওর আঁকা ছবিটা হাতে নিয়েই ঘুমিয়ে গেল –ও সেটা খেয়ালই করে নাই। বইটা শেষ করে খাটে যেতেই ওর চোখে পড়লো তনুর নিজস্ব ইচ্ছানুযায়ী আঁকা ছবিটা–
–একটা ছোটো মেয়ে শুয়ে আছে। পা উপরের দিকে উঠানো। মেয়েটার তলপেটের উপর বসে আছে একটা অদ্ভুত প্রাণী যার মুখটা মানুষের মতো, কিন্তু শরীরটা শুয়োরের মতো। ছবিটা কালো করে অন্ধকারের চিত্র দিয়ে আঁকা। তাই শুয়োর শরীরের মানুষটার চেহারা বুঝা যাচ্ছে না। মৌমিতা ভরসা পেল। আগামীকাল নিশ্চয়ই এই শুয়োর শরীরী মানুষটার মুখোশ উন্মোচন হবে।
পরেরদিন রাতে মৌমিতা একইভাবে তনুকে ছবি আঁকতে বললো। আগের ছবিটাকেই স্পষ্ট করতে বললো, “তনু, এই ছবিতে তো মানুষটার মুখের চারপাশে অন্ধকার করে রেখেছিস। একটু আলো দে তো! মুখটাকে স্পষ্ট করে আঁকা দেখি!”
তনু চুপচাপ মুখটাকে স্পষ্ট করে আঁকলো। সেটা দেখে মৌমিতার মাথায় বজ্রপাত হতে থাকলো। আরও পরিষ্কারভাবে জানার জন্য তনুকে প্রশ্ন করলো,”এই লোকটাই কি তোর ঘরে যেতো? তোকে কষ্ট দিতো?”
তনু কেঁদে ফেললো,”আপু, ও তোমাকে মেরে ফেলবে।”
“আমাকে মেরে ফেলার কথা বলে তোকে ভয় দেখিয়েছে?”
তনু মাথা নেড়ে ”হ্যাঁ” বললো।
“আমাকে সে মারতে পারবে না। তুই সত্য করে বল্ এই লোকটাই?”
“হ্যাঁ” বলে তনু কান্না শুরু করলো।
“কাঁদিস না তনু। তোর কোনো ভয় নেই। আমি আছি তো!”
“তোমাকে ও যদি মেরে ফেলে?”
“পারবে না।”
”সত্যি তো?”
“হুম, সত্যি। এই লোকটা রাতের বেলা তোর ঘরে যেতো, না?”
“হ্যাঁ।”
Google Adsense Ads
- কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার সূচক সমূহ কি কি
- PSC এর উপ সহকারী পদের প্রশ্ন উত্তর pdf ২০২৫
- ব্যবসার সামাজিক দায়িত্ব বলতে কী বোঝায়,কারবারের সামাজিক দায়িত্ব বলতে কি বুঝ
- সরকারের সিএসআর কি বুঝ
- সিএসআর CSR নীতি প্রণয়ন বলতে কি বুঝ
“তোকে জানোয়ারটা অনেক কষ্ট দিয়েছে। বিশ্বাস কর্, আজকের পর থেকে আর তোকে সে কষ্ট দিতে পারবে না।”
তনুকে ঘুম পাড়িয়ে গভীর রাতে মৌমিতা নিচের ঘরে এলো। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো, “আজকে হয় মারবো, নয়তো মরবো।” একটা নষ্ট হয়ে যাওয়া মোবাইল চার্জারের তার হাতে নিয়ে বাবার রুমে ঢুকলো। বাবা ঘুমোচ্ছে। বাবা’র বয়স্ক কপালটা খুব কোমল দেখাচ্ছে। শীতের রাত। বাবার পায়ের কাছে লেপ পড়ে রয়েছে। পাশেই মা শুয়ে। দেখে মনে হচ্ছে মায়ের গভীর রকমের ঘুম হচ্ছে। বাবার গায়ে শাদা পাঞ্জাবি।
শাদা ঘন দাড়ি গলা থেকে বুক অবধি পড়ে রয়েছে। সেটাকে আলোর রশ্মির মতো স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। কিন্তু মৌমিতার একটুও মায়া হচ্ছে না।
তবুও ও বাবা’র গলায় চার্জারের তারটা প্যাঁচিয়ে আবার সরিয়ে নিলো। ওর মা অসুস্থ। ও ছাড়া তনুর আর কেউ নেই। ও যদি খুন করে জেলে যায়, তাহলে তনু’র জীবনটা ধ্বংস হয়ে যাবে। এক শকুনে ওকে ছিঁড়ে খেয়েছে জানার সাথে সাথে সমাজের আরও নয়টা শকুন ওর দিকে তাকাবে ; ওকে ছিঁড়বে; তারপর গিলে গিলে খাবে। আর তখন তনুর জায়গা হবে হয় কবরে, নয় পতিতালয়ে! ও তখনই তনুর কাছে দৌড়ে এলো। তনুকে জাগিয়ে বললো, “একটু পরেই ভোর হবে, তনু। চল্ আমরা চলে যাই। এ বাড়িতে আর এক মুহূর্ত নয়।”
যাবার সময় মা দরজায় দাঁড়ালেন। বললেন,” তোর বাবার উপর অভিমান করে চলে যাবি?”
“ছিঃ মা, এটাকে তুমি ‘অভিমান’ বলছো কেন? এটা ঘৃণা, তীব্র ঘৃণা।”
“তোর বাবা সংসারের অনেক কাজই করতে পারেন না। কিন্তু কখনো তো সংসারের প্রয়োজনে টাকা-পয়সা খরচা করতে কোনো কুণ্ঠাবোধ করেন নাই। সারাজীবনে ‘তিনি অলস এবং একটু বেশি কথা বলেন’ -এই দুইটা দোষ ছাড়া আর কোনো দোষ তো মানুষটার ছিল নারে, মা! এই বুড়ো বয়সে এসে একটা ভুল না-হয় করেই ফেলেছে। তাই বলে…”
“চুপ করো, মা। এই তোমাদের এইরকম ভক্তি আর সরলতার সুযোগ নিয়েই এই শয়তানগুলো পৃথিবীটাকে দিনকে দিন বিষাক্ত করে তুলছে।”
মৌমিতার স্বর শুনে মা চমকে উঠলেন। ও যাবার জন্য পা বাড়াতেই মা আবার ডেকে বললেন,
“যাবি যখন, আমাকেও সাথে নিয়ে চল্, মা।”
মৌমিতার প্রচণ্ড ঘৃণা লাগছে। ও জেনে গিয়েছিল যে, তনুকে কে রেপ করতো নিয়মিত -এটা দারোয়ান জানতো তাই ওর। মা-ই সেদিন কালো চাদরে শরীর মুড়িয়ে দারোয়ানের কাছে গিয়ে বলেছিলেন দারোয়ান যাতে মৌমিতাকে কিছু না বলে। তিনি চাননি যে, মৌমিতা এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করে সমাজের সামনে পুরো পরিবারটাকে ছোটো করুক।
মৌমিতা ভাবতেও পারে নি যে, একটা শিক্ষিত মহিলা যে কি-না এত বছর চাকরিও করেছেন, সে তাঁর স্বামীর এতটা নোংরামি এভাবে মেনে নিতে পারবেন! সমাজকে যদি এতই ভয় পাবে, তাহলে কী দরকার ছিল শিক্ষিত হবার? এত ধৈর্য কই থেকে আসে? এমন ধৈর্যশীলা’র সান্নিধ্যে থাকলে ওরও একদিন এরকম ধৈর্যশীল হয়ে উঠার সাধ জাগতে পারে। ওর মায়ের থেকে ও এইরকম ধৈর্যের শিক্ষা নিতে চাইছে না। এইরকম ধৈর্যের শিক্ষা গ্রহণ করলে ওর এ জীবনের বাকিসব শিক্ষা বিফল হবে।
মৌমিতা চিৎকার করলো, “পথ ছাড়ো, মা। আমি তোমাদের কারোর ছায়াও দেখতে চাই না এ জীবনে। তবে, আমি খুব জলদি এই বাড়িতে আবার আসবো। থাকতে আসবো না; ঐ জানোয়ারটাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেবার ব্যবস্থা করে পরে আসবো।”
মৌমিতা তনু’র হাত ধরে গেইট পার হয়ে রাস্তায় নামলো। তখন সকালের আলো ফুটতে শুরু করেছে। নিশ্চয়ই এই সকালটা তনুকে দেয়া একটা সুন্দর পৃথিবীর প্রথম সকাল।
- কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার সূচক সমূহ কি কি
- PSC এর উপ সহকারী পদের প্রশ্ন উত্তর pdf ২০২৫
- ব্যবসার সামাজিক দায়িত্ব বলতে কী বোঝায়,কারবারের সামাজিক দায়িত্ব বলতে কি বুঝ
- সরকারের সিএসআর কি বুঝ
- সিএসআর CSR নীতি প্রণয়ন বলতে কি বুঝ
Google Adsense Ads